এ হেন চমচমবাবুর আয়োজিত
জলার ধারে সেই জলসাটা জমলো জোর |
বিনা-টিকিটের দর্শক আর শ্রোতা হোলো
গাছ লতা আকাশ,
তা’ছাড়া কিছু ছোটখাটো চেহারার পশুপাখী |
টিকিট কিনে দেখতে এসেছে
অগুন্ তি মেঠাই-রা |
বিশিষ্ট দর্শকের আসনে বসেছেন-----
রানাঘাটের পান্তুয়া চৌধুরী,
কেষ্টনগরের সরপূরিয়া শূর,
বর্ধমানের সীতাভোগ সমাদ্দার ;
বেশ ভালো জায়গা নিয়ে বসেছেন
উড়িষ্যার লবঙ্গলতা দেবী
এবং মোটাসোটা চেহারার ভদ্রলোক আরিষা মহাপাত্র |
পেছনের আসনগুলোতে তবকদার চটকদার
কত যে পুরুষ-মহিলা
তা’ আ হাতে গুণে শেষ করা যাচ্ছে না |
সাংবাদিকদের সময়মত খবর দেয়া হয় নি,
তবুও বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকা
‘জলযোগ’ -এর রিপোর্টার
শ্রীতিলের নাড়ু বসু
কোত্থেকে এই অভিনব জলসার
খবর পেয়েই
গড়াতে গড়াতে
সভাতে এসে হাজির হয়েছেন
মাদ্রাজী ফটোগ্রাফার
দোসাই রঙ্গনাথনকে সঙ্গে নিয়ে |
এ হেন চমচমবাবুর আয়োজিত
জলার ধারে সেই জলসাটা জমলো জোর |
বিনা-টিকিটের দর্শক আর শ্রোতা হোলো
গাছ লতা আকাশ,
তা’ছাড়া কিছু ছোটখাটো চেহারার পশুপাখী |
টিকিট কিনে দেখতে এসেছে
অগুন্ তি মেঠাই-রা |
বিশিষ্ট দর্শকের আসনে বসেছেন-----
রানাঘাটের পান্তুয়া চৌধুরী,
কেষ্টনগরের সরপূরিয়া শূর,
বর্ধমানের সীতাভোগ সমাদ্দার ;
বেশ ভালো জায়গা নিয়ে বসেছেন
উড়িষ্যার লবঙ্গলতা দেবী
এবং মোটাসোটা চেহারার ভদ্রলোক আরিষা মহাপাত্র |
পেছনের আসনগুলোতে তবকদার চটকদার
কত যে পুরুষ-মহিলা
তা’ আ হাতে গুণে শেষ করা যাচ্ছে না |
সাংবাদিকদের সময়মত খবর দেয়া হয় নি,
তবুও বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকা
‘জলযোগ’ -এর রিপোর্টার
শ্রীতিলের নাড়ু বসু
কোথ্বকে এই অভিনব জলসার
খবর পেয়েই
গড়াতে গড়াতে
সভাতে এসে হাজির হয়েছেন
মাদ্রাজী ফটোগ্রাফার
দোসাই রঙ্গনাথনকে সঙ্গে নিয়ে |
কবি মোহিত ঘোষ-এর ছড়া ও কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
[ এক ]
বিস্ সুদবারের বারবেলাটা
বড় খারাপ, বড় খারাপ,------
বলেছেন যিনি সত্য ছাড়া মিথ্যা কথা
কখনও বলেন না, সেই
স্বামী শ্রীমৎ আমসত্ত্বানন্দজী মহারাজ |
কিন্তু সেই কথাটা না শুনে
দমদমের শ্রীমান চমচম দাশ
সুন্দরবনের এক সুন্দর ছায়া-ঘেরা জলার ধারে
বিরাট এক জলসার আয়োজন করলো
ঠিক এক বিস্ সুদবারের বারবেলাতেই
অনেক টাকা খরচ করলো,-----
অনেক রঙ বেরঙের ঝাড়-লন্ঠন দিয়ে
তাঁবু সাজালো ;
ভারতের নানা জায়গা থেকে
অনেক নাম-করা নাচিয়ে গাইয়েদের
আমদানী করলো
শ্রীমান চমচম,----
যার পরিচয়
সংক্ষেপে
তোমাদের একটু জানিয়ে দিচ্ছি :-----
ছড়া নাটিকা "জলখাবারের জলসা" থেকে . . .
|
. চমচম দাশ, রুহিতন মার্কাটা
. দমদম বাস, ছিল যে পছন্দ,----
. রকবাজ ছোক্ রা চেহারাতে এনেছিল
. পিটতো সে তাস | তারি ছাদ-ছন্দ |
. মেতে যেতো প্রতিরাতে
. গানে আর বাজনাতে
. গায়ে মেখে ভুরভুর
. সেন্টের গন্ধ |
. দেখা গেল------
. এঁদের দু’জনকে,
. অর্থাৎ------
. সাংবাদিক নাড়ুবাবু আর ক্যামেরাম্যান দোসাইকে
. অনেকেই একটু তোয়াজ করছেন,
. ঢং করে কথা কইছেন
. বিশেষ করে সেই শিল্পীরা
. যাঁরা আজকের সভায়
. গান গাইবেন, নাচ দেখাবেন |
যাই হোক,-----
পশ্চিম দিকের একটা বিরাট মেঘের মত গাছ থেকে
কী একটা নাম-না জানা পাখি
বিকট-স্বরে ডেকে উঠতেই
কবজিটা ঘুরিয়ে
হাত-ঘড়িতে সময় দেখলো
শ্রীমান চমচম দাশ |
সময় দেখে নিলেন
দর্শকরা অনেকেই |
মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন
বিখ্যাত অভিনেতা শামোসাকুমার |
তাঁকে দেখে
প্রবল হাততালি দিয়ে উঠলো
আর হর্ষধ্বনিতে চারদিক কাঁপিয়ে দিলো
সমস্ত দর্শকরা |
এই শামোসাকুমার
বাংলাদেশেরই ছেলে,
আসলেতে নাম তাঁর
সিঙ্গারা মজুমদার,
বোম্বাইতে গিয়ে তিনি
হয়েছেন শামোসাকুমার ;
তিন কোণা মুখখানাতে
সে কী আকর্ষণ,-------
যে দেখেছে সেই -ভুলেছে |
শামোসাকুমার মঞ্চে আহ্বান জানালেন
সভাপতি
শ্রীলাড্ডুলাল আগরওয়ালাকে
আর
প্রধান অতিথি
শ্রীমতী জিলিপি দেবীকে |
বিখ্যাত শিল্পপতি লাড্ডুলাল
এবং সর্বভারতীয় খ্যাতিসম্পন্না মহিলা জিলিপি দেবী
মঞ্চে এসে
উপস্থিত সবাইকে নমস্কার জানাতেই
চারদিকে আবার চটপট হাততালি সুরু হোলো |
নড়েচড়ে বসলেন সাংবাদিক তিলের নাড়ু,
কয়েকটা আঁচড় কেটে
কী যেন লিখেও ফেললেন
তাঁর লম্বা ধরনের খাতাটায় ;
ক্লিক্ করে একটা ফটো নিলেন
দোসাই রঙ্গনাথন |
এবারে আর শামোসাকুমারকে দেখা গেল না,
তার বদলে
মাইকের সামনে ভীষণ গম্ভীরভাবে এসে দাঁড়ালো
স্বয়ং পরিচালক চমচম দাশ,
এই বিরাট জলসার সমস্ত ভার
তার ওপরেই ন্যস্ত আছে কিনা,
তাই
অনেক চেষ্টা করে এই কৃত্রিম গাম্ভীর্য ভাবটা
মুখের ওপর টেনে আমদানী করতে হয়েছে
চিরকেলে ফক্কর ছোকরা
দমদমের শ্রীমান দাশকে |
চমচম প্রথমে
দর্শকদের সংগে পরিচয় করিয়ে দিলো
সভাপতি শ্রী লাড্ডুলাল আগরওয়ালের |-----
লাড্ডুলাল আগরওয়াল---
বন্ধ-গলা কোর্তা লাল |
আটটি হীরের আংটি হাতে,
কাশ্মীরী-কাজ চাদর কাঁধে |
পাগড়িটাতে সাচ্চা জরি,
বাঁ হাতে তাঁর সোনার ঘড়ি |
কিন্তু
বিশাল দেহ, বিশাল ভুঁড়ি,
তোলেন যে হাই মারেন তুড়ি,
দাঁতগুলো সব পোকার বাসা,
গালে কাশীর জরদা ঠাসা,
কুঁৎকুঁতে চোখ ঘুরছে সদা,
গর্দানটা ভীমের গদা,
চা--কা চা--কা চর্বি গায়ে,
তালি--বোঝাই নাগরা পায়ে |
. তারপর
. চমচম দাশ পরিচয় দিলো
. প্রধান অতিথি শ্রীমতী জিলিপি দেবীর |----
. অমৃত পরিবারে
. ইনি রাজকন্যে,
. প্রাণ তবু দিয়েছেন
. গরীবের জন্যে |
. লতার মত তনু
. কৃশ কত আহা-রে,
. তবু মরি কিবা রূপ
. বলবো তা’ কাহারে !
. প্যাঁচানো সাড়ীটি গায়ে
. বাদামী যে রংটা,
. মুচমুচে মিঠে কথা-----
. ভালো লাগে ঢংটা |
. ভালোবাসে সকলেই-----
. বুড়ো-বুড়ি বাচ্চা |
. চেহারাতে প্যাঁচ আছে,
. মন তবু সাচ্চা |
. এবার দর্শকদের হাততালি দিতে
. মানা করলো চমচম
. এবং
. মাইকের সামনে আহ্বান জানালো
. জিলিপি দেবীকে
. কিছু বলবার জন্যে |
. বাদামী ঘোমটাটা ঈষৎ টেনে নিয়ে,
. লতানো শরীরটাতে একটু ঢেউ তুলে
. দর্শকদের সম্বোধন করে
. জিলিপি দেবী
. মুচ্ মুচে সুরে বললেন :---
সুন্দর-বনের এই অভিনব জলসায়
মেঠাই-এর সমাবেশে চোখ যেন ঝলসায় |
. শুনিনি তো কোনখানে
. মিষ্টিরা নাচে-গানে
এত বড় উত্সব কোনদিনও করেছে |
আমাদের, প্রাণ-মন খুসী দিয়ে ভরেছে !!
করিৎকর্মা বটে চমচম দাশ তো,
খাবারের মহামেলা বসিয়েছে আস্তো |
. এ হেন কীর্তিমান
. দেশে পাবে সম্মান,
রাষ্ট্রপতির সাথে নিজে দেখা করবো,----
‘খাদ্যভূষণ’ দিতে তাঁরে চেপে ধরবো |
প্রবল হাততালি আর আনন্দ-ধ্বনিতে
ফেটে পড়লো, লাফিয়ে উঠলো
সব দর্শকেরা |
এই কলোচ্ছ্বাসের মধ্যে
জিলিপি দেবীর শেষ কথাগুলো
আর শুনতে পাওয়া গেল না |
এরপর মাইকের সামনে গুটিগুটি এগিয়ে এলেন
লাড্ডুলাল আগরওয়াল
এবং
তিনি সভাপতির ভাষণ সুরু করলেন :----
হামার ঝাল আউর মিষ্ট্ বন্ধুগোণ,
আজকে এখুনি পাঁচমিনটেই
. জলসা জব্বর সুরু হোবে,
গান হোবে, নাচভি হোবে----
. আপনারা ভাই দেখুন সোবে |
হামার মতুন গরীব লোককে
. সভাপতি বানাইয়ে দিলো,
জলসার জোন্যো জোর করিয়ে
. তিনটি হাজ্জার রুপিয়া লিলো |
‘খাদ্যভূষণ’ হোলে চমচম
. হামার হোবে খুস্ যে ভারি,
পরধান-মন্ত্রীর কাছে গিয়ে
. হামিও একটু বলতে পারি !
বিশেষ আউর কী বোলবো হামি,
. সোব বোলেছেন জিলেবী-রাণী ;
‘জয় হিন্দ্’ বোলে এবার ভাইসব
. খতম করলাম হামার বাণী |
[ দুই ]
. সুন্দর ঐক্যতান-বাদন সুরু হোলো |
. তালে তালে নাচতে নাচতে
. এগিয়ে এলো ছোট্ট একটি মেয়ে,
. নাম
. শ্রীমতী ইড্ লি কানকাম্বুজম্ জয়লক্ষী |
. মেয়েটি ছোট হলেও
. নামটি কিন্তু বেশ লম্বা-চওড়া |
. দেশ হোলো তার
. সুদূর মাদ্রাজে |
. ইডলি খুকু মিষ্টি মেয়ে
. মাদ্রাজেতে ধাম
. মদ্র-বাসীর খুব প্রিয় সে
. সবার মুখে নাম |
. সে নাচলে কথাকলি |
তার নাচ দেখে
প্রশংসা করলো সব্বাই |
দোসাই রঙ্গনাথনের ক্যামেরাটা |
অনেকবার জ্বলে উঠলো |
তারপর
পরপর তিনখানা
রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে শোনালেন
শ্রী সন্দেশ সেন |
যেমন মধুর তাঁর কন্ঠস্বর
তেমনি অদ্ভুত ,সুরজ্ঞান |
শ্রোতারা সবাই খুশী হয়েছিল,
‘আর একখানা হোক্’ , ‘আর এক খানা হোক’ বলে
চেঁচিয়ে উঠেছিল অনেকেই |
কিন্তু
নাঃ,
পরিচালক চমচম দাশ
আর সময় দিতে রাজী হোলো না
গায়ক শ্রী সন্দেশ সেনকে |
আরও অনেক ‘বিষয়’ রয়েছে
শেষ হতে যদি
রাত গড়িয়ে ভোর হয়ে যায় !
দর্শকদের সবাইকে
বাড়ী ফিরতে হবে তো !
. বিশেষ করে মেয়েছেলেদের
. আর বাচ্চা-কাচ্চাদের
. কী ভীষণ মুশকিল হবে তখন |
. পথে পথে মানুষের যে ভয় !
. তাই
. পরবর্তী বিষয়ের জন্য
. মাইকে ঘোষণা করা হোলো |
পাঞ্জাবের নামজাদা নাচিয়ে
মাষ্টার তন্দুরি সিং এর নেতৃত্বে
পাঁচটি ছেলে
আর পাঁচটি মেয়ে
সারাটা তাঁবু মাতিয়ে তুললো
মঞ্চের ওপর
ও’দেশের জনপ্রিয় লোক-নৃত্য
ভাঙরা নাচ দেখিয়ে |
গলায় ঢোলক ঝোলানো
মাষ্টার তন্দুরি সিং-এর
অপূর্ব দেহ-ভংগী দেখে
দর্শকদের সবাইকে একবাক্যে স্বীকার করতে হোলো----
হ্যাঁ,
সত্যিকারের একজন উঁচুদরের শিল্পী বটেন
এই তন্দুরি সিং |
নাচ প্রায় শেষ হয়ে অসেছে
এমন সময়
একটা ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে গেল----
উড়িষ্যার আরিষা মহাপাত্র মশাই
তাঁর বিরাট দেহখানা নিয়ে
নড়েচড়ে বসতে গিয়ে
চেয়ার ভেঙে
এক্কেবারে পপাত ধরণীতলে |
ব্যস্ত হয়ে ছুটে এলো স্বেচ্ছাসেবকেরা,
উঠে দাঁড়ালেন আশ-পাশ থেকে অনেকেই |
বেশ একটা জটলার সৃষ্টি হোলো |
মহাপাত্র মশাইকে
ধরে উঠিয়ে
একখানা মজবুত চেয়ারে বসানো হলে
আবার জলসার কাজ সুরু হোলো |
এবারে
পুরো আধ ঘন্টা ধরে
পূর্ব কল্যাণ রাগে
সেতার বাজিয়ে শোনালেন
গুজরাটের স্বনামধন্য সেতারী
শ্রী আরদিয়া দোশী |
সেতার বাদন শেষ হওয়ামাত্র
জনাকয়েক গুজরাটি শ্রোতা
দাঁড়িয়ে উঠে
দাবী জানালো
আর একটি রাগ বাজিয়ে শোনাবার জন্যে |
কিন্তু,
গোলগাল ভদ্র-চেহারার সেতার -শিল্পী
শ্রী আরাদিয়া
হাত জোড় করে
বিনয়-নম্র ভাষণে
ক্ষমা চাইলেন তাদের কাছে, আর
বললেন-----
গুজরাটি ভাইদের আনন্দ দেবার জন্যে
আজকে এই জলসাতেই
সর্বশেষ পরিবেশন করা হবে
বিখ্যাত গরবা নৃত্য |
. এই কথা শুনে
. একটা আনন্দের হুল্লোড় বয়ে গেল
. গুজরাটি শ্রোতাদের ভেতর |
. অবশ্য,
. দুঃখের বিষয় এই যে
. শেষ পর্যন্ত
. গরবা নৃত্য দেখানো আর হয়ে ওঠে নি ;
. তার আগেই
. বিপর্যয়টা ঘটে গিয়েছিল |
যাক সে কথা,-----
এখন দ্যাখো---
মাথায় গেরুয়া রঙের পাগড়ি বাঁধা,
কপালে তিলক কাটা,
হাতে একটা একতারা নিয়ে
মন-ভোলানো সুরে বাউল গান গাইতে গাইতে
মঞ্চের ওপর
ও কে এসে দাঁড়ালো ?
. গৈরিক পাগড়িতে
. মাথাটা ঢাকা,
. কপালেতে রসকলি
. যতনে আঁকা ;
. একতারা বাজে হাতে
. পিড়িং পিড়িং,
. গান গায়, লাফ মারে
. তিড়িং বিড়িং |
. চারদিকে ধ্বনি উঠলো----
. আহা, আহা, মধু, মধু |
. অচিরেই মাইকে
. গায়কের নাম প্রচারিত হোলো---
. শ্রীরসকদম্ব বৈরাগী |
. রসকদম্ব বাবাজী
. নিজের রচিত গানে
. নিজের সুরে
. প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিটকাল
. শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখে বিদায়-গ্রহণ করলো |
. তার একতারার মিষ্টি রেশটি
. অনেকক্ষণ ধরে জেগে রইলো সকলের কানে |
এই বার পরিচালক চমচম
একটা নতুন জিনিস পরিবেশন করলো
এই জলসাতে |
সে ছড়া কেটে বললো---
নাচ দেখে গান শুনে
. দেহ--মন শ্রান্ত,
এবারে নতুন কিছু
. চায় চোখ কান তো !
তাইতো এনেছি ভাই
. রাজধানী হইতে
তোমাদের সাথে দুটো
. হেসে কথা কইতে ;
জল-কচুরি যে নাম
. মোরা বলি ফুচকা-ই
গুপচুপ-ও বলে কেহ ;
. সারা দেশে জুড়ি নাই |
দর্শকদের মধ্যে একটা চাপা খুশির
গুঞ্জন শোনা গেল |
চমচম আবার সুর পাল্ টে বললো----
. ফুচ্ কা দাদা মনটি সাদা
. আয়রে তাড়াতাড়ি,
. মুচকি হেসে মঞ্চে এসে
. ভাঙরে রসের হাঁড়ি |
. ফুচকা দাদা আয়,
. সময় বয়ে যায় ;
. জাঁক দেখিয়ে তাক লাগিয়ে
. ছোটা রেলের গাড়ী ||
. কিন্তু,
. রেলগাড়ী তো নয়
. রেলগাড়ীর চাকার মত
. অসম্ভব জোরসে বনবন করে
. ঘুরপাক খেতে খেতে
. হাস্যরসিক শ্রীমান ফুচকা এসে
. মঞ্চের ওপর হঠাৎ একদম স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো |
. সকলে অবাক হয়ে দেখলো
. ফুচকার মাথার ওপর
. বিরাট একটা মাটির হাঁড়ি |
সে চমচমকে বললো-----
. চমচম-ভাই,
. ধরতো দেখি
. নামাই হাঁড়ি ;
খুব হুশিয়ার
. আস্তে দাদা
. বেজায় ভারী ||
মাথার ওপর থেকে হাঁড়িটা নামাতে
চমচম সাহায্য করলো ফুচকাকে |
তখন মনের আনন্দে
হাঁড়িটার ওপর দিয়েই
ফুচকা কয়েকটা তুড়িলাফ মারলো |
তারপর
ডানহাতের বুড়ো আঙুলের ডগাটা
মুখের ভেতর পুরে
এবং এক অদ্ভুত ভংগিমায় শরীরটা বেঁকিয়ে
আবার
চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো |
দর্শকদের মধ্যে কে একজন
( বোধহয় রসগোল্লা রায়-ই হবেন )
চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস্ করলেন ফুচ্ কাকে---
ওটা কিসের হাঁড়ি ?
ফুচকা ফিক্ করে হেসে বললো----
মাটির, মাটির |
এবারে
একজন নয়, তিন-চারজন দর্শক
চেঁচিয়ে উঠলো একসংগে ----
বলি, হাঁড়িটার ভেতর আছে কী ?
আছে কী !
আবার হাসলো ফুচকা,
বাঁই বাঁই করে চরকী-পাক ঘুরে নিলো বার কয়েক,
তারপর দুলে দুলে নাচতে নাচতে বিচিত্র সুরে
গান জুড়ে দিলো----
. টলোমল টলোমল
. টল টল টল,
. ঝাল-ঝাল টক-টক্
. তেঁতুলের জল |
. খানিক মেশানো নুন,
. বলবো কী কত গুণ,
. খেলে পরে সিঁটকেও
. পাবে বুকে বল |
. টল-টল-টল ||
. টল-টল-টল,
নাচ আর গান থামিয়ে
একটি ছুটে ভেতর থেকে
ইয়া মোটা একটা লাঠি নিয়ে এলো ফুচকা |
লাঠিটাকে বার-কয়েক অসম্ভব বেগে ঘুরিয়ে
সে বলল-----
রাশিয়ার বন থেকে আনা মোর লাঠি এ’-----
এক্ষুনি দ্যাখো আমি হাঁড়ি দেবো ফাটিয়ে |
এই না বলে
মোটা লাঠিটা মাথার ওপর তুলে সে হাঁকলো---
দু-উ-উ-উ-ই !
দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ,
বিশেষ করে মহিলারা
প্রচন্ড শব্দ হবে ভেবে
আঙুল দিয়ে নিজ নিজ কান সজোরে চেপে ধরলো |
কিন্তু----
‘তিন’ কথাটা উচ্চারণ করবার আগেই
বাজ-পড়ার মত
ভীষণ আওয়াজ হোলো একটা,
আর
কি আশ্চর্য !
হাঁড়িটা তো ফাটলো না,
তার পরিবর্তে
ফুচ্ কা নিজেই
দু’ হাতে পেট চেপে ধরে
চীত্কার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো |
. এ’ও ফুচকার একটা মজার খেলা---
. এই ভেবে দর্শকরা সবাই
. প্রাণখুলে হেসে উঠলো |
কিন্তু
পরক্ষণেই তাদের মুখের হাসি
মুখেই মিলিয়ে গেল |
. তারা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো
. -----মানুষ, মানুষ !
. -----আবার বন্দুকের আওয়াজ হোলো
. ------ গুরুম্, গুরুম্ |
[ তিন ]
শিকারী--দলটাতে
ছিল মোট পনেরো জন ;
তার মধ্যে একজন মেয়ে |
মেয়েটির হাতেও বন্দুক |
তারা এসে তাঁবুটা ছেয়ে ফেললো |
ওদের ভিতর সবচেয়ে লম্বা লোকটি----
যার নাম জম্বু,
সে বললে----
ওরে ব্বাপ্ স,
এত রকমারী খাবার একসংগে
সাত জন্মেও তো দেখিনি !
শংকর হেঁকে বললে----
এই জম্বু সাবধান,
একটা খাবারও যেন
হাত থেকে ফস্ কে না যায় !
জম্বু বললে ----হুঁ :,
আমার নাম শ্রীজম্বুনাথ সরখেল,
আমার হাত গলে পালিয়ে যাবে
এমন সাধ্যি কার ?
এই রইলুম আমি গেটে পাহারা |
. টলোমল টলোমল
. টল টল টল,
. ঝাল-ঝাল টক-টক্
. তেঁতুলের জল |
. খানিক মেশানো নুন,
. বলবো কী কত গুণ,
. খেলে পরে সিঁটকেও
. পাবে বুকে বল |
. টল-টল-টল ||
. টল-টল-টল,
নাচ আর গান থামিয়ে
একটি ছুটে ভেতর থেকে
ইয়া মোটা একটা লাঠি নিয়ে এলো ফুচকা |
লাঠিটাকে বার-কয়েক অসম্ভব বেগে ঘুরিয়ে
সে বলল-----
রাশিয়ার বন থেকে আনা মোর লাঠি এ’-----
এক্ষুনি দ্যাখো আমি হাঁড়ি দেবো ফাটিয়ে |
এই না বলে
মোটা লাঠিটা মাথার ওপর তুলে সে হাঁকলো---
দু-উ-উ-উ-ই !
দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ,
বিশেষ করে মহিলারা
প্রচন্ড শব্দ হবে ভেবে
আঙুল দিয়ে নিজ নিজ কান সজোরে চেপে ধরলো |
কিন্তু----
‘তিন’ কথাটা উচ্চারণ করবার আগেই
বাজ-পড়ার মত
ভীষণ আওয়াজ হোলো একটা,
আর
কি আশ্চর্য !
হাঁড়িটা তো ফাটলো না,
তার পরিবর্তে
ফুচ্ কা নিজেই
দু’ হাতে পেট চেপে ধরে
চীত্কার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো |
. এ’ও ফুচকার একটা মজার খেলা---
. এই ভেবে দর্শকরা সবাই
. প্রাণখুলে হেসে উঠলো |
কিন্তু
পরক্ষণেই তাদের মুখের হাসি
মুখেই মিলিয়ে গেল |
. তারা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো
. -----মানুষ, মানুষ !
. -----আবার বন্দুকের আওয়াজ হোলো
. ------ গুরুম্, গুরুম্ |
[ তিন ]
শিকারী--দলটাতে
ছিল মোট পনেরো জন ;
তার মধ্যে একজন মেয়ে |
মেয়েটির হাতেও বন্দুক |
তারা এসে তাঁবুটা ছেয়ে ফেললো |
ওদের ভিতর সবচেয়ে লম্বা লোকটি----
যার নাম জম্বু,
সে বললে----
ওরে ব্বাপ্ স,
এত রকমারী খাবার একসংগে
সাত জন্মেও তো দেখিনি !
শংকর হেঁকে বললে----
এই জম্বু সাবধান,
একটা খাবারও যেন
হাত থেকে ফস্ কে না যায় !
জম্বু বললে ----হুঁ :,
আমার নাম শ্রীজম্বুনাথ সরখেল,
আমার হাত গলে পালিয়ে যাবে
এমন সাধ্যি কার ?
এই রইলুম আমি গেটে পাহারা |
. টলোমল টলোমল
. টল টল টল,
. ঝাল-ঝাল টক-টক্
. তেঁতুলের জল |
. খানিক মেশানো নুন,
. বলবো কী কত গুণ,
. খেলে পরে সিঁটকেও
. পাবে বুকে বল |
. টল-টল-টল ||
. টল-টল-টল,
নাচ আর গান থামিয়ে
একটি ছুটে ভেতর থেকে
ইয়া মোটা একটা লাঠি নিয়ে এলো ফুচকা |
লাঠিটাকে বার-কয়েক অসম্ভব বেগে ঘুরিয়ে
সে বলল-----
রাশিয়ার বন থেকে আনা মোর লাঠি এ’-----
এক্ষুনি দ্যাখো আমি হাঁড়ি দেবো ফাটিয়ে |
এই না বলে
মোটা লাঠিটা মাথার ওপর তুলে সে হাঁকলো---
দু-উ-উ-উ-ই !
দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ,
বিশেষ করে মহিলারা
প্রচন্ড শব্দ হবে ভেবে
আঙুল দিয়ে নিজ নিজ কান সজোরে চেপে ধরলো |
কিন্তু----
‘তিন’ কথাটা উচ্চারণ করবার আগেই
বাজ-পড়ার মত
ভীষণ আওয়াজ হোলো একটা,
আর
কি আশ্চর্য !
হাঁড়িটা তো ফাটলো না,
তার পরিবর্তে
ফুচ্ কা নিজেই
দু’ হাতে পেট চেপে ধরে
চীত্কার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো |
. এ’ও ফুচকার একটা মজার খেলা---
. এই ভেবে দর্শকরা সবাই
. প্রাণখুলে হেসে উঠলো |
কিন্তু
পরক্ষণেই তাদের মুখের হাসি
মুখেই মিলিয়ে গেল |
. তারা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো
. -----মানুষ, মানুষ !
. -----আবার বন্দুকের আওয়াজ হোলো
. ------ গুরুম্, গুরুম্ |
[ তিন ]
শিকারী--দলটাতে
ছিল মোট পনেরো জন ;
তার মধ্যে একজন মেয়ে |
মেয়েটির হাতেও বন্দুক |
তারা এসে তাঁবুটা ছেয়ে ফেললো |
ওদের ভিতর সবচেয়ে লম্বা লোকটি----
যার নাম জম্বু,
সে বললে----
ওরে ব্বাপ্ স,
এত রকমারী খাবার একসংগে
সাত জন্মেও তো দেখিনি !
শংকর হেঁকে বললে----
এই জম্বু সাবধান,
একটা খাবারও যেন
হাত থেকে ফস্ কে না যায় !
জম্বু বললে ----হুঁ :,
আমার নাম শ্রীজম্বুনাথ সরখেল,
আমার হাত গলে পালিয়ে যাবে
এমন সাধ্যি কার ?
এই রইলুম আমি গেটে পাহারা |
. পঞ্চানন বললে------ একেই বলে বরাৎ জোর,
. মুখ দেখে কার হোলো ভোর !
. করতে এলাম হরিণ সাবাড়,
. মিললো দেখি মিষ্টিখাবার !
এখান থেকে প্রায় আধমাইলটাক দূরে
গংগার ওপর
শিকারী দলের ‘লঞ্চ’-টা অপেক্ষা করছিল |
এরা সবাই খাবারগুলোকে উঠিয়ে নিয়ে
আনন্দে ডগমগ হয়ে
লঞ্চে গিয়ে হাজির হোলো |
অবশ্য
তার আগে দলের সবাই
যে যত পেরেছে
পেটপুরে খেয়ে নিয়েছে
অনেক অনেক মেঠাই |
. ওরা সব কুড়িয়ে কাছিয়ে নিয়ে গেল |
. কেউ রেহাই পেলো না
. ওদের হাত থেকে |
. ফুচকার তেঁতুল জলের হাঁড়িটা
. পড়ে রইলো জলার ধারে |
. আর
. কোনক্রমে
. আপন প্রাণটা নিয়ে গড়াতে গড়াতে
. সাংবাদিক তিলের নাড়ু
. পালিয়ে আসতে পেরেছিল সেখান থেকে |
সে এসে এই নিদারুণ দুঃসংবাদটা জানিয়েছিল
‘জলযোগ’ পত্রিকার অফিসে |
খবরটা শুনে
করুণ হাসি হেসেছিলেন
স্বামী আমসত্ত্বানন্দজী মহারাজ,
বলেছিলেন-----
দ্যাখো, দ্যাখো,
সাধু-সন্ন্যেসীদের কথা
অমান্য করবার ফলটা কেমন হাতে হাতেই পেলো দ্যাখো
নাস্তিক ছোকরা চমচম দাশ !
. শিকারী-দলটা কিন্তু
. কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে নি যে,
. সুন্দরবনের এই নির্জন জলার ধারে
. ভারতের সেরা খাবারগুলো
. কেমন করে এসে
. একসংগে জড়ো হোলো !
. ওই সীমা নামে শিকারী-মেয়েটির
. অবশ্য দৃঢ় বিশ্বাস যে
. জলার ধারে খাবারগুলো সেদিন
. নিশ্চয়ই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল !
. কারণ,
. তার হাতের গুলি লেগেই
. ফুচ্ কার পেটটা
. ফুটো হয়ে গিয়েছিল কিনা !!
**************************************************************************************