কবি মৃদুল দাশগুপ্তর কবিতা
*
বর্গি হানা ২০০৬
মৃদুল দাশগুপ্ত
সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রতিবাদী কবিতা। এই কবিতাটি হুগলী জেলা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক 'প্রতিপক্ষ' পত্রিকাতে
১৬ - ৩০ এপ্রিল ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |

ওরা যদি এসে গায়ে হাত দেয়
মা-র কোল থেকে শিশু কেড়ে নেয়
শুরু হলে সেই কালো অধ্যায়
আমি বলবোই --- এটা অন্যায় |

সেই যুগ যদি এই যুগে আসে
গ্রামগুলি কাঁপে খাকি সন্ত্রাসে
ঘোরতর সেই সর্বনাশে
কৃষিজমি যায় নগরের গ্রাসে
আমি বলবোই --- সেটা অন্যায় |

ধনখেতে যদি নামে রাজ হাতি
অতি বিদ্যুতে নেভে দীপবাতি
শুরু হয়ে যায় বর্গী ডাকাতি
ফের এলে সেই কালো অধ্যায়
আমি বলবোই --- সেটা অন্যায় |

.       *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে
মৃদুল দাশগুপ্ত
সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রতিবাদী কবিতা। এই কবিতাটি 'পর্বান্তর' পত্রিকাতে মে-আগস্ট ২০০৭ এর সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে
এখন যদি না থাকি
কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়া
কেন তবে আঁকাআঁকি ?

নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে
যদি না-ই হয় ক্রোধ
কেন ভালবাসা, কেন বা সমাজ
কিসের মূল্যবোধ !

যে মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন
জঙ্গলে তাকে পেয়ে
আমি কি তাকাব আকাশের দিকে
বিধির বিচার চেয়ে ?

আমি তা পারি না | যা পারি কেবল
সেই কবিতায় জাগে
আমার বিবেক, আমার বারুদ
বিস্ফোরণের আগে |


.       *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
*
ধানখেত থেকে
মৃদুল দাশগুপ্ত
সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রতিবাদী কবিতা। এই কবিতাটি ৯/৩ ট্যামার লেন, কলকাতা-৭০০০০৯ থেকে প্রকাশিত
'কবিসম্মেলন' পত্রিকার জানুয়ারী ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |

১.
কিশোর ধানের চারা, শিশু ধান
. ওড়ে ধর্মবক
উদ্বেগে তাকিয়ে থাকি
আমিও তো কবিতা-কৃষক |

২.
দানব জেগেছে আজ
কী অবাক, তারও
. দুটো হাত
ঠেলা দাও
. হয়ে যাবে কাৎ |

৩.
রাজা ধানখেতে ছুটিয়েছে
. ঘোড়া
হতাহত পড়ে আছে
কেউ বা বুলেটে বেঁধা
. কেউ আধপোড়া |

.   *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রান্নাঘর আরও রান্নাঘর : প্রযুক্তি
কবি মৃদুল দাশগুপ্ত

কৃপাসিন্ধু বরাবর। করুণাবৃক্ষের ডালে অবিকল অনর্বাস আলো আঁধারির।
হয়তো বা লিচুগাছ, তোমাদেরই ; স্মরণে এসেছে আরও
.                        কুপ্রস্তাব প্যুক্তিবিদ্যার।
সহজ সহজ রান্না মনে হয় নতুন ছাত্রের দিকে ঠেলে দিয়ে তোমরা ঘুমোও।
.                        বহুবর্ণ তোমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বৃক্ষতলে দিনরাত্রি বসি। তোমরা কি ছুট্ দেবে
.                        পরিভাষা নিশ্চিন্ত না হলে ?

.                             *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ফুল
কবি মৃদুল দাশগুপ্ত

নিখিলের এক কণা পেয়েছি রান্নায় ধ’রে আকাশছাদের
ওপরে ভাসাই নৌকো, ঠিক জলযান নয়, যদি ফুল অস্ত্রচিকিত্সার
ভবিতব্য মেনে নেয়, তবেই তা ভাসে।
পুষ্পই বললাম, যারা বাগিচায় অসম্ভব ; মানো কতো
বয়েস হয়েছে। তবু গোপন হাসির সব রেণু
জলপথে শূন্যগামী। কী বলি অধিক, তুমি
.                        ওই দেখো মাঝির উনুন. . . . .

.                *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সফর
কবি মৃদুল দাশগুপ্ত

নিয়তি ব্রাহ্মণকন্যা, একদিন অন্ধকারে পথপার্শে পেয়ে
.                রাত্রি অসম্ভব জ্ঞানে বায়ুপথে শকটে তুলেছি।
পথেই ঘুমোতে বুঝি ? এই প্রশ্নে সে বলে সরল প্রাণে
.                        ---তুমিও কি অরন্ধনে থাকো ?

আজ গোপনেই বলি, এ ঘটনা সারল্যের নয়।
.                মুদ্রার ঝমঝম হারে---ডাকাতি ছিলো না ?
তবু, স্ত্রীলোকের হাসি! ---টাল খায় চাকা, ফের
.                        ঘোড়া যায় জল খেতে,
.                এমন কি রোঁয়া ওঠে আচমকা দিগন্তে কোথাও

.                *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
গৃহ
কবি মৃদুল দাশগুপ্ত

রূপ মাত্র অন্ধকার। সূর্যাস্তে নির্মিত গৃহে কে না জানে সন্ধ্যাই সকাল।
আমি তো ভূতের হাসি টের পাই দিবসেও, অধিকন্তু নিশীথের অর্থভেদ ক’রে
সঞ্চয় বাড়াই, দেখি চতুর্দিকে লাস্যময়ী বিবিধ রমণী।
কেউ বা ভাষার ভুলে দ্বারে উপস্থিত আর
.                        কারো কারো রন্ধনের ছন্দে মৃদু ত্রুটি।
পত্নী একজন হবে! সে ওড়ে সংকেতে তার কৌতূহল ধর্মের সমান ব’লে
.                                        উড়ন্ত আমিও---
হেঁটমুন্ড ঊর্ধ্বপদ, পিঠে বোঝা বাসনের, স্বপ্নে দেখি
.                        কন্যা ঘুমে, পুত্র যায় শিস দিতে দিতে

.                         *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঘোর
কবি মৃদুল দাশগুপ্ত

যে ক্ষুধা মেটায় স্বপ্নে, তার সঙ্গে চলেছো রমণী,
কল্পনার প্রসাধনে ; দেখো পালকি জলে ভাসমান।
সামান্য সামান্য ব’লে আমি দেখি শূন্যপথে পর্বতপ্রমাণ
রক্তমেঘে অট্টালিকা, ওখানে কী করছো তুমি! নামো, নামো, নির্ঘাৎ পতন!

নেমেছো তালুর ’পরে, ভাজো মত্স বর্ষায় খিচুড়ি
তখাছখী নিদ্রা যায়, দেখো যেন নিঃশ্বাসেও বিরক্ত করো না।
বাক্য রাখো মুঠো ক’রে, বাঁধো মন, যদি বা স্মরণ হয়
.                ইতিপূর্বে বাগিচায় নোলক চৌপাঠ!

বলি কী লাবণ্যপুঞ্জে, তোমাতেই সব সমাধান।
চন্দ্রযানে নাম লিখি, তাও দেখো ঘটিবাটি খুচরো ঠন্ ঠন্।
কাটে না চক্ষুর ঘোর, তাই দেখি, রাত্রি ছাড়, দিনে ১০টা ১২টা ২টোয়---
আকাশে উলঙ্গ প্রায় নিয়তির মূর্তি উড়ে যায়

.                 *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দুর্ঘটনা
কবি মৃদুল দাশগুপ্ত

নিশীথে কেঁদো না নারী, ক্ষুধা এক অনিবার্য প্রণয়ের ফল ;
বলি কী ধর্মের কথা, যতো গ্রন্থ ততো দুর্ঘটনা।
দেখেছি ফুলের রক্ত---তাও পান করে লোকে সুখে নিদ্রা যায়,
তুমিও কি শিশুক্রোড়ে তরঙ্গে ভাসো না ?

গরিব দেশের ম্লান আকাশে উড্ডীন হয়ে মনে হলো দায়
.                                ঈশ্বরের কিঞ্চিৎ অধিক ;
তাই বাক্য, গুপ্ত বিদ্যা। পুস্তিকার প্রয়োজন সেই হেতু
.                                তোমাকে বোঝাতে ;
তুমি তো গ্রাহিকা মাত্র সারল্যের, ভাবো, যদি
.                লোহার গণিত এসে ভিন্নতর বাগিচা সাজায়!

.                 *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ক্লাউন
কবি মৃদুল দাশগুপ্ত

অন্ত্রনালীতে আজ লুকিয়ে এনেছি হীরা, তোমাদের দেশে,
আমাকে ফেরাবে ?
আমার সবুজ টুপি জঙ্গলে পড়ে আছে পাথরের নীচে
মেরো না আমাকে
এই যে আমার বাঁশি মহিষের ঘন কালো শিংধাতুমোড়া
এছাড়াও আর---
এনেছি তোমার জন্যে পালক-পোষাক, গামবুট পড়ে আমি
পাহাড় ডিঙিয়ে
কতো---কতো বেলা হলো খেতে দাও, দূরে কার ঘরবাড়ি
ভাঙা ঘড়ি, চার্চ
ভোর বেলা ভাঙিয়ে দেবে তো ঘুম ? এই শোনো, আমারও তো
ছিলো ডাকনাম

.                 *************************  

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর