কবি মৃণাল বসু চৌধুরীর কবিতা
*
পরিপূর্ণ স্নান                  
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

ধরুন পেছনে বাঘ
সামনে বিশাল এর গর্ভবতী নদী
ঘাটে বাঁধা
.            শেষ খেয়া প্রায় যায় যায়
.            সে-সময়
.            সামাজিক সভ্যতাসন্মত কোনো
.                   নান্দনিক নূপুর নিক্কণ
.                   নাকি
.                   পড়ি-মরি-ছুট
.             কোনটা যথার্থ হবে
.                   সে সমস্ত আপনি জানেন

.              আমি শুধু খেয়াঘাট
.                   জল ও ডাঙার মধ্যে মুদ্ধ বোঝাপড়া
.                  পারাপার
.                  পলায়ন জানি
.                         জানি আর্তিময় ব্যতিক্রমী ছুট

খুব বেশি জরুরী না-হলে
.            ঘোলাজলে      কে আর নামতে চায়
                       পরিপূর্ণ স্নানে

.   
                *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অমরাবতীর রোদে
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

সোনার হরিণ নই
তবু সারাক্ষণ
.          মারীচ বধের গল্প কেন যে শোনাও
ঐশ্বর্যপ্রেমিক নই
তবু আরব্যরজনী আর প্রাচীন মোহর
.          সমস্ত কাহিনি জুড়ে থাকে
পোষ মানা পাখি নই
.          তবু মাছরাঙা, বাজ বা শকুন এসে
.          উড়ে বসে তোমাদের সব উচ্চারণে
উদ্ধত ভ্রমর নই
তবু কেন          ফুলরেণু রঙিন কেশর
.                    গন্ধময় গোলাপবাগান
.           তোমাদের ভাষ্যপাঠে মূর্ত হয়ে ওঠে

গল্প   কাহিনি   কিংবা ভাষ্যপাঠে নয়
চোখ বুজলেই আমি শুধু
.        অমরাবতীর রোদে
.                  দলছুট হরিণীর
.                  ছোটাছুটি দেখি
দেখি   বিদেহী নারীর কাছে
.        পাশাপাশি শুয়ে আছে
.                 উদাসী রাখাল
.         স্বপ্নবাহী পঞ্চমীর চাঁদ

.       
   *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অনেকদিন
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

অনেকদিন
মধ্যরাতে  বৃষ্টিপাত নেই
নেই পরবাসী পাখিদের
.      অস্থির উড়াল
অনেকদিন
দুপুরবেলার রোদ
.         কষ্ট দিচ্ছে না তেমন
অনেকদিন
সেই একলা যুবক
দয়রজায় কড়া নাড়ছে না আর
বুকের বাঁদিকে তীব্র যন্ত্রণায়
.        অবশ হচ্ছে না স্নায়ু
.        শিরা উপশিরা

অনেকদিন
.      কোন যুদ্ধ নেই
খোলামাঠে একা একা
.     শুয়ে থাকা নিয়ে
.     নিজের বিরুদ্ধে কোন
.     অভিযোগ নেই

.              অনেকদিন

.        *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
যদি ফিরে আসি
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

যতটুকু দিতে পারো        দিও
যেটুকু পারো না
রঙীন কাগজে মুড়ে
.                সেটুকুও রেখে দিও বিছানার নিচে
যতটা এগোতে পারো               এসো
যেটুকু পারো না
সে দূরত্ব সঙ্গোপনে
.                রেখে দিও উদাসীন চোখের ভেতরে

যতটা রাখতে পারো রাখো
যেটুকু পারো না
চন্দন মাখিয়ে তাকে
.                রেখে দিও স্মৃতিকোষে
.                              রক্তমাখা বীজে

নিঃশব্দ দহনে কাটে            দিন
অস্থির ভ্রমণে কাটে            দিন
প্রাচীন তৃষ্ণায় কাটে            দিন

রেখে দিও
.            সব রেখে দিও
যদি ফিরি
.            কোনদিন  যদি ফিরে আসি

.     
        *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অঘোষিত যুদ্ধের বিষাদ
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

ভালোবাসা যেখানে ফুরোয়
.             সেখানেই জন্ম নেয় ঘৃণা
শোলার মুকুট থেকে
.      ঝরে পড়া অহংকার
.            মাটি খুঁড়ে নিয়ে আসে পাপ
মুখাপেক্ষী  মানুষের হাত
.            নষ্ট করে ইতিহাস
.                 প্রকৃত গৌরব
মঞ্চের উপর থেকে
.          মিথ্যাচারে
.          কেনা কিছু পায়রা উড়িয়ে
নিঃশব্দ আরালে যারা
.          ঢেকে রাখে রক্তমাখা নখ
শরীরে শরীর রেখে
.          যারা খোঁজে বিশল্যকরণী
তারা আজ ধুলোপায়ে
.          ঢুকে গেছে অন্দরমহলে

অঘোষিত যুদ্ধের বিষাদ
.       
   বিভাজনে
.      
    শুধুমাত্র আগুন ছড়ায়

.             *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তীব্র আগুন
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

আমার সঙ্গে লড়াই করে পারবে না হে
যৌনকাতর ছোবল মেরে পেছন থেকে
যতই তুমি শূন্য করো বিষের থলি
ধর্মকাঁটা কখন নড়ে বাতাস জানে

পাঞ্জা লড়ে আমার সঙ্গে পারবে না হে
আগুন আমার জন্মদাতা মরণপ্রতীক
ঘৃণ্য জিভে ঠোঁটে তোমার অসংখ্য কীট
নষ্ট আঙুল ছড়ায় শুধু অস্থিরতা

তোমার সঙ্গে লড়াই আমি করবো না হে         
আঁধারপ্রিয় বিপথগামী ছিন্ন মেধার
কথামৃতে ঈর্ষা এবং পাপের ছায়ায়
প্রতিপক্ষ হবার কোনো যোগ্যতা নেই

ধর্মচাকা ঘুরবে যখন মেঘ বাতাসে
মন্ত্রপাঠে স্পষ্ট হবে সাপের খোলস
তুমি যখন মাটির নিচে অন্ধকারে
কাঠের চিতায় আমি তখন তীব্র আগুন

.           *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বর্ণহীন বিশ্রাম
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

যে সমস্ত স্বপ্নের বেলুন
.         কোনদিন আকাশে ওড়েনি
.    আমার খেলায় তারা সঙ্গী হয় রোজ
যে সব নদীর ঘাটে কোনোদিন মানুষ আসে না
.     সেখানে জলের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাই
.     ঘাটে বসে ছুঁয়ে দেখি নির্জন ছায়াকে
যে মন্দিরে কোনোদিন সন্ধ্যারতি নেই
.     সেখানেই ভয়ে ভয়ে মাথা রাখি
.           অন্ধকার বিগ্রহের পায়ে
যে নারীর পদপাতে চঞ্চলতা নেই
.      চোখের ভেতরে নেই নিঃশব্দ ভ্রমর
.            তাকে নিয়ে
.      সবুজ মাঠের শেষে
.            চড়কের মেলা দেখে আসি

যে যুবক
.       কেবলই চাঁদের দিকে হাঁটে
.             সারাদিন হেঁটে হেঁটে
.                   নিঃস্ব হয়ে
.              নিষ্ঠাহীন সাঁকোর ওপার থেকে
.                    ফিরে আসে গোধূলিবালায়

আমি তাকে
.       ধুলোমাখা জামা ও গামছা দিয়ে
.               বর্ণহীন বিশ্রাম শেখাই
মুক্তির উপায় আর
.       স্বাধীনতা নিয়ে
.             যত খুশি গবেষণা হোক
মানুষের পাশে এসে শেষ অবধি মানুষই দাঁড়ায়

.       
        *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
যারা সৎ ছিল
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

যারা সৎ ছিল তারা ঠিক সতর্ক ছিল না

তারা চেয়েছিল
স্বপ্ন ও বাতাস তীব্র স্বাধীন থাকুক
ভেজা মাটি থেকে ইচ্ছেমতো উড়ে যাক মশা
পাখিদের ডানায় জমুক স্মৃতি
সাবলীল রোদ থেকে যে যেমন চায়
.          উজ্জ্বলতা মেখে নিক
.          উল্লাসে কাঁপুক চরাচর
অসংখ্য ফুলের নীল
.          মিশে যাক সমুদ্রের নীলে
উদ্দাম তরঙ্গ থেকে রঙ নিয়ে
.          আরো নীল সবুজ আকাশ
ভগ্নস্তূপ থেকে ধুলো ঝেড়ে মানুষেরা বেড়িয়ে আসুক


তাদের ছিল না ভয় তাই তারা সতর্ক থাকেনি
ছিল না বিনষ্ট লোভ তাই তারা হিসেবী ছিল না
মুঠো ভরা অবিশ্বাস
সাবধানী নিয়ত সজাগ চোখ
বেড়ালের নিঃশব্দ গোপন খেলা
তৃষ্ণার্ত পৌরুষ
এ সমস্ত আয়ত্তে ছিল না
.                   তাই
বারম্বার হাওয়া এসে ছিন্নভিন্ন করেছিল তাদের বসতি

যারা সৎ ছিল
.              নিজের স্বপক্ষে তারা কিছুই রাখেনি

.            
     *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মুগ্ধ ইতিহাস
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

এ আমার ভিটেমাটি
.       জন্মদাগে এ মাটির চিহ্ন লেগে আছে

শীতল শৈশব
বিপন্ন কিশোরবেলা
পরিশ্রমী অস্থির যৌবন
.        মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের আড়ালে
.         জমে থাকা প্রাচীন বিষাদ
এ  সমস্ত ভুলে
.         মুক্তিকামী অপূর্ণ ইচ্ছেরা জানে
আমাদের রক্তে ঘামে
.          এ মাটির স্বাধীনতা সমস্ত বৈভব
.          এ মাটির শরীরে মেধায়
.                    আমাদের তীব্র বেঁচে থাকা


এ মাটি স্বপ্নের মাটি
একে ঘিরে আমাদের মায়াময় শাশ্বত জীবন
.                     অলৌকিক আদিম ভ্রমণ

ক্ষমতার লুকোচুরি নয়
প্রেমহীন রক্তপাত নয়
অপবিত্র অস্থিরতা নয়
এ মাটির গর্ভ থেকে ফুটে ওঠে আনন্দকুসুম
.                        আমাদের মুগ্ধ ইতিহাস

.                 *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ধর্ম বা আইন
কবি মৃণাল বসু চৌধুরী

আমাদের মধ্যে কোন ধর্ম বা আইন নেই
নেই পরি
চ্ছন্ন কোন চুক্তি
.                 যার কাছে দায়বদ্ধ প্রেম
নেই স্বপ্নের নূপুর
.                 নিরাপত্তাময় স্বপ্নের উঠোন
.                 নেই কোন নিরিবিলি সাঁকো
যে কোন সময় তাই
.                 যাই বলে চলে যেতে পারো

আমাদের মধ্যে কোন ধর্ম বা আইন নেই
.                 আছে অস্পষ্ট আকাশ
.                 আছে ধূলোঢাকা সবুজ ডিভান
.                 অন্তর্লীন প্রসন্ন সোহাগ
.                 আছে শীতল সম্ভ্রম

নির্ভীক শপথহীন
.                  একান্ত স্বাধী
.                  মাটির ওপরে তাই
.                  চালাঘর ভেঙে দিয়ে
.                  “এই শেষ”
.                  বলে চলে যাওয়া
হয়তো বা আপাতনিষ্ঠুর
.                   সামাজিক আইনবিরুদ্ধ কিছু নয়

.                 *****************             

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর