কবি মৃত্যুঞ্জয় সেনের কবিতা
*
পুনর্বার ভালবাসা    
কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন

ভালবাসা নিষ্পলক, ছন্নছাড়া ভিক্ষুক
.        এবং অজ্ঞ, অন্তরে বিবর।
ভালবাসার রাস্তার ধূলো
.        ঝড়ে নটরাজ, বর্ষায় তার তপোভঙ্গ ;
.        আর্য মহিমার সন্ততি সে
ভালবাসা বিশাল বৃক্ষ
.        অনন্ত অপেক্ষা তার
.        বিস্তারতায় দুরন্ত নেশা,
.        সে অসম্ভব ছায়া
ভালবাসা পরিপূর্ণ সংখ্যা, স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রিত নয়,
নির্মম বিচিত্রতায় আন্দোলিত হয়

পুনর্বার ভালবাসা মন্থন শেষে অমৃতের মতো
ভালবাসা কঠিন প্রতিজ্ঞা, মহাকাব্যের সত্য ;
মুহুর্ত ও অনন্ত, এই ভালবাসা

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বেঁচে থাকবে বাগান    
কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন

বাগানের ধ্রুপদী মানচিত্র কতখানি করেছে গ্রাস নরকের অন্ধকার
কতখানি হয়েছে ক্লিষ্ট স্বর্গীয় বাগান
নির্দেশ ছিল এই নিয়ে তদন্ত করার
নাবার্ড থেকে ঋণ নিয়ে বাগিচার মালিকরা
তিন “ম” তে উড়িয়ে দিয়েছে কিনা,
বাগানের শরীরে কোথায় কতটা ক্ষত,
গোপন রোগ নিয়ে কতখানি টলমল বাগান,
নির্দেশ ছিল এই সব তদন্ত করার।

অমল বর্ষার কাছে দাঁড়িয়ে দেখে নিয়েছি
গোপনীয়তা এক বে-আক্কেলে অভিশাপ,
থাকে না চাপা কোনদিন আসন্ন প্রসবার শরীরের মত,
বুঝে গেছি তদন্তে গিয়ে, বিশাল বাগানের বন্দীরা
এক পা এক পা করে সমতলের দিকে পৌঁছতে চাইছে ;
যদিও বাগান কিছুটা উলুতে ঢাকা,
কোথাও বা বেওয়ারিশ গরু মোষের দল
তবুও ওরা নিজেদের রাজ্যপাটে নিজেদের পরাজয়ে বিব্রত
দেবদীরু গাছের মত দাঁড়িয়ে থাকলেও ওরা মত্ত হাতির মত অস্থির

নির্দেশ ছিল মন্তব্য করার :
হতচ্ছাড়া বাগানের আদৌ আছে কি কোন প্লাশ পয়েন্ট
রেড স্পাইডারে আক্রান্ত পাতার রঙ হবে কি সমুদ্র ?
তাই ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম,
নতুন লাগানো চারাগুলো পরম সুন্দর হতে আর কত দিন নেবে
দেখছিলাম, কিছু গাছ হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে উপুর হয়ে কিভাবে,
সত্যি সত্যি একদিন এইসব সাজানো বাগান শুকিয়ে যাবে না তো ?

কি লিখবো তদন্ত রিপোর্টে।
আসলে মাত্র একটি জীবনে কোন বাগান সম্পূর্ণ দেখা যায় না,
দেখেছি কেবল ব্যাকুলতায় ভরা ঠাসবুননের একটি বনফুল গাছের পাশে
বিপুল বিস্ময় চিহ্নের মত একটি সাপ---
সৌন্দর্যখনির এক মূর্তিমান রক্ষক।
দেখেছি, একনো প্রগাঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই নিষিদ্ধ ফলের গাছটি
তাই লিখেছিলাম,
জায়গা বদল করতে করতে বেঁচে যাবে, বেঁচে থাকবে বাগান

.                 *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মুখোমুখি দুই মাংস ব্যবসায়ী    
কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন

ঝুলন্ত গাছ থেকে চামড়া ছাড়িয়ে
.        নিজেদের অঙ্গে জড়িয়েছেন দুই মাংস ব্যবসায়ী
ভালোবাসার কবিতা হাইজ্যাকিং করে তুলে এনে
.        চপার দিয়ে কেটেছেন সারারাতদিন
জ্যোত্স্নাকে সংসারী জরি পরাবার জন্যে
.        ধারাপাত পড়িয়েছে কতকাল

লোকদুটো এখন মৌন
লোকদুটো মুখোমুখি বসে ঘাস ছিঁড়ছে

.          *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আমি ধাবিত    
কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন

চোখ মেলতেই দেখলাম,
গাছ অশ্বখুড়ের শব্দ তুলে ছুটছে
আমি তখনই ধাবিত
অশ্বখুরের শব্দ শিশুদের শ্লেটের ওপরে রেখাচিত্র
কে দেখে সে চিত্র ? কেন দেখে ?

হামাগুড়িদাদুর কাঁধে দেড় বছরের শিশু হই আমি
আমার শ্লেটের গাছ রক্তিম, সূর্যের মতো
সূর্য দেখেই আমি ধাবিত
গাছ তার পাতাগুলো ছড়িয়েছে সময়ের দিকে
বাতাসের দিকে
ঐ গিরগিটি আকাশ পর্যন্ত
সুতরাং আমি ধাবিত
গাছ সুন্দর নামক মেঘ আনে, আনে স্বপ্নের বৃষ্টি
সে সব খিলখিল আনন্দে নেমে আসে আমার ঠোঁটে
তখন পদ্মহাঁস বা হাঁসপদ্মের জলাশয় উপস্থিত
আমি ধাবিত
সবুজ পাতাদের অলৌকিক আলোতে
গলা থেকে পা পর্যন্ত আমি ধাবিত।
উড়তে উড়তে সব পাতা পরীর ডানা
আমি ধাবিত সঙ্গে সঙ্গে
আমি আবহমান ধাবিত

আমি এখন অন্বেষণে, জানতে চাই
গাছের পাতারা তাদের পদচিহ্ন কোথায় আঁকে
জানতে চাই
মানুষ তার নিজস্ব ছবি কোথায় রাখে ?

.          *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর