কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যর কবিতা
|
কাজের লোক
কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
মৌমাছি মৌমাছি
কোথা যাও নাচি-নাচি
দাঁড়াও না একবার ভাই।
ঐ ফুল ফুটে বনে
যাই মধু আহরণে
দাঁড়াবার সময় তো নাই।
ছোট পাখি, ছোট পাখি,
কিচিমিচি ডাকি ডাকি
কোথা যাও বলে যাও শুনি।
এখন না কব কথা
আনিয়াছি তৃণলতা,
আপনার বাসা আগে বুনি।
পিপীলিকা, পিপীলিকা,
দল-বল ছাড়ি একা
কোথা যাও, শুনি যাও বলি।
শীতের সঞ্চয় চাই
খাদ্য খুঁজিতেছি তাই
ছয় পায় পিলপিল চলি॥
. ****************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
অঙ্ক-শঙ্কা
কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
ব’সে ব’সে অঙ্ক ক’ষে পারি নে আর ভাই
কিছুতে আর অ্যানসারটা মিলছে না যে ছাই।
. যোগ ক’রে মিলল না যখন,
. বিয়োগ ক’রে দেখ্নু তখন,
একে একে গুণ ভাগও তো ক’রতে ছাড়ি নাই
কিছুতে যে মিলছে না, তার উপায় কোথা পাই।
অঙ্ক নিয়েই খেটে-খেটে
সারা সকাল গেল কেটে,
ইংরেজীটা কখন করি,
গ্রামারই বা কখন পড়ি,
কখন করি হাইজিন আর জিওগ্রাফিটাই।
. মরুকগে’ আর সবকে পারি,
. অঙ্ক নিয়েই মারামারি,
. মাস্টারটা বড়ো খেঁকি,
. আমার ব্যথা বুঝবে সে কি!
. ছাত্রের কষ্ট দুঃখু ভেবে,
. নিজে কি তাই বুঝিয়ে দেবে ?
. জানে কেবল কানে ধরে দাঁড় করানোটাই!
একটি ঐ মাস্টারের জ্বালায়,
কোনও ছেলে স্বস্তি না পায়,
ও-ও এসেছে ইস্কুলে, নে’ অখণ্ড পেরমাই!
তাই মনেতে করেছি ঠিক,
জানলি বিরু, জানলি ফটিক,
জ্বালিয়ে দিয়ে এরিথমেটিক, পালিয়ে কোথাও যাই।
. ****************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
নববর্ষ
কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
আকাশ-তলে সাগর-জলে
. পেতে বিশাল রঙ্গভূমি
নেচে নেচে গেয়ে গেয়ে
. দিচ্ছ দেখা কে আজ তুমি ?
ভবিষ্যতে আঅধার-কোলে
. তোমার সকল অঙ্গ ঢাকা,
আশার চোখে দেখছি কেবল
. মুখখানি ও হাসি মাখা!
আসব বলে তুমিই কি হে
. নব দূর্বাদলে মিলে,
মাঠে ঘাটে হরিদ্বর্ণ
. আসনগুলো বিছিয়ে দিলে ?
গুল্ম তরু লতাগুলা
. বনের মধ্যে সাজিয়ে মঠ,
চার দিকেতে খুলে দিলে
. নানা রঙের দৃষ্যপট ?
ভিতর থেকে বেরিয়ে এল
. চেনা চেনা পাখিগুলি,
অভিবাদন করতে কি ভাই
. নিয়ে কিচির মিচির বুলি ?
এস এস নববর্ষ
. মোরাও সুখী তোমায় দেখে,
হাসি মাখা মুখটি কিন্তু
. অইখানেতে এস রেখে।
একটু আগে যার সনে এই
. কোলাকুলি করল সুখে,
এসেছিল সেও অবিকল
. তোমার মতো হাস্যমুখে।
রঙ্গ কত করবে বলে
. লোভ দেখালে কত শত,
গান শোনাতে অলি এল
. রূপ দেখাতে ফুল-বালা,
লতা এল ঘোমটা টেনে
. মাথায় ফুলের বরণ ডালা।
এই রকমে চোর সে চতুর
. সঙ্গে নে তার সঙ্গী কটা,
জুটে পুটে লাগিয়েছিল
. অভিনয়ের বড্ড ঘটা।
গেল যখন দেখি তখন
. হিসেব করে কি ছাই চুলো,
অভিনয় সে করে গেছে
. বিয়োগান্ত নাটকগুলো।
হাতে মাথা রাখতে গিয়ে
. দেখনু, হয়ে চক্ষু ফুটো
তপ্ত জলের নদী বয়ে
. ভিজে গেছে দণ্ড দুটো।
মাথায় আবার ছোট বড়
. এক শ আগুন জ্বেলে দেছে,
বুকে মাঝে হাত দে দেখি
. কি-যেন-কি হারিয়ে গেছে।
ওই বলে নয় একটা শুধু
. অমনতর এল কত,
কালের গায়ে আঁচড় রেখে
. পালিয়ে গেল চোরের মতো।
আশায় মজে মুখ চেয়েছি
. জানিনে যে চিনির ছুরি,
একশ চোখের মাঝখানেতে
. প্রাণের ঘরে করলে চুরি!
তাই বলি, তুই লোভ দেখিয়ে
. আর কেন ভাই জ্বালাস মিছে,
আজও আমার জ্বলছে পরান
. কামড়ে গেছে কালে বিছে।
করবি যত ভাল তা’ত
. জানতে আমার নাইক বাকি,
মনের মতো হয় যদি তোর ---
. একটা কথা বলে রাখি।
রঙ্গ সেরে বাজি মেরে
. যখন আবার ফিরবি ঘরে,
আমিও হব চোরের চেলা
. আমায় নে যাস সঙ্গে করে।
সন্দেহ হয় কথায় যদি
. ঘুচিয়ে দিব ভ্রান্তি আশু,
আশা যখন সঙ্নী মোর
. আমিো তখন চোরের জাসু।
পর ভেবে মোর পায়ে ঠেলে
. যাসনে ফেলে বলতেছি তাই,
তোর আমার সম্বন্ধ বড়
. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।
. ****************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
শেষ কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় সংকলিত ও সম্পাদিত কিশোর কবিতা সঞ্চয়ন, ১৯৯৫ থেকে।
গোকুলে মধু ফুরায়ে গেল, আঁধার আজি কুঞ্জবন। ( আর ) গাহে না পাখি, ফুটে না কলি, নাহিকো অলি-গুঞ্জরণ। দুলাতে মৃদু লতিকাবনে, খেলিতে নব কলিকা সনে, মধুরতর নাহি সে আর সমীর-ধীর-সঞ্চরণ॥ কাননে ঢালি জোছনারাশি, ভাসে না চাঁদ গোকুলে আসি, নাহি সে হাসি প্রমোদরাশি, নাহি সে সুখ সম্মিলন। জলদে শশী-মাধুরী ঢাকা বিষাদ যেন সকলে মাখা, শ্রীহীন তরু, শ্রীহীন লতা, শ্রীহীন চারু পুষ্পবন॥ অমিয় স্বর-লহরে মাখি স্কবধ করি পশু-পাখি, মধুরভাষী আর সে বাঁশী গাহে না গীত সম্মোহন। যমুনা পানে চাহিলে ফিরে, কপোল ভাসে নয়ন-নীরে, পরানে শুধু উছলি উঠে সনীল জলে সন্তরণ॥ নিবিড় বনে তমাল-ছায়, কোকিল-বধু গীত না গায়, সারিকা-শুক বিরস-মুখ বিগত প্রেম সম্ভাষণ। অধীর ব্রজবালকদল, না খায় ধেনু তৃণ কি জল, সজল আঁখি-ঊরধ-মুখে করিছে কি যে অন্বেষণ॥ প্রেমিক কে সে মধুরভাষী, বধিয়ে গেল গোকুলবাসী, ব্রজে কি আর বাঁশরী তার গা’বে না গীত সঞ্জীবন ? অধীর প্রাণে বিষম ক্লেশ, কেমনে করি এ দুখ শেষ বিনে শ্রীহরি কেমনে করি নয়ন-বারি সম্বরণ॥
. **************** . সূচীতে . . .
মিলনসাগর
|
আগমনী
কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় সংকলিত ও সম্পাদিত কিশোর কবিতা সঞ্চয়ন, ১৯৯৫ থেকে।
বর্ষা গেল আকাশ ধুয়ে, ফর্ সা হলো দিক্।
কেঁদে কেটে, হেসে ধরা উঠলো যেন ঠিক্॥
সকালবেলা চারিদিকে শিশির-ভিজা ঘাস।
শিউলি-তলা ছেয়ে পড়ে শিউলিফুলের রাশ॥
পুকুর-ডোবায় জল থৈ-থৈ, কানায় কানায় উঠে।
শালুক সুঁদি রক্তকমল ভাসছে তাতে ফুটে॥
ক্ষেতে আকের গাছ বেড়েছে, ঝুল্ ছে শসা গাছে।
খাল-বিল আর নদী ভরে গেছে নূতন মাছে॥
নবীন নধর সবুজ ধানে ভরে গেছে মাঠ।
বসুন্ধরা বসিয়ে যেন দেছে শোভার হাট॥
বর্ষাকালের মেঘে ঢাকা স্যাঁৎসেঁতে সেই প্রাণ।
ফর্ সা ফিকে রোদ দেখে আজ উঠ্ ছে গেয়ে গান॥
. ****************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
সোনামণির রাগ
কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় সংকলিত ও সম্পাদিত কিশোর কবিতা সঞ্চয়ন, ১৯৯৫ থেকে।
যায় রে যায় সোনামণি মামার বাড়ি যায়,
মায়ের উপর রাগ হয়েছে থাকবে না হেথায়।
. দিনরাত দুরন্তপানা
. ক’রে ক’রে ঘুরবে সোনা
বলতে কিছু পাবে না কো তোমরা তবু তায়,---
যায় রে যায় সোনামণি মামার বাড়ি যায়।
যায় রে যায় সোনামণি মামার বাড়ি যায়,
পোশাক প’রে পাল্ কি চ’ড়ে, সখের বেহারায়।
. মামা মামী আদর ক’রে
. সোনায় তুলে নেবে ঘরে,
সোনার মুখে সকল শুনে ব’কবে কত মায়,---
যায় রে যায় সোনামণি মামার বাড়ি যায়।
যায় রে যায় সোনামণি মামার বাড়ি যায়,
আয় সঙ্গে, কুনো বেড়াল, যাবি যদি আয়।
. মাছের মুড়ো দেবো তোরে,
. দুধ খাওয়াবে বাটি ভ’রে,
তুই বেড়াবি গরব ক’রে সোনামণির ছায়,---
যায় রে যায় সোনামণি মামার বাড়ি যায়।
. ****************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
প্যারীচরণ
কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
মাসিক বসুমতী, কার্ত্তিক ১৩৪১ (অক্টোবর ১৯৩৪) সংখ্যা থেকে।
শিক্ষাবীদ ও সমাজ সংস্কারক প্যারীচরণ সরকার (২৩.১.১৮২৩-৩০.৯.১৮৭৫) কে উত্সর্গ
করা কবিতা।
প্রদীপ্ত পাণ্ডিত্যপূর্ণ হৃদয়-ভাণ্ডার,
. কালিমার লেশশূন্য চরিত্র নির্ম্মল,
আশুতোষ কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য মাসিক বসুমতী, জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৯ (মে ১৯৩২) সংখ্যা থেকে।
বর্ষ পরে বর্ষ গত --- আজি সেই দিন, যে দিন ধ্বনিল তূর্য্য, বঙ্গের মানব সূর্য্য মহাদেব-মহাদেহে হইলা বিলীন। বিনা মহাজ্যোতি তাঁর বঙ্গভূমি অন্ধকার,
|
অভিনন্দন
কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
মাসিক বসুমতী, জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৯ (জুলাই ১৯৩২) সংখ্যা থেকে।
বঙ্গবাসী কলেজের অধ্যক্ষ শ্রীযুক্ত গিরিশচন্দ্র বসু এম.এ. মহাশয়ের অশীতিতম জন্মতিথি
উপলক্ষে।
হে সুধী, মঙ্গল-শঙ্খ আর হুলুধ্বনি
. ঘোষ্ছে অশীতিতম জন্মতিথি তব,
প্রশংসার প্রার্থী নও তুমি যে আপনি,
. তাই এই উত্সব এ বঙ্গে অভিনব।
পাশ্চাত্ত্যোর জ্ঞান-রত্নে হৃদয়-ভাণ্ডার
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস
কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
মাসিক বসুমতী, অগ্রহায়ণ ১৩৪১ (নভেম্বর ১৯৩৪) সংখ্যা থেকে।
বেদ-বেদান্তাদি শাস্ত্র বহু পরিশ্রমে
. যত্নে চর্চা করি যাহা না বুঝে বিদ্বান,
না পড়িয়া তুমি, দেব, অবলীলাক্রমে