কবি নবনীতা দেব সেন-এর কবিতা
www.milansagar.com
*

তুমি সুস্থ হ’লেই ওরা আবার ফিরবে |

এমন কি
তুলসীতলার যে প্রদীপটি ধ’রে তুমি
আমার মুখ দেখেছো, তাকেও ভাসিয়ে দিয়ে,
একটু শুভ্র স্তব হ’য়ে জ্বলবো তোমার শিয়রে
আসুক, ওরা ফিরে আসুক, যারা চিরকাল
শুধুই চ’লে যাচ্ছে, এখান থেকে অন্যখানে
উত্পাটিত একগুচ্ছ কচি সবুজ দূর্বার মতো
তুচ্ছ, উষ্ম, কাতর
আমি তোমার যন্ত্রণা মুছে নেবো :
তার বদলে, ঈশ্বর, তার বদলে আসুক
তোমার কাঙ্খিত আরোগ্য  ||

.       *************************   
.                                                                                            
সূচিতে...   




মিলনসাগর
*
.                           ঝড়ের নখ  |


সোনার হরিণ হারালে কি চলে----
.                           ক্লান্ত মাটি
বৃষ্টির মুখ চেয়ে বসে আছে
.                           ধানচারাটি ||

.       *************************   
.                                                                                            
সূচিতে...   




মিলনসাগর
*
সময় যখন আপনি ফাঁকি দেয়
সেই তো ইচ্ছার লগ্ন |
আমি এসেছি তুমিও এইবার এগিয়ে আসবে
রাগ কোরো না ত্যাগ কোরো না আশা কোরো না, শুধু তাকাও
আমার নির্মল আকাশে তোমার সোনালী রোদ্দুর
ভয় কোরো না জয় কোরো না ছলা কোরো না, শুধু তাকাও
তোমারই মতো উজ্জ্বল আর নিষ্ঠুর, দর্পিত আর মায়াবী,

পবিত্র আর করুণ আঁখির অরণ্যে
শ্রাবণের বৃষ্টির মতো তাকাও
ভৈরবী স্বপ্নের মতো
বৈরাগী মৃত্যুর মতো
নিশ্চিত
আর মনে করো তুমি আমার জন্যে
বৃষ্টি আমার জন্যে, বকুল আমার জন্যে, শস্য আমার জন্যে
মনে করো, দুঃস্বপ্ন আমার নৈবেদ্য আমার, চৈতন্য আমার
আর তখন আমি তোমার হই, তখন
আমি তোমার হই
তুমি
আমার কোলের শিশু হ’য়ে আমাকে বরণ করো
আমাকে হরণ করো
পূরণ করো  |

.       *************************   
.                                                                                            
সূচিতে...   




মিলনসাগর
*
দ্বীপান্তরে ঠেলে দিয়ে, দল বেঁধে
চায়ের মজলিশে ফিরে গেলো |
যাবজ্জীবন সেই চায়ের আসরে তোমরা বন্দী হ’য়ে আছো
আমি পাল তুলে, ভেসে-ভেসে দ্বীপে চ’লে যাবো |

হৃৎপিন্ড কোনোদিন ছিলো কি ছিলো না----
কৈফিয়ৎ অদরকারি | সব কিছু পেয়েছিলে, যা-কিছু
আমার বুকে ছিলো | বিনা প্রত্যাশায় আমি
নিরাকার প্রিয়মন্যতার পকেট ভরিয়ে নিয়ে
এইবারে দ্বীপে চ’লে যাবো |


সেই দ্বীপে কোনোদিন তোমাদের জাহাজ যাবে না |

.               *************************   
.                                                                                            
সূচিতে...   




মিলনসাগর
*
চারিদিকে কত চোখ, ভাষাহীন,
যেন কার ফুলের বাগানে ব’সে আছি
হাওয়া নেই--- মুহূর্তেই সব ফুল কাগজের
বিজ্ঞাপনী ছবি | এমনই নৈঃশব্দ্য ঢোকে
একঘর সামাজিক গরম বাতাস
পর্বতশিখরে চ’ড়ে অকস্মাৎ বিশুদ্ধ ও ভারি----
এত শুদ্ধ, স্বাসকষ্ট শুরু হ’য়ে যাবে যেন
পলকে সবার | যেন নিচে, আশেপাশে, মুখ তুলে
মাথার ওপরে, কোনোদিকে কিছু নেই, শুধু মেঘ
শাদা মেঘ, স্তব্ধতার শূন্যতার বিপুল বিস্তার ----
একটি বাক্যের শেষ,  আরো একটি আরম্ভের আগে
মাঝে-মাঝে কী-আশ্চর্য স্তব্ধতার বন্যা নেমে আসে
হঠাৎ প্রত্যেকে যেন ভিন্ন-ভিন্ন টিলার উপরে
যোগাযোগশূন্য হ’য়ে প্রচন্ড প্রলয়ে বন্দী আছি
যেন সব তারযোগ ছিন্ন হ’য়ে গেছে, সব সেতু ভাঙা,
সব রেলপথগুলো ভেসে গেছে ভয়াবহ বানে, যেন
কোথাও নগর নেই, গ্রাম নেই, লোকালয় নেই
যতদূর মন য়ায়, প্রাণ যায়, নিঃসীম এলাকা---
আসন্ন সংকটে বুঝি শ্বাসনালি রুদ্ধ হ’য়ে আসে---

এমন সময়
অবিকল দেবদূত যেমন স্বাগত
তেমনই উথ্বিত হয় কোনো শব্দ |

ভয়ানক চেষ্টা ক’রে
একগলা জল ঠেলে-ঠেলে
সারারাত হেঁটে এসে কেউ
যেন এক প্রিয়ের সৎকার ক’রে গাঁয়ে ফিরে গেলো |
ভয়ানক চেষ্টা ক’রে
কেউ একটা কথা ক’য়ে ওঠে
কী আশ্চর্য ইন্দ্রজাল----
উচ্চারিত শব্দ যেন মন্ত্রের মতন ত্রাম করে----
মন্ত্রের মতন সব মৃত চোখ ত্রস্তে বেঁচে ওঠে
ফুলের বাগানে যেন হাওয়া বয়
কোনায় আগুন জ্বলে, তাকে বই, বিছানায় রেশমি চাদর
নিস্তব্ধতা এইমাত্র পথে নেমে গেছে |
পর্দা দোলে, উষ্ণ শুভ সৌহার্দ্যের বাতাস কাঁপিয়ে
শব্দ ঘোরে--- ঘর ভ’রে দয়াময় শব্দ ঘোরে-ফেরে
ঘর ভ’রে শব্দময়ী করুণা ছড়ায় |

.               *************************   
.                                                                                            
সূচিতে...   




মিলনসাগর
আরোগ্য  
নবনীতা দেব সেন

সোনার হরিণের ছড়া
নবনীতা দেব সেন
   
ফাঁকা পিছনে ফাঁকা
দ্বন্দ্ব
নবনীতা দেব সেন
 
দ্বীপান্তরী
নবনীতা দেব সেন
  
স্বাগত দেবদূত
নবনীতা দেব সেন