কবি নবেন্দু সেনের কবিতা
অনাদি
ডঃ নবেন্দু সেন

আমিও কখনো হয়তো শুনেছি সে কান্না
তথাপি বৃদ্ধের সেই সব উচ্চারণ
সেও বুঝি দম্ভিত অহঙ্কার
রূপবতী বল তুমি কি
চন্দ্র হাসের গান শুনেছ
তাহলে অতন্দ্র রাত কেন মায়ামৃত নিবিড় ঘন
পাতায় পাতায় দুষ্টু ইশারা
নগ্ন স্তনে ডুবন্ত মুখ প্রাচীন পৃথিবীর
মা মা মা মা আমার অনাদি অনন্ত
সুখদাং বরদাং আমার জননী প্রিয়া
ভাবাও ভাবিত মাতৃমূর্তি নারী
কামনা কোথায় রাখি বল
বিশ্বমুখী উচ্চারণ।।

.    *************      
.                                                                   
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
*
*
কৃষ্ণচূড়ায় আগুন   
ডঃ নবেন্দু সেন

নীরেনদা আপনাকে কখনো দেখিনি
লোকমুখে শুনেছি আপনিই আমার
নীরেনদা শঠ্ জোচ্চোর গুণ্ডা বদমাশদের
পৃথিবীতে আপনিই তো আমার যীশু

যীশু অমানুষিক যন্ত্রণাবিদ্ধ অত্যাচারিত
বিষ দিয়ে মেরেছিল সক্রেটিসকে
তবু অবিরাম তাঁরাই চলেছেন
নীরেনদা সেদিনও আকাশে এমনি ঘনঘটা

সীমাপুরির চোরাগলির মুখে পানলাল
পাপড়িঠোঁট মনতুয়া বেগম মুহুর্তে উলঙ্গ শিকার
রামকৃষ্ণর আর্তনাদ চিত্কার
নীরেনদা আপনি তো পড়েছেন মানুষের বর্বর ইতিহাস

এবং আপনারই গল্পে গর্জে ওঠে চরিত্র
মখসুদ আহমেদ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে
পথের পাঁচালীর অপুরাও
প্রতিবাদে প্রতিরোধে কৃষ্ণচূড়ায় আগুন

নীরেনদা তাহলে এবার বলুন তো কোন আগুনে
মানুষ কখন বদলায় রাতে, না দিনে
ধর্মে না বিধর্মে কর্মে না বিকর্মে
বুদ্ধমূর্তি ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টার চূর্ণিত কোন্ বর্ণে

নীরেনদা বলুন তালিবান কোথায়
কাশ্মীরে না আমেরিকায়
দিল্লীতে না আফগানিস্তানে
ঘরে না বাইরে।।

.          ***********************                
.                                                                       
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
*
এপার বোনগা ওপার খুলনে
ডঃ নবেন্দু সেন

ও বাতাসীর মাগো আমার তোমার মুখে গুয়োপান
একবার আসো দেহি শুনি ব’সে তোমার ঘুম ভাঙানির গান
যা হোক তা হোক গফ্ফো কও বসে আমার ঘরে
পিড়ি পাতি বসে পড় মদ্যি খোপের দোরে
চ্যালতে ম্যাখে খাতি দেবানে লাল ভাতির সাথে
বদ্যির সাওয়াল অম্বল খায় হাপুস হুপুস পাতে
জীবুদার বাড়ি যাবানে মাটির আইল ধরে
যাতি যাতি চমকাবানে কানাকুঁয়োর স্বরে
তখন মনির মধ্যি কি ন্যাসে ব্যাড়ায় কনির ভিটির ভূত
(তালি কোয়ো) মা, সিদ্ধেশ্বরী রক্ষে ক’র ভূত তোমার পুত-
ঘুমির স্বপন ভাঙ্গে ক্যানো বেয়ান হলি পরে
ও জীবুদা কথি পারো পরানডা ক্যান নড় বড়ে

এপার বোনগা  ওপার খুলনে মদ্যিখানে রূপসা
স্যানেদের বাড়ির খোন্দোলে তোক্ষক ডাকে ঝাপসা
আসো তালি আজ ভ্যাঙ্গে ফেলি গঙ্গা মেগনার কোন্দল
আজ মচ্ছব করি দুই মায়েরই একই স্নেহের কোল ||

.                 ****************            
.                                                                                
উপরে    


মিলনসাগর
*
নিরুদ্দেশ
ডঃ নবেন্দু সেন

শশাঙ্ক ভটচায্ কী আজ বেঁচে আছো
আমার স্কুলের কলেজের সহপাঠী
বেশ ঘন বন্ধুত্ব ছিল তোমার সঙ্গে
অথচ কেন যে আমরা পরস্পরের খোঁজ
খবর করিনি অথবা রাখিনি তা আর জানি না
তার চেয়ে বড় বিস্ময় এই বিচ্ছিন্নতার
কোন কারনও ছিল না-
‘কেন’র কোন অস্তিত্বই ছিল না
অথচ বহু সময় পার করে আজও
শশাঙ্ক ভটচায্ তোমাকে মাঝে মধ্যেই মনে পড়ে
তোমার কটা চোখ সরু মুখ ডান দিকে সিঁথি
ঝকঝকে দাঁত চকচকে বুদ্ধি পরণে ধুতি
ধবধবে শাদা শার্ট পায়ে চটি
একটা হাতে লেখা পত্রিকা-
‘উশীর’ কি ছিল তার নাম

কোথায় যে হারিয়ে গেলে শশাঙ্ক
হঠাত্ গভীর পূর্ণিমার রাতে
একা একা বালির পাহারে ব’সে
ঝরঝর করে কান্না, উষ্ঞ চোখের জল
এ কী কেবল সংবেদন
না কি গভীরতর কোন বোধ
কোন চেতনার উশীর কি
হোক না, কীই বা আসে যায় কার
আমিও কি যাইনি হারিয়ে
আলমোড়ায় রাণীখেতে কিংবা কৌশানির
পাহাড়ে জঙ্গলে প্রচন্ড ব্যস্ত শহর দিল্লীতে

শশাঙ্ক ভটচায্ কেমন আছো আজ
আমিও কি আজ নিরুদ্দেশ
বালির পাহাড়ে বালিদের মত বহুদূর
একা একা অণু পরমাণু গুড়ো গুড়ো নিরুদ্দেশ ||

.               ****************            
.                                                                                
উপরে    


মিলনসাগর
বোলপুর কথা কয় বুকের পর্দায়
ডঃ নবেন্দু সেন

বিকেলের ক্লান্ত রোদ্দুরে পিঠ রেখে
চামেলিদি সানন্দা পড়ার ছলে কি দেখছো
তোমার স্বামী কমলদা এখন তাহলে নৈহাটির
অফিসে - এই অবসরে কর্মকার মাসিমার
দুধেল গরুটা ক্রমে কি তোমার ফুটন্ত রঙীন
রোডোডেনণ্ডচ্ছে মুখ দেয় - না কি সেই সবুজ
যৌবনের উদ্ধত কামনার শীর্ষে মুখ রাখে
কৈশোর উত্তীর্ণ প্রথম শারীরি স্বাদ পাওয়া

প্রবল প্রাণের বিহ্বল চোখ দুটির উজ্জল অন্বেষণ
মৃয়মান সময়ের কালাতিপাতে নোঙর করে
কুবের মাঝি ঘুমন্ত বিকালে আজ কি কথা
কয় কানে কানে ও চামেলিদি সানন্দার
পাতার বাইরে কোন লেখা পড় কার ছবি
দেখ বুকে হাত রেখে সত্যি বলতো সেই
বোলপুর কথা কয় কিনা বুকের পর্দায়

বোলপুর বোলপুরই তো কথা কয় বুকের পর্দায় ||

.          ***********************                
.                                                                       
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
ক্ষর অক্ষর বিপ্রতীপতায়
ডঃ নবেন্দু সেন

এই বাতাসের শিরায় শিরায় রুটির ফিরি
ডিম-ব্রেড-মাখন টিক্কি আণ্ডা-ব্রেড্ বিক্কিরি
শীতের সকাল জেগে উঠে মহল্লা মাতায়
ফটোক্রমিক শিউলি-বৃন্তে যুবতী ম্যাটিজ হাঁকায়

হা হতস্মি আপেল কলার রাজনীতিতে
প্রেমের পাওয়ার অবশেষে স্টিয়ারিং নেয়
মন্ত্রিবেশে সর্বনেশে মাঘের শেষে
পুন্য দেশে

স্তবে স্তোত্রে পুরন্ত ধূপে গদ্যে পদ্যে দান্দ্বিকতা
প্রতিদিন হয়েই ওঠে নতুন প্রতিদিন পুরাতন
নতুন লালজবারই সবুজ ঘন পাতার পৃথিবী
ইতিহাস চিহ্নিত সামাজিক উত্পাদনের সম্পর্ক বানায়
হলুদ বর্ণাভরণ প্রত্নবৌদ্ধিক ক্ষমতার লড়াই - এ

তাহ'লে জবাকুসুম মহাদ্যুতিম্ আমাদের
বৃদ্ধ প্রপিতামহরই চক্ষু উন্মীলন
হায়গো মিখাইল বাখটিন পথ হাঁটতে হাঁটতে
ফুকো, ময়তোরিল কে যে কার হাত ধ'রে
ভেঙে যায় ভেঙে দেয় দরজা এবড়ো থেবড়ো
জ্যাক্স জ্যাক্স জ্যাক্স দেরিদা
ধ্বনি প্রতিধ্বনি, ফ্রয়েডিয়ান ধ্রুবপদে বাঁধা
হয়ে যায় লাকাঁন, উচ্চারণের জাতক প্রতিমায়
সিমন মিলেট আনন্দময়ীর ভাবদ্ভোভাবন
পাগল আমার, হংস খলু আনন্দ্বেব বীজায়ন
নালার পাড়ে প্রাজ্ঞ এক সাদা বক ঝিমন্ত ধ্যানে মগ্ন

চৈত্র পারাপার শীতার্ত সকালে ফিরিআলার
প্রাত্যহিকতায় আবার জাগায় পৃথিবী
ক্ষর মর্মর বিপ্রতীপতায় মুখরিত নৈঃশব্দে |

.          ***********************                
.                                                                       
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
সময়ের খড়িতে দাগানো নতুন শতাব্দী
ডঃ নবেন্দু সেন

চড়ুই পাখির হিম পালকের গায়ে লেগেছে
রোদ্দুর, অলোকদা, আর কতকাল নির্বাসন
দ্বাদশ শিবের মন্দিরেও আজ খুলেছে দুয়ার
স্তোত্রপাঠে সেই পুরাতন গাঙ্গেয় হাওয়া
মাঠ ঘাট মৃত মমিদের পুরাতনী কীর্তন
অলস কার্তিকের ঝড়ন্ত বেলায় নিখাদ
বন্ধুর সিন্ থেসাইজার গলিপথে মাঠুরে চলন
আর কী দেরি সম্ভব সবুজ লতানো সাঁপের
নিঃসাড়আবাহন, কোন ফড়িংএর সোনালি
পাখায় মা যে কাঁদেন রোজ থির্ থির্
অবারণ, মাঠময় অতিদূর গভীর রোদন----
একা একা ভারী ভাল লাগে এই পৃথিবী
অথচ কেউ তো অবিরাম জেগে থাকে দস্যুর
লুন্ঠনে নিশ্চিন্ত , সফল তার বাণিজ্যকরণ----
এক মুহূর্ত হয় পর মুহূর্ত পর মুহূর্ত বর্তমান
অনাহত প্রচরণ সময়ের দাগ মুছে দেয়
কার্তিক অঘ্রায়ণ কিংবা শতাব্দীর গমন
তখন আমিও মিলিত হই শরীক হই অবিরাম
মহাশূন্যের ভগ্ন এক সময়ের পৃথক অস্তিত্বে
যার কোন অর্থ নেই, শব্দ নেই কায়াহীন শূন্য
স্মৃতি----- অলোকদা এইসব সত্য যদি আরো
সত্য হয় আজ তবে কেন এই আয়োজন
এই সময়ের খড়িতে জাগানো নতুন শতাব্দী  |

.               ****************            
.                                                                                
উপরে    


মিলনসাগর
*
প্রতিবিম্বন
ডঃ নবেন্দু সেন

১. সম্প্রতি ভুবনেশ্বরে
.  সশরীরে ধুলো খেয়ে
. ‘সর্বক্ষতি মিথ্যা করি’
.  একটি ক্ষুধার্ত লোক
.  সগ্গে গেলো-----
.  সোজা ব়্যাশন দোকানের সামনে
.  সাষ্টাঙ্গে ( ‘হে ধরণী আজ তার
.   প্রণতি গ্রহণ কর’ ) ধুলোর সঙ্গে
.   এক হয়ে শুয়ে  (বসুন্ধরা, কান পেতে শোন )
.   “এ দ্যুলোক মধুময়, মধুময় পৃথিবীর ধূলি |”


২  শ্রীচরনেষু বৃদ্ধ পিতামহ
.   অনেকদিন আপনার আমার
.   এবং বাবার আবহকালীন
.   সম্বন্ধটা বজায় আছে
.   মা’র মুখে শুনে------
.   ঈশাবাস্যমিদংসর্বং ||

.         ****************            
.                                                                                
উপরে    


মিলনসাগর
*
পদ্ম গন্ধ
ডঃ নবেন্দু সেন

এই বেয়ান বেলায় হ্যাথ্ নে ব’সে
কী ভাবতিসো বৌ
সজ্ নে ফুলের সাদা রঙে
কীসের গোন্দো পাও ?

মনের মদ্দি ঢেহির পাড়
হৃৎপিন্ড স্যেড়ে
নাইল ফুলের রঙের মদ্দি
রক্ত ফ্যুটে ওঠে  |

( আর ) ভদ্ দুপুরে তিনটে জবা
রাঙা টুক্ টুক্ করে গুরুক গুরুক রক্তে ডাকে
স্থলপদ্ম প্রাণ
দিন রাত্তির পাড় ভাঙে
রূপ্ সা নদীর গান |

বৌ, শস্য কোট চোখে আগুন
দেল্ খোলার ঢোল
ঝাঁউয়ের গিজা গিজগিনিতা
রক্তে গন্ডগোল  ||

.         ****************            
.                                                                                
উপরে    


মিলনসাগর
*
ভালবাসা
ডঃ নবেন্দু সেন

এইখানে এই গলির মুখে
আস্তাবলের গরুর পাশে
দিনরাত্তির প্রতি মাসে
কী জানি ভাই কিসের আশায়
সত্য মাষ্টার ভালবাসায়
ঝোলা কাঁধে খুঁড়িয়ে হাঁটে
.              যাবর কেটে সময় কাটায়

হঠাৎ তখন শঙ্খ বাজে
তুলসী তলায় পিদিম জ্বলে
নাতী দু’লে ছ’ড়া বলে
মিশি মুখে ঠাক্ মা সাজে

ঠিক তখনি রাজার ছেলে
টগ্ বগিয়ে ঘোড়ায় চড়ে
রাজার মেয়ে নিয়ে কোলে
রাঙাধুলি উড়িয়ে জোরে
উধাও হ’য়ে যায়------

এবং তখন মধ্যরাতে
ভাড়া বাড়ির অন্ধকারে
বুকের কাছে সীতাদেবী
.               সোনার হরিণ চায় |

.         ****************            
.                                                                                
উপরে    


মিলনসাগর