মাথার উপর কেবল উচ্ছৃঙ্খল কৃষ্ণচূড়ার আগুন ডঃ নবেন্দু সেন
যতদিন যায় যত রাত বাড়ে যত ধূলো ওড়ে যত বাস ছাড়ে যত শিশু জন্মায় ও মরে নতুন রাজ্যে খুন খারাপি’র সঙ্গে বৃদ্ধের লাঠি ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ করে |
লাঠি ঠক্ ঠক্ করে বাস ট্রেন লরি মোটর মানুষ, ছাগল গরু ও মাছিরা হাঁটে ও চলে কুকুরে ও মানুষে বমি করে নাড়ি উল্টে-আসা গন্ধে ম----ম---- দিন-রাত আদিম, নারী পুরুষ হামলে খায় পরস্পর হাওয়ায় হাওয়ায় ওষুধ ও ফুলের গন্ধ আকাশ জুড়ে ঘুড়ির মেঘ এই হাসি তো এই কান্না ভোঁ-কাট্টা | ছেলেদের ইস্কুলে ঘন্টা বাজে ---- বই পিঠে দুর্দান্ত--- আবার ঘন্টা পড়ে, পাঠশালার ছুটি---- আকবর বাদশা’র সোনার কেল্লায় হরিপদদারা দাপাদাপি করে, আর ঠিক তখুনি মোড়ের মাথায় আর একটা মানুষ খুন মাথার উপর তখন কেবল উচ্ছৃঙ্খল কৃষ্ণচূড়ার আগুন ||
মানুষের বাঁচার অধিকার ( শ্রীচরনেষু বটুকদা ) ডঃ নবেন্দু সেন
পথ হেঁটে হেঁটে সমস্ত পথ প্রায় শেষ পঞ্চাশ পঞ্চান্ন ষাট হাজার বছরের ক্লান্তি ক্লেশ ----- এখন কোথাও পাইনা খুঁজে রোদ্দুরের মুখ নরম ভোরের আলো জীবনের সঘন সুখ গাঢ় স্নেহ অপ্রেময় বন্ধুত্ব উজ্জ্বল কোমল আকাশ আর তো চাইনি কিছু কেবল তোমার সান্নিধ্য কেবল তোমার নিঃশ্বাস
দেখেছি হেমন্তের হিরণ্য সৃষ্টি হিল্লোলিত পত্রে উদ্দাম আনন্দ প্রাণের সঙ্গী মাতায় মন্থিত করে রক্তে তোলে ঢেউ অমল ফুলের বীজ রাত্রি দিন বুনে চলে কেউ
আজ আবার ফেরাও দেখাও আর একবার রিজ্ রোডের রঙীন পলাশ গাঙ্ চিল, নাইট্ জার শোনাও ‘নবজীবনের গান’ বল কোথায় মানুষের বাঁচার অধিকার |
সমুখে শান্তিপারাবার
সামনে চিতা জ্বলছে আমার চেতনাকে পুড়ে যেতে দাও সরিয়ে নাও এখন সহানুভূতি সমানুভূতির চাদর আমার নগ্ন চৈতন্য এখন পুড়ে যেতে দাও এখন অনাবশ্যক সমস্ত স্তোক স্তব, স্তোত্র ভালবাসার ভাব, আদর আপ্যায়ন, ভদ্রতা সৌজন্যমূলক আচরণ আয়োজন |
সামনে চিতা জ্বলছে আগুন উস্কে দাও দ্রুত দগ্ধ হোক অধীত বিদ্যা, পাপ, পুন্য বিদ্যার ভার বুদ্ধির পান্ডুলিপি ছাই হোক তোমাদের অস্তিত্বের পৃথিবী ছাড়িয়ে নিশ্ছিদ্র শূন্যে নক্ষত্রের আলোর সর্বশেষ চূড়ায় মাঝির খেয়ায় মণি কর্ণিকার আকাশে উড়াক চিতাভস্ম শূন্যে খঞ্জগতি প্রাণ এই হোক শেষ স্নান শেষ স্পন্দন তুলসি ফুল চন্দন অশ্রু অস্বস্তি সামাজিক লজ্জা ও গান জ্বলন্ত অনন্ত ----- অগ্নিশয্যায়--- তন্দ্রাহারা বারিধারা
দেশ দেশ নন্দিত করি মন্দ্রিত মনে ফের নিবারণদা প্রতিমা গড়ে রঙ দেয় চোখে মুখে ঘুষখোর পেটমোটা দালাল খোয়াব দেখে চোখে
তবু পঞ্চাশ পেরিয়ে দম্ কা বাতাসে পাতাগুলো উড়ে যায় এখানে-ওখানে ইতিহাস দিল্লীশ্বর---- মহাপৃথিবীর মাস্টার মশাই রুটি হাতে দাঁড়িয়ে অনেক দূরে অন্য দেশে অন্য রাজতন্ত্রে শঠতায় প্রতারণায় ধাপ্পায় রুদ্র নিষ্ঠুর কপট ভদ্রতায় এখানে হারাণদারা সম্পূর্ণ বেমানান বলতে ভুলেছি পুরোহিত বাড়ির ধীরেনদা আর আর সেই মায়ের মত সুন্দর ঐ বাড়ির বৌ সবাই এখন ভগবানের দেশের ভোটার
এবং পঞ্চাশ পেরিয়ে ঝড়ে ঝঞ্ঝায় মূলঘর মূলঘর শরীর কাঁপায় বেতের ঘন ঝোপে ঘনতর বাদামী কানাকুঁয়ো ছ্যাতারে পেঁচাদের কন্ঠস্বর জাম জামরুলের জমাট সবুজ পাতার শিরায় শব্দের মায়ায় রক্তে শব্দ ছড়াতে থাকে
এখানে তখন আতঙ্কবাদীরা মন্ত্রীদের ঘুম কাড়ে, রাজনীতির ষড়যন্ত্রে রাজারা ফকির ফকিররা রাজা নারীবাদ সংরক্ষণ আরক্ষণ নির্বাচন দলজোট্ ধর্মে বিধর্মে এক মহামায়া স্বর্ণ সিংহাসন লোকে লোকারণ্য হাওড়ার সেতু তখন রামপ্রসাদী আর ভাটিয়ালিতে এক রূপ্ সা আর রূপনারায়ণ
গভীর রাতের অন্ধকারে আমার বুকের দরোজায় ধাক্কা দেয় মূলঘর মূলঘর মূলঘর---
একটা মানুষ জাতির ভয়াবহ অবক্ষয় একটা পরিপূর্ণ রসাতলে যাওয়ার বিশ্বস্ত দলিল অর্থহীন বাক্যব্যয় অপ্রয়োজনীয় মাতব্বরি দু’টো পয়সা মারার নির্লজ্জ ধান্ধায় ঘুরন্ত এই জাত্ টার পেছনটার কথা ভাবলেই কষ্টে কুঁকরে যেতে হয় | নিষ্ঠুর দ্রুত প্রজনন দ্রুততর মেরুদন্ডহীন অসোন্তোষ, রোষ অনির্বাণ বিকার ব্যর্থতার স্তূপীকৃত জঞ্জালে সংঘর্ষে সংকটে পরিকীর্ণ অস্তিত্ব, আত্মসংঘাতহীন দলিত শ্লাঘার ধ্বজাধারী এই হিংস্র মানুষের দলাদলির সামনে নিঃশ্বাসের বাতাস নেই পিপাসার জল নেই, দেহ-ভরা রোগের উপশম নেই এক পাপাসক্তিতে আচ্ছন্ন নোঙরা জঞ্জাল পরিকীর্ণ জীবন নামক পাথর ঠেলতে ঠেলতে রক্ত বমি বিষ্ঠা মাখতে মাখতে ছড়াতে ছড়াতে এবং ভোট দিতে দিতে না দিতে দিতে নিকটস্থ শ্মশানে যেতে যেতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনে ||
আবার যখন আকাশ জুড়ে মেঘের গর্জন যখন বিদ্যুতের দাপাদাপি তখনিতো দুর্গা-বিসর্জন এবং এই রকমই তো হয় বাংলার ঘরে পূণ্য হউক পুণ্য হউক পুণ্য হউক গ্রামান্তর সোনার সিঁদুর কৌটো চিনিবাস ময়রা ইতিহাস লিখে যায় নিশ্চিন্দিপুরে তখনো মূর্খ বালক নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে মর্মর স্বপ্ন দেখে অন্য কোন আলোকের শিখায় বনতলে কর্ণ তার সংগ্রামে মুখর অজেয় বীর বাংলার গৃহস্থ তখন অনিবার্য মৃত্যুর প্রতিদ্বন্দ্বী ইতিহাস লন্ডভন্ড উঁচু নীচু অর্থন্যাস কেবল গ্রাসাচ্ছাদনের নিরন্তর ঘোষিত সংগ্রাম অবশেষে হীনতার করুণ দীন লজ্জা এসে মানুষের ভেতরকার মানুষকে দেয় বদলে অসহায় সমর্পণ ঢেকে দিতে চায় লজ্জিত বিবর্ণ বৈভব