কবি নবেন্দু সেনের কবিতা
উত্সসেধ  
ডঃ নবেন্দু সেন

মৃন্ময়ী মঞ্জিমা এখন সবুজ ঘাসের শরীরে
ঘাস হয়ে পৃথিবীর রূপ দেয় মাটির গভীরে
হয়তো অশব্দে বেদনায়
মূর্ছিত চেতনায়--- জলাচলে সাবধানী নারীর
আঁচল-মনস্কতার গভীর সন্ধানে তার ঘোলাটে
চাঁদের শিখায় রাজপথ জনপথ পার্লামেন্ট ভবনের
ধুলোহীন মাছিদের জীবনের চলাচল---
সেইসব নিস্তরঙ্গ জীবনের সবচেয়ে সচল
যন্ত্রনার ইতিহাস মানুষের হূহূঙ্কার অন্ধকার
দিক পারাবারে নিয়ে যায় সেই সব
মৃত্যুর স্তূপীকৃত উপাচার | ভয় এসে ভেঙ্গে দেয়
ভয় আবার ; খবরের কাগজের মুখ্য বাহার
বড়জোড় আরও কিছু হত্যা, ধর্ষণ, বলাত্কার
রাহাজানি ও ছিন্ তাই-----
লম্পটবাজদের উপাচারে জয়ীষ্ণু বাবা
ও বিবিদের ঘরের অনুধ্যান ও  নির্বাচন


তখনও হেমন্তশেষে সূর্যডোবে আহ্নিকের স্তোত্রে
রূপসায় তরঙ্গ ভেঙ্গে তরঙ্গায়িত হয়
সুর পায় বিকালের বিষণ্ণ মায়ায় |

.                *************      
.                                                                   
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
ঝড়
ডঃ নবেন্দু সেন

ঝড় আসছে একটা
বড় রকমের ঝড়-----
আকাশ থম্ কে চাপা কালো রঙ্ |
কে যেন রাগের নিশ্বাস ফেলছে
ঝড় আসছে-----
একটা বড় রকমের ঝড়

মাঠটা পেরুলেই আমার ঘর
হাতের লন্ঠন কাঁপছে, যত তার আলো
তার চেয়ে বেশি ঘন, ছায়া, কালো
দীপশিখা নিভু নিভু----

আমার সামনে, পেছনে আর কেউ নেই
একা একলা মাঠে কালি-মাখা লন্ঠন হাতে
আমি ঘরে ফেরার জন্য দ্রুত পথ হাঁটছি
আসন্ন ঝড়ের প্রলয় ধম্ কানিতে লন্ঠন কাঁপতে
.                                                কাঁপতে
.                                                   নিভে গেল-----

ঝড় উঠলো----
গর্জন তর্জন প্রচন্ড ধূলো খসা-পাতা
শুখ্ নো বনজ পতিতাংশ পত্রকণা সূচের মত
গায়ে পায়ে হাতে মুখে চোখে বিঁধছে

আকাশ চম্ কে বিদ্যুৎ দৌড়ে গেল
ঘন হয়ে এলো জমাট অন্ধকার
ঘর হারিয়ে গেল
এপার ওপার একাকার-----

একলা মাঠে হাতে নিভন্ত লন্ঠন
কৃষ্ণকলি কই তুমি কই
অন্ধকারে কালো, তোমার কালো
হরিণ-চোখ ?

.                *************      
.                                                                   
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
মৃত্যুহীন রোদ্দুর
ডঃ নবেন্দু সেন

ভাসাও ভাসাও ভেলা দিক্ দিগন্তে
চলুক জ্যোত্স্নার স্রোত দিক্ পারাবারে
রূপকথার মায়ায় জাগুক ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী
আমি আর যুদ্ধ করবো না----
এই সব ভাসমান ইচ্ছা ছিল ছেলেদের
কর্তব্য কঠিন তাদের যুদ্ধে লিপ্ত করে
আর তো হয়না শোনা ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমীর গল্প
দিগন্তে হয়না ফেরা ভাসানো স্বপ্নের ভেলা------

রক্তে বিদ্রোহ আনা মানবশিশুর টোপ-ফেলা শিকারের গল্প
ইতিহাসে অন্যরূপে ফিরে আসে----
উদ্ভিন্ন যৌবনের টোপ-----
সংগ্রামের নামে সংঘর্ষ আনে দেশপ্রেম
বীরত্বের মর্মন্ত্তদ স্বার্থে

মন্ত্রীতো মরেননি কখনো যুদ্ধে
সকলেই লেনিন হয় না সমরে
দেখতেও যেতে হয় যুদ্ধান্তে উপত্যকায়
বরফে আচ্ছাদিত স্বপ্নভাঙ্গা ঘরে না-ফেরা
তাজা মৃত ছেলেদের
কফিনে অনড় অচল ঘুমন্ত দেহ----


মন  বলে আবার অন্য যুদ্ধ আসন্ন ----
ভাসাও ভেলা দিক্ দিগন্তে
জ্যোত্স্না প্লাবিত করুক মাঠ উপত্যকায়
আরোগ্যের বাতাস লাগুক মনে


এবার ইতিহাস আবার বদলাক
বিদ্যুৎ চমকে উঠে রক্তে-ভেজা খেতে
ফের শস্য হোক প্রচুর -----
মানুষ মানুষের মধ্যেই সভ্যতার বীজ বোনে
মৃত্যুহীন রোদ্দুর
তবু তো সত্য হয় বিন্দু আর নক্ষত্রের ক্রমাগ্রসরণ
রাত্রির রোদ্দুর আর দিবস যামিনী  |

.                *************      
.                                                                   
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
সমুখে  শান্তিপারাবার
ডঃ নবেন্দু সেন

সামনে চিতা জ্বলছে
আমার চেতনাকে পুড়ে যেতে দাও
সরিয়ে নাও এখন সহানুভূতি
সমানুভূতির চাদর
আমার নগ্ন চৈতন্য এখন পুড়ে যেতে দাও
এখন অনাবশ্যক সমস্ত স্তোক
স্তব, স্তোত্র
ভালবাসার ভাব, আদর আপ্যায়ন, ভদ্রতা
সৌজন্যমূলক আচরণ
আয়োজন |

সামনে চিতা জ্বলছে
আগুন উস্কে দাও
দ্রুত দগ্ধ হোক অধীত বিদ্যা, পাপ, পুন্য
বিদ্যার ভার বুদ্ধির পান্ডুলিপি ছাই হোক
তোমাদের অস্তিত্বের পৃথিবী ছাড়িয়ে
নিশ্ছিদ্র শূন্যে নক্ষত্রের আলোর সর্বশেষ চূড়ায়
মাঝির খেয়ায়
মণি কর্ণিকার আকাশে
উড়াক চিতাভস্ম শূন্যে খঞ্জগতি প্রাণ
এই হোক শেষ স্নান
শেষ স্পন্দন
তুলসি ফুল চন্দন
অশ্রু অস্বস্তি সামাজিক লজ্জা ও গান
জ্বলন্ত অনন্ত ----- অগ্নিশয্যায়---
তন্দ্রাহারা বারিধারা

.                *************      
.                                                                   
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*