কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফীর কবিতা
*
প্রিয় সম্বোধনে
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী

কি মদিরা ঝরে সখে! নয়নে তোমার!
হেরিলে পাগল হই,
আমি যেন আমি নই,
ত্রিজগত পলকেতে হয় একাকার!
মুহুর্তেক মাঝে হয়,
অনন্ত জীবন লয়,
নবীন জীবনী জাগে চকিতে আবার |
ভেবেছিনু মনে মনে,
দেখা হ'লে দুইজনে,
চোখে চোখে রব, বাধা মানিব না আর |
ব্যর্থ সে কল্পনা-লেখা,
যেমন হইল দেখা,
রোধিল শরন আসি মরমের দ্বার |
কি যেন ও চোখে ছিল,
সরবস্ব লুটে নিল,
নারিল সহিতে আঁখি ও আঁখির ভার |
হ'লনাক চেয়ে থাকা,
মিছা কল্পনারে ডাকা,
আজি শরমের কাছে প্রণয়ের হার |

.                                 ****************                                   
.                                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিদায়োপহার
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী
১২ ই  বৈশাখ, ১৩০৩ ( ১৮৯৮ )
হুগলী, প্রেমগাথা কাব্যগ্রন্থ থেকে

(১)
অবশে বিহ্বল প্রাণে
ছিলাম ঘুমের ঘোরে,
এ নিঠুর বজ্রনাদে
কেন গো জাগালে মোরে?

(২)
'এই তবে শেষ দেখা
বিদায় লইনু আজ',
পড়িল মরমে মোর
যেন কি দারুণ বাজ!

(৩)
সহসা ভাঙিয়া যেন
গেল গো সাধের বাঁশী,
সহসা নিবিল যেন
শারদ-চাঁদের হাসি |

(৪)
সহসা ফিরিল যেন
তটিনী উজান-পানে,
বাজিতে বাজিতে বীণা
বাজিল বসুর তানে |

(৫)
তেমনি সহসা মোর
ভেঙে গেল ভাঙা প্রাণ,
সহসা আজি গো হেন
কে গাহে বিদায় গান!

(৬)
এ বিদায় ভেসে যেন
আসে কার স্মৃতিটুকু,
মনে পড়ে একখানি
পূত-প্রেম-পূর্ণ মুখ |

(৭)
যে হও সে হও যাও
প্রাণ যথা যেতে চায়,
স্বরগে আবার পুন
দেখা হবে দুজনায় |

(৮)
তুমি আমি ম'রে যাব
প্রেম ত মরণহীন
প্ম-বলে সেই দেশে
মিলিব রে এক দিন |

(৯)
আজি এ বিদায় কালে
কিবা দিব উপহার,
লও শুধু দুই ফোঁটা
এই দগ্ধ অশ্রুধার!

.                                 ****************                                   
.                                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
চোর
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী

আমি যে বেসেছি ভাল আমারি কি দোষ?
প্রাণভরা প্রেম ল'য়ে
তৃষায় আকুল হ'য়ে,
তুমি কি চাহনি সখা, মোর পরিতোষ?

আমি বাসিয়াছি ভাল এই দোষ মম!
হানিয়া স্নেহের বাণ,
তুমি কি দাওনি টান,---
এ ক্ষুদ্র পরাণে, ---সত্য বল প্রিয়তম!

আমি বাসিয়াছি ভাল, দোষ এ আমার!
তুমি নব ঘনরূপে,
ঢালনি কি চুপে চুপে ;
পিয়াসী চাতকী-মুখে অমিয়া-আসার?

ভালবাসিয়াছি ব'লে দোষ দাও তাই,
শুনাইয়া তত্বকথা,
চাহ এ বুকের ব্যথা,
মুছে দিতে---ছি ছি সখা লাজে ম'রে যাই!

আমি কি একাই ভালবেসেছি কেবল?
আমিই কি শুধু হায়,---
আপনা ঢেলেছি পায়,
ঢালনি গোপনে তুমি নয়নের জল?

আমিই সমাধি শুধু লভেছি কি পায়?
একটি মুহুর্ত তরে
তুমি কি গো স্নেহভরে,---
নারবে নিস্তব্ ধে  বসি ভাবনি আমায়?

আমিই কি শুধু তোমা করেছি পাগল?
তুমি এ হৃদয়ে এসে,
মধুর---মধুর হেসে,
করনি কি ক্ষুদ্র প্রাণ উন্মত্ত বিভল?

তুমিই সরল সাধু, আমিই কি চোর?
প্রাণের কবাট হানি,
হৃদয়-সিন্ধুক টানি,
তুমি কি সর্বস্ব চোর! লুঠ নাই মোর?

তোমারে দেখিয়া শুধু আমারি কি সুখ?
নিকটে বসিলে তব,
তুমি কি ভোল না ভব,
বহে না অমিয়া-স্রোত ভরি তব বুক?

আমিই কি চাহি শুধু দেখিতে তোমায়!
বল দেখি প্রাণময়!
চাহে নাকি ও হৃদয়,
বিভলে হেরিতে তব প্রেম প্রতিমায়?

তুমিও যা কর সখা আমি করি তাই,---
তবু ভালবাসি ব'লে,
দোষ দাও নানা ছলে,
চোর হয়ে সাধু তুমি বলিহারি যাই!

ভাল বাসিয়াছি পেয়ে এই দোষ মোর,---
রাজা হ'য়ে হৃদাসনে,
বসিয়াছ ফুল্লমনে,
চোর হয়ে রাজা হলে---ধন্য পাকা চোর!

.                                 ****************                                   
.                                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
মরণ
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী
মর্মগাথা কাব্যগ্রন্থ থেকে, ১৮৯৬


       ১

চিনি না মরণে আমি
.             কোথায় বসতি তা’র,
কে জানে তাহার আদি
.             কোথায় বা পরপার ?


        ২

“মরণ মরণ” শুধু
.            শ্রবণে শুনেছি ভাই,
মরমে উদিলে ব্যথা
.            মরণ শরণ চাই |


        ৩

মরণের কোল বুঝি
.             দুখহরা শান্তিময়,
তার কোলে শুয়ে বুঝি
.             সব জ্বালা দূর হয় !


          ৪

কিন্তু তারে ভয় হয়
.             পাছে ল’য়ে গিয়া মোরে,
এ আলোক হ’তে ফেলে,
.             বিকট আঁধার ঘোরে |            
          

           ৫

যদিও জীবনে মোর
.             সুখশান্তি কিছু নাই,
যদিও প্রত্যেক পলে
.             মরণ শরণ চাই---


           ৬

তবু তার পাশে যেতে
.             মরমে উপজে ব্যথা,
কি জানি লইয়া যাবে
.             অজানা দেশেতে কোথা |


           ৭

সেই ভয়ে মরণের
.             চাহে না হৃদয় মম,
মরণ হইতে ভাল
.             জীবনের গাঢ় তমঃ |


           ৮

চাহি না মরণে আমি
.              কি হবে লইয়া তায়,
এ জীবনে তবু ভাল
.              হেসে কেঁদে চ’লে যায় |

.            ****************                       
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রেম
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী
১২ ই আশ্বিন, ১৩০৩, ( ১৮৯৮ ) হুগলী
প্রেমগাথা কাব্যগ্রন্থ থেকে

        ( ১ )
মনে করি ভুলেছি তোমায়,
.           মনে হয় কাছে এলে,
.           দেখিব না আঁখি মেলে,
দেখা হ’লে চ’লে যাব আনত মাথায়

          ( ২ )
মনে হয় সে সকল কথা,
.           নাহি লেখা হিয়াতলে,
.           ডুবেছে বিস্মৃতি জলে,
মুছে গেছে মরমের দারুণ ব্যথা |

         ( ৩ )
কিন্তু অহো এ রীতি কেমন !
.           ভুলেও কেননা ভুলি,
.           কেন বা স্মৃতির তুলি,
আবার এ বুকে করে সে ছবি অঙ্কন |

           ( ৪ )
যবে নীল নৈশাকাশে চাই,
.           ভাঙিয়া বুকের বাঁধ,
.           কত কথা কহে চাঁদ,
নীরব ভাষায় তার গেয়ান হারাই |
                
            ( ৫ )
স্মরি তোমা হেরি তারা-হার |
.           হেরি যবে ফুলবালা,
.           তাহে তব স্মৃতি ঢালা,
সারাবিশ্ব-ব্যাপী তুমি একি গো আবার |

             ( ৬ )
যাহা কিছু মধুর ভুবনে,
.            তারেই দেখিলে হায়,
.            তব ছবি বুকে ভায়,
ভুলিয়াছি তবে আর বলিব কেমনে ?

               ( ৭ )
এবে দুঁহে বহু ব্যবধান
.             তুমি মায়ারাজ্য পারে,
.             আমি মায়া-পারাবারে,
তবু কেন অলক্ষিতে টানিছ পরাণ ?   ০

                ( ৮ )
চঞ্চলদামিনী সম সার,
.              কেন মিছা আস আর,
.              বাড়াইতে অন্ধকার,
কেন হেন টানাটানি ল’য়ে ছেঁড়া তার ?

               ( ৯ )
আজু কেন টানে প্রাণমন ?
.              কোন মন্ত্র হেন আছে
.              শতদূর --- কার কাছে,
ভাঙা বীণা সপ্তমেতে বাজায় এমন ?
( আমি জানি প্রেম সে গো, অন্য নহে জন  ) |

.            ****************                       
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
হতাশের আক্ষেপ
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী
৩রা জৈষ্ঠ্য, ১৩০৩, ( ১৮৯৮ ) সুখরিয়া,
প্রেমগাথা কাব্যগ্রন্থ থেকে

        ( ১ )

এত দুখ দিতে হয়
.          ভালবাসি বলিয়া ?
অবশ চিতের সনে,
যুঝিয়াছি প্রাণপণে
ফেলিতে মূরতি তব
.           হিয়া হ’তে মুছিয়া |

        ( ২ )

কই, তা গেল না মুছা
.           মরমেই রহিল,----
মুছে কি প্রেমের ভাতি,
নিবে কি আশার বাতি ?
হৃদয় মথিয়া শুধু
.           তপ্ত শ্বাস বহিল |

        ( ৩ )

তুমি ত গিয়াছ ভুলে,
.            আমি নারি ভুলিতে,----
কত ছবি আঁকি মনে,
ধাকরা বহে দু’নয়নে,
মরমে আঁকিয়া মুছি
.            কল্পনার তুলিতে !

         ( ৪ )

কভু বা বিরলে বসি
.             করি মনে ভাবনা,----
যদিই সে কাছে আসে,
বলে বড় ভালবাসে,
নীরবে শুনিব শুধু
.             মুখ তুলে চাব না |

        ( ৫ )

নলিনী যেমন থাকে
.            রবি-পানে চাহিয়া,
কহে না একটি ভাষা,
নাহি কোন সাধ আশা,
নীরবে কেবল তারে
.            দেয় প্রেম ঢালিয়া |

        ( ৬ )

আমিও বাসিব ভাল
.            নীরবেতে তেমনি,
ক’ব না একটি কথা,
দেখাব না মর্মব্যথা,----
নীরবে রহিব বাঁধা,
.            সাধ মোর এমনি |

       ( ৭ )

হায় মোর ভেঙে গেল
.           সে সাধের ভাবনা |
কেন স্মৃতিপটে আসি,
বাড়াও মমতারাশি,
কেন আর ফিরে চাও
.           বাড়াইতে যাতনা ?

         ( ৮ )

আঁখিতে মমতা ল’য়ে
.             ভালবাসা বুকেতে,
কেন আর দেখা দাও,
.             মাথা খাও সরে যাও |
যা হবার হবে মোর
.             তুমি রও সুখেতে |

         ( ৯ )

কেন আর ফিরে চাও
.             ব্যথা দিতে পরাণে ?
শুধুই নীরবে বসি,
স্মরিবে সে মুখশশী,
মুছিবে না সেই দাগ
.             প’ড়েছে যা পাষাণে |

          ( ১০ )

দেখিলে সে মুখ মোর
.             হিয়া উঠে উথলি,
ভাঙে যে বুকের বাঁধ,
জেগে উঠে কত সাধ,
নয়নের জলে বুক
.            ভেসে যায় কেবলি |

           ( ১১ )

তাই বলি কেন আর
.             ফিরে চাও বল না,
যেখানে বাসনা যাও,
এমুখ লুকাতে দাও,
.             পায়ে পড়ি আর তুমি
.                    স্মৃতিপটে খেল না |

.            ****************                       
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
নীরবে
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী
প্রেমগাথা কাব্যগ্রন্থ থেকে, ১৮৯৬

         ( ১ )

কি যে গো দারুণ ব্যথা
.            আমার এ বুকময়,
কি দারুণ ব্যথায় যে
.            পুড়িতেছে এ হৃদয় |

        ( ২ )

নীরবে হৃদয় আছে
.            হায় সে অনন্ত ব্যথা,
একটি দিনের তরে
.            বলিনি একটি কথা |

       ( ৩ )

আজ যে গো পূর্বস্মৃতি
.              জাগিয়াছি সমুদয়,
আজ যে গো পোড়া বুকে
.              কত কি উচ্ছ্বাস বয় !

         ( ৪ )

আর যে নীরবে হিয়া
.             পারে না সহিতে হায় !
নীরবে নীরবে যে গো
.             হৃদয় ফাটিয়া যায় |

         ( ৫ )

আজি গো তোমারে কব
.            একটি মনের কথা,
নতুবা মরমে আর
.            সহে না দারুণ ব্যথা !

          ( ৬ )

না গো না কব না আর
.            নীরবেই থাক্ থাক্,
মরমের আশা মোর
.            মরমেই মিশি যা’ক্ |

           ( ৭ )

কব না মুখটি ফুটে
.            কখন ( ও ) একটি কথা,
বলিবে না এ হৃদয়ে
.             কি অভাব কি যে ব্যথা !

            ( ৮ )

মরমের কথা মোর
.             নীরবে মরমে রবে,
যখন পরাণ যাবে
.             মোর সাথে সাথী হবে |

            ( ৯ )

সুখশান্তি নীরবেতে
.             হইয়াছে সমাধান,
কিছু প্রাণে নাহি মোর
.             নীরবতা-মাখা প্রাণ !

            ( ১০ )

আমি যে গো শুয়ে আছি
.             চির-নীরবতা-কোলে,
তবে আর কি হইবে
.             মিছে দুটে কথা বলে ?

            ( ১১ )

নীরবে নীরবে থাক্
.             মরমের ব্যথা মোর,
নীরবে নীরবে যাবে
.             জীবনিশা হয়ে ভোর |

.            ****************                       
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
মায়া
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী
অমিয়গাথা কাব্য থেকে, ১৯০১

হে সুরসুন্দরী! তুমি বল মানবের,---
কোন্ পুরাতন বন্ধু কত জনমের!
.        এড়াইতে তব কর,
.        চাহে যদি কোন নর,
অমনি যে বাঁধ তারে দিয়া শত ফের।

কেন গো নরের সনে এ খেলা তোমার?
তারা কি তোমার ওগো বড় আপনার!
.        তাই কি ক্ষণেক তরে
.        পার না ছাড়িতে নরে,
তাই নরে টান---দিতে আত্ম-উপহার।

বল অয়ি বরাননে বাসনা তোমার!
মানবের মনে তুমি কেন একাকার?
.        স্বর্গীয় ললনা তুমি,
.        তোমার চরণ চুমি,
হতাশ জীবনে আশা জাগে শতবার।

কোন কার্য তরে বল মানসমোহিনি!
মরতে নরের সহ খেলিছে এমনি?
.        তুমি কি নরের মিত্র ;
.        বুঝি না ও কোন্ চিত্র,
বুঝি না ও চোখে তব ভাসে কি চাহনি!

.            ****************                       
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
অনুরোধ
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী
হুগলী থেকে, যদুনাথ কাঞ্জিলালের তত্ত্বাবধনে প্রকাশিত “পূর্ণিমা” মাসিক পত্রিকা ও
সমালোচনীর ১৮৯৬ সালের (১৩০৩বঙ্গাব্দ) আষাঢ়-শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত। মিলনসাগরে
প্রকাশকাল ২৮.৫.২০২০।

.                ১
কে তুমি দেবতা নাকি
.                কেন ধীরে চাহিছ?
করুণ নয়নে কেন
.                এত সুধা ঢালিছ?

.                ২
জগতে আমার নাই
.                ‘আপনার’ বলিতে,
আমার ব্যথার হেথা
.                নাহি কেহ কাঁদিতে?

.                ৩
যার পাশে যাই আমি
.                করুণার আশেতে,
সে দেয় ভাঙ্গিয়া প্রাণ
.                উপেক্ষার আঘাতে।

.                ৪
উত্তপ্ত নিশ্বাসে তায়
.                বুক যায় ফাটিয়,
মর্ম্মভেদী অশ্রজলে
.                আখি যায় ভাসিয়া।

.                ৫
কেহুত বারেক তাহা
.                ফিরিয়াও চাহেনা,
আপনা আপনি কাঁদি
.                পেয়ে বড় বেদনা।

.                ৬
তুমি কেন কাছে এলে
.                প্রেমস্নেহ লইয়া,
তুমিকি প্রাণের ক্ষত
.                দিবে মোর মুছিয়া?

.                ৭
বড় অভাগিনী আমি
.                তাই দয়া করিয়া,
এসেছ কি দিতে মোরে
.                স্নেহ প্রেম ঢালিয়া?

.                ৮
চাহিনা ও প্রেম স্নেহ
.                যাও তুমি লইয়া,
রেখনা আমায় আর
.                মায়া ডোরে বাঁধিয়া।

.                ৯
তোমারি মতন হায়
.                একদিন 'আসিয়া,
সে দিছিল স্নেহ প্রেম
.                নীরবেতে ঢালিয়া।

.                ১০
তারপর কোথা গেল
.                মোরে একা ফেলিয়া,
তাহারি বিরহে আমি
.                সদা মরি কাঁদিয়া।

.                ১১
তুমিও তাহার মত
.                প্রেম স্নেহ ঢালিয়া,
পাছে গো চলিয়া যাও
.                অভাগীরে ভুলিয়া,

.                ১২
তোমার ও প্রেম তাই
.                ভয়ে নিতে চাহিনা,
নিয়ত কেঁদেছি আর
.                কাঁদিতে যে পারি না।

.                ১৩
না না না দাও গো দাও
.                প্রেম স্নেহ ঢালিয়া,
তব প্রেম স্নেহে যাব
.                সব জ্বালা ভুলিয়া।

.                ১৪
প্রেম প্রীতি দিয়া সদা
.                পূজিব ও চরণ,
তুমি যেন ফেলি' মোরে
.                যেওনাক কখন।

.                ১৫
এসেছ স্নেহের আশে
.                জানি ভাল বাসিতে,
ভালবাসা দিব, কিন্তু
.                রেখ মোরে চিতেতে।

.                ১৬
এই অনুরোধ মোর
.                রেখ যেন ভুলনা।
সে মোরে ফেলিয়া গেছে
.                তুমি যেন যেওনা।

.            ****************                       
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*
পাগলিনী
কবি নগেন্দ্রবালা মুস্তোফী
হুগলী থেকে, যদুনাথ কাঞ্জিলালের তত্ত্বাবধনে প্রকাশিত “পূর্ণিমা” মাসিক পত্রিকা ও সমালোচনীর ১৮৯৬
সালের (১৩০৩বঙ্গাব্দ) ভাদ্র-আশ্বিন সংখ্যায় প্রকাশিত। মিলনসাগরে প্রকাশকাল ২৮.৫.২০২০।

আমি পাগলিনী রাই,
আকুলিত চিতে,
চাহি চারিভিতে,
যদি তা’র দেখা পাই।
গাছে পিককুল,
মধুর মৃদুল,
শ্যাম-বাঁশী ভ্রমে চাই।


আমি পাগলিনী রাই,
নিঠুর পাষাণ
কাড়ি লয়ে প্রাণ
কোথা গেলে কানাই,
পাগল করিয়া
দিয়াছ ছাড়িয়া
ছি ছি লাজে মরে যাই।


আমি পাগলিনী রাই,
আসিব বলিয়া
গিয়াছ চলিয়া
আমি ইতি উতি চাই,
যদি আসিবেনা
কেন এ ছলনা,
কেন আশা দিলে ছাই!


আমি পাগলিনী রাই,
তোমা বিনা হায়,
মরি যাতনায়,
বারেক তা বুঝ নাই।
পুরুষের প্রাণ
এমন পাষাণ
আগে কে জানিত ছাই!


আমি পাগলিনী রাই,
গুরুজন মাঝে,
ব্যস্ত রহি কাযে,
তবুকি নিস্তার, পাই?
‘ওই এল এল’
সদা প্রাণে ভেল,
শতবার ছুটে যাই।


আমি পাগলিনী রাই,
নিরাশ হইয়া
মরমে মরিয়া
কাতরে ভূমে লোটাই।
তুমি আসিলে না
তুমি দেখিলে না
নাহি এ দুখের ঠাঁই।


আমি পাগলিনী রাই,
তব ভালবাসা
নাহি করি আশা,
কেবল দেখিতে চাই,
হৃদয়ে বসাব,
প্রণয়ে পূজিব
অন্য কোন সাধ নাই।


আমি পাগলিনী রাই,
ভরি প্রাণ মন,
ভকতি ব্যজন,
করিব হে সর্ব্বদাই,
এই আশা মোর,
পুর মনোচোর,
আর কিছু নাহি চাই।

.                        ****************                       
.                                                                                
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
*