ডাকি এক হাজংএরে নিয়া মণি কিছুদূরে জিজ্ঞাসে কারণ
কি কারণে তোমাদের ভয়ে ভীতু মন
বিস্তারিয়া কহ শুনি হে সব বিবরণ ||
হাজংটি কাঁদিয়া বলে শুন বাবু তাহা হলে  ( আমরা ) দোষী সর্বজন
ধান আনিয়াছিলাম নব্বুইয়ের ওজন
একশ তোলায় সের দিতে হে কয় পেয়াদাগণ ||
নব্বই তোলাতে সের, ধান দেই টংকের জানি সর্বদায়
এখন সের দিতে কয় একশ তোলায়
এই দোষে হইয়াছি দোষী হে ছাড়ে না পেয়াদায় ||
আসিয়াছি কোন সকালে ক্ষুধায় এখন পেট জ্বলে পাইনা বিদায়
বিকালে আসিবেন বাবু বাহির আঙ্গিনায়
পেয়াদারা জানাইয়া গেল হে কর্কশ ভাষায় ||
হাজং এর কথা শুনি অবাক হইয়া বলে মণি হবে প্রতিকার
রক্ষা করব তোমাদের প্রতিজ্ঞা আমার---
বন্ধ করব জুলুমবাজী হে অন্যায় অবিচার ||
মণি আপন জমি বাড়ি সমিতিতে দান করি করেন আবেদন
কে কে হবে কৃষককর্মী বলো এইক্ষণ
সংগ্রাম চালাইতে হবে হে জীবন-মরণ ||
তারপরে এক সভা হলো নিয়া হাজং কোচ ডালো যতেক কিষাণ
গাড়ো বানাই ছেলে মেয়ে হিন্দু মুসলমান
সবারে চিনাইলো মণি হে রক্ত নিশান ||
ললিত হান্নানের মত কর্মী এলো শত শত ফৌজি দশ হাজার
মেয়েরা আসিল সেজে কয়েক হাজার
টংক প্রথাটি শেষে হে হইল চুরমার ||

.          ******************     
.                                                                               
সুচিতে...   


( টংকাপ্রথার অর্থ হলো টাকা না দিয়ে ধানে খাজনা দেওয়া | টংকের হার একর প্রতি তিন মন
থেকে বারো মন পর্যন্ত ধান | কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি তিন মন থেকে সাত মন পর্যন্ত
ধান দিতে হতো | সেরের ওজন ছিল ৮৫ তোলা থেকে ১০০ তোলা | সাধারণভাবে ৯০ তোলাতে
খাজনা নেওয়া হতো |  কৃষকরা নিজেদের খরচে খাজনার ধান জমিদার বাড়িতে জমা দিত |
কিন্তু জমিদার বাড়িতে ওজনে কারচুপি করা হতো | তা অজ্ঞ কৃষকরা সবসময় বুঝতে পারত
না | এক সময় পাইকদের কথায় কৃষকরা জানতে পারে যে তখন থেকে ১০০ তোলার হিসাবে
খাজনা নেওয়া হবে | এর পরি -প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের যে আন্দোলনের সূত্রপাত  হয়  
১৯৪৬ সালে তা সংগঠিত রূপ নেয় | কমিউনিষ্ট পার্টি ও কৃষক সভা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব
দেয় | কৃষক নেতা মণি সিং ছিলেন এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও নেতা  | নিবারণ
পন্ডিত তাঁর দল নিয়ে দিনের পর দিন এই আন্দোলনের পক্ষে প্রচারাভিযান সংগঠিত করেন,
কখনও গোপনে কখনও বা প্রকাশ্যে  | --- কঙ্কণ ভট্টাচার্য, লোককবি নিবারণ পণ্ডিতের গান )


মিলনসাগর
কবি নিবারণ পণ্ডিতের কবিতা
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
হইল কিবা শোভা ঋতুরাজ আগমনে    
নিবারণ পণ্ডিত

হইল কিবা শোভা ঋতুরাজ
ফুটিল বাগানে ফুল গুঞ্জরিছে
বিরহী হইল আকুল কোকিলা
রসালো মুকুলে সার শীত গ্রী
জুড়ালে প্রাণ সবার মৃদুমন্দ
পল্লবিত শাখে শাখে রংবের
পাপিয়া লুকায়ে থেকে পিউ
মধুলোভে মধুকরে কুটাফুল
ঘুরে বেড়ায় বারে বারে ফুট
বিরহ সইতে নারি ডাকিতেছে
এসোগো রাই কিশোরী রঙ্গ

.                ******************     
.                                                                               
সুচিতে...   


[ কৈশোরে কবি বহুসংখ্যক কথকথা, কীর্তন, টপ্পা ইত্যাদি রচনা করেছিলেন | ওই সব গান
বিভিন্ন পল্লী গায়কেরা আসরে পরিবেশন করতেন |  সংগৃহিত না হওয়ার কারণে অধিকাংশ
গান এখন আর পাওয়া যায় না  |  একটি গানের অংশবিশেষ এখানে দেওয়া হল | --- কঙ্কণ
ভট্টাচার্য, লোককবি নিবারণ পণ্ডিতের গান ]


মিলনসাগর
*
গ্রামের মানুষ ধ্বংসের বন্যায় ভাসিয়া চলেছে হায়       
নিবারণ পণ্ডিত

.                  ( পূরবী মিশ্র )

গ্রামের মানুষ ধ্বংসের বন্যায় ভাসিয়া চলেছে হায়
কে বাঁচাবে তোরা, কে বাঁচাবে, ওরে আয়, ওরে আয়  |

.          সান্ধ্য প্রদীপ জ্বলেনা
.          সোনার পল্লী হলো
.          নিশ্চিহ্ন হইল কত
.           গ্রামবাসী আজ অ

.          পল্লী বধূ আজ ভিখা
.          দ্বারে দ্বারে ঘুরে অ
.          কেউবা লাগিছে দা
.          কেউবা পথের ধূলা

.          উঠানে উঠানে শ্মশা
.          মানুষে মানুষে নাই
.          কার বা বাড়ী কার
.          শিবা ডাকে আঙ্গিনা

.         চলে গেছে আজ বহু
.         চলে গেছে কত শিশু
.         এখনো যাদের আছে
.         কে বাঁচাবি ওরে আ

.                ******************     
.                                                                               
সুচিতে...   


[ ১৯৪৩ -এর ভয়াবহ মন্বন্তরজনিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গানটি রচিত | এই দুর্ভিক্ষে গ্রাম
বাংলায় কয়েকলক্ষ মানুষের জীবনহানি হয় | --- কঙ্কণ ভট্টাচার্য, লোককবি নিবারণ পণ্ডিতের
গান ]


মিলনসাগর
*

হিন্দুর বিধবা নারী পরুক কন্ট্রোলের শাড়ী
কব়্যাছে হুকুমজারী এই দেশী সরকার
দাহুন কাফুন কাপড় ছাড়া কোন দেশে হয় কার
বাচ্যা থাক্যাও সুখ হইল না, মরলেও হবে কেলেঙ্কার ||

সুখ হবেনা মব়্যা গিয়া, হবে না অন্তেষ্টিক্রিয়া
লুকাইয়াছে কাপড় নিয়া যত মজুতদার
মড়ার কাপড় চাইলে তারা মুখ মুখখান ভার
মুখের জবাব পাইগো তাদের ঘুরতে ঘুরতে দু’চার বার ||

দেশের যত ধনী মানী, তারা খাইল লবণ চিনি
এই কথাটা সবেই জানি বলতে হয় না আর
তবু কেন দেশের মানুষ হইল না হুঁশিয়ার
এই দেশটারে লুইট্যা খাইলো ঘুষখোর আর মজুতদার ||

.                ******************     
.                                                                               
সুচিতে...   


[ যুদ্ধকালীন কালোবাজারি ও কন্ট্রোল ব্যবস্থায় উদ্ভুত দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে রচিত |
--- কঙ্কণ ভট্টাচার্য, লোককবি নিবারণ পণ্ডিতের গান ]


মিলনসাগর
*
.       কিবা কাজ করতেছেন তিনি
.       বিদ্যার দৌড় বা কতখানি
কয় জানানা রাখছেন তিনি, কয়জন রাখছেন সহচর |
.          খোঁজ কর ভাই কোন কোন শয়তান
.       এদের সাথে দেয়রে যোগান
কোন বাজারে হয়রে চালান, লবণ চিনি তেল কাপড় ||
.       আর খোঁজ কর পরে
.       তিনি কয়দিন ছিলেন হাজত ঘরে
কোন মার্জ্জায় অপরাধ করে, গেছলেন তিনি বাসর ঘর ||

.                ******************     
.                                                                               
সুচিতে...   


[ যুদ্ধকালীন কনট্রোল ব্যবস্থায় দুর্নীতির সুযোগে হঠাৎ ধনী হয়ে ওঠা সুযোগসন্ধানীদের
মুখোস উন্মোচন করে কবি এই গান রচনা করেন | --- কঙ্কণ ভট্টাচার্য, লোককবি নিবারণ
পণ্ডিতের গান ]


মিলনসাগর
*
শুনেন যত দেশবাসী শুনেন ভাই গরীব চাষী    
নিবারণ পণ্ডিত
ভাব কি চমত্কার গো দেশের ভাব কি চমত্কার       
নিবারণ পণ্ডিত
চিনে রাখো গাঁয়ে তোমার কে কে নূতন মাতব্বর      
নিবারণ পণ্ডিত

.                    বাউল