কবি নীলরতন সেন এর কবিতা
*
আচার্য শশীভূষণ দাশগুপ্তের তিরোধানে
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


হে তাপস,
বড়ো অসময়ে আজ সাঙ্গ হল খেলা !
বিধাতার কোন্  নব কর্মোদ্যোগে তুমি
কোথায় চলেছ একা? ম্লান মর্তভূমি
ঝরালো দুফোঁটা অশ্রু বিদায়ের বেলা |
কত কাজ, কি ব্যস্ততা, সময় যে নাই,--
জীবনের অপরাহ্নে বড় ব্যস্ত ছিলে !
ক্ষুদ্র পরমায়ু নিয়ে অনন্ত নিখিলে
কিছুটা স্বাক্ষর তবু রেখে যাওয়া চাই |

তুমি ব্যস্ত,  বিধাতাও কম ব্যস্ত নন |
চতুর্দিকে  অসমাপ্ত  কর্মের প্রবাহ |
---- নিষ্ঠুর আহ্বানলিপি অনিবার্য হাতে ;
মৃত্যুদূত ফিরে চায় আপনার ধন |
মর্তের খেলার ছলে তুমি কি যে চাহ
কিছুই ভ্রূক্ষেপ নাই বিধাতার তাতে |

.               *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বৃদ্ধ গুরুর প্রতি শিষ্যের আর্জি
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


তোমারি ঢাক
সবাই মিলে পেটাচ্ছি দিন-রাত ;
তাতেও তোমার ভরে না মন ?
তোমার গুণের নামাবলীই
পরেছি গায় ;
তবু
বলছ রেগে,  ঠিক মতো গুণ গাইছি না কো কভু !
আমরা নাকি
তোমার যতো গুণ-ব্যাখ্যায়
পদে পদেই চলেছি ভুল করে |
নিজের ঢাক এবারে তাই
নিচ্ছ তুলে নিজের কাঁধেই |

তা হলে,
আমরা এখন নিচ্ছি বিদায় |
মনে রেখো,
আত্মপ্রচার রয়ে সয়েই জমে ভালো |
কখন কোথায়
ছাইচাপা কোন্ কলঙ্কের দাগ
উঠবে ফুটে,
দেখবে তখন, ঢাকবার আর
পাবে নাকো সুযোগ সেটার |

বয়েস হ লো |
ধর্মে-কর্মে মন দেওয়াটাই
এখন ভালো ;
ভাবছ  কি গো ?
---বেড়াল-তাপস বলবে সবাই ?
বলুক  না কো !
তবু জেনো,  না খোঁচালে
সাত-পুরোনো তোমারো সেই
কাসুন্দি কেউ ঘাটবে না কো |

বলছি, শোনো, ভালো মনেই,
সবার কানে তোমার সুনাম
পৌঁছে দেবার দায়িত্বটা, আমাদের, এই
শিষ্যদলের হাতেই এখন
পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে
তুমি, প্রভু , বিশ্রাম নাও |

গুরুগিরির এই তো কর্ম |
ভালোমন্দ আকাম-কুকাম,  কত শত
করতে হলে সারা জীবন !
এবার গুরু অবসর নাও |

চলো মন, স্ব-নিকেতন,
শ্রীবৃন্দাবন !

.               *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কবিতাগুচ্ছ
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


১        মাঝে মাঝে আমার কান্না আমি শুনতে পাই |
.        কত কাল হয়ে গেল তোমায় ছেড়ে এসেছি |
.        ভয় লাগছে,
.        এবার ঘরে ফিরলে হয়তো,
.        হয়তো তুমি আমায় চিনতেই পারবে না |
২        সোনামণি,
.        এ সংসারে এনে
.        তোকে আমি কষ্টই দিয়েছিলাম |
.        কথা দিচ্ছি,
.        আর একবার ফিরে আয়,
.        এবার তোকে আর দুঃখ পেতে দেব না,
.        আঁচল আড়ে সব দুঃখের ঝড় থেকে তোকে বাঁচাবে |
.        আর একবার আমার ঘরে ফিরে আয় সোনামণি |

৩        এ আমাদের এক মজার লুকোচুরি খেলা |
.         যখন ওকে প্রায় ধরে ফেলি,
.           বাঁধন আল্ গা করে
.                খিল্ খিল্ হেসে একছুটে পালিয়ে যায় |
.        বক্ লে অভিমানে ঠোঁট ফোলায়
.        আদর করলে পাকা গিন্নি সেজে
.                আমাকেই বকাঝকা করতে থাকে |
.        ক্ষণেক্ষণেই ওকে পেয়ে হারাই,
.            হারিয়ে ফিরে পাই |
৪        লালসার শিকার হতে চায়নি বলে
.                ওকে তোমরা বাঁচতে দিলে না |
.        এখন কাঁটা-ছেঁড়ার প্রহসনে আর কি প্রয়োজন বল ?
.        মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখো |
.        মনে রোখো, একদিন
.           তোমার জীবনের ওপরও যবনিকা পড়বে |

.               *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সম্পাদক মশাইকে
হবু  কবির  নিবেদন
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


সেই একই বাঁধাগৎ বুলিটা এবারেও
তাহলে বলছেন,—
আপনার কাগজে একটুও
ঠাঁই নেই ?
সম্পাদক মশাই,
শুনুন,
.        এবং জানুন,
কবির স্বীকৃতি না পেলে
অন্তত আমাদের কিছু এসে যায় |
দেখুন,
.   হবু কবিরা সবাই চায়
.   একটু নাম-কাম ;
.   ----নইলে আগাম
.   কি জন্যে এতটা তদ্বির করছি ?
.   ----আপনাদের কিঞ্চিৎ নেক্ নজর কাড়তে,
.    একে ওকে ধরছি ?

তবু আপনাদের মন গলছে না,
.              সিদ্ধান্ত টলছে না,
নিরুত্সাহে আমাদেরও লেখনী চলছে না |
কেউ কি নিভৃতে একবারও আপনাদের
.            খবরটা বলছে না, যে
এক আধটা কবিতা ছাপতে,
ছাপার অক্ষরে নামটা দেখতে,
রোজকার সিগারেট-খরচা বাঁচিয়ে,
মাঝে মধ্যে চাক্ রে দাদাদের পকেট হাতিয়ে,
আমরা  কিছু  চাঁদাও তুলে দিতে রাজি আছি |
শুধু, পরস্পর আর একটু কাছাকাছি
.                        আসতে চাই :
.                        এবারে তাই,
.                          সনির্বন্ধ অনুরোধ,
.                            একটু কাছে ডেকে নিন,
.                        আমাদেরও এক-আধটা চান্স দিন |

.                   *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ক্ষেন্তির মায়ের ভাবনা
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


হয়তো চিকিৎসা হলে সোয়ামী ওর বেঁচে যেত,
তা’ বলে সবার চিকিত্সা হবে সে কি করে হয়, বল ?
বিনা পথ্যে,  ওষুধের অভাবে
নিশ্চয়ই প্রত্যহ হাজার-লক্ষ লোক মরছে ;
----মরবে এটাই তো বিধিলিপি !
ক্ষেন্তির বাপকে ক্ষেন্তির মা-ও বাঁচাতে পারলো না |
ছোট ছোট পাঁচটা মুখে খাবার জোগাতে
ক্ষেন্তির মা উদয়াস্ত খাটে |
পাঁচ বাড়ি ঠিকে কাজ, কুড়িয়ে বাড়িয়ে
চার কুড়ি টাকার সংস্থান |
পাঁচ বাড়ি ঘুরে নিজের খাওয়াটাও কোনোমতে জুটে যায় |
কিন্তু বাঁচাবে কি করে বল ?
রোগে ভুগে ভুগে কঙ্কালসার হয়ে
মরল একদিন ক্ষেন্তির বাপ |
আসল রোগটা তো অনাহার |
অনেক কাল ঠিকমতো খাওয়া জোটেনি |
---সে রোগটার কি প্রতিকার ছিল, বল |
এখন ভাবনা, মড়া পোড়ানোর খরচটা জুটবে কোথা থেকে |
তা, প্রতিবেশীরা লোক খারাপ নয় |
ঝগড়াঝাটি ভুলে মড়া কাঁধে তুলে নিল |
চাঁদা তুলে ঘাট খরচাও তুলে দিল |
ক্ষেন্তির মা মনিবের বাড়ি বাড়ি ভিখ মেগে
এখন শ্রাদ্ধটা সারবার ভাবনা ভাবছে |
ক্ষেন্তি এই আটে পা দিয়েছে |
ওকেও দু’ একটা ঠিকে কাজে
এবার লাগিয়ে দেবে,---
শোকের মাঝেও সে ভাবনাটা
ভাবছে বইকি সদ্য বিধবা ক্ষেম্তির মা |

.                   *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
জন্মদিনে মধুসূদনের সমাধিতে
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


কতকাল ঘুমিয়ে আছ !
জীবনে বড়ো বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলে |
কিন্তু তোমার দ্বিতীয় সত্তা ?
---ছায়ার মতো তোমায় অনুসরণ করতে করতে
সে-ও কি ক্লান্ত হয়েছিল ?

হিমশীতল সমাধিতে শুয়ে
কখনো জেনেছ কি,
জীবনের সব প্রগল্ ভতা, সমস্ত কলুষতা,
কামনা-বাসনা, ক্ষোভ আর হতাশা পেরিয়ে,
এখন তুমি শুভ্র সুন্দর পবিত্রতার স্মৃতিসৌরভে রূপান্তরিত !
তোমার নিজেরই তৈরি সুরভিত স্মৃতিমন্দিরে, দেখো আজ,
অগণিত যাত্রীর ভিড় |
মগ্নচৈতন্যে তার কোনো সাড়াই জাগছে না কি ?

জীবনকে আকন্ঠ ভোগ করতে চেয়েছিলে |
সে তোমার অকালে নিঃশেষ করে সমাধিতে শুইয়ে রেখে গেল
তোমার বিশ্বস্ত কবিসত্তা,
ছায়ানুগামিনী দ্বিতীয় চৈতন্য,
--যাকে কোনদিন তেমন আমল দিতে চাওনি,
সে তোমার যশের মন্দির আজ সুরভিত করে রেখেছে |

কলকন্ঠ সংযত করো |
নম্র পায়ে সমাধির পাশে এসে দাঁড়াও |
জননীর কোলে মহানিদ্রাবৃত
দত্তকুলোদ্ভব মহাকবিকে সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাও |

.                   *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
চক্কোতি মশাইকে
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


দেখুন শুনুন,
চুপটি থাকুন,
.   চক্কোতি মশাই |
হাসুন কাশুন,
ভালোবাসুন,
.   বলবেন না কসাই |
খুব সাবধান,
কাউকে কিন্তু
.    বলবেন না কসাই |

দশটাকাতে ইলিশ খাবেন ?
চাল-চিনি-ডাল অঢেল পাবেন ?
যত খুশি
.   যার যা ইচ্ছে বলুক |
হাবাকান্ড গবাকান্ড
.   যার যা ইচ্ছে বলুক !
আপাতত
.   ভেজাল তেল আর পচা আলু
.     তাই খেয়ে দিন চলুক !

নেই কেরোসিন ?
চিনির আকাল ?
লোড্ শেডিং-এ
.   হলেন নাকাল ?
কি করবেন আর, বলুন ?
নাকমলা আর কানমলা খান ;
নিদেন পক্ষে
মনের দুঃখে
.   লোটা কম্বল ধরুন |

বাজার আগুন ?
যতই রাগুন
.   কিম্বা নাকে কাঁদুন ;
ফল কিছু নেই
সার বুঝে সেই
.   নিজেই সম্ ঝে চলুন |

বুঝলেন তো,
.  চক্কোতি মশাই !
বোকার হাসি হাসুন,
এবং মাঝে মাঝে
বিষম খেয়ে কাশুন |
কিন্তু ভায়া,
.  কাউকে যেন
.  ভুলেও কভু
.  বলবেন না কসাই |
লোটা-কম্বল
শেষ সম্বল,
.   মাঝ দরিয়ায় ভাসুন |

.         *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
চক্কোতি মশাই এখন---
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


চক্কোতি মশাই এখন সাবধানী মানুষ |
দামড়া বেকার ছেলেটা
পকেট হাতিয়ে পয়সা নিয়ে সিগারেট খায় ; জেনেও
বকেন না |
মেয়েটা বেপাড়ার এক বখাটে ছেলের সঙ্গে
প্রেম করছে, জেনেও
না বোঝার ভান করেন ;
গিন্নির মুখঝাম্ টায় একটুও
মুখ বেজার করেন না |
এমন কি বাড়ির ঝিটা পালিয়ে গেলে,
ছুটির দিনে তাঁকে উনুন ধরাতে, মাছ কুটতেও
সাহায্য করেন |

অবশ্য মাসকাবারে
মাইনের টাকাটা তাঁর হাতে তুলে দিতে গিয়ে
কয়েকটা টাকা সরিয়ে রাখেন |
ওই টাকাতে সন্ধ্যেবেলা
একটু নেশা করেন |
না, কোনো মারাত্মক নেশা নয় |
গিন্নি কেন, তাসের আড্ডার বন্ধুরাও
ধরতে পারেন না |
মুখে দুটি এলাচদানা  নিয়ে
ঠিক ন’টায় বাড়ি ফেরেন |

তারপর তাহার প্রাত্যহিক পাওনা
কিছু  নালিশ,  বকুনি,  উপদেশ |
শুনতে শুনতেই একসময় ঘুমিয়ে পড়েন |
সকালে চায়ের কাপ নামিয়ে রেখেই বাজার,
তারপর মাথায় দু’মগ জল ঢেলে,
দুটি নাকে-মুখে গুজে,
আটটা-কুড়ির লোকাল ধরা |
দশটার মধ্যে ডালহৌসি পৌঁছোনো চাই |
সওদাগরী অফিস, যেমন টাকা দেয়
তেমনি খাটিয়ে নেয় |
তবু বেশ নিরাপদ, শান্ত জীবন |
কোনো ঝুট্-ঝামেলায় থাকেন না |
অনেক দেখে, ঠেকে, শিখে,
এখন সাবধান হয়ে গেছেন
চক্কোতি মশাই |

.         *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আলাপ
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


আপনারা সত্যিই ভাগ্যবান |   এই তো  দুদিন  আগেও  হাওয়া  আর
টিপ্ টিপ্  বৃষ্টি !   কি কনকনে ঠান্ডা !   এখন  নীল  আকাশে  ঝলমল
করছে রোদ | জানলার  বাইরে তাকিয়ে দেখুন, জাকারান্দা ফুলের কি
সমারোহ | লাজুক ক্যামেলিয়া সবে পাপ্ ড়ি মেলেছে | না, রডোডেনড্রন্
এখন পাবেন না |  সকালে  এক  চক্কর  ওয়ার্ড  লেকে  বেড়াচ্ছেন তো |
সন্ধ্যেটা  ক্লাবঘরে রঙীন টি.ভি দেখুন,  বারে বসুন,--- নইলে আমাদের,
--- এখানকার  বাঙালী  বন্ধুদের  ঘরে চলে  আসুন |  চায়ের সঙ্গে উষ্ণ
আড্ডা,  রবীন্দ্র সঙ্গীত ;  কিংবা  কয়েকটা  বছর  পিছনে  ফেলে আসা
সেই বাঙালী নিধনের দুঃস্বপ্নের দিনগুলির স্মৃতিচারণ | দেখবেন, চমত্কার
কেটে যাবে সময়টা |

এলিফ্যান্ট  ফল্ স্ ,  শিলঙ পিক্,  গল্ ফ্ কোর্স,  হায়দরী পার্ক,-- -হ্যাঁ , সব
একে একে দেখে নিন | ----ও, গতবারেই সেরে ফেলেছেন সে সব ? তাহলে,
এবারে  সময় করে  একদিন ‘চেরা’টা  ঘুরে  আসুন |  মশ্ মাই-এর ফল্ স্
আর কেভ্  ভালো লাগবে আপনাদের |  ওখানকার  রামকৃষ্ণ  মিশনটাও
বেড়িয়ে আসবেন | সেবারকার বাঙালী  বিতাড়ন পর্বে ওদের ওপরও খুব
হামলা গেছে | ---- শুনবেন সে সব কাহিনী মহারাজদের মুখে |

না না,  বড়াপানিতে  আর আলাদা  করে যেতে  হবে না | শহরে আসবার
সময় একবার তো দেখেছেন | নাব্ বার মুখে আর একবার না হয় ভালো
করে দেখে নেবেন |   তবে  হ্যাঁ,  মাছ  ধরার  নেশা  থাকলে  একটা  দিন
কাটিয়ে আসতে পারেন ওখানে | এখন  দিন  কয়েক  এখানেই  আরামে
কাটিয়ে যান |  ভূভারতে এমন চমত্কার পাহাড়ি শহর আর পাবেন না |
জানেন তো,  সাহেবরা বলতো, স্কট্ ল্যান্ডকেও নাকি হার মানায় শিলঙ
সুন্দরী |

সময় করে দু’একটি সন্ধ্যা পুলিশবাজার আর বড়োবাজারটা ঘুরে আসুন |
অল্পস্বল্প   মার্কেটিং   করুন | সৌখিন কিছু বাঁশ ও বেতের কারুশিল্প  
সমতলের আত্মীয়-বন্ধুদের জন্যে নিয়ে যান  |

ঠিকই শুনেছেন | লোকজন শীতের ভয়ে এখন ধীরে ধীরে নীচে নেমে
যাচ্ছে |  তবে আপনারা যেন, এমন সোনাঝরা মিঠে রোদ, সবুজ গাল্ চে
বিছানো লন্ ,  ঘরে ফায়ারপ্লেসের  ওম্—এসব  ছেড়ে তড়িঘড়ি পালাবেন
না | জমিয়ে শীত নাবতে আরও হপ্তা দু’তিন দেরি আছে |

কি বলছেন ?  ভীড়  বাড়লে  ফেরার  টিকিট  মেলা  ভার হবে ?  না, সে
ভয় করবেন না | এখন বোয়িং ছাড়াও,  প্রতিদিন  ঢাউস্ এয়ার বাস চলছে
গৌহাটি-কলকাতা  হয়ে  দিল্লী অবধি |  তিনশো  কুড়িটা করে সীট থাকে |
এ.সি সেন কোম্পানীকে বলে রাখুন |  টিকিট ঠিক পেয়ে যাবেন |

এখন,  শিলঙ  যাকে  বলা  চলে,  ঠিক  পরিণত  যৌবনা |   যখন  এসে
পড়েছেন,  ওর উষ্ণ অভ্যর্থনায়  প্রসন্নমনে সাড়া দিন |  আরও কয়েকটা
দিন কাটিয়ে যান এই শিলঙ্ ক্লাবে |

.                              *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
হারিয়ে যাওয়া
কবি নীল সেন
“স্বপ্নের সাঁকো পেরিয়ে” কাব্যগ্রন্থের ( ১৯৮৩ ) কবিতা |


মাঝে-মধ্যে হারিয়ে যাওয়া এই তো বেশ |
ওয়ার্ড লেকে ছট্ পরবে খুশির রেশ |
শিলঙ্ পাহাড়
রঙের বাহার |
সবুজ মাঠ,  নীল আকাশ,
লাল-বেগুনী ফুলের বাহার |
উঁচু-নীচু পাহাড়ী পথ, আঁকা-বাঁকা |
পুব গগনে ভোরের আলোয় খুশির লেখা |
কাছে-দূরে,
যেমন খুশি বেড়াও ঘুরে |
যাও না  চেরায়,
মেঘের  ডেরায় |
মশ্ মাই-এর ঝরণা দেখো,
গুহায় ঢোকো |
শিলঙ্ পিকে চড়ে না হয়,
তিলোত্তমার ছবি আঁকো |

এই তো বেশ |
মাঝে-মধ্যে হারিয়ে  যাওয়া
খুশির রেশ |

.             *****************             

.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর