কবি নিরুপমা দেবী ২ এর কবিতা
*
প্রেমের স্বরূপ
১৩৩৭ বঙ্গাব্দে (১৯৩০) প্রকাশিত, যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তের বঙ্গের মহিলা কবি গ্রন্থে, কবি নিরুপমা দেবীর
জীবন ও কবিতা নিয়ে আলোচনায় এই কবিতাটি ৩০১-পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত রয়েছে।


তোমার করে মোর কেমন প্রেম
জানিতে চাহ বঁধু কেন ?
পাষাণ খনি তলে গোপন হেম
পাষাণ হ’য়ে আছে যেন!

বাহিরে কোন রূপ প্রকাশ নাই
হৃদয় ভ’রে উঠে রূপেতে তাই,
গভীর কালো মেঘে          গভীর থাকে জেগে
গোপন সুধাবারি হেন!
তোমার তরে মোর কেমন প্রেম
জানিতে চাহ বঁধু কেন ?

আপন মাঝে আছে আপন সুধা
আপনি ভরে আছে সুখে
হৃদয়ে নাই এর বিষম ক্ষুধা
অনল নাই এর বুকে!

আকাশ থেকে দেখো আপনি ভরা
শূণ্য যাহা কিছু পূর্ণ করা,
আপন নীলিমায়          ঢালিয়া দিয়া যায়
ব্যাকুল ধরা অভিমুখে,
আপন মাঝে আছে আপন সুধা
আপনি ভরে আছে সুখে!

যে প্রেম আছে বঁধু তোমার তরে
সবারি আছে তাহে ভাগ,
সবারে দিয়ে সুখ জীবন পরে
পূরিবে এই মহাযাগ!

নির্ঝর ধারা দেখো আপন দানে
বাঁচায় তৃষাতুর নিখিল প্রাণে,
সবারে ভালবেসে          তবে তো পায় শেষে
সাগরে দিতে অনুরাগ,
যে প্রেম আছে বঁধু তোমার তরে
সবারি আছে তাহে ভাগ।

.        ***************  
.                                                                                                 
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
যৌবন প্রয়াণ
কবি নিরুপমা দেবী
আষাঢ় ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে (১৯৩১) প্রকাশিত, নরেন্দ্র দেব ও রাধারাণী দেবী সম্পাদিত বাংলা
কবিতা কাব্য-দীপালি, ২য় সংস্করণ থেকে কবিতাটি আমরা পেয়েছি। গ্রন্থে কবি নিরুপমা
দেবীর নামে দুটি কবিতা আছে। ঋতু-সম্ভার কবিতাটি "ধূপ" ও "গোধূলী"  কাব্যগ্রন্থের
রচয়িতা নিরুপমা দেবীর। এই কবিতা ভাষাও এই কবিরই বলে আমাদের মনে হয়েছে।

আমার জীবন বন-গহনের তলে
.        ক্ষণেক দাঁড়াও মন্ত্রবলে
ওগো মোর যৌবনের পরিপূর্ণ প্রাণ,
.        কণ্ঠে নিয়ে গান,
বক্ষে নিয়ে মিলনের আশা
---ফুলময় বসন্তের মুগ্ধ ভালবাসা!
চোখে দাও প্রণয়ের হাসির কাজল,
.        রূপ দাও ঢল ঢল্
.        সর্ব্ব তনু ভরি,
মধুভরা ফুটাইয়া সহস্রমঞ্জরী ;
কেশে দাও আকূলতা অধরে লালিমা
.        প্রাণে দাও প্রেম-মাধুরিমা,
.        বুকে দাও গানে-ভোলা-মন
আমার জীবনতলে ক্ষণেক দাঁড়াও মোর হে শেষ-যৌবন!

.        ঐ সন্ধ্যা নেমে আসে
পশ্চিম গগন তলে পবনের নিশ্বাসে প্রশ্বাসে,
ঐ মুদে আসে ধীরে আলোর কমল
ঐ ছায়া সুনিবিড় শান্ত বনতল
.        ঝিল্লি মুখরিত
ঐ শেষ বিহঙ্গম সঙ্গীহারা ভীত
উড়ে যায় পশ্চিমের দূর অস্ত পারে
.        ঐ বনানীর ধারে
আঁধার ঘনায় ঘন স্নিগ্ধ ফুলবাসে
.        ---সন্ধ্যা নেমে আসে।

.        সুলগন মধুময়
এই বুঝি এল মোর বঁধুয়ার আসার সময়!
.        যদি এসে দেখে বঁধু
অঙ্গে অঙ্গ নাই মোর বসন্তের মধু---
চোখে নাই সে চাহনি মধু মাদকতা
দেহে মনে নাই আর মিলনের সে অসহ পুলকের ব্যথা ;

.        সেই কেশ সেই বেশ
.        প্রাণে সেই প্রেমের আবেশ
গানে গানে কলকথা উচ্ছ্বসিত আলিঙ্গন,
নেই সেই চোখে চোখে সুরে সুরে প্রিয়-সম্ভাষণ ;
.        যদি দেখে নব স্ফুট ফুল্ল ফুলহার
ঝরা দলে ছেঁড়া ফুল ধূলিলীন সূত্রটুকু সার ;
.        বল বল তবে
.        সে মোর কেমনতর হব ?

.        আহা তুমি থাকো থাকো
.        এ মিনতি রাখো
.        যতক্ষণ বঁধু নাহি আসে
.        আমার বুকের পাশে
বাজাও বাজাও তব প্রেমতন্ত্রী বীণ্
মিলন লগন মোর নাহি যেন কাটে সুরহীন!
.        নিভিতে দিওনা রূপবাতি
.        অন্তরের শেষ ভাতি
থামিতে দিও না গান শুধু ততক্ষণ!
আমার জীবন তলে ক্ষণেক দাঁড়ায়ে যাও হে শেষ-যৌবন!

.              ***************  
.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঋতু-সম্ভার
কবি নিরুপমা দেবী
১৯২৮ সালে প্রকাশিত কবির “ধূপ” কাব্যগ্রন্থের, প্রেম পর্যায়ের কবিতা। নমিতা চৌধুরী ও
অনিন্দিতা বসু সান্যাল সম্পাদিত, ২০১৩ সালে প্রকাশিত, “দামিনী” কাব্য সংকলনে এই
কবিতাটিও সংকলিত করা হয়েছে এবং সংকলনের শেষে কবি-পরিচিতিতে রয়েছে যে
ইনি বিভূতিভূষণ ভট্টের ছোট বোন। আসলে "ধূপ" কাব্যগ্রন্থের কবি নিরুপমা দেবী।


যে দিন আমারে বাঁধ, তব বাহুপাশে
বুকে এসে লাগে তব বুকের স্পন্দন,
সুদীর্ঘ সঘন তব গভীর নিঃশ্বাসে
কপালে লেপিয়া যায় মধুর চন্দন,

কোমল ও-হৃদয়ের গাঢ় আলিঙ্গনে
আমার হৃদয়ে উঠে রক্তের তুফান,
অধীরতা জেগে উঠে চঞ্চল পবনে
বিস্ময়ে আকাশ চাহে সুনীল-নয়ান,

কখন মুদিয়া আসে নয়নপল্লব
কখন এ তনু হয় আবেশে বিহ্বল,
তোমার হৃদয়তটে হৃদয়বল্লভ
মূরছিয়া পড়ে মোর রক্ত শতদল,

চুম্বনে আঁকিয়া দাও তপ্ত অনুরাগ,
আমি জানি সেই মোর প্রাণের নিদাঘ।

.           ***************  
.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আত্মদান
কবি নিরুপমা দেবী
রাণী নিরুপমা দেবী সম্পাদিত “পরিচারিকা” পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১৩২৫ বঙ্গাব্দের সংখ্যায় (নভেম্বর ১৯১৮),
প্রকাশিত কবিতা।

সুখের হাসি দুখের ধন                অশ্রু-ধারে
নিঃশেষে আজ চুকিয়ে দেব          আপনারে।
একহাতে দান করে আবার        রাখ্ ব না ক আশা পাবার ;
টিঁক্ তে এবার দিব না আর           অহঙ্কারে,
নিঃশেষে আজ চুকিয়ে দেব           আপনারে।

অনেক পেলাম হর্ষব্যথা              এই জীবনে,
ভারের বোঝা বাড়িয়েছি যে        আপন মনে।
আমার ভাল-মন্দ-মেশা                কেবল পাবার নেবার নেশা,
তোমার পায়ে ঢাল্ ব প্রভু       দেওয়ার ভারে ;
নিঃশেষে আজ চুকিয়ে দেব            আপনারে।

.           ***************            
.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
তৃণ
কবি নিরুপমা দেবী
১৩৩৫ বঙ্গাব্দে (১৯২৮) প্রকাশিত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত “বাংলা কাব্যপরিচয়”
সঙ্কলনের, কবিতা।


মোরা        কচি কচি শ্যাম তৃণদল,
করি          জীবনের পথ সু-শ্যামল।
উঠি          ধরণীর প্রাণ ফুঁড়িয়া,
রহি          কঠিনের বুক জুড়িয়া,
রাখি         ঘন মখ্মলে মুড়িয়া,
এই           কঙ্করময় ধরাতল।
.              শ্যাম তৃণদল।

মোরা        পদতল-লীন রহি গো,
শুধু           শ্যামলের বাণী কহি গো,
মোরা        নাহি চাই সেবা আয়োজন,
মোরা        নাহি চাই ফুল আভরণ---
শুধু           নিশির শিশির আঁখিজল,
মোরা        কচি কচি শ্যাম তৃণদল,
.              শ্যাম তৃণদল।

আছি        শ্রম হরিবার কারণে,
চির         পথিকের পদ চারণ।
শুধু          পদরেণু লই কুড়ায়ে,
রহি         চরণের তল জুড়ায়ে,
রাখি        বক্ষের মাঝে উড়ায়ে,
কাঁচা        সবুজের শ্যাম পরিমল!
মোরা       কচি কচি শ্যাম তৃণদল।
.             শ্যাম তৃণদল।

মোরা        মরু বিজয়ের সেনাদল,
শুধু          কোমলতা দুই বাহু বল।
শ্যাম        ধরণী মায়ের পরশে,
বাঁচি        আমরা বরষে বরষে,
আছি        অহেতুক প্রাণ হরষে,
চির         শ্যাম আনন্দে ঢলঢল্।
মোরা        শ্যাম হৃদয় শিশুদল,
.            ---মোরা তৃণদল।

.           ***************  
.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
স্পর্শমণি
কবি নিরুপমা দেবী
রাণী নিরুপমা দেবী সম্পাদিত “পরিচারিকা” পত্রিকার ভাদ্র ১৩২৬ বঙ্গাব্দের সংখ্যায়
(অগাস্ট ১৯১৯), প্রকাশিত কবিতা।

আমার,        দুঃখ তোমার চরণ ছোঁয়া
.                তাই সে এমন পরশমণি
.        বুকের মাঝে গড়ছে তুলে
.                অমূল্য এ সোণার খনি।
.        তাই সে যেমন এল প্রাণে
.             ডুবিয়ে দিল ভক্তি বানে
.             মৌন পিকের কণ্ঠে জাগে
.                        হক্ষসুখের কুহুধ্বনি
.                এ যে আমার পরশমণি।

.        দুঃখ আমার তোমার বুকের
.                অমূল্য কোন সোহাগ ঢালা
.        তোমার দুটি অধর ছোঁয়া
.                চুম্বনেরই কণ্ঠমালা।

.        এ যে অতুল এ যে অতুল
.        ছাপিয়ে এবার গেল রে কূল
.        সকল হারা হয়ে তোমার
.                সোহাগ ধনে হলাম ধনী
.                এ যে তোমার পরশমণি!

.           ***************  
.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
গ্রামের কোলে
কবি নিরুপমা দেবী
রাণী নিরুপমা দেবী সম্পাদিত “পরিচারিকা” পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৭ বঙ্গাব্দের সংখ্যায়
(এপ্রিল ১৯২০), প্রকাশিত কবিতা।

সহরসীমা ছাড়িয়ে এবার এসেছি এই গ্রামের কোলে
কচি ঘাসের গল্ চে মোড়া শ্যামলতার পাথার-পুরী
খেতের পারে বালুর চরে ক্ষীণ নদীটির আঁচল দোলে
মন্দাকিনীর সুধার ধারা কেমন করে’ করলে চুরি!
আকাশ যেন নির্ণিমেষে তাকিয়ে আছে ধরার পানে
তরুরশিরে শিরে আপন নিটোল চারু চিবুক রাখি
পাখী হেথায় কেমন যেন প্রাণের ভাষায় সুরটি জানে
আম্র-মুকুল গন্ধ আকুল বনের কোলে উঠ্ ছে ডাকি
চখাচখী ত্রস্তভীত হেলিয়ে দেখে মোহন গ্রীবা
স্রোতের ’পরে নিথর জলে ছায়াটি তার দুলছে কিবা!

ঝাসর কাটা নারিকেলের পাতার হাওয়া লাগছে মিঠে
হাওয়ার সাথে আসছে ভেসে নেবু ফুলের গন্ধধারা
কাঁটা গাছের ফুলগুলি সব বর্ণ লীলার মোহন ছিটে
কামিনী তার গন্ধে রসে রূপের ছবি কর্ ছে সারা!
ঘুঘুর ডাকে উদাস করে বুকের মাঝে ব্যাকুল হিয়া
কোন্ অজানা প্রেমাস্পদের কোন্ অজানা প্রেমের লাগি
বাতাস বহে বাঁশের পাতায় মর্ম্মরিয়া মর্ম্মরিয়া
নীড়ের কোলে পক্ষীশাবক ক্ষণে ক্ষণে উঠছে জাগি
পল্লী বালক নগ্ন দেহে মাঠের পরে ছুটছে হেসে
সরলতার মধুরতার মন্দাকিনী আপনি মেশে!

ছোট ছোট পাতায় ছাওয়া কুটীরগুলি শান্ত আধার
কুমড়া শাখার নধর বাহু জড়িয়ে আছে চালের ’পরে
পল্লীবধূ খোঁজ রাখে না সহর-কেতা বাঁধন বাধার
বুকের উপর কাপড় বেঁধে যৌবনেরে আড়াল করে!
রৌদ্র হেথা স্বর্ণ উতাল, আঁধার হেথা নিবিড় কালো
প্রভাত হেথা স্নিগ্ধ মধুর, রাত্রি হেথা সুধায় ভরা
স্বপ্ন লোকের লুকিয়ে চাওয়া মায়ার স্ফটিক চাঁদের আলো
কবি জনের প্রাণ ভোলান মন মজান পাগলকরা!
নিন্দা কুযশ এত দিনের অবসাদের বসন ত্যজে
পবিত্রতার শান্তি জলে মলিন হিয়া নিলাম মেজে!

.           ***************  
.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
দুঃখ-সাধনা
কবি নিরুপমা দেবী
রাণী নিরুপমা দেবী সম্পাদিত “পরিচারিকা” পত্রিকার মাঘ ১৩২৭ বঙ্গাব্দের সংখ্যায় (জানুয়ারী ১৯২১),
প্রকাশিত কবিতা।

তুমি        কত ব্যথা আর সওয়াবে গো মোর
এ প্রাণে,
পাতা ঘর মোর ভেঙ্গে দেবে কত
তুফানে?
আর কতদিন সুখের খেয়ালে হাসাবে
আর কতদিন অশ্রু সাগরে ভাসাবে
আরো কতদিন দুঃখের ভয়ে শাসাবে
আমায় কে জানে?
কত ব্যথা আর সওয়াবো গো মোর
এ প্রাণে?
সময় কি আজো হয় নি নীরব
রহিতে?
দুঃখ সুখের তরঙ্গাঘাত
সহিতে?
ভক্তি কি আজো শেখেনি কঠোর সাধনা?
হৃদয় কি আজো বহিতে শেখেনি বেদনা?
তবে        ফাটাও ফাটাও ফাটাও ও বুক চেতনা
কঠিন-পাষাণে!
কত ব্যথা আর সওয়াবে গো মোর
এ প্রাণে?

.           ***************  
.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
শারদা
কবি নিরুপমা দেবী
রাণী নিরুপমা দেবী সম্পাদিত “পরিচারিকা” পত্রিকার আশ্বিন ১৩২৯ বঙ্গাব্দের সংখ্যায়
(সেপ্টেম্বর ১৯২২), প্রকাশিত কবিতা।

এসেছ শারদা কমলা কমল-আসনা,
এসেছ লক্ষ্মী বিশ্ব মনের বাসনা
পদ্মদলের মত মধুর সুরভি,
নবোন্মেষিত যৌবন-রূপ-গরবী!

শিশির-সিক্ত শষ্প-শ্যামলা ধরণী
তব আগমনে হয়েছে নিবিড় বরণী,
পেলব শেফালি জড়িত সাদায় স্বর্ণে
ফুটে ওঠে নিতি তোমার হাসির বর্ণে!

নীল অম্বর মেঘের বন্ধ টুটিয়া
নীলোত্পলের দলসম ওঠে ফুটিয়া,
বাতাসে সুবাস মাতালের মত অন্ধ
ঘুরে ফিরে আসে তোমার কোলের গন্ধ!

চিরবাঞ্ছিত এল মা হৃদয় কমলা,
চিরবন্দিতা মধুর হাস্য অমলা!
যুগে যুগে কবি-চিত্ত-পদ্ম-বাসিনী,
মালতী মধুর কুন্দ শুভ্র হাসিনী!

মুক্তি সুখের হরষামৃত বণ্টি’
---নিশির শিসির মুক্তামালার কণ্ঠী!
কল হংসের শুভ্র পক্ষ-শয়না,
অশ্রু-মুক্ত মৃদুল হসিত নয়না!

রৌদ্রজ্জ্বল স্বর্ণ আঁচল জড়িতা,
ঊষালোক সম পবিত্র সিত চরিতা,
চির আধারিতা চির শান্তির সদনা,
চির বরণীয়া বিশ্ব প্রাণের সাধনা!

জনমে জনমে যুগে যুগে লে কপালিনী,
বরষে বরষে নব সম্পদশালিনী!
এস মা শারদা, ললিত চরণ ভঙ্গে
বিশ্ব পদ্ম আসনে এস মা রঙ্গে!

জড়তা জলদ বিদারি উঠ গো সবিতা,
শত-গীতে-গাওয়া-অনাদি-কালের-কবিতা
দৈন্য পীড়িত আতুর বিশ্ব রক্ষি’
লক্ষ-জীবন-হৃদয়-পদ্ম-লক্ষ্মী!

.           ***************  
.                                                                           
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
পাথেয়
কবি নিরুপমা দেবী
রাণী নিরুপমা দেবী সম্পাদিত “পরিচারিকা” পত্রিকার আশ্বিন ১৩৩০ বঙ্গাব্দের সংখ্যায়
(সেপ্টেম্বর ১৯২৩), প্রকাশিত কবিতা।

বড়        নির্ম্মম এই ধরণী যে হায়
.                    এ জীবন বড় সুকঠোর
.           হৃদয়ের মধু শুষে নিতে চায়
.                    ছিঁড়ে দিতে চায় প্রেমডোর!

এ যে        অচেনা প্রাণের খেলাঘর
তাই         জানে না প্রাণের কত দর
.             চোখে চোখে চায় হেসে চলে যায়
.             খোঁজে না আপন কেবা পর!

ছিছি        এই ত ধরণী এই ত জীবন
.                    এরি নাম এরা বলে সুখ!
কভু        চোখে পড়ে যদি চেনা দু’নয়ন
.                    বুকে এসে ঠেকে জানা বুক ;

ভাবি        লুকায়ে রাখিব সে হৃদয়
যদি         জীবনে জীবনে জেগে রয়
.             দুটি হৃদয়ের প্রদীপ আলোকে
.              ও জীবনে যদি দেখা হয়!

এই          জীবন প্রদীপ নিভে গিয়ে আর
.                    সে কি কভু ফিরে জ্বলে না?
.            দুটি হৃদয়ের পুরাণ সেতার
.                    বিনিময় কথা বলে না?

এই         সুপ্রভাতের হাসি মুখে
এই          বেদনা রাতের ভাঙ্গা বুক
.            প্রাণে প্রাণে এই জড়িত প্রেমের
.             ব্যথা-শঙ্কিত ভরা সুখ?

তবে        এই কি সাজান পণ্যের হাটে
.                    কড়ি দিয়ে প্রেম কেনা যায়?
.            সেকি লাগে না খেয়ার এ পারের ঘাটে
.                    মরণের ঐ কিনারায়?
ওগো        অচেনা আমার কে আপন
আহা        চিরজীবনের পরিজন
.              প্রেমিকের প্রাণ বাঁচাও বাঁচাও
.              আশায় বাঁচাও এ জীবন!

.              ***************  
.                                                                           
সূচিতে . . .    


মিলনসাগর