অব্যর্ত শরের মত চলিয়াছি আমি অনুক্ষণ আমার লক্ষ্যের পানে | . হে ধানুকী ! আমি তব তীর ; তব স্থির চেতনার নিষ্পলক সন্ধানীদৃষ্টির দিশায় চলেছি আমি পথে পথে করি’ বিদীরণ বাধাগুলি, উদঘাটিয়া তোরণের মত | প্রিয়তম ! আমি তব প্রেম দিয়ে প্রজ্বলিত শিকার শায়ক, চুম্বনবহ্নিতে মোর প্রতি বস্তু প্রত্যেক পলক জ্ব’লে ওঠে ; মোর স্পর্শতীক্ষ্ণতার লভে অনুপম অনুভূতি প্রতি প্রাণ, জীবনের প্রতি ধূলিকণা ; ধরায় মৃন্ময়তার মাঝে আমি বহিয়া চলেছি তোমার পাবক-বার্তা, ক্লান্তিহীন ঝঙ্কারে বলেছি আলোর উৎসের বাণী ; যে-উৎস তোমার অন্যমনা নিশ্চল আনন্দ সম বিচ্ছুরিয়া তোমারি কিরণ : যে কিরণ দীর্ম করে শত ঊষা সন্ধ্যার তপন, ভুবন প্লাবিয়া ঢালি’ অন্তহীন জ্যোতির অক্ষ্মতি যে-আদিত্য চলিয়াছে তব মন্ত্র করিয়া মুদ্রিত নিখিলগ্রহের বক্ষে উপলব্ধ স্বর্ণের অক্ষরে | হে বিশ্বস্বপনী !
. মোর স্বপ্নময় সত্তার অন্তরে তোমার সৃষ্টির পাণি সারাবেলা করে উদ্ভাসিত শাশ্বতলীলার স্বপ্ন | আমি তব চন্দ্রাঙ্কিত তরী, স্পর্শে মোর কালের অসীমতার সিন্ধুরজনীর অঙ্গের তরঙ্গগুলি উজ্জ্বল রজতকৌমুদীর রূপ লভি’ উদ্বেলিয়া উচ্ছলিয়া মোরে লয় বরি’ ; অনন্তের প্রস্ফুরণ মোর প্রতি মুহূর্তের মাঝে | হে কালের অধীশ্বর !
. আমি তব মানস-মরাল, তোমার বিহঙ্গদূত, মোরে কি বাঁধিতে পারে কাল ? অন্তহীন গন্ডি তার ক্ষণে ক্ষণে মুক্তি লভিয়াছে আমার পাখার ছন্দে, যে-পাখার প্রত্যেক কম্পন কালহীন হৃদয়ের স্পন্দনের তালে তালে দুলি’ অনাদি উন্মগ্নতার বিনিস্তব্ধতায় আত্মভুলি’ আপনার প্রতি গতি, প্রতি ভঙ্গি, করে উৎসঞ্জন | আমার বন্ধন, মুক্তি, জীবন, মরণ, কিছু নাই ; প্রিয়তম ! আমি শুধু বহি’ চলি তোমার লীলার বিবর্তের ব্রহ্মপুত্র, জন্ম জন্ম ভেসেছে আমার তব ছন্দে ; তাহা জানি, এ-জীবনে যবে স্পর্শ পাই তোমার অঙ্গুলি-তলে |
. হে মোর প্রেমের সিন্ধু ! তুমি গভীর সুষুপ্তি নিয়ে ভেসে এলে আপন স্বপনে ; দাঁড়ালে বন্ধুর মত এ ধরায় ধূলার অঙ্গনে, হে অপার ! মুর্ত হ’লে আপনার স্বপ্নবিন্দু চুমি’ | দেখ, আজ মোর স্রোতে যাহা পাই সব নিয়ে চলি তোমার অতল গানে ; হে প্রশান্ত অম্বুধিমানব ! মোর প্রতি রঙ্গে আজ বিভঙ্গিত তোমার উৎসব | যে-উত্সবে এ-মর্ত্যের প্রতি ধূলি-কণা ওঠে জ্বলি’ অপূর্ব শিখার মত, জ্বলি ওঠে প্রত্যেক জীবন, প্রতি তরু, প্রতি লতা, প্রতি ফুল ; প্রত্যেক রঞ্জনে তোমার অনন্য বিভা প্রস্ফুরায়, প্রত্যেক রতনে একটি অচিন্ত্যমণি বিচ্ছুরায় আপন কিরণ | প্রিয়তম !
. আমি শুধু মঞ্জুরাই একটি গোলাপ অযূত মঞ্জরী মাঝে, সে গোলাপে তোমার প্রাণের অরুণ-শোণিতধারা মিশিয়াছে লক্ষ হৃদয়ের রক্ত অনুরাগ সাথে ; এ-আমার প্রেমের প্রলাপ বলে শুধু একবাণী |
. হে ধানুকী ! আমি তব তীর, জানি শুধু একলক্ষ্য ; দয়া নাই, নিষ্ঠুরতা নাই ; অযুত পাখির প্রাণ জ্বেলে যাই, দীর্ণ ক’রে যাই ; আমি জানি, তব তৃষ্ণা পান করে তোমারি রুধির ||