কবি নিশিকান্ত রায়চৌধুরীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
মহামায়া
নিশিকান্ত রায়চৌধুরী

সমুখে প্রাচীর ফাটলের বুকে আঁকা
সারমেয় মুখী ডাকিনী কাহারে ডাকে !
তারি দক্ষিণে দোলে অশথ্বশাখা,
পাংশুল পাখি সেথায় বসিয়া থাকে |
কৃষ্ণমেঘের মহিষমুন্ডটিরে
কে বসাল নীল আকাশের বুক চিরে !
দিগন্তরেখা দ্বিখন্ড করি’
.        দাঁড়ায়েছে তাল তরু ;
সাড়ে-তিনগজ ধূসরভূমিতে
.        বিশাল সাহারামরু |

নেভে আর জ্বলে জোনাকি-যোনির শিখা,
.        মসীর সাগরে বহ্নির বুদ্ বুদ্ !
অট্টহাসিছে রাতের অট্টালিকা,
.        দ্বারে বাতায়নে বর্তিকাবিদ্যুৎ |
শাদা আগুনের তরণীতে চাঁদ চলে,
তারার রূপালি তীরের ফলক ঝলে ;
চাহে মার্জারচক্ষু মেলিয়া
.        মুষিক বিবর পাশে,
দৃষ্টিতে তার তিমির দীর্ণ-----
.        সূর্যহীরক হাসে |

ওঠে গম্ভীর অন্বুধিগর্জন,
.        ভাসে অসংখ্য তরঙ্গসংঘাত,
খর্জুরশাখে ঝিল্লির প্রস্বন ;
.        সহসা বিধবা করিল আর্তনাদ !
নবজাত শিশু হেসে ওঠে খল-খল ;
শ্মশানযাত্রী করে ওই কোলাহল ;
লৌহদশনে হুঙ্কার করে
.        দানবযন্ত্রযান ;
বাতাসে ভাসিল শেফালি-ঝরার
.        মৃদুমঞ্জুল তান |

সহসা ঊর্ধ্বে উঠিল রংমশাল,
.        অভ্র ভেদিল মুহূর্তে গতি তার ;
উল্কার শিখা তারই সাথে দিল তাল,
.        উৎসের গতি লভিল সে অধিকার ;
বৃষভয়ানের চাকার কেন্দ্রপাশে
তারই আবর্ত ঘুরিয়া ঘুরিয়া আসে
সে-গতির বেগে বীজের বক্ষ
.        অঙ্কুরি টুটিয়াছে ;
হিমাদ্রিশির তাহারই মন্ত্র
.        জপি সবে উঠিয়াছে |

সকল মূর্তি মূর্তিল কার মাঝে,
.        সারমেয়মুখী ডাকিনী কাহার মায়া !
কার বহ্নিতে সবার বহ্নি রাজে,
.        শশাঙ্কে কার শুভ্র শিখার কায়া !
কোন্ সে নীরব ধাত্রীর কোলে
জলধি ও শিশু তরঙ্গ তোলে ;
সৃষ্টির গতি-উৎস কে আনে,
.        কে তারে ধরিয়া রাখে !
অসংখ্য নানে নামখানিকার
.        ওঙ্কার সম থাকে |

.                     ****************                                                    
উপরে   


মিলনসাগর
*
ত্রিজন্ম
নিশিকান্ত রায়চৌধুরী

পশুজন্ম দেবে যদি, হে জননী ! তবে মোরে কর পশুরাজ
একচ্ছত্র অধিপতি----অরণ্য ভুবন ‘পরে ররেণ্য সম্রাট,
হুঙ্কারে হুঙ্কারে মোর পলকে শাসিত হোক শ্বাপদ-সমাজ-----
ধ্বনিতে স্পন্দিত হোক এ অনন্ত কান্তারের অন্তর-বিরাট |

তীক্ষ্ণবক্র নখ দাও, দাও মোরে খর-দন্ত বদন ভরিয়া,
বিপুল কেশর দাও, উজ্জ্বল চক্ষুর তারা, বিদ্যুতের গতি,
শাদূর্ল-বিজয়ী বীর্য এ-বিশাল বক্ষএ মোর দাও সঞ্চারিয়া,
অব্যর্থ বজ্রের মত ধাবমান করো মোরে সন্ধানের প্রতি |

কেশরী-বাহিনী মাত ! আজি এসো, আমি হবো তোমারি বাহন,
পশু যদি করিয়াছ, তবে মোর পশুশক্তি চরণে তোমার
আনত করিয়া রাখো----রাখো মোর জীবনের শাক্ত নিবেদন ;
জগৎ-ধারিণী মাতা, শোনো, জগতের বক্ষে তোমার পূজার
শঙ্খ বাজে দিকে দিকে, আনন্দে ধ্বনিয়া ওঠে বিশ্বের প্রঙ্গন------
জগৎ ধারণ করো, আমি করি জগদ্বাত্রী-দেবীর ধারণ |

অসুর -যোনিতে যদি জন্ম দেবে, করো বরদান-----
মাগো, আমি যেন হই বীর্য-বলে ত্রিভুবন -জয়ী,
সুরেন্দ্রের সিংহাসন মোর করে হোক কম্পমান,
চলুক পশ্চাতে মোর হত-মান নত-শির বহ্নি’  |
বন্দী দেব-সেনাপতি ;

.                        সূর্য-চন্দ্র নিত্যআবর্তিত
অঙ্গুলি-ইঙ্গিতে মোর ক্রীতদাস ভৃত্যের মতন,-----
ত্রিকাল ত্রিলোক ভরি’ মোর রাজ্য হোক প্রতিষ্ঠিত ;
আমার শাসন-বশে পদ্মযোনি-ব্রহ্মার আসন
শঙ্কায় উঠুক দুলি’,  বিষ্ণুনাভি- মৃণালের পরে ;
বিষ্ণু-তন্দ্রা টুটে যাক, ক্ষুব্ধ হোক পয়োধি-প্রলয় ;
সৃষ্টিমূল শিহরাক সে প্রচন্ড আকর্ষণ-ভরে,
মহেশের যোগভঙ্গ হোক------

.                        হোক রুদ্র-অভ্যুদয়-----
তোমারশক্তির মাগো, ----মুক্তি দাও মুক্ত-খড়্গাঘাতে
আমার বিদ্রোহী সত্তা লয় হোক তোমার সত্তাতে |

মানব-জগতে যদি জন্ম লভি মাগো,
মোরে করো অসহায় শিশুর মতন,
স্নেহের অঞ্চলে তব মোরে ঘিরি’ রাখো,
দাও মোর সর্ব অঙ্গে মঙ্গল-চুম্বন  |

তোমার পন্থায় মোরে চলিতে শিখাও,
তোমার মুখের বাণী শিখাও বলিতে ;
তোমার লিখনে মোর অদৃষ্ট লিখাও,
শিখাও তোমার শঙ্খ ধ্বনিয়া তুলিতে |

ধ্যান মোর জ্ঞান মোর ----গৌরব-গরিমা------
সে-যেন আশ্রয় লভে তোমারে জড়ায়ে,
রচিতে পারি গো যেন তোমারি প্রতিমা
তোমারি অঙ্গন হতে মৃত্তিকা কুড়ায়ে |

জীবনে নিবিড় করো তোমার বন্ধন,
মরণ তোমারই বুকে-----লভুক শরণ ||

.          ****************                                                                
উপরে   


মিলনসাগর
*
অগ্নিবাণ
নিশিকান্ত রায়চৌধুরী

অব্যর্ত শরের মত চলিয়াছি আমি অনুক্ষণ
আমার লক্ষ্যের পানে |
.                হে ধানুকী !  আমি তব তীর ;
তব স্থির চেতনার নিষ্পলক সন্ধানীদৃষ্টির
দিশায় চলেছি আমি পথে পথে করি’ বিদীরণ
বাধাগুলি, উদঘাটিয়া তোরণের মত | প্রিয়তম !
আমি তব প্রেম দিয়ে প্রজ্বলিত শিকার শায়ক,
চুম্বনবহ্নিতে মোর প্রতি বস্তু প্রত্যেক পলক
জ্ব’লে ওঠে ; মোর স্পর্শতীক্ষ্ণতার লভে অনুপম
অনুভূতি প্রতি প্রাণ, জীবনের প্রতি ধূলিকণা ;
ধরায় মৃন্ময়তার মাঝে আমি বহিয়া চলেছি
তোমার পাবক-বার্তা, ক্লান্তিহীন ঝঙ্কারে বলেছি
আলোর উৎসের বাণী  ;  যে-উৎস তোমার অন্যমনা
নিশ্চল আনন্দ সম বিচ্ছুরিয়া তোমারি কিরণ :
যে কিরণ দীর্ম করে শত ঊষা সন্ধ্যার তপন,
ভুবন প্লাবিয়া ঢালি’ অন্তহীন জ্যোতির অক্ষ্মতি
যে-আদিত্য চলিয়াছে তব মন্ত্র করিয়া মুদ্রিত
নিখিলগ্রহের বক্ষে উপলব্ধ স্বর্ণের অক্ষরে  |
হে বিশ্বস্বপনী !

.                মোর স্বপ্নময় সত্তার অন্তরে
তোমার সৃষ্টির পাণি সারাবেলা করে উদ্ভাসিত
শাশ্বতলীলার স্বপ্ন |  আমি তব চন্দ্রাঙ্কিত তরী,
স্পর্শে মোর কালের অসীমতার সিন্ধুরজনীর
অঙ্গের তরঙ্গগুলি উজ্জ্বল রজতকৌমুদীর
রূপ লভি’ উদ্বেলিয়া উচ্ছলিয়া মোরে লয় বরি’ ;
অনন্তের প্রস্ফুরণ মোর প্রতি মুহূর্তের মাঝে |
হে কালের অধীশ্বর !

.                আমি তব মানস-মরাল,
তোমার বিহঙ্গদূত, মোরে কি বাঁধিতে পারে কাল ?
অন্তহীন গন্ডি তার ক্ষণে ক্ষণে মুক্তি লভিয়াছে
আমার পাখার ছন্দে, যে-পাখার প্রত্যেক কম্পন
কালহীন হৃদয়ের স্পন্দনের তালে তালে দুলি’
অনাদি উন্মগ্নতার বিনিস্তব্ধতায় আত্মভুলি’
আপনার প্রতি গতি, প্রতি ভঙ্গি, করে উৎসঞ্জন |
আমার বন্ধন, মুক্তি, জীবন, মরণ, কিছু নাই ;
প্রিয়তম ! আমি শুধু বহি’ চলি তোমার লীলার
বিবর্তের ব্রহ্মপুত্র, জন্ম জন্ম ভেসেছে আমার
তব ছন্দে ; তাহা জানি, এ-জীবনে যবে স্পর্শ পাই
তোমার অঙ্গুলি-তলে |

.                হে মোর প্রেমের সিন্ধু ! তুমি
গভীর সুষুপ্তি নিয়ে ভেসে এলে আপন স্বপনে ;
দাঁড়ালে বন্ধুর মত এ ধরায় ধূলার অঙ্গনে,
হে অপার ! মুর্ত হ’লে আপনার স্বপ্নবিন্দু চুমি’ |
দেখ, আজ মোর স্রোতে যাহা পাই সব নিয়ে চলি
তোমার অতল গানে ; হে প্রশান্ত অম্বুধিমানব !
মোর প্রতি রঙ্গে আজ বিভঙ্গিত তোমার উৎসব |
যে-উত্সবে এ-মর্ত্যের প্রতি ধূলি-কণা ওঠে জ্বলি’
অপূর্ব শিখার মত, জ্বলি ওঠে প্রত্যেক জীবন,
প্রতি তরু, প্রতি লতা, প্রতি ফুল ; প্রত্যেক রঞ্জনে
তোমার অনন্য বিভা প্রস্ফুরায়, প্রত্যেক রতনে
একটি অচিন্ত্যমণি বিচ্ছুরায় আপন কিরণ |
প্রিয়তম !

.                আমি শুধু মঞ্জুরাই একটি গোলাপ
অযূত মঞ্জরী মাঝে, সে গোলাপে তোমার প্রাণের
অরুণ-শোণিতধারা মিশিয়াছে লক্ষ হৃদয়ের
রক্ত অনুরাগ সাথে ; এ-আমার প্রেমের প্রলাপ
বলে শুধু একবাণী |

.                হে ধানুকী ! আমি তব তীর,
জানি শুধু একলক্ষ্য ; দয়া নাই, নিষ্ঠুরতা নাই ;
অযুত পাখির প্রাণ জ্বেলে যাই, দীর্ণ ক’রে যাই ;
আমি জানি, তব তৃষ্ণা পান করে তোমারি রুধির ||

.                     ****************                                                    
উপরে   


মিলনসাগর
*
স্বরাজ
নিশিকান্ত রায়চৌধুরী


দুর্গত-বসুন্ধরার দুর্গতির চরম-প্রকাশ
এবার ভারতবর্ষে ;  শিবহীন স্বরাজে এবার-----
এসো মা শিবানী দুর্গা,  বিশ্বের পার্থিব-অভিলাষ,
মর্ত্য -স্বার্থ -সংগ্রামের বিগলিত লুব্ধ-বাসনার----

শবরাশি ভাসিয়া আসিল তব পুণ্য পীঠস্থানে ;
তোমার মন্দির আজি নিখিলের বিশাল শ্মশান ;
গড়িয়া তোমার মূর্তি ভক্তিহীন পূজা-অভিযানে
অশিবের অধিকারে মগ্ন হয় আমাদের প্রাণ

তামসের সরণীতে, মহাশক্তি, তুমি মূর্ত হও
মৃন্ময়ী-মানবরূপে, মর্ত্য দেহে এসো স্বর্গময়ী,
জগৎ-উদ্ধার-কল্পে আমাদের মুক্ত করি লও
কালের অসুরে নাশি ;  তব স্পর্শে হোক মৃত্যজয়ী

ভারত-সন্ততি তব , মুক্ত হোক মানব -সমাজ
লভিয়া ভারতবর্ষে শিব-রাজ্য, স্বর্গের স্বরাজ |

.          ****************                                                                
উপরে   


মিলনসাগর
*
পন্ডিচেরীর ঈশানকোণের প্রান্তর
নিশিকান্ত রায়চৌধুরী


.                কোন
.                সঙ্গোপন
.        থেকে এল,  এই উজ্জ্বল
.                      শ্যামল
.                            বিন্দুর শিখা !


.   এই পাষাণখন্ড-কন্টকিত
.              শুষ্ক-রুধির-সঞ্চিত
.                        প্রাণহীন রক্তবর্ণ মৃত্তিকা
.               কার স্পর্শে পেয়েছে প্রাণ
.        অমৃত-সিঞ্চিত বন-মঞ্জরীর অবদান
.               কোন অদৃশ্য সৌন্দর্যের উৎস থেকে উৎসারিত
.                        এই গরল কুন্ডলিত
.        ভুজঙ্গ-ভূমির অঙ্গে অঙ্গে
.                প্রস্ফুটিত মাধুরীর তরঙ্গে
.        যোজনের পর
.                যোজন বিস্তৃত প্রান্তর ;
.        আজ সকাল বেলা
এসেছি এখানে |  দূরে দূরে দেখা যায় রুক্ষমাটির স্তূপের মেলা,
তারি উপর দন্তের মতো দাঁড়ানো জমাট বাঁধা পাথর কুটির চাঙ্ ড়া,
.                                      যেন ক্ষিপ্ত সুপ্ত
.                নাসা খড়্গধারী গন্ডার, যেন উদ্যত শুপ্ত
.                       মদ-মত্ত মাতঙ্গের মতো |
.                রাক্ষসী মেদেনী অবিরত
.                       বৎসরে বৎসরে
.                নিজেই নিজেকে গ্রাস করে করে
.           সৃষ্টি করেছে এই আরক্তদশন
.                        বুভুক্ষার গহ্বর প্রাঙ্গণ |
.                বক্ষে তার
.                        বালু-কঙ্করের বঙ্কিত পন্থার
.                        কঙ্কালে |
.                তারি একপাশে ভষ্ম-তলে
.           শ্মশান ;  পড়ে আছে দগ্ধ-শেষ চিতার
.                        নিরুত্তাপ পাংশু অঙ্গার,
.                জীর্ণ মলিন বিক্ষিপ্ত কন্থার
.                        রাশি, ভগ্ন কলসের কানা,
.        নর-কপালের করোটী, শকুনির নখর-চিহ্ন, শবলুব্ধ সংগ্রামে
.                পরাজিত মৃত বায়সের বিচ্ছিন্ন ডানা ;
.            বসে আছে অপরাজেয়
.                লোলুপ দৃষ্টির অধিকারী কৃষ্ণকায় সারমেয় |
.                        তবু সেখানে সর্বজয়ী জীবনের
.                                     বিকাশের
.                                          লিখা
.        এনেছে দুর্লভ তৃণ-মঞ্জরী, বিন্দু বিন্দু সবুজ গুল্ম-শিখা |
.                                আর
.                             দুর্দম-দুর্বার
.              মর্ত্য-বিদ্রোহী তাল-বিটপীর বৃন্দ ; তাদের
.                        অটল স্বরূপের
.                              অভিযান তুলেছে ঊর্ধ্বের
.               উদ্দেশে, যেন সহস্রশির
.                        বাসুকীর
.               শত শত ফণা রসাতল ভেদ করে
.                    উঠেছে দুলে অন্ত অম্বরে,
.                            তারা
.              পান করে যেন সেই সুনীল সুধার অক্ষয়-ধারা ;


.              যেন কোন খেয়ালী চিত্রকর, আষাঢ়ের
.                    ঘনীভূত মেঘের
.                            রঙের পাত্রে শূন্য করে নিয়ে
.              ধূমকেতুর পুচ্ছের মতো বিশাল তুলি দিয়ে
.              ঐ অভ্রংলিহ রেখার সারি করেছে অঙ্কিত,
.                        তারি চূড়ায়
.                        শাখায় শাখায়
.                                করেছে তরঙ্গিত
.              হরিদ্বর্ণ রশ্মি বিকীর্ণ তীক্ষ্ণ-ধার
.                        পাতায়
.      ত্রিকোণ মন্ডলিকাছন্দের নীহারিকাপুঞ্জ ;  সেখানে বিষাণ
.                    বাজায় বাতাস, দোলে বিজয় নিশান ;
.                         তাদের
.                   সর্ব অঙ্গে পুরু ইস্পাতের
.                        চক্রাকার আবর্তনের
.                                কালজয়ী আবরণ ;
.                  নল-কূপের মতো তাদের মূল-----
.                        এই ঊষরপিন্ডপৃথুল
.                                পৃথিবীর জঠরের অতল-তলে
.                                        পলে-পলে
.                        করেছে সঞ্চিত
.                                মর্ত্য শ্মশান-মন্থিত
.                                        অমৃত |
.                হে সম্রাট শিল্পী, সুন্দর ! কোন অচিন্ত্য লোকের
.                                     রহস্যের
.                                           বেদিকায় বসে আছ তুমি ?
.                                এই মরু বাস্তব ভূমি
.                                       তোমার
.                                নিমগ্ন কল্পনার
.                        নির্লিপ্ত আনন্দের
.                                পরম-বস্তু-রসের
.                                    রঞ্জনে রঞ্জিত হয় |
.                                জ্যোতির্ময় !
.                   দাও দীক্ষা, অপূর্ব-রূপান্তর সাধনের মন্ত্র দাও আমায় ;
.                          যে মন্ত্রের শক্তিতে সত্তায়
.                                বিলুপ্ত হবে মেদিনীর
.                                      মাতঙ্গ প্রকৃতির
.                   মদমত্ত অভিযান, রাক্ষসী কামনার
.                                বুভুক্ষার
.                                        বিক্ষুব্ধ আসক্তি ;
.                            জীবনের অভিব্যক্তি
.                হবে মূর্ত, ঐ বিরাট তাল-বিটপীর নীলাম্বর চুম্বিত
.                                         আত্মার মতো বর্তিকা,
.                             জ্বলবে অন্তরে
.                    ঐ ওজস্বান তৃণ-শিখার অক্ষরে
.        দাও তোমার বর্ণমন্দাকিনীর লাবণ্য ধারা-নির্ঝরিত তুলিকা,
.                        স্পর্শে যার
.                                দীর্ণ করে আমার
.                কঠিন প্রাণ-খন্ডের শিলা
.                মুঞ্জরিত হবে তোমার
.                      আমর্ত্য-মালঞ্চের
.                             মাধুর্য মন্দারের
.                                  সৌন্দর্য লীলা |

.                                  ****************                                                 
উপরে   


মিলনসাগর
*