কবি ঐশিকা বসুর কবিতা
নস্টালজিয়া
কবি ঐশিকা বসু

সেদিন, হাত ধরে হাঁটতে গিয়ে পিছলে পড়ে
তোর আদুরে আঙুল ছুঁতেই কেমন লাগে!
রঙবেরঙের খেলতে খেলতে দিন যাপন
কোথায় গেল, সেদিনগুলো দূর সুদূর।
সেদিন, আনকোরা এক মনভাঙা কোনো স্বপ্ন যেন
ছোঁয়ালি তুই বুকের মাঝে হাত রেখে
মিষ্টি গলায় হাসল উঠে রঙমাখা মন
বলল তোকে যাব রে যাবই তোর সাথে।
আজ,  ফুরিয়ে গেছে ঐ হারানো দিনগুলো
তোর সাথে ঐ গল্প শোনার সেই বেলাও
কেন না জানি মনে হয় বুঝি সব ফাঁকি
যখন দেখি মালা ঝোলান তোর ছবি।

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দহন
কবি ঐশিকা বসু

এখানে বসে থাকায় আবেশিত স্পন্দন
ঘুমঘুম চোখে লাগে হ্যালুসিনেশন,
আবছায়া, অস্পষ্টতা
ঘষা কাঁচের ওপাড়ের দৃষ্টি
কুহেলিকা তৈরী হয় মায়াময় সত্ত্বায়।

যদি আবারও ফিরতে হয় বাস্তবে,
কালকের কথায় কাজ কি?
তাই সম্পৃক্ত হৃদয়ে করো মাদকসেবন।
ওদিকের কথাগুলো থাক না-জানা,
.                                       অবাস্তবের মশালে পৃথিবী পুড়ে খাঁক।

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অপরিবর্তনীয়
কবি ঐশিকা বসু

আপনাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা
কিছু হঠকারী উন্মাদ, খেয়ালের অতি-রঙে
নিজেদের রাঙালেও আপনি কিন্তু কেন্দ্রে।
বৃত্তের কিছু চাপ জুড়ে ছড়ানো রঙ্গ
উদ্দাম হইহুল্লোড়ে দল আর কিছু অপরিণত
মাতলামি হারিয়ে গেছে বৃত্তের বাকি অংশে।
তবু তো আপনি কেন্দ্রে, তাই অজস্র ভিড়ে
হারিয়ে যাওয়া ওরা, নজর কাড়ার লোভে
আপনাকে অপমান করে। জানি ওরা
কেউ না, বিস্মৃতির অতলে অজস্র কোটির মাঝে
হারিয়ে গেছে বহুদিন। ক্ষমতা আর লোভের লালা
দেখুন কেমন ঝরছে ওদের বিষাক্ত ঠোঁট থেকে।
তাই ধিক্কার ওদের, আর চিন্তা কি আপনি তো আছেন
যেমন ছিলেন আমাদের অন্তরে, আমাদের কেন্দ্রে।

(কোন এক তথাকথিত বিশিষ্ট ব্যক্তি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ভারতরত্ন উপাধি কেড়ে নেওয়া হবে
বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন। সমগ্র ভারতবাসীর কাছে এ এক চরম লজ্জাজনক ঘটনা। এই ঘটনার ধিক্কার
জানিয়েই আমার এই সামান্য কবিতাখানি।
)

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অঙ্গীকার
কবি ঐশিকা বসু

সমাজটাকে ভাল করে খুঁটিয়ে দেখলে দাঁড়ায়
বার্ণিশ করা চকচকে একটা সুন্দর কাঠের টেবিল যেন,
যার খুঁত শুধু একটাই - একটা ছোট্ট ফুটো।
আর তাতেই সারাটা টেবিল আজ ঘুণে আক্রান্ত,
সে তাই আজ তার ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ও ভেঙে পড়বে।
ক্ষয়ের শেষপ্রান্ত ছুঁতে চলা এই সমাজ
যেমন হারিয়েছে তার সৎ-সৌহার্দের মেল-বন্ধন।
তারও মূলে সামান্য কিছু মানুষ
যাদের ক্ষমতা আর পেশীবলে সমাজের ভেতরটা
কুঁড়েকুঁড়ে ম্রিয়মাণ, বিষাক্ত কীটের বিষে জর্জরিত।
আর হয়তো কয়েকটা মিনিট, তারপরই.........
চিন্তা নেই, ভেঙে পড়বে না ঐ টেবিলটার মতো।
আমরা তো মানুষ, আমরা কি পারবো না একে বাঁচাতে?
নিশ্চয়ই পারবো একে রোগশূন্য সুস্থ করে তুলতে,
আর এভাবেই গড়ে তুলবো আমরা এক সুখী সুন্দর সমাজ......
তাই আর কাব্য নয়, এবার কাজের পালা।

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নাড়ির টান
কবি ঐশিকা বসু

কিছুক্ষণ আগের কথাই ধরা যাক।
বাইরে দুপুরে অন্ধকার আর কালো মুখে
গোমড়া রংচটা আকাশের চোখ রাঙানো শাসানি।
ভয়েতে পৃথিবীর হার্টবিটও যেন থেমে থেমে যায়।
তবু তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘ঝরোঝরো’ বৃষ্টি,
তা কি কান্না নাকি উদ্দাম প্রাণস্পন্দন
ঠিকমতো বোঝবার আগেই
নিজের আত্মাকে দেখতে পেলাম রাস্তায় লুটোচ্ছে।
বহুযুগ পর যেন নিজেকে আচমন করছে
স্বর্গীয় সলিলে আর অবিরাম জলতানে।
জানি না ঐ সামান্য ফোঁটার জড়ত্বীয় যাদুগুণ
ওকে কিভাবে টেনে নিল নাগালের বাইরে!
আত্মাহারা (আত্মহারা?)হয়ে সবটাই দেখে গেলাম।
একদিন হয়তো ঐ জলেই নিজেকে সঁপে দেব
ঠিক যেমনটা দিয়েছিলাম সৃষ্টির ঊষালগ্নে।

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ইরমদের না বলা কথা
কবি ঐশিকা বসু

ওরা অনেক আগেই নিজেদের শেষ দেখেছিল,
জ্বলতে জ্বলতে প্রদীপের আলোটাও তখন নিবু-নিবু
দেশের বীর জওয়ান সেখানে ফুঁ দিলে নিস্তব্ধ অন্ধকার।
ওখানে কিছু পশুর উন্মত্ত দাপাদাপি, তবু সব নীরব।
কিন্তু কায়াহীনের কান্না চলতেই থাকে, না কান দিও না ওতে।
বরং দেখ, দিল্লীর ঐ মিছিল, সুবিশাল জনকণ্ঠ।
মোমবাতি ওদের মুখ উজ্জ্বল করে তুলেছে,
সেখানে ওদের কেউ দেখতে পায় না।
সন্ত্রাস দমনে ব্যস্ত কিছু দু-পেয়ে যাই করুক না
শর্মিলাদের মুখ বেঁধে স্যালুট জানাতে তো কোন বাধা নেই।
তবু কবি বলে, ‘নগ্ন হয়ে ওরা আবারও খুলে দিক না সে ‘বীর’ পোশাক’।  
অবশ্য তাতে যতই ব্যবসা বাড়ুক, কাগজওয়ালাদের নজরে আসবে না।

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আবিষ্কার
কবি ঐশিকা বসু

নিজের সাথে খেলতে খেলতে
হঠাৎই বলে উঠি আয়নাকে আচম্বিতে
‘ তুমি কে, তা তো ঠিক বুঝলাম না?’
কেউ নেই। সামনে শুধু সাড়ে পাঁচফুটের আয়নাটা
ড্রেসিং টেবিলে দাঁড়িয়ে সৌখিন প্রসাধনে ভরপুর।
ও বললো, ‘খোঁজ করো, ঠিক পারবে.........’।
তবু বলি, আমি ওর খোঁজ পাইনি
কিন্তু খুঁজেছি ওকে নানান সৃষ্টির মধ্যে।
হয়ত পাব একদিন ওকে,
অচেনা নীরবতায় একাকীত্বের কোলে।
যেখানে সব হারানোর দিনে
তোমরা থাকবে না কেউ কোথাও।
সেদিন ঐ আয়নায় চিনতে পারব ওকে
আর হয়তো তখনই ওকে ডেকে বলবো,
‘আয় তোকে চুমু খাই’।

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিভেদ
কবি ঐশিকা বসু

কিছু পেতে না পেতেই লোভের বাড়বাড়ন্ত
ক্ষমতা তার থাবা নিয়ে এলে উত্তেজনা ছড়ায়।
দার্জিলিং-এর কিছু কালো মেঘের ভ্রূকুটি
রোদের ফিকে আলোর অনুপ্রবেশে বাধা দেয়।
তবুও হিংসা-হানাহানি, বর্বরতার জঞ্জাল সরিয়ে
যখন পৌছবে পাহাড়ের কোলে,
গভীর রাতে অস্পষ্ট স্বরে শুনতে পাবে
কার মৃদু কান্না......হয়ত তোমায়ও কাঁদাবে তা।
তবু ওরা তো ক্ষতি চায় না
চায় কিছু এলিট ক্ষমতাপরায়ণ।
বঙ্গজননীর অঙ্গহানি হলে যাদের কিছু যায়-আসে না।
তবু আমার যায় আসে, আমাদের যায়-আসে।

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অ্যাকোয়ারিয়াম
কবি ঐশিকা বসু

রঙীন সব স্বপ্ন ওরা যেন,
মাছগুলো ঘুরতে থাকে,
চলতে থাকে এদিক সেদিক;
কৃত্রিম কিছু আলো আর একঘেয়ে অক্সিজেন,
নুড়ি-কাঁকর-বালি-পাথর
আর ডুবুরিরা প্রতারকের ভূমিকায় –
তবু ওদের মনটা বলে, কি বিশাল সাগর!

বসে বসে তাই সময় কাটে ওদের দেখে
ঘরেতে ফ্যানের হাওয়া, চল্লিশ ওয়াটের বাল্ব;
এও তো সেই আলো, কৃত্রিম সেই অক্সিজেন
আছে এখানেও। মাছ দেখে চলি আনন্দে,
আর মনে মনে ভাবি বন্দী জীবন ওদের।

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ক্ষতচিহ্ন
কবি ঐশিকা বসু

শিমুলতলার বাগান,
আলতো ছায়ারা ঢেকে দিত
কথা বলত পাতার চরমর।
ওরা জানে আমাদের ছোটবেলা,
হাঁটতে শেখালো যে অশ্বত্থ
আর বটের ঝুরি, দোল খেতেও।
আমাদের অত্যাচার লেগে ওদের গায়ে –
কচি নখের আঁচড়, ছিঁড়ে পড়া কিছু পাতা,
তবু রা কাড়েনি ওরা, ঠিক মায়ের মতন।

ওরা এতদিনে বুড়ো হয়েছে, আমরাও;
আজ ওরা অনেকদূর
তবু ডাক শুনতে পাই যেন এখান থেকেও –
করুণ, বড় করুণ লাগে সে ডাক।
মন ছুটে চলে দূর-সুদূরে বটের ধারে।
চলে যাই সেখানে,
সেই সেদিনের হাত ধরে –
সেসময়কে খুঁজে পেতে।

অথচ গিয়েই, চোখদুটো আজ জলে ভরে ওঠে,
কোথায় গেল সে বাগান?
কোথায় গেল সে অশথ গাছের ঝুরি?
চাপা পড়ে গেছে মাল্টিপ্লেক্সের
বহু ইঁটের তলায়, আমাদের ছোটবেলাও।
চারিদিকের বিষাদগন্ধে নাক জ্বালা করে,
অসহ্য লাগে এসব। বহুতল বাড়ির আসবাবে
লেগে থাকে এমনই কত বট-অশথের রক্ত,
আরও কত কারুর ছোটবেলা যারা অপেক্ষা করে
কোন অজানিত দিনে মুক্তির অপেক্ষায়।

.                  ****************                 
.                                                                                    
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*