কবি পবিত্র কুমার আচার্য্যর কবিতা
*
ভালোবাসা ডুমুরের ফুল
কবি পবিত্র আচার্য্য

এলুমিনিয়ামের চাঁদ টার
ফালা দেওয়া হাসি,
চাঁদের আলগা বুকে,
চাঁদের আহ্লাদে
আধখানা লাজ-বতী মুখ।
লজ্জার গোলাপি অন্তর্বাস,
প্রগলভা চাঁদের শরীরের
গোপন গন্ধ মেখে,
সখের নিলামি বাজারে
উঁচু দরে, মুঠো মুঠো
ব্যলীক ভালোবাসা বিলায়
প্রেমের নিকর মজনু কে।
ব্যাটা, প্রেয়সীর মামড়ি চামড়ার
মাতাল গন্ধে,মর্কটবৈরাগ্যে,
নিজের মনদুয়ার বানায়
হারামের বোকা বাক্স।

মনোলোভা চাঁদ খুকি আজ
প্রেমের বুলবুলি,
ধান খায় ভরা যৌবনের মাঠে,
খাজনা এক মুঠো সুখ।
মজনু ব্যাটা বেজায় ছোঁচা,
নাট পেটের খিদে,
রং নেই তাতে।
মাশুক শরীরের খিদে,
রুপোলী ঢলানি চাঁদের
সোনালি মোহ ছায়া,
পর্দার ওপারে দুষ্ট মনটা
ব্যালে ড্যান্স করে।
সব ধান খাওয়া শেষে,
ঝাপটা ডানায়
ভালোবাসা পুরানো টেলিটক,
বুলবুলি ফুড়ুত, মজনুও
দেবদাস।
তবুও নিমখুন চোখে,
ন্যাড়ার বেলতলা
যাওয়া থামে না কখনো।

বুড়ো শালিক মজনুর মউ মউ
কামুক বৃষ্টি সুখ,উষ্ণতার পরখে
চঞ্চল রতিপতি, মিলন মাখা মাখি,
সব নিষ্ফল পিত পণ্ডশ্রম।
নিটোল ভালোবাসা ডুমুরের ফুল,
উষ্ণ শরীরের গন্ধ বেজায় সস্তা।

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ব্যাঙেরা ডেকেই চলেছে
কবি পবিত্র আচার্য্য

ব্যাঙেরা পুচ্ছ দুলিয়ে
ডাকছে মাইফেলে,
আনন্দে আত্মহারা,
উল্লাসি বৃষ্টি হবে বলে।

আকাশে মেঘ কোথায়?
সে তো রক্তের কালো
কুচকুচে দাগ,
আকাশের যত্র তত্র
ভেসে বেড়াচ্ছে,
একরাশ রক্তের জলীয় বাষ্প,
আর সম্পৃক্ত সন্ত্রাসের ধূলিকণা,
জমাট বেঁধে ঘন কালো
কপট মেঘ!!

বিড়াল মহর্ষি শুদ্ধিকরণ
ব্রত পালনের
অঙ্গিকারে নিজের সাথেই
লুকোচুরি খেলছেন মনের আড়ালে।
কি হবে তাতে!!
জলে কুমির আর ডাঙ্গায় বাঘ,
দগদগে ঘা এর ক্ষত থেকে
পড়া পুঁজ দলীয় সংস্কৃতি,
শুদ্ধিকরণ মন্ত্রের মাজুফল।
বেমারী বেনোজল এর
জাত নেই ঠিক,
সব সময় বইতে থাকে
পালাবদলের শক্ত হাত ধরে,
ধড়িবাজ বাম হাত কখন যে
ডান হাত হয়,
বহুরূপী সাজ বোঝা দায়।
চারিদিকে ভোগের নৈবেদ্য
চাটা মাছি গুলো, ভন ভন
করে, মুখোশি নধর
নেংটি ইঁদুরের মতো
পিছে পিছে ঘোরে অশুভ
কায়াহীন ছায়ার মত।

মাকড় অভিব্যক্তির প্রভাবে,
মশারা রক্ত চোষা ছেড়ে
দিয়ে করছে গ্লাস গ্লাস রক্ত পান।
হাড় হিম করা কালো জ্বরে,
নাৎসী গনতন্ত্র থর থর করে কাঁপে,
আর এদিকে গোবেচারা
নির্বোধ ব্যাঙ গুলো
আষাঢ়ই পরিবর্তনের মেঘে
বৃষ্টি হবে বলে ,
দলবদ্ধ মন্ডূকপ্লুতিতে
মক মক করছে ।

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পুড়ে গেলে সবকিছু ছাই
কবি পবিত্র আচার্য্য

পুড়ছে ছাই পোড়া মন
ভিতরে মোমের দহন
বুকেতে বাতাস চেপে
যতই ধরো,
থামবে না এই মনের জ্বলন।

বগলে সূর্য চেপে
যতই তুমি বৃষ্টি আনো,
জ্বলে পুড়ে সব খাক
হয়ে যাক,
তোমার চোখে আমার মরণ।

আয়নায় আঁচড় কেটে
যতই তুমি আমায় মারো
হাজার বার জ্বলে পুড়ে
মরতে পাড়ি,
ভ্রান্ত এই তুষ আগুনে।

মনে মনে ঘর্ষণে আজ
জ্বলছে মনের সব কটি তার,
মগজের মনটা ক্ষেপে
আগুন হয়ে,
জ্বালিয়ে দিলো,কলজে অঙ্গার।

শরীরের কবজা গুলো
বিড়ির মতই মরছে জ্বলে,
সবটাই কালো ধোয়া,
সে তো,
পুড়ে গেলে সবকিছু ছাই ||

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নির্ঘুমের নিশাতুর স্বপ্ন
কবি পবিত্র আচার্য্য

দিনের ক্লান্তি ঢেলে রাতের
শান্ত ঘুম,
বালিশের ওপারে ভোরের
সূর্যোদয়,
ঘুমিয়ে থাকে শিশুমনের
গোটা পৃথিবী,
আর ওরা 'পিঁপড়েরা'
বেছে নেয় নির্ঘুমের
নিশাতুর স্বপ্ন।

সময়ের সাথে গুটি গুটি
হেঁটে,
অগুন্তি মুহূর্তের ক্ষণিক
টেলি শট
মগজের ক্যামেরায়
বন্দী হয় সহস্র
জিগাবাইট।
পিঁপড়ের পিঠে বওয়া
সবাক ইতিহাস,
পাহাড়ের কোল চিরে
নেমে আসা,
নদীর স্রোতের মতই বয়ে
চলে,
সহস্রাব্দের ইতিবৃত্ত ঘেঁটে।
ঘুমের ইতিহাস
শুধুই লেখা হয়
কৃষ্ণমেঘ আনত অক্ষিতে।
বেঁচে থাকা বুকের
নাড়ির গতির মতো
ওরা অপলকে জেগে
থাকে
ঘুমন্ত পৃথিবীর নিস্তব্ধ বুকে।

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রাত্রির স্বপ্ন হাটে
কবি পবিত্র আচার্য্য

সে এক মায়াবী রাত্রির
অখণ্ড তুলাপেঁজা নেশাতুর
আতুর ঘরের জানালা
বেয়ে ছায়ারা হেঁটে চলেছে
এক পেয়ালা নেশা চড়িয়ে-
পেয়ালার হাতল বেয়ে বেয়ে
নেমে আসা বরফের জ্যোৎস্নার
টুপ টাপ রস, আকণ্ঠ পান করে
খণ্ড খণ্ড ছায়ারা পেয়েছে
শারীর বৃত্তীয় ছন্দ।
স্নায়ুর আতশ কাচে -
পেয়ালার সোমরসে ডুবে
যাওয়া ঝাপসা চাঁদ -
হাতের মুঠো থেকে ফসকে
যায় গলন্ত পারার মতো।

নির্বাক রাস্তারা স্বগতোক্তির
দীর্ঘ খাঁজে,
গুমরে কাঁদে রাত্রির
চাঁদের হাটে।
ট্যান করা চামড়ার-
কাগুজে বিবির শাড়ীর ভাঁজে,
শরীরের উষ্ণতায় চোবানো
শরাবের সরবত আর
শরীরী মাংসের চাটে-
নেশাতুর ছায়ারা
হলুদ নাভি খোঁজে।

নষ্ট বেশরম চাঁদ,
পেয়ালার শরাবি রঙ্গিন জলে,
হেঁটে চলে সিক্ত যৌনভাষে,
আর চাঁদের গা বেয়ে নেমে আসা
ফোঁটা ফোঁটা রস
শেষ চুমুকের অপেক্ষায়,
মনের শরীর হয়ে ওঠা
ছায়ারা,
হেঁটে চলে সাপের মতই
এঁকে বেঁকে
সেই রাত্রির স্বপ্ন হাটে।

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ভালোবাসা হাত ফসকে পড়ে যায়
কবি পবিত্র আচার্য্য

তোমার মরু চোখের,
দৃপ্ত চাহনির, হিম শীতল
নিটোল বর্ণময় আসক্তি,
খুঁজে চলেছি
ডাহুকের রাত জাগা স্বপ্নে,
তোমার সুরের জৌলুস ঘরে
উকি মেরে
মরণ চোখে খুঁজে পেতে
চেয়েছি পরিযায়ী পাখির
গান-আলোর উৎস মুখ,
হারিয়েছি নিজেকে
কতবার
তোমার ভালোবাসার
আগ্নেয় গিরির
ঝলকানো অগ্ন্যুৎপাতে।

ভালোবাসার রূপ সাগরে
ডুব সাঁতারে ,
চোখা চোখি,
আজন্ম পিপাসিত
চাতকের
ঠোটে উষ্ণতার
বৃষ্টি এঁকে
খুঁজে চলি পেলব
ভালোবাসার দৃষ্টি।

পিঁপড়ের পিঠে বয়ে চলা
স্বপ্ন ভালোবাসারা,
বাস্তবের ইচ্ছে ডানায়
ভগ্ন বালির স্তূপ।
রাত পোহালে,
ভালোবাসা জানালা দিয়ে
দৌড়ে পালায়,
মাসকাবারি বাজার,
ঝোলা গুড় আর রুটির
খোঁজে ,
দুঃখের এলুমিনিয়ামের
চাঁদের কাছে।

কাঠঠোকরা র মুখে সংগোপনে
রাখা, আমার বস্তাপচা,
ভালোবাসা হাত ফসকে
পড়ে যায়,
অন্ধ কুয়োর ভিতর,
ওখানে যাওয়ার সাহস নেই,
ভীষণ গভীর অথই জল ||

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রাম গরুড়ের ছানা
কবি পবিত্র আচার্য্য

বারে বারে ঘু ঘু তুমি
খেয়ে যাও আমার ধান।
আমার বুনো ফসল,
গায়ের ঘাম পেয়ে বেড়ে ওঠা
'সবুজ বিপ্লব'
কা কা করে চিৎকার করে
দু মুঠো সাদা ভাতের জন্যে।

'কৃষি বিপ্লব' মারো গুলি,
একশই নব্বই টাকা-
চাষির কাকের বেল খাওয়া,
সরকারের কুম্ভীরাশ্রু।

ভাতের ভোট বাক্সে
চাষির গণতন্ত্র
বোকা কোকিলের
গলা শুকিয়ে কাঠ।

সব ব্যাটা এক,
কেউ রাম গড়ুর আর
কেউ রাম গরুড়ের ছানা।

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
চ্যাপ্টা রুটি
কবি পবিত্র আচার্য্য

স্বপ্ন দেখতে খুব ভালবাসতাম-
শৈশবের সেই দিন গুলি,
মায়ের আঁচলে মাথা গুঁজে
এক মনে শুনে যেতাম
হলুদ টিয়া,পক্ষীরাজের ঘোড়া,
ব্যাঙ্গমা,ব্যাঙ্গমি
আর রাজকন্যার গল্প।
রাজকন্যার পায়ের নূপুরেরে
শিঞ্জন শুনতে শুনতে কখন
যে পাড়ি দিতাম ঘুম পরির রাজ্যে
তা আর বুঝে ওঠা হল না কোনও দিন।
সেই রাজকন্যা, রাজ্যপাঠ আর
নীল তোতা কেমন সে সব
নিজের আপন কল্পনায়,
ইচ্ছে ডানায় ভেসে যেতাম
মেঘের কোলে আর
সমুদ্র তটে বালুকাবেলায়
গুনে যেতাম নীল সাগরের ঢেউ।

এর পর সন্ধ্যায় পিদিমের আলোয়,
শঙ্খ আর মঙ্গল ঘণ্টার আরতিতে
একমনে বসে থাকতাম
বাবার পথ পানে চেয়ে।
ঘর্মাক্ত ক্লান্ত শরীরে বাবা
যখন ফিরতেন
তখন বাঁধ ভাঙ্গা আবদারে,
ঝাঁপিয়ে পরতাম তার
পরিশ্রান্ত দেহ টার উপর
ঘোড়া ঘোড়া খেলার জন্যে।
বাবা র না বলা ইচ্ছে টা বুঝতে
চাই নি কখনো।

আজ বুঝি সেই দিন গুলির মানে,
সেই না বলা কঠিন সত্য টা।
ঘর্মাক্ত গায়ে যখন অফিস থেকে ফিরি
আর আমার  ছোট্ট ছেলেটা দু হাতে
আঁশটে পিষ্টে চেপে ধরে বলে
"তোমায় চ্যাপ্টা রুটি বানাবো এখন" ||

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ভালোবাসার ব্যুৎপত্তি
কবি পবিত্র আচার্য্য

তোমার মাতৃ সত্ত্বায় পরম ব্রহ্ম
রেখে যায় তার ঈশ্বর কণা
অনন্ত সৃষ্টির ক্রমবর্ধমানে।
তোমার গর্ভগৃহে আমার সঞ্চার -
কোষ বিভাজনে এক থেকে বহু
আর প্রতিটাতে ঢুকে থাকে
তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়,তোমার
আত্মার নিবিড় বন্ধন।
তোমার অমৃত লোকের সাথে
সংযোগ আমার গর্ভনাড়ির,
নিরাপত্তার নিবিড় বেষ্টনীতে-
আমি বেড়ে উঠি তিল থেকে তালে।

প্রথম যে দিন আমার
হৃৎস্পন্দন চালিত হয় তোমার গর্ভগৃহে
তোমার মমত্ব ভরা অনুভাবনা
তা স্পর্শ করে আর সঞ্চার করে
অফুরন্ত জীবনী শক্তি।
তোমার আদরের আবেশে
আমি অবগাহন করি
তোমার গর্ভকেশরে।
ক্রোমনালীর তৃষ্ণার্ত উদ্দীপনা
সিক্ত হয় তোমার দেহ রসে-
আর ক্ষুদ্রান্ত্রের বুভুক্ষা নির্বাপিত হয়
তোমার পাকরস পেয়ে।
আমি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠি
বিরাট মহীরুহে -গর্ভস্থ ভ্রূণ
থেকে পূর্ণ সৃষ্টির অবয়বে।

পরম ব্রহ্ম আত্মার আত্মচিন্তন
আর নিখিল বিশ্বের কর্মযজ্ঞে
তার সৃষ্টিকে পাঠালেন এক
নান্দী ক্ষণে - নাড়ির সংযোগ ছিন্ন করে।
জগতের প্রথম আলো তে,
দেখলাম তোমায় দুচোখ ভরে -
মাতৃত্বের মেল বন্ধনে।

জঠরের ক্ষুধার্ত জ্বালা আর তৃষ্ণার্ত বুকে
আমার পিপাসা কান্না,
জন্ম দিল তোমাকে ভালোবাসার
অতলান্তিক শক্তি।
তাই ভালোবাসার ব্যুৎপত্তি
বোধ হয় ক্ষুদ্রান্তেই ||

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
হুতোম প্যাঁচার ডাক
কবি পবিত্র আচার্য্য

আমি শুয়ে থাকি খোলা আকাশের নীচে
তারার আলোর পূর্ণ স্পর্শ মেখে,
আর পান করি নক্ষত্র জল,
দু হাত পেতে,মগ্ন তৃপ্তির আস্বাদনে।
মুঠো মুঠো চাঁদের রোদ কুড়িয়ে
নিয়ে ঢেলে সাজাই,মেঠো ঘাসের বিছানা,
স্বপ্নের বাসর সাজাই কল্পনার তারে।
জোনাকির সাথে কথা হয়,
কত অতীতের,কত সুখ স্মৃতির।
ঝিঁঝিঁ পোকার সিক্ত অপভাষে
রাত্রির বুকে এঁকে যাই ভোরের স্বপ্ন।
শিশিরের বিন্দু বিন্দু কণা দু হাতে তুলে
এক মনে শুনে যাই হুতোম প্যাঁচার ডাক।

.            *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর