বিড়াল মহর্ষি শুদ্ধিকরণ ব্রত পালনের অঙ্গিকারে নিজের সাথেই লুকোচুরি খেলছেন মনের আড়ালে। কি হবে তাতে!! জলে কুমির আর ডাঙ্গায় বাঘ, দগদগে ঘা এর ক্ষত থেকে পড়া পুঁজ দলীয় সংস্কৃতি, শুদ্ধিকরণ মন্ত্রের মাজুফল। বেমারী বেনোজল এর জাত নেই ঠিক, সব সময় বইতে থাকে পালাবদলের শক্ত হাত ধরে, ধড়িবাজ বাম হাত কখন যে ডান হাত হয়, বহুরূপী সাজ বোঝা দায়। চারিদিকে ভোগের নৈবেদ্য চাটা মাছি গুলো, ভন ভন করে, মুখোশি নধর নেংটি ইঁদুরের মতো পিছে পিছে ঘোরে অশুভ কায়াহীন ছায়ার মত।
মাকড় অভিব্যক্তির প্রভাবে, মশারা রক্ত চোষা ছেড়ে দিয়ে করছে গ্লাস গ্লাস রক্ত পান। হাড় হিম করা কালো জ্বরে, নাৎসী গনতন্ত্র থর থর করে কাঁপে, আর এদিকে গোবেচারা নির্বোধ ব্যাঙ গুলো আষাঢ়ই পরিবর্তনের মেঘে বৃষ্টি হবে বলে , দলবদ্ধ মন্ডূকপ্লুতিতে মক মক করছে ।
স্বপ্ন দেখতে খুব ভালবাসতাম- শৈশবের সেই দিন গুলি, মায়ের আঁচলে মাথা গুঁজে এক মনে শুনে যেতাম হলুদ টিয়া,পক্ষীরাজের ঘোড়া, ব্যাঙ্গমা,ব্যাঙ্গমি আর রাজকন্যার গল্প। রাজকন্যার পায়ের নূপুরেরে শিঞ্জন শুনতে শুনতে কখন যে পাড়ি দিতাম ঘুম পরির রাজ্যে তা আর বুঝে ওঠা হল না কোনও দিন। সেই রাজকন্যা, রাজ্যপাঠ আর নীল তোতা কেমন সে সব নিজের আপন কল্পনায়, ইচ্ছে ডানায় ভেসে যেতাম মেঘের কোলে আর সমুদ্র তটে বালুকাবেলায় গুনে যেতাম নীল সাগরের ঢেউ।
এর পর সন্ধ্যায় পিদিমের আলোয়, শঙ্খ আর মঙ্গল ঘণ্টার আরতিতে একমনে বসে থাকতাম বাবার পথ পানে চেয়ে। ঘর্মাক্ত ক্লান্ত শরীরে বাবা যখন ফিরতেন তখন বাঁধ ভাঙ্গা আবদারে, ঝাঁপিয়ে পরতাম তার পরিশ্রান্ত দেহ টার উপর ঘোড়া ঘোড়া খেলার জন্যে। বাবা র না বলা ইচ্ছে টা বুঝতে চাই নি কখনো।
আজ বুঝি সেই দিন গুলির মানে, সেই না বলা কঠিন সত্য টা। ঘর্মাক্ত গায়ে যখন অফিস থেকে ফিরি আর আমার ছোট্ট ছেলেটা দু হাতে আঁশটে পিষ্টে চেপে ধরে বলে "তোমায় চ্যাপ্টা রুটি বানাবো এখন" ||
তোমার মাতৃ সত্ত্বায় পরম ব্রহ্ম রেখে যায় তার ঈশ্বর কণা অনন্ত সৃষ্টির ক্রমবর্ধমানে। তোমার গর্ভগৃহে আমার সঞ্চার - কোষ বিভাজনে এক থেকে বহু আর প্রতিটাতে ঢুকে থাকে তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়,তোমার আত্মার নিবিড় বন্ধন। তোমার অমৃত লোকের সাথে সংযোগ আমার গর্ভনাড়ির, নিরাপত্তার নিবিড় বেষ্টনীতে- আমি বেড়ে উঠি তিল থেকে তালে।
প্রথম যে দিন আমার হৃৎস্পন্দন চালিত হয় তোমার গর্ভগৃহে তোমার মমত্ব ভরা অনুভাবনা তা স্পর্শ করে আর সঞ্চার করে অফুরন্ত জীবনী শক্তি। তোমার আদরের আবেশে আমি অবগাহন করি তোমার গর্ভকেশরে। ক্রোমনালীর তৃষ্ণার্ত উদ্দীপনা সিক্ত হয় তোমার দেহ রসে- আর ক্ষুদ্রান্ত্রের বুভুক্ষা নির্বাপিত হয় তোমার পাকরস পেয়ে। আমি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠি বিরাট মহীরুহে -গর্ভস্থ ভ্রূণ থেকে পূর্ণ সৃষ্টির অবয়বে।
পরম ব্রহ্ম আত্মার আত্মচিন্তন আর নিখিল বিশ্বের কর্মযজ্ঞে তার সৃষ্টিকে পাঠালেন এক নান্দী ক্ষণে - নাড়ির সংযোগ ছিন্ন করে। জগতের প্রথম আলো তে, দেখলাম তোমায় দুচোখ ভরে - মাতৃত্বের মেল বন্ধনে।
জঠরের ক্ষুধার্ত জ্বালা আর তৃষ্ণার্ত বুকে আমার পিপাসা কান্না, জন্ম দিল তোমাকে ভালোবাসার অতলান্তিক শক্তি। তাই ভালোবাসার ব্যুৎপত্তি বোধ হয় ক্ষুদ্রান্তেই ||