কবি পঙ্কজিনী বসুর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।  www.milansagar.com
*
সূর্য্যমুখী
পঙ্কজিনী বসু

.        চাহ নাকো প্রতিদান,
.        নাই মান, অভিমান,
মন কথা কয় বুঝি আঁখি সনে থাকি ?
নীরব প্রণয় তব একি সূর্ষমুখী ?
.        কেমন নির্লজ্জ মেয়ে ;
.        তবু তার পানে চেয়ে
প্রত্যাখ্যান, অপমান সকল উফেখি,
.        “জগতের হিত তরে
.        মোর প্রিয় প্রাণ ধরে
কেমনে আমার হবে” --- তাহাই ভাব কি ?
স্বরগের প্রেমরাশি একি সূর্যমুখী ?
.        মন খোলা, প্রাণ খোলা,
.        আপনা জগৎ ভোলা,
সুখ দুঃখ সর্বকালে হয়ে পূর্বমুখী
.        জানিনা কেমন করে
.        থেকে দূর দূরান্তরে
না পরশি, সাধ পুরে শুধুই নিরখি,
নিষ্কাম নিষ্ক্রিয় ব্রত একি সূর্যমুখী।

(“স্মৃতিকণা” থেকে নেওয়া)

.        ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
যাইব কোথায় ?
পঙ্কজিনী বসু

এ ধরার খেলা সাঙ্গ হলে,
নাহি জানি যাইব কোথায় ;
মাঝে মাঝে তাই থেকে থেকে
কাঁপে বক্ষ সন্দেহ-শঙ্কায়।

কখনো মরণ ভাল লাগে,
কিন্তু পুনঃ হয় বড় ভয়,
পাছে মহাশূণ্যতার মাঝে
শান্তি হারা ঘুরিবারে হয়।
মৃত্যুতেও শান্তি যদি নাই,
তবে থাকি কিসের আশায় ?        

জীবনে যাতনা কত মত,
মরণেও বিশ্রাম পাবনা!
কি দুঃখ ইহার মত আছে ?
এ ভাবনা ভাবিতে পারি না।

*            *            *       

কে সন্দেহ ভেঙ্গে দিবে মোর,
মৃত্যু পরে যাইব কোথায় ?
লভিব কি চির-শান্তি-সুখ,
অথবা মিশিব শূণ্যতায় ?

না, না, স্বর্গ নিশ্চয় যে আছে---
চির-শান্তি-সুখময় স্থান,
এপ্রেম, অশান্তি, শোক, দুখ
সেথা গেলে হইবে নির্ব্বাণ!

.        ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
মৃত্যুর কথা আলোচনা করেছেন . . .
পঙ্কজিনী বসু

আমি যে মরিব তাহা শুনে হাসি পায়
.        কহিলে মরণ কথা,
.        পিতা করে হেঁট মাথা,
জননীর দর দর অশ্রু বয়ে যায় ;
আমি যে মরিব তাহা শুনে হাসি পায়!
.        যবে আশির্ব্বাদে মোরে
.        স্বজন স্নেহের ভরে---
“শত বর্ষ সুখে বেঁচে থাক এ ধরায়,”
আমি যে মরিব তাহা শুনে হাসি পায়!

*            *            *            *            *

.        মরণ কাহারে বলে
.        বুঝি কে মানবে ছলে ?
অনন্তে মিশিবে আত্মা, মৃত্যু বলে তায় ;
আমি যে মরিব তাহা শুনে হাসি পায়!
.        কঙু নাহি হ্রাস ক্ষয়
.        আমি অচ্যুত অব্যয়.
ক্ষয় যদি হই, তবে বর্ত্তে দেবতায়।
আমি যে মরিব তাহা শুনে হাসি পায় ;
.        করোনাকো অবিশ্বাস,
.        এ নহে অসত্য ভাষ,
ঈশ্বরের প্রতিরূপ আমি সর্ব্বথায় ;
আমি যে মরিব তাহা শুনে হাসি পায়!
.        সত্য বটে একদিন
.        হইবে ধূলায় লান
আমিত্ব ক্ষুদ্রত্ব সহ ধূলিময় কায় ;
.        উহাতো মরণ নহে,
.        উহাকে নরত্ব কহে,
ক্ষুদ্র নর তারপর অনন্তে মিশায়।
উহারে গণেনা কেউ মরণ সংজ্ঞায় ;
আমি যে মরিব তাহা শুনে হাসি পায়!

.        ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
জীবন রহস্য
পঙ্কজিনী বসু

জনম অজ্ঞানে ঢাকা, মরণ আঁধারে রয় ;
মাঝে দুটি দিন তরে ধরা-সাথে পরিচয়।
সকলে যেতেছে চলে, তবুও কয়েদ মোরা
ভুলেও ভাবিনা কভু যাইব ছাড়িয়া ধরা।

*            *            *            *            

দিন দিন কত তত্ত্ব প্রচারিত হয় ভবে,
আমি কে সন্ধান তার কেবা পাইয়াছে কবে ?
মানবের জ্ঞান কত হইতেছে প্রসারিত,
এ আঁধার যবনিকা হবে নাকো উত্তোলিত!

*            *            *            *            

বলে দাও একবার --- কেন আসে কোথা যায়!
কেন বা মানুষ জ্বলে পোড়া আশা-পিপাসায় ?
নাগো না, চাহিনা আর জানিবারে এ সকল,
জলবিন্দু হয়ে মোরা খুঁজি সিন্ধু-বাসস্থল!

.        ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
রোগশয্যায় শায়িতা কবি লিখেছেন . . .
পঙ্কজিনী বসু

যাহারে অবজ্ঞা করি
সকলে ফেলিছে ঠেলে,
অনন্ত অসীম স্নেহে
তারে তুলে লও কোলে।

*            *            *                        

বুলায়ে ও’ কম কর
রোগীর যাতনা হর,
শ্রান্ত, ক্লান্ত, ভ্রান্ত জীবে
অতি স্নেহে কোলে কর।

*            *            *                      

তোমারি স্নেহের কোলে
জানি আমি এক দিন,
অব আকুল প্রাণ
ধীরে ধীরে হব লীন।
তাইতো মুগ্ধের মত
সদা আমি চেয়ে থাকি,
কোথায় মরণ, এস,
সে দিনের কত বাকী ?

.        ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
সৌন্দর্য্য মহান
পঙ্কজিনী বসু

সৌন্দর্য্যের দাস আমি, সৌন্দর্য্যই করি ধ্যান,
সৌন্দর্য্য হৃদয়ে মম, সৌন্দর্য্য পরাণ ;
সৌন্দর্য্যে প্লাবিত ধরা, সৌন্দর্য্যই হয় সার,
যা দেখি, তাতেই দেখি সৌন্দর্য্যের ভার।
ওই যে ফুটেছে ফুল, গন্ধ করি বিতরণ,
হর্ষ পূর্ণ হৃদে দেখি শোভা অতুলন।

*            *            *            *            

আকুল নয়ন মেলি, যার পানে যত চাই
অনন্ত সৌন্দর্য্য তত দেখিবারে পাই,
অতি ক্ষুদ্র বালুকণা, তবু তার অভ্যন্তরে
অনন্ত সৌন্দর্য্য দেখি মুগধ অন্তরে।

*            *            *            *            

সৌন্দর্য্যের উপাসক, সৌন্দর্য্যের চির দাস,
সৌন্দ্যর্য্য হৃদয়ে রাখি পূজি বারমাস।

.        ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
সুখের কথা লিখেছেন . . .
পঙ্কজিনী বসু

সুখ নাহি কভু থাকে বাহিরেতে
.        সুখ নর-হৃদালয়ে
বসিয়া করিছে হাস্য কৌতুকেতে
.        নিজ আদর হেরিয়ে।
নীরবে গোপনে সবার হৃদিতে
সুখের নির্ঝর লাগিছে বহিতে,
ফল্গুসম অন্তঃসলিলা হইয়ে
.        আছে সুখ এজগতে।

.        ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
তাই দলে পায় (থেকে নেওয়া)
পঙ্কজিনী বসু

আলোকের জীব এরা আলোকে বেড়ায়,
আঁধারের কীট তোরা, তাই দলে পায় ;
.        আবক্ষ ঘোমটা টেনে
.        কেবা কাঁদে গৃহে কোণে,
কেমনে জানিবে বল ? হায় হায় হায়!        

*            *            *            *            

(সম্ভবত একই কবিতায়. . .)

শত কাজে আছে ব্যস্ত স্বদেশীয়গণ
অনুক্ষণ শোভে হাতে, বিজ্ঞান, দর্শন ;
.                স্বদেশের হিত তরে
.          কতই যতন করে.
এরা কি শুনিতে পারে তোদের রোদন!
শত কাজে আছে ব্যস্ত স্বদেশীয়গণ


সেথা কি পশিতে পারে এদের নয়ন,
যেখানে দুহিতা, মাতা, ভার্য্যা-ভগ্নীগণ
.           কূপ-মণ্ডুকের মত
.           দৃষ্টি সদা আত্মগত
কি ভীষণ দুঃখ লয়ে মাগিছে জীবন।
সেথা কি পশিতে পারে এদের নয়ন!


কতই বক্তৃতা করে সভায় বসিয়া,
“জীবপ্রেম”, “আত্মত্যাগ”, বড় কথা দিয়া ;
.           একটি স্নেহের কথা
.           না শুনিয়া পায় ব্যথা
যাহারা, তাদের যায় অবজ্ঞা করিয়া,
এদিকে বক্তৃতা করে সভায় বসিয়া।

.        ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
বাঙ্গালীর ছেলে (যুব সমাজের প্রতি. . .)
পঙ্কজিনী বসু

.        লম্ফ ঝম্ফ, হাঁকা হাঁকি
.        দেশোদ্ধারে ডাকাডাকি
সভায় করিয়া, ঢুকে শৃগাল-গুহায়!
বাঙ্গালীর ছেলে তোরা কে দেখিবি আয়!

*            *            *            *             

.        ফিরায়ে চিকন কেশ,
.        চুরুট ফুকায় বেশ,
ঘড়ি, ছড়ি, চশমাতে কিবা শোভা পায়।
.        সদাই হুজেগে চলে
.        মোহের কুহকে ভোলে,
প্রেম বলে ফণী-হারে বাঁধিছে গলায়!
.        বিয়ে করে বাল্যকালে,
.        যৌবনে সন্তান-জালে
বিজড়িত হয়ে, শেষে দেখে অনুপায়!
.        কদাচারে কাঁদে জায়া,
.        বাপ মায়ে নাহি মায়া,
ভাইবোনে নাহি পালে স্নেহ-মমতায় ;
.        ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই,
.        বিসম্বাদ সর্ব্বদাই,
দেখিতে না পারে তারা কভু একতায়!

*            *            *            *            

.        শ্রমেতে বিমুখ এরা,
.        শ্রম করে অসভ্যেরা,
সভ্য বাঙ্গালীরা শুধু প্রভু-লাথি খায়!
.        ষাট্ বর্ষে মরে দারা,
.        তবু দারা গ্রহে তারা,
নাহি লজ্জা বোধ কিংবা অপমান তায়!
আছে কি স্বর্গীয় প্রেম তাদের আত্মায়!

.             ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
স্বদেশ ভাবনার কবিতা. . .
পঙ্কজিনী বসু

কি ছিলে কি হলে, ভেবে দেখ একবার।
.                ঘুমায়োনা আর!
.        অত্যাচারে, অবিচারে,
.        গেল দেশ ছারে খারে!
কারো কি শকতি হায় নাহি জাগিবার
.                ঘুমায়োনা আর!

*            *            *            *            *        *

মরণেরে কয় এবে উপাস্য সবার।
.                ঘুমায়োনা আর!
.        মৃত্যুকে যে করে ভয়,
.        তারি মৃত্যু আগে হয়,
জাতীয় জীবনে মৃত নাম লেখা তার।
.                ঘুমায়োনা আর!

.             ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
নারীর সেবাময়ী মূর্ত্তি নিয়ে লেখা কবিতা . . .
পঙ্কজিনী বসু

গাহিবারে তব নাম হৃদয়েতে দাও ভক্তি,
করিতে বিশ্বের সেবা দাও গো দেহেতে শক্তি।
কি সম্পদে, কি বিপদে, কাছে থাকি সর্ব্বদাই,
বল তারে, “আমি আছি, ভয় নাই ভয় নাই”।

.             ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
পঙ্কজিনী বসু

আমাদের দেশে সবে বড় লোকে সেবে
.        দলে দরিদ্রেরে,
উচ্চজন পদে লুঠে, দেখিলে দীনেরে
.        দূরে যায় সরে।
উঠিলে শারদ শশী দিক্ উজলিয়া,
.        তারি পানে চায়,
রহে যে আকাশ প্রান্তে ক্ষীণ জ্যোতিঃ তারা
.        কে দেখে তাহায় ?

*            *            *            *            *        *

ঊর্দ্ধ কর্ণ হয়ে শুনি, গায় যদি গীত
.        কোকিল, পাপিয়া,
ক্ষুদ্র পাখী গায় কেন ? কে শুনে সে গান ?
.        যাক না থামিয়া।
জগতের রীতি এই দীন হীন জনে
.        সবে দলে পায়,
দীন হৃদে থাকে যদি মহত্ত্বের বীজ
.        দেখে নাকো তায়!

.             ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর