কবি পঙ্কজিনী বসু - - জন্ম গ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার, ঢাকা জেলার, বিক্রমপুর পরগণার শ্রীনগর
গ্রামে। পিতা নিবারণচন্দ্র গুহ মুস্তোফী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামের
কুমুদ্বন্ধু বসুর পুত্র আশুতোষ বসুর সঙ্গে।
বাংলা সাহিত্যে বেশ কিছু কবি সাহিত্যিক এসেছেন যাঁরা বাংলা সাহিত্যাকাশে উল্কার মত অল্পক্ষণের
মধ্যেই সারা আকাশ আলোকিত করে নিভে গিয়েছেন নিয়তীর অঙ্গুলিহেলনে। পঙ্কজিনী বসু তাঁদের মধ্যে
অন্যতম। তাঁর প্রতিভা ভাল ভাবে ধরা পড়ার আগেই মৃত্যু তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মাত্র ১৭
বছর বয়সেই কবি পঙ্কজিনী বসুর মৃত্যু হয়।
তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। বাপের বাড়ীতে বিয়ের আগে কৃত্তিবাসী রামায়ণ, কাশীদাসের
মহাভারত, টডের রাজস্থান এর বাংলা অনুবাদ পড়েছিলেন। এর বেশী পড়াশুনা না হলেও তাঁর তীক্ষ্ণ
স্মৃতিশক্তির জোরে তিনি একবার যা পড়তেন তা কখনও ভুলতেন না। বিয়ের পর শশুরবাড়ীতে পড়াশুনার
সুযোগ পান।
তাঁর বালিকাবস্থায় কবি প্রতিভার প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর শশুরবাড়ীতেই। বিয়ের কিছুদিন পরেই
শশুরমশাই তাঁকে রামের বনগমন সম্বন্ধে একটি রচনা লিখতে বলেন। তিনি প্রায় ১০০ পংক্তির
একটি কবিতা লিখে দেন। দুঃখের বিষয়, সেই কবিতাটি পাওয়া যায় নি।
তাঁর জীবিত অবস্থায় “নব্যভারত” ও বৈকুণ্ঠনাথ দাস সম্পাদিত “সখী” পত্রিকায়, মাত্র দুচারটি কবিতা
“বালিকার কবিতা” নামে প্রকাশিত হয়েছিল।
কবির মৃত্যুর দুবছর পরে ১৯০২ সালে তাঁর কবিতাগুচ্ছ কলকাতায়, আনন্দচন্দ্র মিত্রর ভূমিকাসহ, তাঁরই
তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়। স্বামী আশুতোষ বসুর ইচ্ছানুসারে বইটির নাম রাখা হয় “স্মৃতিকণা”।
অনন্দচন্দ্রবাবুর অকাল প্রয়াণের জন্য মাত্র কয়েকটি খণ্ড প্রকাশিত হয়। ফলে এই কবির সম্বন্ধে সেই সময়ে
খুব অল্প মানুষই জানতে পেরেছিলেন।
১৯১৬ সালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বার হয়, হরিনাথ দে-র করা “সূর্য্যমুখী” কবিতাটির ইংরেজী অনুবাদ
সহ।
পঙ্কজিনী বসু মাত্র তেরো বছর বয়সেই তাঁর কবিতা রচনা শুরু করেছিলেন। তিনি কবিতা লিখে লুকিয়ে
রাখতেন। তাঁর মৃত্যুর পরেই তাঁর বেশিরভাগ কবিতা তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা খুঁজে পান। তাঁর রচনা-কাল
এতই ছোট যে তিনি তাঁর কবিতাগুলিকে পরিমার্জনা করার অবকাশ পাননি।
তাঁর কবিতা বেশীরভাগই জীবন-মৃত্যু সমস্যা নিয়ে লেখা। তিনি ওই বালিকা বয়সেই পরলোকতত্ত্ব
ও আত্মার অমরত্ব নিয়ে অনেক কথা বলেছেন যা ওই বয়সের কারও কাছ থেকে কখনই আশা করা যায়
না! মৃত্যুর পরে মানুষের পরিণতি কি ? সে কোথায় যায় ? ইত্যাদি। তাঁর কবিতায় স্বদেশ চিন্তাও এসেছে।
বাঙ্গালী ছেলেদের কর্মবিমুখতা, আলসেমি ইত্যাদি নিয়ে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে ভরা কবিতাও রচনা করে
গিয়েছেন। নারী জাতি এবং দীনদরিদ্রের প্রতি তাঁর মায়া-মমতার প্রকাশ পাওয়া যায় তাঁর ওই সামান্য ক’
বছরে লেখা কবিতার মধ্যেই।
পঙ্কজিনী বসুর জীবনের শেষ দিকে, ১৩০৬ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের (জুন-জুলাই ১৮৯৯) “প্রদীপ” পত্রিকায়,
ডাক্তার দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর “বঙ্গের রমণী কবিগণ” প্রবন্ধে লিখেছিলেন ---
“অল্পদিন হইল আমার এক বন্ধু শ্রীমতী পঙ্কজিনী বসুর কতকগুলি কবিতা আমাকে পাঠাইয়া দিয়াছেন। উক্ত
বালিকার পড়াশুনা অতি সামান্য কিন্তু বেশ প্রতিভা আছে। স্বভাবের কৃপা হইলে অশিক্ষিত
কবিও বাগ্দেবীর বীণার সুর বাঁধিতে পারেন ; আমরা আশাকরি শ্রীমতী পঙ্কজিনী কালে বঙ্গীয় অপরাপর
যশস্বিনী মহিলা-কবিগণের পার্শ্বে দাঁড়াইতে পারিবেন।”
এই বালিকা কবির প্রতি, সে যুগের বুদ্ধিজীবী মহলের এটাই সম্ভবত ছিল একমাত্র স্বীকৃতি!
আমরা পূর্ণ কবিতা মাত্র একটি হাতে পেয়েছি। কিন্তু শ্রী যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তর বঙ্গের মহিলা কবি গ্রন্থ থেকে
পাওয়া কিছু খণ্ড কবিতাও তুলে দিয়েছি।
আমাদের ওয়েবসাইট মিলনসাগরে তাঁর কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে
পারলেই আমাদের এই প্রয়াসের সার্থকতা।
কবি পঙ্কজিনী বসুর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন।
উত্স - যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, বঙ্গের মহিলা কবি, ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ (১৯৩০)
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রকাশ - ২১.১০.২০১১
...