কবি পরেশ ধরের কবিতা
*
শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটি   
কবি পরেশ ধর
( হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে রেকর্ড করা এই গানটি বাংলার সর্বকালের সেরা জনপ্রিয় গানের অন্যতম।
গানটি শুনুন এখানে ক্লিক করে )


শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটি
একটু হাওয়া নাই জল যে আয়না তাই
ঝিম ধরেছে ঝিম ধরেছে
গাছের পাতায়
পাল গুটিয়ে থমকে গেছে
ছোট্ট তরীটি, আহা ছোট্ট তরীটি
শান্ত নদীটি

উড়ছিল ঘুড়ি, গাছটি ডিঙিয়ে
বন্ধ বাতাসে পড়ল ঝিমিয়ে
ক্লান্ত সুরে ডাকছে দূরে ঘুঘু পাখিটি
আহা ঘুঘু পাখিটি
শান্ত নদীটি

দুষ্টু ছেলেটা গরমে ঘামে
নদীর ঘাটে জলেতে নামে
আহা গরমে ঘামে
জমছে কালো মেঘ অন্ধকার ঘনায়
তাই দেখে মাঝি আকাশে তাকায়
রুদ্ধ ঝড়ে উঠবে নড়ে স্তব্ধ প্রকৃতি
আহা স্তব্ধ প্রকৃতি ,
শান্ত নদীটি

শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটি
একটু হাওয়া নাই জল যে আয়না তাই
ঝিম ধরেছে ঝিম ধরেছে
গাছের পাতায়
পাল গুটিয়ে থমকে গেছে
ছোট্ট তরীটি, আহা ছোট্ট তরীটি
শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটি

.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কারখানা কলে   
কবি পরেশ ধর
(বেচু দত্তর কণ্ঠে রেকর্ড করা এই গানটির সব কটি রেকর্ড ভেঙে ফেলেছিল গ্রামোফোন কোমেপানি, "আকাশবাণী'র আপত্তিতে।
গানটি শুনুন এখানে ক্লিক করে)


(হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো)

এই কারখানা কলে
ভাই খাটি দলে দলে
তাই যত মেশিন চলে
এই মোদের তাকত শুষে
(হেঁই হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো)

সেই ভোরে বাঁশি বাজে
এই আমরা আসি কাজে
আর ঘরে ফিরি সাঁঝে
ভাই পেটে খিদে পুষে
(হেঁই হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো
হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো)

এই মেশিনের সাথে মোদের
বুকের দরদ বাঁধা
(হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো)
ওদের গতির তালে তালে
গানের কলি সাধা
(হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো)
গহিন প্রাণের ব্যথায় যেন
বলে ওরা হেঁকে
মুক্ত মোদের কর অনাচারের
কবল থেকে
একসাথে ওঠো গুঁজে
(হেঁই হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো)

এই কারখানা কলে
ভাই খাটি দলে দলে
তাই যত মেশিন চলে
এই মোদের তাকত শুষে
(হেঁই হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো
হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো)

মুনাফা কলঙ্ক মাখা
কালো বিষের বান
(হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো)
মেশিন আর মজুরীর মাঝে
হানল ব্যবধান
(হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো)

এসো মোরা নয়া সুরে
গাহি দেহি তালী
স্মরণ করি নয়া যুগের
সুমধুর মিতালি
এই মেশিনে মানুষে
(হেঁই হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো)

এই কারখানা কলে
ভাই খাটি দলে দলে
তাই যত মেশিন চলে
এই মোদের তাকত শুষে
(হেঁই হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো)

সেই ভোরের বাঁশি বাজে
এই আমরা আসি কাজে
আর ঘরে ফিরি সাঁঝে
ভাই পেটে খিদে পুষে
(হেঁই হেঁইয়ো হেঁইয়ো হেঁইয়ো
হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো, হেঁই হেঁইয়ো)

.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ওরে ও মাঝি   
কবি পরেশ ধর
(
বেচু দত্তর কণ্ঠে গানটি শুনুন এখানে ক্লিক করে )


ওরে ও, ওরে ও মাঝি
রাঙা স্বপন দেশে যাবো
পাল তুলে দে নৌকায়
পাল তুলে দে,   নৌকায়  পাল তুলে দে
নৌকায় পাল তুলে দে

পথে আছে অনেক বাধা
অনেক বিপদ কোমর বেঁধে নে
নৌকায় পাল তুলে দে নৌকায় পাল তুলে দে

ওরে ও মাঝি রাঙা স্বপন দেশে যাব
পাল তুলে দে নৌকায় পাল তুলে দে
হালের দড়ি শক্ত করে বেঁধে যেন রাখিস ওরে
হাওয়ার মুখে ফেলে তরী চালা পারিস যত জোড়ে
দিগন্তে  ওই সোনার আলো      
আজি মোদের মন ভোলাল
এখানে তোর বেজে নুপূর
জীবন যেন ফুল ফোটাল
তারি গানে প্রাণ ভরেছে
রোখে মোদের কে
নৌকায় পাল তুলে দে ,নৌকায় পাল তুলে দে

ওরে ও মাঝি রাঙা স্বপন দেশে যাবো
পাল তুলে দে নৌকায় পাল তুলে দে

সাঁঝের বেলা দেখবি চেয়ে
কুজ্ঝ্বটিকা আসবে ধেয়ে
সাঁঝের বেলা দেখবিরে তুই চেয়ে
কালো মেঘের ডানা ঝাঁকে
ঘরের বাদুর আকাশ ঢাকে
ঢেউ তুল , ঘাটি দিয়ে ডোবাতে চায়ে                                  
তরী পথে নিশানা ঠিক  রেখে
চলো সমুখ পানে রে
নৌকায় পাল তুলে দে, নৌকায় পাল তুলে দে
নৌকায় পাল তুলে দে, নৌকায় পাল তুলে দে |


.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ওরে ও নতুন দিনের পাখি  
কবি পরেশ ধর
(
বেচু দত্তর কণ্ঠে গানটি শুনুন এখানে ক্লিক করে )

ওরে ও নতুন দিনের পাখি
আমার এই গান খানি হায় তোমার
দেশে যায় নাকি, যায় নাকি
ওরে ও নতুন দিনের পাখি

তুমি ডালিম রঙের ডানায় উড়ে উড়ে
এসে ঘুরবে কবে আমার আকাশ জুড়ে
এই বাতাস জুড়ে, সেই সোনালী দিনের
কত বাকী
ওরে ও নতুন দিনের পাখি
আমার এই গান খানি হায় তোমার
দেশে যায় নাকি, যায় নাকি
ওরে ও নতুন দিনের পাখি

কত রঙিন স্বপন দেখছি বসে
কত আলো ঝলমল দিনের ছবি
আঁকছি বসে ,আর ভাবছি
কবে পুব সীমানায় উঠবে নতুন রবি ,
কত রঙিন স্বপন দেখছি বসে
কবে এই দেশের এই সবুজ মাটির পরে
রাঙা আলোর কণা পড়বে ঝরে ঝরে
আহা সোনার হরিণ সেই আশাটি আজ
বুক বেঁধে রাখি
ওরে ও নতুন দিনের পাখি
আমার এই গান খানি হায় তোমার
দেশে যায় নাকি, যায় নাকি
ওরে ও নতুন দিনের পাখি

.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঘুম ভেঙে যায়  
কবি পরেশ ধর
(
বেচু দত্তর কণ্ঠে গানটি শুনুন এখানে ক্লিক করে )

ঘুম ভেঙে যায় রাত্রি পোহায়
পুব আকাশের গায়
ঘুমিয়ে যারা আছো তারা
জাগো দুনিয়ায়
রাত্রি পোহায়, রাত্রি পোহায়

সূর্য উঠে কুসুম ফোটে
ভোরের পাখি গায়
লাঙল কাঁধে জোয়াল হাতে
মাঠের চাষী ধায়
সোনা ধানের স্বপ্ন যে তার
দু বুক ভরে ছায়
রাত্রি পোহায় রাত্রি পোহায়

বাজলো রে ঐ আলোর বাঁশী
সূর্যমুখীর ফুটলো হাসি
সবুজ বরণ ঘাসে ঘাসে
উড়লো অরুণ কিরণ রাশি
বাজলো রে ঐ আলোর বাঁশী
সূর্যমুখীর ফুটলো হাসি

ভাঙলো রে ঘুম, পড়লো যে ধূম
উঠলো কাজের ঢেউ
যেদিকে চাই জাগছে সবাই
ঘুমায় না আর কেউ
শহর গায়ের তরুণ জোয়ান
বুক ফুলিয়ে যায়
রাত্রি পোহায় রাত্রি পোহায়

.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কৃষ্ণপ্রেমে সমাজতন্ত্র হাবুডুবু খায়  
কবি পরেশ ধর

কৃষ্ণপ্রেমে সমাজতন্ত্র হাবুডুবু খায়
লেনিন কান্দে, স্ট্যালিন কান্দে, কান্দে রাশিয়ায়
.                আহা কান্দে রাশিয়া

ধর্ম ছিল আফিম-সম যে দেশে
কৃষ্ণপ্রেমে মজল সে দেশে অক্লেশে
ন্যাড়া মাথা তিলক কাটা ছেলেরা
গাউন ছেড়ে শাড়ি পরে মেয়েরা
খোল কর্ত্তাল নিয়ে তারা সংকীর্ত্তন গায়
লেনিন কান্দে, স্ট্যালিন কান্দে, কান্দে রাশিয়ায়
.                আহা কান্দে রাশিয়া

বড়ো বড়ো বুদ্ধিজীবী বিজ্ঞানী
কৃষ্ণপ্রেমে মজলো কেন কি জানি
সমাজতন্ত্র মিলিয়ে গেল ধনতন্ত্রে
উড়ে গেল দেশের চাকা কি মন্ত্রে
ক্রশ্চেভ এসে মার্কস লেনিন স্ট্যালিনকে হঠায়
লেনিন কান্দে, স্ট্যালিন কান্দে, কান্দে রাশিয়ায়
.                আহা কান্দে রাশিয়া

রুশ যুবারা হয়ে গেল কৃষ্ণদাস
রুশ যুবতী কৃষ্ণদাসী এ কি সর্বনাশ
ধনতন্ত্র আসার ফলে এল দুর্নীতি
মস্তানি আর খুনোখুনি মদ গাঁজায় প্রীতি
ধনতন্ত্রের নীল বিষে দেশটা দেখ ছায়
লেনিন কান্দে, স্ট্যালিন কান্দে, কান্দে রাশিয়ায়
.                আহা কান্দে রাশিয়া

সভ্যতার পশ্চাত্গতি কখনো কি হয়
সমাজতন্ত্র ভেঙে কভু ধনতন্ত্র নয়
সমাজতন্ত্রের পরে আসবে সাম্যবাদ
সভ্যতার সবচেয়ে সেটা সুসংবাদ
সেই সুদিনের জন্য মানুষ স্বপ্ন দেখে যায়,
লেনিন স্ট্যালিন কান্দে না আর, কান্দে না---
.                                আর হায়

.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
setstats
*
ঘুমের ঘোরে সেদিন আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম
কথা ও সুর – পরেশ ধর
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া


ঘুমের ঘোরে সেদিন আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম
একটা বিরাট খাঁচায় ঢুকে গেছি
ঝকঝকে সেই খাঁচার মাঝে অনেকগুলি বানর
হাত পা ছুঁড়ে করছে চেঁচামেচি |

এ উহারে ভেংচি কাটে মারতে তেড়ে যায়
রাগে নিজের চুল ধরে কেউ টানে
মারামারি করার আগে রক্ত আঁখি মেলে
চায় যে তারা পরস্পরের পানে |

এমন সময় একটা বানর পায়ের চটি খুলে
হাতে তুলে হুমকি দিয়ে ঘোরে
অবাক হয়ে ভাবছি আমি এরা তো সব বানর
পায়ে জুতো এলো কেমন করে |

লাঠালাঠি ফাটাফাটি শুরু হয়ে গেল
শুরু হয় মারামারি ভারি
পালাবার পথ কোথা খুঁজে নাহি পাই
পালাতে চাই যে তাড়াতাড়ি |

এমন সময় হঠাৎ আমার ঘুমটা গেল ভেঙে
বেরিয়ে এলো খুব জোর হাঁচি
চেয়ে দেখি খাঁচা, বানর কিচ্ছু কোথাও নেই             
বিধানসভায় আমি বসে আছি |

.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
তার সুস্বাস্থ খাবারে রক্তের দাগ
কথা ও সুর – পরেশ ধর
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
 

তার সুস্বাস্থ খাবারে রক্তের দাগ
তার সুশোভন পোষাকে-রক্তের দাগ
তার সুরম্য বাড়িতে রক্তের দাগ

রক্তের দাগ তার শয্যায়
রক্তের দাগ তার অফিসে
রক্তের দাগ তার গাড়িতে

তার চোখ দুটো খুব তীক্ষ্ম
সব জিনিস সে পরিস্কার দেখ্ তে পায়
কিন্তু সে তার চারপাশের রক্তের দাগ
দেখতে পায় না |
সে আমাদের একজন মাননীয় মন্ত্রী |

.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ডাইনে আমার হিন্দুজা, বাঁয়ে আমার আম্বানি
কথা ও সুর – পরেশ ধর
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া


ডাইনে আমার হিন্দুজা, বাঁয়ে আমার আম্বানি
আমি বড় কম্যুনিষ্ট, বড় খানদানি |

কোন কালে কার্ল মার্কস বলেছিলেন ভাই
পূঁজিপতি শ্রেণীটাকে শেষ করা চাই
ধনী গরিবের মাঝে যত ব্যবধান
ধ্বংস করে দিলে হবে সকলে সমান
এ সব ছেঁদো কথা এখন চলে না তা জানি |

দুনিয়াতে বর্তমানে শ্রেণী দ্বন্দ্ব নাই
শ্রেণী সমন্বয়ের পথে চলেছি সবাই |
শান্তিপূর্ণ পথে আমরা সমাজ পাল্টাবো
পূঁজিপতির বুদ্ধি বিভব কাজে লাগাবো |
মার্কস সাহেব জানতেন না রে এই নয়া বাখানি |

কৃষক জোতদারের এখন ঝগড়াঝাঁটি নাই
মজুর মালিক দেখ কেমন মিলে গেছে ভাই
হিন্দুজা আম্বানি আমার বন্ধু হয়েছে
দেশের পালে এবার নয়া বাতাস লেগেছে |
সৃজনশীল মার্কসবাদের বোঝ মর্মবাণী |

.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বিহার বিহার অন্ধ্র অন্ধ্র
কথা ও সুর – পরেশ ধর
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
                         
                                        
বিহার বিহার অন্ধ্র অন্ধ্র
ডাক পাঠালো মেঘমন্দ্র
বিহারে চাষী জেগেছে, আকাশে লাল রং লেগেছে
অন্ধ্রে চাষী গর্জমান বিহারে অন্ধ্রে ঐকতান |       
বিহারে অন্ধ্রে হাতে হাত, মিলিছে তাদের প্রাণে প্রাণ |

যে হাতে লাঙল ধরো ভাই, সে হাতে রাইফেল ধরা চাই
ভূমিসেনারা এলে পর গণসেনা যে ভয়ংকর |
তারা সাহসে এগিয়ে যায়, নাইরে দ্বিধা নাইরে ডর |

অন্ধ্র বিহার হাঁকে রে, গোটা ভারত কাঁপেরে
জনযুদ্ধের সঠিক পণ আনলো দেশে আলোড়ন
মজুর কিষাণ মিলেছে চূর্ণ করতে দুঃশাসন |

.               *************************                                         
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর