আমার কথাও শেষ হয়ে এল |
জামায়ে’র কথা অমৃত সমান,
কাশীরাম কহে শুন পূণ্যবান |
একথা শুনিলে দুখ দূর যায়,
পাপী নরাধম পরিত্রাণ পায় |
কাল রঙ যার সেও হয় সাদা
ছোট হয় বড় ঘোড়া হয় গাধা |
বাঁজা হয় তাজা, তাজা হয় বাঁজা
একথা যে শোনে সেই হয় রাজা |
একথা শুনিয়া যেবা রাগ করে,
তাহার ভিটায় সদা ঘুঘু চরে |
তাই বলি শোনো মন দিয়ে বেশ |----
হরি হরি বল, কথা হ’ল শেষ |
. তোমরাও বাঁচ, আমিও বাঁচি |
. ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি |
ইতি----- ৬ই এপ্রিল ১৮৯৯
. ****************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
. তাঁদেরি চরণে দিনু এ ডালি |
অথ জামাইবাবুর পরিচয়
মা বাপের ছেলে যাদু বাছাধন,
কত যতনের একটি রতন |
চরিত্র নিখুঁৎ---- যেন নীলাকাশ ;
বিদ্যায় কি কম ? ছেলে এলে পাশ |
রঙ বড় কাল কোন্ শালা বলে ?
ন-হাজার টাকা দামের এ ছেলে !
. শ্বশুরের খুব কপাল ভাল |
জন্মেছিল সেই পউষের শীতে,
পোয়াতী তখন কাতর জ্বরেতে |
পেঁচী ধাই ছিল----মাগী বড় কাল,
তারি দুধ খেয়ে ছেলে হ’ল ভাল |
তা হলে কি হয় ? কাল মাই খেয়ে
অমন যে রঙ --- গেল মাটি হয়ে |
. তা না হলে এরে কে বলে কাল |
মাথার অসুখ বাছার আমার
একজামিন দিতে পারেনি এবার |
কোবরেজ বলে পড়ে কায নাই,
মন ভাল থাকে সেটা দেখা চাই |
. শরীরের আগে পড়া ত নয় |
বয়েস কি বেশী ? গেল পউষেতে
পা দিয়েছে বাছা মোটে তেইশেতে |
দুধের ছেলে এ----ষষ্ টির দাস,
বেঁচে বত্তে থাক নাই দিলে “পাশ” |
. এখন বউমা এলেই হয় |
শ্বশুর লিখেচে পূজোর ছুটিতে
তাঁর কাছে যেতে হাওয়া বদ্ লাতে |
পশ্চিমে এখন জলহাওয়া বেশ,
রেলে চড়ে যাবে নাই কোন ক্লেশ ;
. পথ বেশী নয়, দুই দিনের |
রথ দেখা আর কলা বেচা হবে,
মন ভাল রবে শরীর সারিবে |
ভাল ডাক্ তার সেইখানে আছে
কবিরাজ কোথা লাগে তার কাছে ?
. পাঁচনে টনিকে তফাৎ ঢের |
লেখাপড়া আর ভাল নাহি লাগে
বইগুনো দেখে হাড় জ্বলে রাগে |
জন্মিয়া অবধি জুটেছে জঞ্জাল
বহিতে হইবে আর কত কাল ?
. আর কায নাই এবারে থাক্ |
রোজ রোজ আর বই হাতে করে
কলেজেতে যেতে মন নাহি সরে |
লেকচার নোট হারিয়ে গিয়েছে,
অঙ্কের খাতাটি ইঁদুরে খেয়েচে |
. দূর হোক্ ছাই চুলোয় যাক্ |
কোথাকার এক বাঁকা প্যারাবোলা
ফোকস্ কোথায় জানে কোন্ শালা ?
হাইপার বোলা থাক্ কাঁচকলা
. মরুক এলিপ্স্ ঘোড়ার ডিম্ |
BaCl2 + K2 So4
এ সকল জেনে কিবা লাভ মোর ?
ফিজিক্স্ কেমেস্ট্রী পড়ে গুলি খোর,
. ফিজিক্স্ তেঁতুল কেমেস্ট্রী নিম |
বিদ্যার ব্যাপারে পড়েছে ইস্তাফা
ও সকল দফা বহুদিন রফা |
জামা’য়ের কিরে ও সব পোষায় ?
দুরকম জ্বালা নাহি সহা যায় |
বউ আর পড়া আদা কাঁচকলা,
বউ কাঁচপোকা পড়া আরসোলা |
পড়া কেলে হাঁড়ি বউ মোটা লাঠি
লেখা পড়া সব বউ করে মাটি |----
. আজ যা পড়ি তা কাল্ কে ভুলি
পড়িতে কখনো মন নাহি লাগে
“কি যেন মু’খানি” হৃদয়েতে জাগে |
প্রাণ জ্বর জ্বর লভের জ্বালায়
বৌএর ভাবনা সর্বদা মাথায় |
কখন “কি যেন কি কথা” বলেচে
“কি যেন কি কথা” চিঠিতে লিখেচে |
ভালবাসে কি না বাসে প্রাণভরে
চিঠি দিতে কেন এত দেরী করে ?
চিঠি নাহি এলে দুখ নাহি ঘোচে
চিঠি নাহি পেলে ভাত নাহি রোচে,
. বৌএর চিঠি যে হজমি গুলি |
ভেবে ভেবে আহা মাথার অসুখ,
শরীর কাহিল মনে নাই সুখ |
তাই বলি আর পড়ে কায নাই,
শ্বশুর বাড়িতে চলহে জামাই |
পরশু তরশু দিন ভাল নয়,
বার বেলা পড়ে নটার সময় |
কাল ত্রয়োদশী, দিনটাও ভাল---
সেই বেশ কথা, কাল্ কেই চল |
. মিছে দেরি করে লাভ ত নেই |
কাল যেতে হবে কর তাড়াতাড়ি,
নাও হে গুছিয়ে খাবারের হাঁড়ি
বোঁচ্ কা বুঁচ্ কি গেঁঠ্ রি গেঁঠ্ রা
চ্যাঙারি চুবড়ি বাক্ স প্যাটরা |
এক গোছা টাকা শাশুরী প্রণামী,
একটা মোহর বৌএর সেলামী |
চাকরের তরে টাকা গোটা ছয়--
না না দশটাকা --- যদি নিন্দে হয় !
প্রথম বারেতে বেশী দেওয়া চাই,
পরে না দিলেও কোনো ক্ষতি নাই
. শ্বশুরবাড়িতে ধারাই এই |
. সূচীতে . . .
না না ওই ফের বাঁশী শোনা গেছে,
ডিষ্ট্যান্ট্ সিগ্নাল্ ছাড়িয়ে এসেছে |
. আসিল ষ্টেষণ, দাঁড়াল গাড়ি |
নামিলেন বাবু তড় বড় কোরে
হোটেলের দিকে চলিলেন জোরে |
দেরি হয়ে গেছে --- নাইন্ হাফ্ পাষ্ট্
“খান্সামা, খান্সামা, লাও ব্রেকফাষ্ট্ |”
“ বহুতাচ্ছা বাবু, কোন্ চিজ্ চাহি ---
মটন্ কি বীফ ?” “আরে নেহি নেহি !
হিন্দু হ্যায় হম্ ---বীফ নেহি খাগা,
খানা খাগা কিন্তু জাত নেহি দেগা |
মটন্ লে আও, বীফ নেহি খাতা,
কাহে তুম্ কহা অলক্ষুনে কথা ?
. যাতা হ্যায় হম্ শ্বশুর বাড়ি !”
পেঁয়াজের সহ মটনের কারি
গরম গরম ভাল লাগে ভারি |
কর তাড়তাড়ি --- টাইম ওভার,
কাঁটা চাম্ চেতে কায নাই আর |
পুঁটিমাছ খেকো বাঙালির ছেলে,
কাঁটা চাম্ চেতে খেলে কিরে চলে ?
ইঁ হিঁ হিঁহিঁ হিঁ হিঁ ওমা একি হ’ল ?---
হলুদের দাগ হাতে লেগে গেল !
বাহারে রুমাল গোঁজা আছে বুকে
মাখানো তাহাতে কাশ্ মীর বোকে |
কোন্ প্রাণে হাত মুছি গো তাহায় ?
শালাশালী দেখে কি ভাবিবে হায় !
কি করি উপায় ? -- বল জগন্নাথ ---
টেবিলের ক্লথে মুছে ফেল হাত |
. এ বুদ্ধি কি আর যোটেনা ছাই ?
আর দেরি নাই ছাড়ে বুঝি গাড়ি,
সিগারেট মুখে চল তাড়াতাড়ি |
বাবা -- বাঁচা গেল, ধরে প্রাণ এল,
বোয়ের ভাবনা আবার জুটিল |
ভাবনা আসেনা পেট খালি হ’লে
যতেক ভাবনা পেট্ টি ভরিলে |
তাই বিধবারা একাদশী করে,
তাই সন্ন্যাসীরা শুখাইয়া মরে |
. বে’র দিন লোকে খায় না তাই |
ঘড়্ ঘড়্ ঘড়্ ঝন্ ঝন্ ঝন্
কান ঝালাপালা হাড় জ্বালাতন |
সময় ত হ’ল ; আর দেরি নাই,
টেরিটা এবারে ঠিক করা চাই |
মুখ ধুতে হবে সাবানের জলে,
এসেন্স একটু দিতে হবে চুলে |
কোঁচার ফুলটা হয়ে হয়ে গেছে মাটি
সেটাকে আবার কর পরিপাটি |
সব কায হল ; বাঁকী কিছু আছে ?
চল একবার আয়নার কাছে |
কেমন দেখায় দেখি একবার ---
ব্বা ! এক্সেলেন্ট ! অতি চমত্কার !
. এই সাজে যাব শ্বশুরবাড়ি |
আর কত দেরি ? আর যে সহেনা
ধরে আর প্রাণ থাকিতে চাহেনা |
নানা না না না না ওই এল এল,
আর দেরি নাই হরি হরি বল |
ওই প্ল্যাটফর্ম ওই দেখা যায়,
শ্বশুর শালারা ওই যে বেড়ায় !
এই বারে গাড়ি ঢোকে ইষ্টিষাণ,
ভ্যাকুয়ম্ ব্রেকে পড়েছে কি টান ---
গুম্ গুম্ গুম্ কড়্ কড়্ কড়্
ঝড়াৎ হড়াৎ হড় হড় হড়
. ক্যাঁচ্-ক্যাঁচ্-কোঁ-থামিল গাড়ি |
. সূচীতে . . .
অথ পদার্পণ
নামের জামাই গজেন্দ্র গমনে |
. “বাবাজি কোথায় ? --- এই যে এখানে |
খবর ত সব ভাল তথাকার ?
পথে কোন কষ্ট হয়নি তোমার ?”
“আজ্ঞে না | আপনি আছেন ত ভাল ?”
“এক রকম | আর দেরি কেন চল |
কোচমান কোথা ? গাড়ি নিয়ে আয়--
লগেজ আসিবে মুটের মাথায় |
. বেলা পড়ে এল গাড়ি হাঁকাও |”
হ্যাট্ ট্যাক্ ট্যাক্ ছপাৎ ছপাৎ
ঘোড়া ব্যাটা বড় করে উত্পাত |
জামাই কুটুম কিছুই মানেনা,
যখন তখন করে পাজীপনা |
অবশেষে খুব চাবুকের গায়,
গাড়ি লয়ে ঘোড়া অতি দ্রুত যায় |
অসার সংসারে একমাত্র সার,
শ্বশুর বাড়ির গেট হ’ল পার ----
. সবুর সবুর গাড়ি থামাও |
“ কোথা আছিস্ ওরে ও ছেলেরা
জামাই বাবুকে ভিতরে নিয়েযা |
বাহিরে এখন থেকে কায নাই,
ভেতরে আমার করুক জামাই |
দিতে বল এরে জল খাবার |”
ঠুংরি চালেতে চলেন জামাই |
মরি কি কায়দা বলিহারি যাই !
এইবারে রূপ করিব বর্ণনা,
এখন না হলে সময় হবেনা ;
রাত্তিরে জাগাতে সাহস কার ?
. সূচীতে . . .
সিল্কের কোট চিক্ মিক্ করে,
( পূজার সময় পান আর বারে | )
ঢাকাই কাপড়ে কোঁচার বহর,
হাওয়া লাগলেই সব একাকার--
.. ভিতরে একটা সেমিজ চাই |
কোটের বোতাম প্রায় সব খোলা,
কামিজের প্লেটে বেলফুল তোলা |
গলায় কলার,--- আহা মরে যাই
ঘাড়ে বড় লাগে তবু পরা চাই !
একত্রিশ ভরি গলে গার্ড চেন,
সেই একঘেয়ে স্টার প্যাটারেন |
রদার হামের ঘড়ি খানি বেশ,
বাবুদের প্রিয় হন্ টিং কেশ |
রেশমী রুমাল পকেটেতে আছে,
“দৈবের গতিকে” বেরিয়ে পড়েছে,----
. জামা’য়ের অত খেয়াল নাই !
কারপেট পম্প শোভে শ্রীচরণে
সিল্ কের সকে মন্ডিত যতনে |
ধীরে ধীরে যান ফিরে ফিরে চান,
কতব্ধি আশে হাবুডুবু প্রাণ |
একটা বৌয়েতে আশ নাহি মিটে
বেহায়া নয়ন চারিদিকে ছোটে |
আঁদারে পাঁদাড়ে খড়খড়ি ধরে
কে কোথায় আছ যাও শীঘ্র সরে---
. হ্যাদে দেখ জামাই আসে !
. সূচীতে . . .
.. জামা’য়ের আহা তুলনা নেই !
অথ সম্ভাষণ
“ভাল আছ ভাই ? ---- ( বোসোনা হেথায় --- )
কতদিন আহা দেখি নি তোমায় |
বে’র পরে ভাই আসনাই আর,
কতদিন পরে এসেছ আবার |
. দূর দেশে থাক দেখা না পাই |
সহজেতে মোরা ছেড়ে নাহি দিব
দুই মাস পাক্কা ধরিয়া রাখিব |
খাবারের থালা আয় না লো নিয়ে,
ও ঝি---- ও ঝি---- দেনা আসন বিছিয়ে |----
. খাবার দিয়েচে ---- এসত ভাই !’
“ আজ্ঞেনা আজ্ঞেনা, হ্যাঁ-হ্যাঁ হ্যাঁ না-না-না
মাপ কোরুবেন, খেতে পারবো না |
পেট বড় ভারি ; অসুখ কোরুবে,
একেবারে সেই রেতে খাওয়া যাবে |
. খেয়ে কায নেই এখন আর
“ওমা সেকি কথা ! কিছুই খাবেনা ?
তা কি হয় ভাই ? না না তা হবে না |
জামাই মানুষ, লোকে কি বোল্ বে ?
কিছু অন্তত খাইতেই হবে :-------
. তা না হলে খাও মাথা আমার |”
শালীদের কথা কে এড়াতো পারে ?
চলেন জামাই সুড় শূড় কোরে |
গালিচার কিবা বিচিত্র আসন,
ঝক্ মক্ করে রূপার বাসন |
পাথর বাটিতে মিছরি ভিজানো ,
রূপার রেকাবে বেদানা ছড়ানো |
ক্ষীরের ছাঁচেতে কিবা কারিগুরি ,
মুগ ভিজে চিনি মাখাম মিছরি
. আরো ছাঁই পাঁশ কত কি আছে |
জামাই বাবাজি বসেন আসনে,
সরবতে লেবু টেপেন যতনে |
( শ্বশুর বাড়িতে লেবু টেপা দায়---
শালীদের গায়ে পাছে ফশ্ কায় ! )
ঢুকু ঢুকু ঢুকু সরবত পার--
ফলমূলে হাত দাও এইবার |
একটি একটি মুখে চলে যায়,
গোঘ্রাসেতে নাহি জামাইরা খাই |
জামা’য়ের কভু সব খেতে নাই,
অর্দ্ধেক অন্তত ফেলে রাখা চাই,
. লোকে মনে করে পেটুক পাছে |
আদরের ঝুড়ি যতনের খনি
নিকটেতে বসে শালী দিদিমণি,
করেন বাতাস পাখা লয়ে করে |
এমন আদরে কে থাকিতে পারে ?
. জামা’য়ের প্রাণে অত কি সয় ?
“পাখা রেখে দিন”--- বলেন জামাই |
“তাতে দোষ নেই, খাও তুমি ভাই |”
“পাখা ধরেছেন কেন কষ্ট করে ?
তা হ’লে খাব না ----দিন না আমারে”----
. “না ভাই, ছি ভাই, তাও কি হয় !”
এ আদর আর কত দিন রবে ?
চিরস্থায়ী সুখ নহে কভু ভবে |
নূতন জামাই এলে পরে হায়
পুরানো জামা’য়ে এঁড়ে লেগে যায় |
রূপার বাসন কোথা যায় চলে ,
এনামেল প্লেট তাহার বদলে |
রূপার ডিপার না হয় সন্ধান,
কলাপাতে শুধু এক খিলি পান |
ঘন ঘন আর হয় না পোলাও,
আছে ভাত ডাল যত পার খাও |
পাতে নাহি আর বড় বড় মুড়া,
যত পার চোষ কাঁকড়ার দাড়া |
রোজ রোজ আর নাহি আসে পাঁটা,
পোড়া কপালেতে সজনের ডাঁটা |---
. জগতের রীতি এমনি হায় !
চাঁদেতে কলঙ্ক গোলাপেতে কাঁটা,
কচি কচি খোকা তারো নাকে পোঁটা |
বেদানায় বিচি আঙুরেও খোষা
ঘরেতেও ঝুল বিছানায় মশা |
যেখানেতে সুখ সেইখানে দুখ,
সম্পদের মাঝে বিধাতা বিমুখ |
পেটের অসুখ হয় বেশী খেলে,
কুড়ি হলে বুড়ি বিয়ে হ’লে ছেলে |
বাড়া ভাতে কাঠি পাকা ধানে মই,
গুড়ে বালি হায় কেমনেতে সই ?
. একটানা সুখ নাহি ধরায় |
ও সব এখন ভেবে কায নাই
খাওয়া শেষ হ’ল ওঠ হে জামাই |
জামা’য়ের পাতে যাহা আছে পড়ে
ছেলেগুলো নিয়ে কাড়াকাড়ি করে |
“তোরা কি কাঙাল ? --- ” দিদিরা গরজে,
ছেলেরা কি আর ও সকল বোঝে ?
জামাই বাবাজি যান বাহিরেতে,
কে কোথায় আছ এসগো ঘরেতে |
ছেড়ে দাও গলা, নাড় খুব হাত,
সমালোচনায় কর মুন্ডপাত |
. জামাই বেচারা নাই গো হেথা |
. সূচীতে . . .
অথ সাজগোজ
রাত বহে যায়, দশটা বেজেছে,
খাওয়ার ব্যাপার সব চুকে গেছে |
তবু আর ছাই ডাকিতে আসেনা,
জামা’য়ের ব্যাথা কেহ বোঝেনা |
চুপ করে বসে থাক গো জামাই ;
চলহে পাঠক ভিতরেতে যাই |
এবার বৌয়ের সাজিবার পালা,
এক পাল মেয়ে করিছে জটলা |
কেহ চড়া সুরে হাসে হি হি হি হি,
কেহ মিহি সুরে করে চিঁহি চিঁহি |
দপ্ দপ্ কোরে মোমবাতী জ্বলে,
চারিদিকে ঘিরে আছেন সকলে |
সুগন্ধের শিশি ---পফ্ ---পাউডার--
সাবান ---তোয়ালে---কুন্তলীন আর |
আরসী ---চিরুনী ----ফিতে খোঁপাবাঁধা
ফুলের মালাটি ধপ্ ধপে সাদা |
গোলাপী রঙের কাপড় কোঁচানো
এক ঘন্টা ধরে আলতা পরানো |
লজ্জায় মেয়ের ঠোঁট যে শুখায়,
দাও রঙ দেওয়া গ্লিসারিণ তায় ;
. “আতর দেওয়া এ পানটা খা |”
মল বালা চুড়ি অনন্ত সোনার
ব্রেস্ লেট ব্রুচ নেক্ লেস হার |
( আরো মাথান্ডু কত আছে ছাই----
সকলের নাম মোর মনে নাই | )
যত পার দেহে চড়াও গহনা,
সোনার ওজন ভারিতো লাগেনা |
“চুড়ি কিম্বা বালা --- পরাবো কোন্ টা ?
কিম্বা ব্রেসলেট ? -- কিম্বা সব কটা ?”
“বেশী গহনায় কায নাই বোন্---
জানো না ত ভাই পুরুষের মন |
অধিক গহনা ওরা নাহি চায়,
মল চুড়ি দেখে হাড়ে চটে যায় |
রাত হয়ে গেছে ; আর কায নাই,
যা হয়েছে,--- খুব; চল নিয়ে যাই |
. টেনে দে ওর ঘোম্ টা |
. সূচীতে . . .
জামাইবাবু ও বউমা
[ ন্যাকা ন্যাকা সুরে পড়িতে হইবে | ]
( By a Veteran )
কবি রাজশেখর বসু
সুত্রপাত
মানস সরসে কোথা স্বরস্বতি !
অথ বউমা
বিছানায় এসে এদিকে জামাই,
আর কত দেরি ভাবছেন তাই |
শুয়েছেন দিয়ে বিলিষে ঠেষান্ ,
এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়
একে একে সব খিলি শেষ হয় |
তবু এক খিলি ডিপেতে রয়েছে,
বিশেষ কারণে সেটা বাঁকী আছে !
শ্রীচরণে তেল দাওহে সতত |
পাঁচশত বার বোঝাও তাহারে --
বড় ভালবাসি বউ গো তোমারে |”
যত পার ঝাড় নভেলের বুলি
প্রতিদানে তার শোনো গালাগালী |--
. বোয়ের এমনি লভের চাড় !
কেন কর্ম্মভোগ ? আরে ছিছি ছিছি
অত খিচি খিচি কেন মিছি মিছি ?
কোথাকার এক পুঁট পুঁটে মেয়ে
বেড়ায় তোমারে চরকী ঘুরিয়ে |
যত পার কর খোসামোদ তার
হায় হায় তবু মন পাওয়া ভার |
কোথা সরলতা পাবেহে খুঁজিয়ে
ন্যাকামীর ঝুড়ি এক ফোঁটা মেয়ে |
কোথা হে সাবিত্রী ! শকুন্তলা কোথা ?
কোথা দময়ন্তী ? কোথা আছ সীতা ?
কোথায় প্রফুল্ল ? কোথা তিলোত্তমা ?
কোথায় ভ্রমরা ? কোথা আছ রমা ?
হায়রে ও সব গাঁজার খেয়াল,
ধরণীতে শুধু গরুর গোয়াল ;
. তাহাদের মাঝে তুমিও ষাঁড় |
এসেন্সের শিশি আরসী চিরুনী
গায়ে ভাল জামা মাথায় বিনুনী |
সাজিলে গুজিলে পুরে মনস্কাম,
বাহার মারিতে বড়ই আরাম |
যা আছে তাহাতে মিটে নাই আশ,
দ্বিগুনিতে রূপ সতত প্রয়াস |
চাই নানাবিধ লেটার পেপার
খাম নানা জাতি সোনালী বর্ডার |
আইভরি ফিনিশ্ তাসের জোড়াটি
চাই চক্ মকে গানের খাতাটি |---
এই সবি বেশী ; বর বেশী নয়,
গাধা বাঁদরের হয় কি প্রণয় ?
শুয়ে থাক্ পাশে নাহি আসে যায়,
ছারপোকা মশা কত বিছানায় |---
বর হতভাগা তাদেরি সামিল,
মাঝে মাঝে পিঠে পড়ে চড় কিল ;---
. লাথিটাও লাগে ঘুমের ঘোরে |
বিয়ের আগে বড়ই দুর্দ্দশা,
মিটিতে না পায় হৃদয়ের আশা |
দিদি বউদিদি ঘরে আছে যত
কত ফিশ্ ফিশ্ করে অবিরত |
সে সকল কথা শুনিতে বাসনা |
কিন্তু দিদিমণি শুনিতে দ্যায় না |
কাছে গেলে হায় দূর্ দূর্ করে,
বলে---- “ ঝাঁটা খেকি যা না তুই সরে !”
ধেড়ে ধেড়ে যত মেয়ের কথায়,
ছোট ছোট মেয়ে কল্কে না পায় |
বিয়ে হয়ে গেলে ভারিক্কেটা বাড়ে
কেহ নাহি আর দূর্ দূর্ করে |
দিদিরা তখন টেনে নেয় দলে,
ফিশ্ ফিশুনিটা ভাল রুপে ঢলে |
যতনে শিখায় ধরণ ধারণ
দু-দিনে বউমা সাবালক হন |
ইয়ার্কি না হলে পুরুষ বাঁচেনা
মেয়ে নাহি বাঁচে ফিশ্ ফিশ্ বিনা |------
. টিকে থাকে তারা তাহারি জোরে |
বিয়ের আগেতে না থাকে জঞ্জাল
ছেলে মানুষিতে কেটে যায় কাল |
বিয়ে হয়ে গেলে বাধে যত গোল ,
বউমার ন্যাজ ফুলে হয় ঢোল |
কোথা হতে এক আসে ধেড়ে বর
সেই দিন হতে ঘটে যুগান্তর
কভু হাতে ধরে কভু পায়ে পড়ে
যোড় হাতে কত “ হেঁই হেঁই” করে |
নড়িতে চড়িতে করে খোষামোদ,
বাঁদর নাচাতে বড়ই আমোদ !
কভু হাতে দড়ি কভু হাতে চাঁদ
তবু বোকা বর নাহি সাধে বাদ |
. গরজের বাড়া বালাই নাই |
কারু কারু থাকে পরামর্শদাতা
খেয়ে দেন তারা বউমার মাথা |
নানা বিধ ফন্দি তাহারা শিখায়
বর যাতে থাকে হাতের মুঠোয়
“দেখ ভাই আজ শুস্ পাশ ফিরে
পায়ে না ধরিলে নাহি যাবি সরে |”
ইত্যাদি ইত্যাদি বিবিধ প্রকার
শেখেন বউমা ঘোর অত্যাচার |
হাঁদা বর গুনো চুপ্ করে সয়
যাতে তাতে রাত কেটে গেলে হয় |
পাজী বর গুলো করে পিট্ পিট্
আগে খুঁৎ খুঁৎ শেষে খিট্ মিট্ |
অবশেষে যদি বাধে গোলমাল,
মন্ত্রী মহাশয় ছেড়ে দেন হাল |
চোখ রাঙানিতে নাহি মানে ডর
বড় ভয়ানক একগুঁয়ে বর,---
. “বোঝালেও বোঝে তাই কি ছাই |”
নেহাৎ বেহায়া হওয়া নহি যায়,
একবারে হাঁদা তাও ঠিক নয় |
আঁকা বাঁকা পথে বউমারা যায়,
ন্যাকামিতে থাকে দুদিক বজায় |
টন টনে জ্ঞান, মুখে “নাহি জানি,”
ধরি মাছ কিন্তু না ছুঁই পানি |
কোনো কোনো বর বড় লক্ষ্মীছাড়া
বউমা ঘাঁটিয়ে মজা দেখে তারা |
পেটের কথাটি যদি আনে টেনে,
জ্বলেন বউমা তেলেতে বেগুনে |
ঠাটটা করে যদি আঁতে দাও ঘা ----
ওগো সর্ব্বনাশ ! তা হলেই “যা !”
তখন বউমা একবারে বাঁকা
বর বেচারার লাগে ভ্যাবাচাকা ;
. খোষামোদ ছাড়া উপায় নাই |
“অদৃষ্টের দোষ” কথায় কথায়
মনের মতন বর মেলা দায় |
বউমার আহা বেঁচে সুখ নাই
“অতি পাপীয়সী বেঁচে আছি তাই |”
ঘন্টায় ঘন্টায় মরিতে বাসনা,
বর ঝাঁটা খেকো শুনেও শোনেনা |
মরার কথায় ভয় নাহি পায়,
রকম দেখিলে হাড় জ্বলে যায় !
মাটির ঢিপির মত হবে বর,
কথা নাহি কবে কথায় উপর |
যে দিকে ফিরাব সে দিকে ফিরিবে,
লাথি মারিলেও চরণ ধরিবে |----
এরকম বর বউমারা চায়,
পোড়া পৃথিবীতে কোথা পাবে হায় ?
বিধাতার রাজ্যে ঘোর অবিচার----
বাঁদরের গলে মুকুতার হার |----
. এদুখ রাখিতে যায়গা নাই ?
এই একদিন ; আর একদিন