কবি রাজশেখর বসু – র ছদ্মনাম “পরশুরাম”। তিনি বর্ধমান জেলার বামুনপাড়া গ্রামে তাঁর
মামাবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা চন্দ্রশেখর বসু ও মাতা লক্ষ্মীমণি দেবী। চন্দ্রশেখর বসু ছিলেন
দারভাঙ্গা রাজার ম্যানেজার। তাঁদের আদি নিবাস ছিল নদীয়া জেলার উলা গ্রামে।
দ্বারভাঙ্গায় তাঁর শৈশবকাল কাটে। তিনি ১৮৯৫ সালে দ্বারভাঙ্গা রাজস্কুল থেকে এন্ট্রাস, ১৮৯৭ সালে পাটনা
কলেজ থেকে এফ.এ পাশ করেন। এই সময়ে শ্যামাচরণ দে'র পৌত্রী মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
১৮৯৯ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বি.এ পাশ করেন
ও ১৯০০ সালে রসায়নে এম.এ (এম.এসসি. ছিল না )পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি
১৯০২ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে বি.এল পরীক্ষাও পাশ করেন।
১৯০৩ সালে রাজশেখর বসু আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত
বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস কোম্পানীতে তাঁর চাকুরী জীবন শুরু করেন। একজন
রাসায়নিক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে নিজের কর্মদক্ষতায় কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও
তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডাঃ কার্তিক বসুর প্রিয়পাত্র হয়ে যান। ১৯০৪ সালে তিনি বেঙ্গল
কেমিক্যালের পরিচালক পদে বহাল হন।
স্বাস্থ্যহানির করণে ১৯৩২ সালে তিনি অবসর নিলেও উপদেষ্টা এবং ডিরেক্টররূপে আমৃত্যু বেঙ্গল
কেমিক্যালের সাথে যুক্ত ছিলেন। নিয়মানুবর্তিতা ও সুশৃঙ্খল অভ্যাসের জন্য তাঁর জীবন-যাপন-পদ্ধতি
কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিল। ১৯০৬ সালে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হলে তিনি তাতে সক্রিয় অংশ
গ্রহণ করেছিলেন।
তাঁর সাহিত্য জীবন শুরু হয় ১৯২২ সালে পরশুরাম ছদ্মনামে ভারতবর্ষ পত্রিকায়, “বিরিঞ্চিবাবা” নামে একটি
ব্যাঙ্গপ্রবণ ও সরস গল্প প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই। মতান্তরে ১৯২২ সালে ‘পরশুরাম’ ছদ্মনামে তিনি একটি
মাসিক পত্রিকায় 'শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড' নামে ব্যঙ্গ রচনা প্রকাশ করেন।
তাঁর প্রকাশিত সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ “গড্ডালিকা” (১৯২৪), “কজ্জলী” (১৯২৭), “হনুমানের স্বপ্ন”
(১৯৩৭)। বাঙালীর অপরিহার্য অভিধান “চলন্তিকা” (১৯৩৭)। অনুবাদের মধ্যে রয়েছে “রামায়ণ” (১৯৪৬),
“মহাভারত” (১৯৪৯), “মেঘদূত” (১৯৪৩)। প্রবন্ধ সংকলনের মধ্যে রয়েছে “লঘুগুরু” (১৯৩৯), “ বিচিন্তা”
(১৯৫৫)।
ডঃ শিশিরকুমার দাশ লিখেছেন, “ . . . পরশুরামের রচনাভঙ্গির সঙ্গে সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার বা ত্রৈলোক্যনাথ
মুখোপাধ্যায়ের ব্যঙ্গ রচনার ঐক্য থাকা সম্ভব, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের পরিহাসপ্রিয়তার সঙ্গেও তাঁর
রচনার অন্তর্লীন ঐক্য আছে। কিন্তু কাহিনীবিন্যাস এবং ভাষার সংযম, সমকালের চিন্তাভাবনা এবং কর্মের
বিরোধিতার রূপায়ণ এবং সর্বোপরি শিল্পের মাত্রাবোধে পরশুরাম বাংলাসাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখকগোষ্ঠির
একজন। ভণ্ডামি, নীচতা, অন্যায়-অবিচার, নাগরিক-ন্যাকামি এবং গ্রাম্য আধুনিকতা সমস্ত কিছুর উপরই
তাঁর তীব্র কশাঘাত। অথচ জীবনের প্রতি ভালোবাসায় এবং কৌতুকবোধে তাঁর রচনা সুখপাঠ্য। বাংলা
গদ্যের পরিচ্ছন্ন, স্নিগ্ধ ও স্বচ্ছরূপ সৃষ্টিতে রাজশেখর-পরশুরাম বংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে “জগত্তারিণী” (১৯৪০) এবং “সরোজিনী” (১৯৪৫) প্রস্কারে ভূষিত করেন। ১৯৫৭
সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত করেন। ১৯৫৮ সালে ভারত সরকার তাঁকে
পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করেন। ১৯৫৫ সালে “আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প” বইটির জন্য তিনি সাহিত্য অকাদেমি
পুরস্কার লাভ করেন।
কবি হিসেবে রাজশেখর বসুকে আমরা বিশেষ দেখতে পাই না। আমরা তাঁর রচিত কবিতা ও ছড়া বিভিন্ন
পত্রিকা ও সংকলন থেকে সংগ্রহ করে এখানে তুলে দিয়েছি। এই পাতা কবি রাজশেখর-পরশুরামের প্রতি
মিলনসাগরের শ্রদ্ধার্ঘ্য। আমরা মিলনসাগরে কবি রাজশেখর বসুর কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে
পৌঁছে দিতে পারলে আমাদের এই প্রয়াস সার্থক মনে করবো।
উত্স : ডঃ শিশির কুমার দাশ, সংসদ সাহিত্য সঙ্গী ২০০৩
. উইকিপেডিয়া
কবি রাজশেখর বসুর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন।
আমাদের যোগাযোগের ঠিকানা :-
মিলনসাগর
srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ১৬.১১.২০১৩
.