কবি পিনাকেশ সরকার - জন্মগ্রহণ করেন ৭ই মার্চ ১৯৪৫ তারিখে, অবিভক্ত বাংলার রংপুর জেলা-শহরে | তিনি, পিতা অখিলেশ সরকার ও মাতা তপতী সরকারের জ্যেষ্ঠ পুত্র | কবির মাত্র চার, সাড়ে চার বছর বয়সে, দেশভাগের কারণে তাঁরা এপার বাংলায় চলে আসেন | ঠাকুরদার জমিদারী ছিল এবং তিনি ওকালতিও করতেন |
পিতা ছিলেন সেকালের একজন আদর্শবাদী কংগ্রেসী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী | জেলে বসেই ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন | এ বছরই (৯ই নভেম্বর ২০১০) তাঁর জন্ম শতবর্ষ উদযাপিত হয়েছে | কবির ছোটবেলা কাটে অতি কষ্টে | ওপারে ফেলে আসা জমিদারী আর প্রাসাদোপম অট্টালিকার বদলে এদেশে জুটেছিল সাধারণ বাসস্থান এবং পিতার স্কুল শিক্ষকের বদলীর চাকরি |
এই বদলীর চাকরির জন্য কবিকে তাঁর দাদুর (মাতামহ) কাছে রেখে পড়াবার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল | দাদু ছিলেন শিলিগুড়ির তরাই আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, যা বর্তমানের তরাই তারাপদ আদর্শ বিদ্যালয় | এরপর বাবা উত্তরপাড়ায় বাসা নিলে কবিও সেখানে চলে আসেন এবং ভর্তি হন উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠে, ক্লাস সিক্সে | ১৯৬০ সালে তিনি ঐ স্কুল থেকেই হায়ার সেকেণ্ডারি পাশ করেন | সেটাই ছিল হায়ার সেকেণ্ডারির (ক্লাস ১১) প্রথম ব্যাচ্ | এরপর কবি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হন | ১৯৬৩ সালে তিনি সেখান থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট নিয়ে স্নাতক হন | ১৯৬৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ. পাশ করেন | এবারেও তিনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হন | মাত্র ২১ বছর বয়সেই কবি স্কটিশ চার্চ কলেজেই শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন | ১৯৬৭ সালে কবি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ২০১০ সালে সেখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন |
কলেজ জীবন থেকেই লেখালেখি শুরু করেছিলেন | ইচ্ছে ছিল গল্প লেখক হবার | দু চারটে ছাপাও হয়েছিল | ঝোঁকে পড়ে কবিতা পড়তে এবং লিখতে শুরু করেন | এরপর প্রবন্ধ লিখতে লিখতে ধীরে ধীরে প্রাবন্ধিক হয়ে গেলেন | নব্বইয়ের দশকের শেষ থেকে আর কবিতা লেখা হয় নি | কিন্তু এখনও কবিতাই তাঁর প্রথম প্রেম! ডায়েরির পর ডায়েরি ভরা কবিতায়! একটিও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় নি আজ পর্যন্ত! তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এখানেই তাঁর কবিতা প্রথম প্রকাশিত হল | এর জন্য আমরা মিলনসাগরে গর্বিত!
সাহিত্যের বাইরে ভালবাসেন গান | যে কোন রকমের গান শুনতে ভালবাসেন | বিশেষ করে রবীন্দ্র সঙ্গীত, যা তাঁর চর্চা বা আলোচনার বিষয় | তাঁর গবেষণার বিষয়ও ছিল “রবীন্দ্রনাথ এবং আধুনিক বাংলা কবিতা” | রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি লেখালেখি করেছেন | ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকীর জন্য রবীন্দ্র চর্চার অনুকূল একটা ক্ষেত্র তৈরী হয়ে গিয়েছিল | এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ডঃ দেবীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত প্রভৃতির মতো শিক্ষকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন রবীন্দ্র চর্চায় |
নেশার স্তরে ভালবাসেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত! শহরের কোনো অনুষ্ঠানই উনি বাদ দেন না | দিনের পর দিন রাত জেগে অনুষ্ঠান শুনে আবার সারাদিন কলেজে ক্লাস নিতেও তাঁর আপত্তি নেই! ভালবাসেন ছবি- ভাস্কর্যের প্রদর্শনীও |
কবি বলেছেন যে তিনি মূলত লিটল্ ম্যাগাজিনেই লেখেন | অনুষ্টুপ, এবং মুশায়রা, কোরক, পরিকথা প্রভৃতি পত্রিকাগুলো সিরিয়াস প্রবন্ধ ছাপে | কবিতার পত্রিকাও আছে -কৃত্তিবাস আবার বেরোচ্ছে, বৃষ্টিদিন প্রভৃতি | সাহিত্য যদি কিছু হয় তো তা লিটল্ ম্যাগাজিনেই হচ্ছে | এটা বাংলার গর্ব | পৃথিবীতে এত লিটল্ ম্যাগাজিন আর কোথাও বার করা হয় না | এটা আর কোনো ভাষায় নেই | ইংরেজীতেও নেই | অনেক নতুন লেখক- কবি এখান থেকে উঠে আসেন | তাঁর ধারণা যে ব্যবসায়িক পত্রিকার লেখকদের পাশাপাশি এঁদেরও একটা স্থান আছে এবং থাকবে | লিটল্ ম্যাগাজিন আজ বাংলা সাহিত্যের একটি যথেষ্ট জোরালো জায়গা |
ছাত্র ও শিক্ষকতার জীবনে বহু বিশিষ্ট মানুষের সান্নিধ্যে এসেছেন | তাঁরা কেউ তাঁর মাস্টার মশাই, কেউ সহকর্মী, কেউ বা বন্ধু | কবি বুদ্ধদেব বসু ছিলেন তাঁর বিশেষ বন্ধু ও সহকর্মী শুদ্ধশীল বসুর বাবা | সেই সূত্রে তাঁদের বাড়ীতে যাতায়াত ছিল | জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, এঁদের তিনি পান নি | কিন্তু বিষ্ণু দের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, বাড়িতেও গিয়েছেন | অমিয় চক্রবর্তী যখন আমেরিকা থেকে আসতেন তখন আলাপ হয়েছে | কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, এদের সঙ্গেও আলাপ পরিচয় ছিল | কবি শঙ্খ ঘোষ ছিলেন যাদবপুরে তাঁর সহ কর্মী এবং অতি কাছের শ্রদ্ধেয় মানুষ | তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্র না হলেও গল্পে, আড্ডায় নানা সময়ে, নানা বিষয়ে অনেক কিছু শিখেছেন | এঁদের সান্নিধ্য তাঁর কাছে বিরাট প্রাপ্তি |
আমরা আনন্দিত এই জন্য যে তিনি আমাদের সাইটে, তাঁর কিছু স্বনির্বাচিত কবিতা তোলার অনুমতি দিয়েছেন। পুরনো পত্রিকা ঘাঁটতে ঘাঁটতে আমরা, দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তরুণ সান্যাল, সম্পাদিত “পরিচয়” পত্রিকার ডিসেম্বর ১৯৬৯ সংখ্যায় প্রকাশিততাঁর "ওকে তোরা" কবিতাটি পেয়ে এখানে তুলে দিয়েছি, ০৩.০৭.২০১৭ তারিখে।
কবির সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা - আনন্দম এপার্টমেন্টস, ফ্ল্যাট নং ৫, ১এ কালীবাড়ী লেন, কলকাতা ৭০০০৩২ দূরভাষ - +৯১৩৩২৪১২১১৩০
উত্স: ১৩ই নভেম্বর ২০১০ তারিখে, কবি পিনাকেশ সরকারের সাথে তাঁর বাসভবনে নেওয়া একটি সাক্ষাত্কার | মিলনসাগরের পক্ষে সাক্ষাত্কারটি নিয়েছিলেন মিলন সেনগুপ্ত |