কবি পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানীর কবিতা
হাজার বছরের চোখের জল
কবি পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী

হাজার বছর ধরে, লিখেছে সে প্রেমের কবিতা,
প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্র সৈকতে।
যেখান থেকে শ্বেতকায় পরিযায়ী পাখিরা,
উড়ে আসে নামহীন প্রান্তরের অতিন ঠিকানায়।
যেখানে বিবর্ণ মুহূর্তেরা ছায়া ফেলে,
জল চুঁইচুঁই মাটির সোঁদা গন্ধে।
মেঘ ঝুমঝুম রূপকথা ,
ঝরে পড়ে “সিগ্যাল” পাখির নরম পালকে।
তুমি হয়তো আজও পড়ে দেখনি,
তার চোখের জলের ইতিহাস।
যা কালবৈশাখী ঝড় হয়ে প্রতিবার,
মুছে দিয়ে যায়, ঝরা পাতার শেষ চিহ্নটুকু।

[ প্রথম প্রকাশ - একা ও কয়েকজন, ১৪২১ বঙ্গাব্দ ]

.       
      ****************  
.                                                                                
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
নৈরঞ্জনা
কবি পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী


নৈরঞ্জনা তুমি গল্প শোনাও ,
সূর্যোদয়ের সেই প্রত্যুষের।
চেতনার ঢেউ আছড়ে পড়ুক,
ধূলোময় কাঁচের ঠুনকো দেয়ালে।
নৈরঞ্জনা ! তোমার কুলু-কুলু শব্দে,
হারিয়ে যাই, উরুবিল্বের পরিচয়হীন প্রান্তরে,
চেখে নেই সুজাতার পায়েস।
নৈরঞ্জনা , তোমার শ্রান্তবুকে;
ঢেউ জাগাক আবার, পূর্ণিমার চাঁদ।
তন্দ্রাচ্ছন্ন প্রহর, লুম্বিনির চোখে চোখ রেখে।।
নৈরঞ্জনা, তুমি কবিতা লিখ,
গোপার অশ্রুবিন্দুর শিশিরে।
বিষাদসিক্ত অক্ষরেরা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতরো হয়ে উঠুক,
তিতিক্ষার স্নিগ্ধ উজ্জ্বলতায়।
নৈরঞ্জনা , তোমার কূলে-কূলে লালিত হোক,
শাক্যতরুণ সিদ্ধার্থের স্বপ্ন।
নিষ্কাম বুদ্ধের মৈত্রীর মন্ত্র,
ছড়িয়ে পড়ুক শতচ্ছিন্ন প্রাণে।
নৈরঞ্জনা , ভেঙে ফেলো এবার মোহের প্রাচীর,
দৃষ্টিপথ ভেদ করে , মুক্তির ঘুড়ি উড়ে চলুক,
ব্রহ্মাণ্ডের শিরায় শিরায়।
নৈরঞ্জনা , মিলে মিশে যাও,
গঙ্গা-পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র , বরাকের কালো জলে।
ব্যক্ত হোক আবার সেই সর্বত্যাগীর স্নিগ্ধ স্বরূপ,
মানবতা সঞ্জীবনীর আবাহনে।

[ প্রথম প্রকাশ - রবিবারের বৈঠক, দৈনিক যুগশঙ্খ, ১১ মে ২০১৪ ]

.             ****************  
.                                                                                
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
একটি প্রেমের কবিতা
কবি পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী

নামহীন কোনো এক বাউল ,
সেই কবে ,শুষ্ক মাটির বুকে এঁকে দিয়ে গেছে;
চোখের জলের আল্পনা!
ঠিক সেখানে,যেখানে আলোছায়া মাখামাখি;
দেখা হয়েছিল কালকেতু ফুল্লরার।
যেখানে খুল্লনা নিবু-নিবু তেলের কুপি হাতে,
পরম মমতায় খুঁজেছিল বহুকাল ধরে, ছাগ শিশুটিকে।
গোধূলি বেলার শেষ প্রান্তে যখন,
কালো হয়ে আসে জলবহরের ছায়া,
কালিদাসের শিপ্রাকে ছাপিয়ে যায়,
বেহুলার গণ্ডকী ।
সেই অবেলায় বিদ্যা –সুন্দর পাড়ি দেয়,
জ্যোৎস্না মাখা লাল পাহাড়ের দেশে।
যেখানে নীরস পাথরের বুক ভেদ করে,
ঝমঝম ঝরনা রুকনি- টুকনি,
ভেলা ভাসায় সিধু কানুর নামে।
ঘুম-ঘুম রাতের স্বপ্ন ঘিরে, মন কেমন করা;
কুলুকুলু রূপসা, রজকিনী।
রাধার বুক চেরা ভালবাসা,
নিমাইয়ের প্রানের দোতারায় ।

[ প্রথম প্রকাশ - বন্ধু, ৯ অক্টোবর ২০১৩ ]

.           ****************  
.                                                                                
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
মন জংশন
কবি পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী

(১)
বৃষ্টি শেষের রোদের মতো,
ঈদোষ্ণ চিঠি,  
কপাট খোলা ডাকবাক্সের আসরে।
মেঘ পিয়ন , সাদা ঝুলি কাঁধে এদিক ওদিক ,  
মন জংশন ঘড়ি দেখে যায়।  

(২)
বারো বারো উদাস দুপুর,   
আধ খোলা লাঞ্চ বক্স সময়।  
মনের জানালায় চা চা খুশী ,  
ঝালমুড়ি ভালোবাসা আলতো করে উঁকি দেয়,
মন জংশন হাত বাড়ায়।  

(৩)
ঘুম ঘুম রোদ , মেঘের বালিশে,
এলিয়ে পড়া টানেলের ভাঁজে।
পড়ন্ত আলো ছবি এঁকে চলে,
মন জংশন মোনালিসা , হাসির ঝরনাধারায়।

(৪)
চাঁদ গন্ধ চাদর,
জোনাকি মাখা রেলপথ জুড়ে।
বনলতা সেন, তোমার বোন শিউলির জন্মদিন,
উৎসবের প্রস্তুতি  জোরকদমে।
মন জংশন কুয়াশার কলম হাতে,
ব্যস্ত নিমন্ত্রনের খাতায়।
[প্রকাশঃ কাব্যগ্রন্থঃ মন জংশন; ২৫ শে ডিসেম্বর,২০১৩]

.           ****************  
.                                                                                
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
স্বপ্ন
কবি পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী

যদি, তুই-আমি দুবোন ,
হতে পারতাম দুটো জোনাকি!
আঁধার রাতে এক মুঠো আলো ছড়িয়ে দিতাম,
ওল বনের শেষ সীমানায়।
অথবা হতে পারতাম দুটো পাখী,
উড়ে যেতাম সুদুরের টানে।
আমি যখন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়তাম ,
তুই খুঁজে বের করে নিতিস কড়া শাসনে ।
আমার ছোট্ট পাখায় রোদ লেগে যায় পাছে,
সেই ভয়ে ত্রস্ত তুই , বেঁধে নিতিস আমায়,
তোর পালকের  স্নিগ্ধ ছায়ায়।
মধু লোভী আমরা দুবোন ,
যদি হতে পারতাম , দুটো মৌমাছি।
ফুলে-ফুলে গুন গুনিয়ে কেটে যেত দিন।
ভালোবাসার গানে তুই ভরিয়ে দিতিস আকাশ বাতাস,
ঠিক শৈশবের মতন, আমার গলায় স্পষ্ট হতো তোরই গানের সুর।
পাগলপারা হয়ে যদি  বয়ে যেতে পারতাম,
হতে পারতাম কাল বৈশাখী ঝড়!
উড়িয়ে নিতাম পুরাতনের আবর্জনা।
পৃথিবীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেজে উঠত,
নবীনের শঙ্খধ্বনি ।
তখন ও তুই ধরে রাখতিস আমার হাত,
বলতিস, দূরে যাসনে ওরে দস্যি মেয়ে।
চিরচঞ্চল আমরা দু বোন, যদি হতে পারতাম বৃষ্টি ,
ঝমঝমিয়ে নেচে উঠতাম টিনের ছাদে।
শেষে দুটো ধারার মতো মিলে মিশে বয়ে যেতাম,
মরুভুমির বুক চিরে, সবুজের বন্দনাগানে।
যদি  শিশির কনা হয়ে সেজে উঠতে পারতাম,
শরতের উজল ভোরে।
রাত জাগা শুকতারার স্বপ্ন হয়ে,
ছড়িয়ে পড়তাম দুজনে বাধাহীন কাশের বনে,
অকারণ উচ্ছাসে।
শিউলির বুকে লিখে ফেলতাম আগমনী গান,
মহাশক্তির আহ্বানে
 

[ প্রথম প্রকাশ - তিলত্তমাবাংলা, ২০১৩ ]

.           ****************  
.                                                                                
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
আমার বিশ্ব একমুঠো ভাত
কবি পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী

কুয়াশা ঘেরা ভোর, কুয়াশা ঘেরা মন, কুয়াশা ঘেরা স্বপ্নেরা;
সব কিছু আবছা বহুদূর,  জড়তার প্রকাশ ।
শীতের তিব্রতা ছুঁয়ে গেছে বুঝি অজ্ঞাতসারে  ,
তাইতো রক্ত  জমে হিম প্রতিটি  নাড়ীতে নাড়ীতে।
নিস্তরঙ্গ , নির্বিকার , অপারগ প্রতিবাদে,
বড়ই আত্মকেন্দ্রিক , নিঃস্ব , পুতুলের প্রায়।  
পথ ভুলা পথিক না পথিক হারানো পথ এটাই বড় প্রশ্ন!!
সূর্য গ্রহনের কালিমায়, সূর্যমুখী মূক, ভাষাহীন ।
নবান্নের ধান লুকোচুরি খেলে গুদামের আঁধার গুহায়,
রুক্ষ দুপুর, ক্লান্ত বিকেল, অভুক্ত রাত;
হে মাটি মা, আমার বিশ্ব একমুঠো ভাত॥

[ প্রথম প্রকাশ - প্রতীতি (মুখপত্রঃবঙ্গ সাহিত্য পরিসদ, তিনসুকিয়া, আসাম ;
১৪৩২ বাংলা ( সংখ্যা ৩২, পৃষ্ঠা ৩৪) ]

.           ****************  
.                                                                                
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*