তোমার ঘুমন্ত মুখ দেখে ভোরের আলো চুপচাপ ফিরে যায় যেন নূপুরের শব্দ ঘুম ভেঙে উঠে বসি আমি তোমার ঘুমন্ত মুখ দেখে পাহাড়ি শহর মনে পড়ে ঘোরানো রাস্তা আর হঠাৎ হাওয়ার শিহরণ ভোরের স্বপ্নে এসো একসঙ্গে দু’জনেই দেখি শিকড়গুলোকে সব ছুঁয়ে দিচ্ছে নিঃঝুম ভোর তারপর উঁকি মেরে আমাদের ঘরে . . . তোমার ঘুমন্ত মুখে মেঘ, ঝরণা, পাহাড়, শৈত্য পেয়েছে সে আমারই মতন
ক্ষমাঘেন্না করে দাও। অসময়ে এসে দাঁড়িয়েছি কথা যে ছিল না জানি। সারা গায়ে রোদের প্রলেপ দূরের দুপুরে এসে দাঁড়িয়েছি, বন্ধ দরজায় এসব দরজায় নেই সূতিতীক্ষ্ণ বীর কলিংবেল। ব্যারেথ কড়া নাড়া আছে। আছে প্রকীক্ষার সাদা পাতা।
তবু তো তুমিও আছ। দরজার ওপারে অভিমানে উত্কর্ণ, গালে ভরা বিরহবিধুর নীল দাড়ি কালো পক্ষ্ম, কটা চোখ, আর্দ্র তবু পুরুষসুলভ ভাবছ, তোমার কথা এর আগে পড়েনি কি মনে ?
পড়েছে, পড়েছে ঠিকই। দুপুর যখন হারিয়েছে অনন্ত নির্জন এক রাস্তা ধরে, বালিকার মতো দামাল ছেলের মতো ফুটবল-বিকেল ঝাঁপিয়েছে সবুজ ঘাসের স্বপ্নে। কিংবা সেই যুথিকালতায় যেখানে তোমার চোখ প্রথম স্পষ্ট দেখি আমি
আমার যান্ত্রিক স্কীনে বিদেশী দুর্গের রম্য ছবি আমার টেবিল জুড়ে অন্যের স্বপ্নের পাহাড় তবু তুমি বার বার ফিরেছ সুড়ঙ্গপথ ধরে . . . সেই পথে আজও নামো। খোলো এই নীরব দরজা। একবার হাত রাখি চেনা সে পুরুষ ওষ্ঠাধরে তর্জনি ঠেকুক আজ, আদম না--- হব্বার দু’হাতে।
শিলাইদহের মেঘ কখনও কখনও আসে . বেড়াতে এখানে ব্রিগেড মাঠের পাশে, ছাতিম গাছের ডালে . একা জবুথবু বেলাই ট্র্যাফিকের বেড়াজালে চাপা পড়া . শহরের বুকে বাদুড়ের মতো মেঘ ঝুলে থাকে। তার মনে . পড়ে যায় নদী---
চোখে চোখ পড়ে গেলে তাকে বলি, যাও মেঘ, . তাঁকে গিয়ে বলো আকাশ দুধের সর, বাতাস চোখের বালি . পাতাল রেলের কোনও কোনও স্টেশনের দেয়ালে দেয়ালে তিনি . ঝুলে রয়েছেন লালমাটি, ঘোলাজল, আগুনে আগুন আরও . হয়েছে খোয়াই
মাথার ওপর ওড়ে অলিখিত কাভার-ড্রাইভ চোখের পাতায় ভাসে বাউন্ডারি-ছোঁয়া স্বাধীনতা দুটি ছেলে ছুঁয়ে দেখে কচি ঘাস কতটা শচিন মায়েরা উত্সুক মুখে ক্রমাগত সাদা হয়ে আসা ছেলেদেল নিয়ে রঙচঙে স্বপ্ন দ্যাখে মনে মনে---
ওর ছেলে বাঁ-হাতি, সে ততটা সৌরভ হয়েছে কি ? জাদু-ভরা কাঠ দিয়ে ছবি আঁকে বাতাসে কতটা ? আমার ছেলেটি আর কতদূর জাদেজার থেকে ? পুল মারা শিখে গেলে বিকেলে চাউমিন কিনে দেব অনীকের মতো হবি, কাল ম্যাচে পঞ্চাশ করেছে
বিদ্যুৎ ছোঁয়ার চেষ্টা মাঠে মাঠে মৃদু ছেলেগুলো স্কুলে পড়ার ফাঁকে সহসাই টি.ভি. হয়ে ওঠে তাদের দু’চোখ। তাতে ভেসে থাকে খোলা স্কোরবোর্ড অথবা নদীর ধার---ওড়াওড়ি মাছরাঙাদের বলের পেছনে যেন রকেটের মতো জন্টি রোডস্ . . .
আবার সকাল আসে, আবার দেশপ্রিয় পার্ক মাছরাঙাদের নিয়ে একাকী ভোরের ট্রাম চলে
টি.ভি. তে তাই দেখেছিলাম আলোর মতো ছড়িয়ে যায় রং গল্প শুনে কাটছে বেলা, নয়া চ্যানের হিন্দী সিরিয়াল নায়িকা দাঁতে ঠোঁট চাপছে, নয়ক পরে থ্রী-পিস স্যুট, টাই সাজানো ঘর, এ.সি., অফিস, বিক্রি আছে মহিলা স্বাধীনতা অন্য ঘরে রান্না শিখে স্বামীকে দিন বউমাকে হারান শুনে রাখুন গ্রাম কে গ্রাম জ্বলে যাচ্ছে এলাকার দখল জল জমছে নিকাশি নেই --- দেখে রাখুন সিংহের শিকার টি.ভি. তোমরা চোখের মণি. টিভিতে ওড়ে দুনিয়াময় ছাই প্রেম করলে ওদের বলো--- জানিয়ে দেবে তোমার মনে আছে কেমন কথা, কোন গানের ভাষায় বলা সবার চেয়ে ভাল
টিভির দেশে ঘাসের বনে রোদ পড়লে শহর বৃষ্টিতে ভাসতে থাকে---সবাই একা হারিয়ে যাই জানালা দিয়ে ছাতে লাল ঘুড়ি বা গলির ক্রিকেট সব ছাড়িয়ে অস্থিতে মজ্জায় শহুরে রোদ কিংবা জলে আলোর মতো ছিটকে যায় টি.ভি.