কবি পৌষালী সেনগুপ্ত-র কবিতা
*
বিদিশার নিশা পাবেনা আমার চুলে
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

বিদিশার নিশা পাবেনা আমার চুলে
মুখ সৌষ্ঠবে নেই কোনো কারুকাজ
ভুরুর ধনুকে রহস্য নেই কোনো
কটি দেশে নেই ইলোরা জনিত খাঁজ  |

সাধারণতম সাধারণীদের ভীড়ে
ভালোবাসো যদি ভালোবাসা দিতে পারি,
সাধারণ এই অবয়ব চিরে দেখো
ভেতরে রয়েছে চিরায়ত সেই নারী  |

.         *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আমিই তোমার সেই মেয়েটা
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

আমিই তোমার সেই মেয়েটা
.            স্বপ্নে দেখো যাকে,
বৃষ্টি নেবে হাতের পাতায়  ?
.         আমার চোখে থাকে |
আমি থাকি ? অনেক দূরে, বৌ কথা কও গ্রামে ;
সেই যেখানে আমায় ছুঁয়ে সন্ধ্যেবেলা নামে |
ঠিকানা চাই  ?  দূর আকাশে একলা জাগা তারা
ওই তারাটার আলোর রেখায় ছোট্ট আমার পাড়া  |
দেখবে ছাতে হাওয়ায় ওড়ে মেঘলা রঙের শাড়ী,
আয়না নদীর বাঁকের মুখে ছায়ায় ঘেরা বাড়ী |
আসবে তুমি ? দাঁড়িয়ে আছি
.           তোমার পথ চেয়ে
সেই যে তোমার স্বপ্নে দেখা
.           বৃষ্টি মাখা মেয়ে ||

.         *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ওলটপালোট একমাথা চুল
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

ওলটপালোট একমাথা চুল                         
স্বপ্নালু চোখ চশমা ঢাকা,
হাল্কা দাড়ি রুক্ষ গালে
ভীড়ের মাঝে ওই যে একা
ওই ছেলেটা যাচ্ছে হেঁটে
কপট রাগের মুখোশ এঁটে
কয়না কথা মুঠোর ফোনে
ঝড়ের গান ও একলা শোনে,
ওই ছেলেটা ফেরালে মুখ
গোমড়া মুখে ফুটলে হাসি
কানের কাছে মুখ নিয়ে তার
বলবো------
.        “ তোকেই ভালোবাসি”

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বৃষ্টি ভেজা স্যাঁতসেঁতে দিন
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

বৃষ্টি ভেজা স্যাঁতসেঁতে দিন
মেঘলা রঙা ঢাকাই শাড়ী ,
আকাশভরা সোহাগ জলে
হাতের পাতায় নকশাবাড়ী,
সেদিন হলো প্রথম দেখা
তোমার ছাতায় একলা আমি,
শাড়ীর ভাঁজে লুকিয়ে আছে
আজো তোমার সে পাগলামি----

.                   ভেবেছিলাম চুরি করে
.                              দেখবো তোমায়
.                   বাদ সাধলো বেহায়া ওই
.                             পায়ের নুপূর,
.                   রুনুঝুনু শব্দে তোমার
.                             ঘুমটি ভাঙায়
.                   ধরা দিলাম তোমার হাতে
.                            নিঝুম দুপুর |

গাছের বরাত খোলে
.        ফুলের শোভায়,
ফুলের বরাত খোলে
.        আমার খোঁপায়,
খোঁপার বরাত খোলে
.        গভীর রাতে
আলগোছে ভেঙে পড়ে
.        তোমার হাতে -----

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সকাল থেকে জাঁকিয়ে বসা মনখারাপ
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

সকাল থেকে জাঁকিয়ে বসা মনখারাপ
চায়ের কাপে জুড়িয়ে যাওয়া নিরুত্তাপ,
আপনি নাকি আবার ফিরে এই শহরে
অল্পদিনের ব্যস্তসূচীর অফিস টুরে |

ঠোঁটের ফাঁকে আলতো ধরা আগুন শলা
শ্রোতার চোখে চোখ ডুবিয়ে গল্প বলা
মাঝে মাঝেই হাতের শাসন রুক্ষ চুলে
কাছে থেকেও হারিয়ে যাওয়া মনের ভুলে---

এখনো কি তেমন আছেন ছন্নছাড়া  ?
এখনো কি বসন্তদিন ? কৃষ্ণচূড়া  ?
এখনো কি রাত্রি ছুঁয়ে স্বপ্ন আসে ?
এখনো কি ভিজতে পারেন বৃষ্টি মাসে ?

নাকি এখন ব্যস্ত মা
নুষ কাজের ভারে ?
দু একখানা চুল রুপোলী রগের ধারে,
পাগল করা চোখ দুটো কি চশমা ঢাকা ?
রঙ তুলি কি হারিয়ে গেছে ?  বন্ধ আঁকা ?

মনে আছে দিনগুলো সেই ছাতিম ফুলের
যখন তখন মেঘ ঘনাতো আমার চুলে,
সেই যে প্রথম বৃষ্টি ফোঁটা শরীর ছুঁয়ে
সেই যে প্রথম সোহাগ চেনা লজ্জা ধুয়ে  |
তারপরে তো হারিয়ে গেল সেই চেনা মুখ
এখন আমার সন্ধ্যে একা, বিষাদ অসুখ |
ঘুম না আসা রাত্রি জুড়ে ভাবনাগুলো,
ঘুমের বড়ি, অবসাদের জমাট ধূলো |

হাসি মুখেই ছেড়েছি সব দাবী দাওয়া
আজকে শুধু একটুখানি অতীত চাওয়া |
আপনি যখন আবার ফিরে এই শহরে,
আসবেন না, একটা বিকেল আমার ঘরে ?

.          *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
দুবেলা নিত্যপুড়ে, সময়ের পংক্তি জুড়ে
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

দুবেলা নিত্যপুড়ে, সময়ের পংক্তি জুড়ে
.                      লিখেছি ব্যর্থ কেতাব,
তুমিও চালাক ছেলে, আমাকে একলা ফেলে
.                      নিচ্ছ কবির খেতাব |
আমিও সঙ্গোপনে, উদাসীন ঘরের কোনে
.                      আঙ্গুলে কান্না ফোঁটা,
বিষাদের সংজ্ঞা বোঝো ? এখনো শান্তি খোঁজো  ?
.                      কেন এই মিথ্যে ছোটা ?
নিষেধের গন্ডী কেটে, নিজেকে রাখছি এঁটে
.                      তুমি কি চিনতে আমায় ?
সেই যে প্রথম হোলী,  তুমিও কৌতুহলী
.                      চেনা দাগ বাতিল জামায়
বেওয়ারিশ ইচ্ছে গুলো আজ মুখ ফিরিয়ে শুলো
.                      ছেঁড়া চাঁদ চালের ফাঁকে
হাতে পাঁচ রইলো বাকী, নিজেকেই দিচ্ছো ফাঁকি
.                      আয়নারও গল্প থাকে |

.              *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
একলা ঘরে দুঃখ কিছু শুন্যে মাথা কুটছে
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

একলা ঘরে দুঃখ কিছু শুন্যে মাথা কুটছে
শরীর ছেড়ে ইচ্ছে গুলো তোর শরীরে ছুটছে,
দুগাল বেয়ে বুকের খাঁজে জল জমেছে তিস্তার
ডুব দিয়ে দেখ, নোনতা জলে খরস্রোতার বিস্তার
জানলা বেয়ে চাঁদের আলো, রাতপোশাকে লজ্জা
প্রবল খিদে আছড়ে পড়ে মাঝবয়সী মজ্জায় |
লাভার মতো লালার স্রোতে জিভে আকুল তেষ্টা
বালিশ জানে সব না পাওয়া সামাল দেবার চেষ্টা,
অনেকটা তার তুই ও জানিস, কাগজ কালির কাব্য
মৃত্যু ছুঁয়ে আর কতোকাল বাঁচার কথা ভাববো---

.              *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রক্ত জমে জল হয়েছে
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

রক্ত জমে জল হয়েছে
জিভ শুকোনো তেষ্টা,
মরার আগে খড়কুটোকে
আঁকড়ে ধরার চেষ্টা
চেষ্টারা সব বৃষ্টিদিনে
ধূসর কিম্বা নীলচে
রাত্রি যেন দিনের আলো
আস্তে আস্তে গিলছে |
গিলতে গিয়ে বিষম লাগে
জমিয়ে রাখা কষ্ট
দুঃখবিলাস একলা ঘরে
মিথ্যে সময় নষ্ট |
নষ্ট সময় মনখারাপে
বুক ছুঁয়েছে বর্ষা
শিরায় শিরায় জং ধরেছে
তোমার আদর ভরসা |
ভরসা ছুঁয়ে বৃষ্টি এলো
ভেজার সময় অল্প
আজকে যেটা সত্যি কথা
কালকে সেটাই গল্প |

.   *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
খোলাচুল উড়ছে হাওয়ায়, সন্ধ্যে নামে
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

খোলাচুল উড়ছে হাওয়ায়, সন্ধ্যে নামে
বালিশে গল্প লেখে একটা ছেলে
এখনো আঙ্গুল ছোঁয়া অবৈধতা
গল্পটা বদলে যেতো তোমায় পেলে  |

সিলিং-এ মেঘ জমেছে বৃষ্টি এলো
সময়ের চৌকাঠে সে থমকে থামে
বলোতো, আমার থেকেও সুন্দরী কে
আয়না ডাকলো আমায় অন্য নামে |

তবে কি স্বপ্নে শুধুই মেঘবালিকা
কাজলে পাখীর বুকে নরম চাওয়া
সমাধান সূত্র খুঁজে সরলরেখায়
বেশী
না, কয়েক দশক পিছিয়ে যাওয়া |

এখনো রাত্রি জুড়ে গল্প লেখা
এখনো শরীর ছুঁয়ে তুফান ওঠে
এখনো গুঢ় ক্ষতে স্মৃতির বিষে
হাজারো রক্ত গোলাপ আপনি ফোটে |

এবারে গল্প না,  হোক সত্যি কথা
বালিশের বিষাদ চেনে কাপাস তুলো
যুবতী বর্ষা চেনে মাটির আদর
আমিও তোমায় চিনি, বাতিল ধূলো |

.        *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
এভাবে চুল বাঁধবো ? নাকি অন্য ভাবে বাঁধি ?
কবি পৌষালী সেনগুপ্ত

এভাবে চুল বাঁধবো ? নাকি অন্য ভাবে বাঁধি ?
এই রঙটা বড্ড ফিকে, অন্যটা আহ্লাদী  |
কোন রঙটা মানায় আমায় ? হলুদ, না, না, সবুজ
আয়না থাকে চুপ করে, সেই লোকটা ভারী অবুঝ,
একটু দেরী সইবেনা তার,  ঘড়ির দিকে চোখ
সাজবো তবু ইচ্ছে সুখে,  যা হবে তাই হোক |
রাগ করবে ?  করুক গিয়ে, ও রাগ আমি চিনি,
তার অনুযোগ  তার অভিমান আদর দিয়ে কিনি |
চুলটা তবে খোলাই থাকুক , নিরাভরণ হাত
ছোট্ট টিপে সাজিয়ে নেবো লক্ষ তারার রাত,
চুলের আড়ে একটু উঁকি টেরাকোটার দুল,
ঢাকাই শাড়ীর জমিন জুড়ে সোহাগ কুচি ফুল |
ঠোঁটের রঙে হালকা আভা, যুদ্ধ নাকি সন্ধি ?
কাজল রেখায় সন্ধ্যে এঁকে কোরবো তাকে বন্দী |


তারপর-------

তারপর সেই একটি নিমেষ নৌকো এবং নদী
ইচ্ছে শুধু নিমেষ টুকু অনন্ত হয় যদি |

.               *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর