কবি প্রবীর জানার কবিতা ও ছড়া
*
নারী যেন পায় সম্মান
কবি প্রবীর জানা

পুরুষ এবং প্রকৃতি তা
সৃষ্টি রকমারি,
অর্ধেক হলেন পুরুষ এবং
অর্ধেক হলেন নারী!
নারী জিনি জন্মদাতা
নারী মাতৃমূর্তি,
ধর্ষিতা হন তবু তাঁরা
একেই বলে স্ফূর্তি!
শ্রদ্ধা করি নারীকে তাই
করি দেবীর পূজা,
নারী হলেন দূর্গা এবং
তিনি দশভূজা!
দূর্গা যদি ওঠেন জেগে
করবে কি থখন অসুর,
দেবেন গুঁড়িয়ে আছেন যত
কালো থাবা পশুর!
চাই ধ্বংস পশুগুলোর
মানবতার বাণীর
স্পর্শে নারী পায় সম্মান
সমাজে যেন “রাণির”!

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ওরা ছুটছে
কবি প্রবীর জানা

ছিপ ছিপ ফেলে পা
চারখানা দাঁড়,
খান খান কাঁপে ঢেউ
নদী তোলপাড় ---
ওরা ছুটছে ওরা ছুটছে!

দাঁড় সাথে পাল্লা
দিচ্ছে নায়ে,
যায় সরে ঝোপঝাপ
ডাইনে ও বাঁয়ে ---
ওরা ছুটছে ওরা ছুটছে!

দাঁড় ছুটে নায় ছুটে
হারবে না কেউ,
নদী ছুটে মাথা তুলে
দেখছে ঢেউ ---
ওরা ছুটছে ওরা ছুটছে!

নায় দাঁড় গঞ্জে
থামে বার বার,
নদী ছুটে ভয় তার
শুধু হারাবার ---
তাই ছুটছে তাই ছুটছে!

নায় বলে দাঁড়কে
কেঁদে খুব রাগে,
জিততাম ছুটলে
হারবার আগে ---
বুকে ব্যথা ফুটছে,
নদী হেসে ছুটছে ছুটছে!

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সুন্দরী কলকাতা
কবি প্রবীর জানা

নাক উঁচিয়ে ছাড়ছে ধোঁয়া চিমনি হাজার দস্যি,
হাঁচির চোটে কাঁপছে শহর নিচ্ছে নাকে নস্যি
.        সুন্দরী এই কোলকাতায়,
.        মায়ের আসন কোলকাতায়!!

ছলাৎ ছলাৎ বইছে পানি লোক সমাগম পথে,
গামলা চেপে কেউ চলেছে রিক্সাগাড়ির রথে
.        ভিজছে মাথায় নাই ছাতা,
.        সুন্দরী এই কোলকাতা!!

কেউ পড়েছে কোটপ্যান্ট বা লুঙ্গি ধূতি গামছা,
সব ধর্মের স্রোত মিলনের কলকাতার এই নামচা
.        ইতিহাস বলে খোল খাতা,
.        সুন্দরী এই কোলকাতা!!

শূন্যে মাথা ফ্ল্যাটবাড়ী ওই ইটের বিশাল জিরাফ,
খাচ্ছে সবুজ মাঠ-ঘাট সব মন টা ওদের কি রাফ
.        পাশে বাড়ী গোলপাতার,
.        এই তো ছবি কোলকাতার!!

ট্রেন চলেছে মাটির নীচে স্বপ্ন-রঙিন ফানুষ,
বাস ছুটছে মাটির ওপর বাদুড় ঝুলা মানুষ।
.        তবু আমার কোলকাতা
.        মায়ের স্নেহ কোলদাতা!!

রাত্রি গভীর ঢং ঢং ঢং বাজছে দেয়াল ঘড়ি,
দেয় পাহাড়া শহরটাকে ভিক্টোরিয়া পরী
.        আকাশছোঁয়া মনুমেন্ট্র মাথা,
.        সুন্দরী এই কোলকাতা!!

চোখ ঢুলু স্ট্রীট লাইটের পথের মোড়ে সার্জেন্ট,
ছুটছে গাড়ী ফায়ার ব্রিগেড বাজছে হর্ন আর্জেন্ট
.        কেউ বা জোরে দিচ্ছে হাঁটা,
.        সুন্দরী এই কোলকাতা!!

পথের মাঝে ঘুমায় শিশু আকাশ ভরা তারায়,
কেউ রাখে না ওদের খবর পথেই ওরা হারায়
.        নাই পড়াশোনা বই-খাতা,
.        সুন্দরী এই কোলকাতা!!

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ক্যাঙারু ঠ্যাঙাড়ু
কবি প্রবীর জানা

বলল হেসে গরিলা
শোন্ বলি ভাই ক্যাঙারু,
ল্যাংড়া পায়ে ল্যাংচে হাঁটিস
তুই বুঝি কি ল্যাঙারু!
হাসল এবার ক্যাঙারু
জানিস কি তুই গরিলা,
কেমন করে তিনশ হাতি
সেবার শীতে মরিলা ?
খ্যংরা কাঠি পা দেখে তুই
ভ্যাংচে বলিস খ্যাঙারু,
ক্রুদ্ধ হলে যুদ্ধ করি
আমরা তখন ঠ্যাঙাড়ু!
নাম রেখেছে গিনেস বুকে
তিনশ হাতি কিক্ করি তাই,
গরিলা বলে সেদিন থেকে
ল্যাংড়া যে তোর ওই দুটো পা-ই!

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বৃষ্টি বৃষ্টি
কবি প্রবীর জানা

বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টি পড়ে
মামার বাড়ি কাজলগড়ে
সাত সমুদ্দুর আকাশ পারে
তাল সুপারি বাঁশের ঝাড়ে

বৃষ্টি ঝরে বৃষ্টি ঝরে
শালুক ফুলে ঘাসের পরে
ঝড়ের তালে মুক্তো দোলে
বাদুড় ঝোলা মেঘের কোলে

বৃষ্টি নামে বৃষ্টি নামে
আলতো রোদে রূপোর খামে
আদুর গায়ে বাজনা বাজে
ইলসেগুঁড়ি পাতার মাঝে

বৃষ্টি থামে বৃষ্টি থামে
সুদূর মাঠে ওই যে গ্রামে
নীল আকাশে মেঘের ঝুরি
শিবঠাকুরের জটা চুরি

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পাই খুঁজে দূর্গা মাকে
কবি প্রবীর জানা

শরৎ আসে শরৎ হাসে
নীল আকাশে মেঘ-পাহাড়ে,
শরৎ আসে সবুজ ঘাসে
মুক্তো হীরের রং-বাহারে

শরৎ জানে শরৎ মানে
ফুটবে কখন শিউলি টগর,
শরৎ প্রাণে সবার আনে
হাসি খুশি পুজোর খবর!

শরৎ-ভোরে মনের দোরে
রং তুলি দিয়ে ছবি আঁকে,
শরৎ এলে এমনি করে
পাই খুঁজে আমি দূর্গা মাকে!

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
আছি ধরে রামছাগলের দাড়ি
কবি প্রবীর জানা

রাগলে হুঁস থাকে না আমার
করলাম সেবা কি তাই
ধরলাম মুঠি চুলের টেনে
সামনে যাকে সেবার পাই
ঘটল এমন কাঁণ্ডটা কি
দেখেনি তা কেউ আগে
আমিও তখম চেঁচাই জোরে
হাত পা ছুঁড়ে রাগে
জ্বলছে রাগে শরীর আমার
নাই ঠিক তখন মাথা
কাঁপছে কেবল হাত পা এবং
বন্ধ চোখের পাতা
কমলে রাগ বললাম হেসে
আড়ি আড়ি আড়ি
দেখছি ধরে আছি পোষা
রামছাগলের দাড়ি

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পাই খুঁজে দিশা
কবি প্রবীর জানা

ভোরের আলোয় খুশির ঝিলিক
দূর গ্রামে এবং কাছে,
দিচ্ছে উঁকি পাতার ফাঁকে
ফুলকলি সব গাছে।
মেলছে ডানা মৌমাছিরা
হেসে লুটোপুটি,
নাই বাতাসে হিমের ছোঁয়া
শীতের বুঝি ছুটি।
ধরে দাড়ি তাল সুপারির
খাচ্ছে হাওয়া দোল,
ফিসফিসিয়ে ওরা যেন
বলছে আবোল তাবোল।
আমি চেঁচাই দেখে ওদের
এই যে তোমরা শোনো,
যাও ফিরে বাড়ি দুষ্টুমি আর
করো না কক্ষনো।
ব্যস্ত অফিসে বাবা ও মা
আমি ঘরে বসে একা,
পাই খুঁজে দিশা স্বপ্নে আমার
এরা রঙ তুলি ছবি রেখা!

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
চেয়ে দেখি সকাল
কবি প্রবীর জানা

ধিন তাক তাক ধিন
দিন রাত রাত দিন
ঘুমের ঘোরে গাইতাম গান,
মামা আর চাচা নানী
করেন দাঁত খেচানী
বলেন চোপ সাবধান সাবধান!
দেই গোঁফে আমি তা
তারপরে সা রে গা
গলা ছেড়ে যেই আমি গাই,
কাঁধে খোল করতাল
ঠুকি আমি জোরে তাল
বলে সবাই পালাই পালাই!
দুই কানে হাত চাপা
চোখ খোলা নাই রাখা
গলা ছেড়ে গাই সারেগামা,
আসেন ছুটে নানী চাচা
গলা তোর হাঁড়িচাঁছা
বলেন গান তোর থামা থামা!
গান যদি শুনতেন
কোনো দিন তানসেন
কান তোর মলে দিয়ে ঠুকতেন তাল,
ঠারে ঠুরে ঠক্কর
সাগে মাথায় চক্কর
চেয়ে দেখি এখন সকাল!

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সৃষ্টি লয়ের চিঠি
কবি প্রবীর জানা

এই মেয়ে টা খুব সে বোকা
করছে এখন আড়ি,
চেঁচিয়ে বলে নয় শহর আর
চাই যে গ্রামের বাড়ী।
সেই গ্রামটি চাই যে আমি
গাছের ছায়া চাই,
কোত্থেকে এখন আকাশ হতে
পড়ছে এ্যাসিড ছাই।
চোখ ঝাপসা স্বপন বাবুর
বলছেন নাতনি শোনো,
বায়না এমন এরপর তুমি
করোনা আর কক্ষনো!
সেই গ্রাম তো হারিয়ে গেছে
নাম তার এখন সিটি,
ছাই নয় রে এসব হল
সৃষ্টি লয়ের চিঠি!!

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর