কবি প্রবীর জানার কবিতা ও ছড়া
*
গুল গল্প
কবি প্রবীর জানা

বলল দীপু বইছে কি লু
রোদ খাঁ খাঁ বোশেখ মাস,
হাফ বয়েল ডিম পাড়ছে কেবল
মুরগী এবং কতই হাঁস!
তারপরে যেই বৃষ্টি এলো
লাগল আমার সে কি ভয়,
পেলাম খবর তলিয়ে গেছে
মাটির তলায় হিমালয়!

বলল হীরু গরম ছিল
আমার গ্রামেও ভরদুপুরে,
ফুটত ভাত ঢাললে চাল
জলের মাঝে সব পুকুরে!
কাণ্ড সে সব বলব কি আর
ঘটল প্রলয় এমন ঝড়ে,
জাগল আবার সেই হিমালয়
যেই পৃথিবী উঠল নড়ে!

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
শরৎ খুশির পরশ
কবি প্রবীর জানা

মেঘ চলেছে আকাশ পথে শুভ্র রথে
মিষ্টি,
নাইতো এখন টাপুর টুপুর সারা দুপুর
বৃষ্টি!
ফুল ফুটেছে খুশির খবর শিউলি টগর
গন্ধে,
চিত্ত চাতাল উথাল পাথাল মনটা মাতাল
ছন্দে!
রোদ দুপুরে ঝরছে সোনা যায়না গোনা
হাজার,
আসছে শরৎ খুশির পরশ নয় দেরী তা
আজ আর!
আমরা যে তাই জড়াই সুখে আকাশ বুকে
রাদ্দিন,
মন থেকে সব হিংসা-ভীতি বিভেদ-রীতি
বাদ্দিন!

.      *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
যায় হারিয়ে
কবি প্রবীর জানা

ভোকাট্টা ভোকাট্টা
হাতে আমার লাটাই,
এই ঘুড়িটা চাঁদিয়ালকে
মাঝ আকাশে পাঠাই।
লড়াই লড়াই দখল আকাশ
উড়ছে ঘুড়ি হাজার,
রং ঝলমল সারা শরীর
ভাবখানা যেন রাজার।
মুখপোড়া ও চাঁদিয়ালে
চলছে রেশারেশি,
আসছে তেড়ে বাক্স ঘুড়ি
ফুলিয়ে হাতের পেশি।
সূতোয় বাঁধা জীবন ওদের
কাটলো সূতো শেষে,
যায় হারিয়ে সব ঘুড়িরা
অচিন কোনো দেশে!

.      *************************  

.                                                                                     
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
হবে আবার দেখা
কবি প্রবীর জানা

আসছে ঝড় বইছে তুফান
ভাঙছে ঘর ও বাড়ি,
ফিসফিসানি পাতায় পাতায়
নাচছে তালের সারি!
দুলছে গাছ নাচছে গাছ
উস্কো খুস্কো চুল,
ঝুলছে কানে তালের কাঁদি
রংবাহারি দুল!
পড়ছে খসে নিচের পাতা
ওপর পাতা হাসে,
বুক দুরু দুরু কাঁপছে গাছ
ভয়ে সন্ত্রাসে!
নিচের পাতা বলছে হেঁকে
সবাই তবে শোনো,
পড়ছি খসে তাই ঠাট্টা
করোনা কক্ষনো!
নিচ্ছি বিদায় সবার থেকে
এখন না হয় একা,
তোমারাও যখন পড়বে খসে
হবে আবার দেখা।

.      *************************  

.                                                                                     
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
শরৎ পুজোর স্মৃতি
কবি প্রবীর জানা

শরৎ সাঁঝে আকাশ মাঝে চাঁদের সেকি
হাসি,
শিউলি টগর দিচ্ছে খবর এমন দিনে
আসি।
উলুক ঝুলুক সারা মুলুক নাই এখন আর
বর্ষা,
রোদের সোনা যায় না গোনা আকাশ কি যে
ফর্সা।
ঢ্যামকুড়াকুড় আসছে ঠাকুর বাদ্যি বাজে
দূরে,
আজ আদিবাস সাবাস সাবাস চলনা আসি
ঘুরে।
ছোট্ট খোকা হাঁদা বোকা বুড়ো বুড়ি
ওদের,
মুখের হাসি রাশি রাশি মুক্তো যেন
রোদের।
শরৎ জানে শরৎ মানে পূজোর রঙিন
স্মৃতি,
শরৎ প্রাণে প্রীতির টানে জাগায় প্রেম ও
সম্প্রীতি।

.      *************************  

.                                                                                     
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পাই তবু
কবি প্রবীর জানা

ঝাপসা চোখে খানিক শুধু দেখা,
ওলট পালট মনটায় তবু জাগে।
দেয় কেটে দাগ হরেক রকম রেখা,
দেখেছিলাম তোমায় যখন আগে।

শালুক ফুলের আলতা রঙিন ঠোঁটে,
সদ্য ফোটা পদ্ম চোখের ফাঁকে।
ভোরের রবি আলতো যেন ওঠে,
মন আকাশে তোমার অনুরাগে।

দিন শেষে আঁধার গভীর যে পা,
তারি মাঝে ও স্বপ্ন তুমি ছবি।
হিমেল হাওয়ায় আমি যখন একা,
পাই তোমার দেখা হোকনা আঁধার সবই।

হয়তো কপাল এলো চুলে ঢাকা,
সিঁদুর টিপের তারই মাঝে হাসি।
ফুলের শোভা ফুলেই থাকে রাখা,
রূপের বাহার হয় কি কখন বাসি।

ফুল ফুটেছে ছিঁড়িনি পাপড়ি তার,
সকাল এখন বিকেল হয়ে নাচে,
সেই ফুল তো চির সতেজ আর
পাই তবু তোমায় সুদলে আঁখি কাছে।

.      *************************  

.                                                                                     
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
শ্রেষ্ঠ দানী
কবি প্রবীর জানা

মৃত্যুঞ্জয়ী বার ওরা
.        নেই মনে ভয়,
ফসল ফলায় মাঠে
.        এই পরিচয়।
রবে না ওদের নাম
.        প্রস্তর ফলকে,
মরলেই যাবে চুকে
.        চোখের পলকে!
কর্মের মাঝে সঁপে
.        দিয়েছে জীবন,
ইতিহাস দেবে ঠাঁই
.        নেই প্রয়োজন।
রোদে পুড়ে জলে ভিজে
.        চাষ করে যায়,
বিশ্বের মানব জাতি
.        আছে বেঁচে তায়!
এত বড় দানী আর
.        আছে বল কেবা,
চাষী ভাই যায় করে
.        মানুষের সেবা।

.      *************************  

.                                                                                     
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পদ্মা নদীর ঢেউ
কবি প্রবীর জানা

আমি হলাম পদ্মা নদীর জলে ছল ছল ঢেউ,
এপার ছুঁই ওপার ছুঁই তার রাখে না খোঁজ কেউ।
মন্দিরে বাজে ঘন্টা আর গায় কীর্তন গান,
মসজীদে দেয় সকাল সাঁঝে পবিত্র ধ্বনি আজান।
এসব শুনে নাচি আলে হয় একাকার সব সুর,
এপার বাংলা ওপার বাংলা নয় এখন আর দূর।

মেঘ ভেসে যায় ছড়িয়ে ডানা ওপার থেকে এপার,
আইন মানে না নিয়ম মানে না বলা ওদের বেকার।
রাম এসে দেয় সাঁতার জলে রহিম এসে করে চান,
সম্প্রীতির ঢেউ দুই বাংলার মহামিলনের আঘ্রাণ।
দেখে এসব নাচের তালে মাটি আমি দুই বাংলার ছুঁই,
দূর হয়ে যায় কাছের এবং তখন তা কিছুই!

আমি হলাম পদ্মা নদীর জল ছল ছল পানি,
আইন মানি না নিয়ম মানি না এসব কি আর জানি!
এপার বাংলা ওপার বাংলা জড়িয়ে নিজের বুকে,
যাই গেয়ে গান মহামিলনের রাত-দিন মহাসুখে!

.              *************************  

.                                                                                     
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বাক্সে আটক আমরা
কবি প্রবীর জানা

.        কি খেলবি এক্কাদোক্কা
.        কানামাছি না বল,
.        কোথায় বা মাঠ এক চিলতে
.        ফ্ল্যাটের ছাদে চল!
আকাশটা তো অনেক বড়ো তেপান্তরের শেষে,
মেঘগুলে সব গাছের সাথে গল্প করে এসে!
.        বাক্ল বাড়ি বাক্স বাড়ি
.        বাক্স বোঝাই খই,
.        বাক্সে আটক আমরা যেন
.        খেলার সময় কই!
বাক্স বাড়ির আকাশ দখল ধোঁয়ায় ঘেরা আকাশ,
শহর যেন বাক্সে ঘেরা যখন যেদিক তাকাস!
.        অনেক ভালো মামার বাড়ি
.        বৃক্ষভরা গ্রামে,
.        দিনের শেষে পাখির ডাকে
.        আঁধার এসে নামে!
সোনার রোদের রঙিন খামে খবর পূজোর ছুটির,
এবার যাব মামার বাড়ি ধীঘা কিংবা উটি!!

.              *************************  

.                                                                                     
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তোরাই লক্ষ্মীবাঈ ঝাঁসির
কবি প্রবীর জানা

নন্দীগ্রামের নন্দিনী সে ফুলিয়ে হাতের পেশি,
বলল, আমি ভাঙব দাঁত চেঁচাস যদি বেশীঔ
.        বর্গী ডাকাত ছিল যত
.        ব্রটিশকেও প্রতিহত
করতে গিয়ে বাপ ঠাকুরদা হয়েছিলেন স্বদেশী!!

নন্দী বুড়ো চেঁচান জোরে, তোর বলা কি শেষ ?
নন্দীগ্রামের আর এক নাম দারোগা পোড়ার দেশ!
.        অত্যাচারী রাই দারোগায়
.        মারল পুড়ে খড়ের গাদায়
তাইনা শুনে উত্তেজনায় নন্দিনী কয়, তা বেশ!!

জন্মেছিলেন বিদ্যাসাগর বীরসিংহ নামে গামে,
হলেন শহীদ বীর ক্ষুদিরাম স্বাধীনতা সংগ্রামে!
.        দেশপ্রাণের স্বপ্ন-স্মৃতি
.        মাতঙ্গিণীর স্বদেশ-প্রীতি
হয় নত মাথা শ্রদ্ধায় এই বীর শহীদের নামে!!

খুশির দোলায় নন্দী বুড়োর মুখে ঝিলিক হাসির,
বলল, আমার বয়স এখন কাছাকাছি আশির
.        সাবাস নাতনি সাবাস
.        পেলাম এখন আভাস
তোরাই হবি ভবিষ্যতের লক্ষ্মীবাঈ সেই ঝাঁসির!!

.              *************************  

.                                                                                     
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর