কবি প্রদীপ বিশ্বাসের কবিতা
*
এরা সেই চোর
কবি প্রদীপ বিশ্বাস

হাঁ করা মুখ গুলো দেশ জুড়ে কি জানায়
ওদের অস্তিত্ব না বেঁচে থাকার তিতিক্ষা?
জীবন্ত মন কে যদি প্রশ্ন রাখি অজ্ঞতায়,
পাশ কাটিওনা দোহাই চাই যে কিছু জ্ঞান।

এতো আয়োজন সাজ সাজ রব
কাদের জন্য?
বিদেশী তকমা অর্থনৈতিক ডামাডোল
সাতকাহন।
বুদ্ধি দিয়ে আর কিচ্ছু হবেনা
আগে বিচ্ছু চোরগুলো ধরো।
এরা সেই চোর     
যারা রাতের ঘুম কেঁড়েছে আমার  
ওদের কেঁড়েছে খাবার।


একটা দুটো নেংটি ধরলে কি হবে,
নেংটি কিংবা ধেড়ে গেছে অনেক বেড়ে।
সব ব্যাটা খোসামুদের কালো ব্যাগ সিল করে
মোহর কেড়ে নাও লুকোনো গর্ত থেকে,
রাজকোষ করো পূর্ণ।
হোক কর্ম সংস্থান
বাঁচুক হাঁ করা মুখ গুলো।
এরা সেই চোর
যারা রাতের ঘুম কেঁড়েছে আমার
ওদের কেঁড়েছে খাবার।

.       *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ফিনিক্স পাখিরা
কবি প্রদীপ বিশ্বাস

ফিনিক্স পাখিরা এক্স-ওয়াই জিন ফ্যাক্টর এ  নাকাবন্দী,    
শতাব্দীর আস্তরণ ঠুকরে-ঠুকরে রক্তঝরা লোনা শরীর।   
কর্কশ কন্ঠে প্রতিবাদ কুহুতান শ্রুতি গত ধূসর ভূমির।  
কালো ভ্রমর আরো কালো অন্ধকারে লেন্সের অবাগে।

সুখ-দুঃখ নবপরিণীতার রজনীগন্ধা ছড়ানো বিছানা,
উল্টেপাল্টে স্বাদ নিংড়ায় উত্তপ্ত বালুরাশি পুং মরুর।  
এবড়ো খেবড়ো ভালোবাসা খাদের ঘর্ষণে সিক্ত হয়
শান্ত দিঘীর কালো জলে পদ্ম ফোটে বিবর্ণ কাগুজে।

সারাদিন প্রগতির অংক বিচার বিশ্লেষণ মস্তিষ্ক নিকেল
রিসেপটার শেষ চুমু কালো পারদ গ'লে গ'লে হিমেল।
ব্যাগ ভ'রে সুখ কিনি রাতে কমোট ফ্লাসে গুডবাই           
আঁধার কালো বুকে শুয়ে লম্পটগীরি ষোল আনা ই।

.                 *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
একটা কুড়ুল চাই
কবি প্রদীপ বিশ্বাস

এই আগাছা ব্লেডে কাটবে না একটা কুড়ুল চাই।
ছাপোষা নাগরিক পারে প্রতিবাদ জানাতে।
চোখা ভাষায় প্রতিবাদ চাই,
শুধু ব্যালটে নয়
ভাষায়।

দৈনন্দিন কাজের বাইরে কিছু সময় প্রয়োজন
স্বদেশ ও সমাজ ভাবনায়।
নইলে আমাদেরই সখাত সলিলে
বিসর্জন হবে
নিশ্চয়।

আপাত সুখ মগ্ন সুখ চর্চা চালাতে
বহাল তবিয়তে।
বিষাক্ত আবর্জনা কখন শ্বাসরোধ করবে
কেউ জানিনা।

বসে থাকি কুড়ুলের আশায় কাটবে
ছেয়ে যাওয়া আগাছা, এমন
একটা কুড়ুল চাই।

.         *************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ফন্দি
কবি প্রদীপ বিশ্বাস

সোনার দর এখন চৌত্রিশ হাজার
এইতো মাত্র কদিন আগেও পঁচিশ হাজার ছিল।

শুনছি মজুত সোনা বেচে মোটা টাকায়
দেশের মন্দা কাটবে, মন্দ নয় ফন্দি।

আমার প্রশ্ন সেখানে
কোন মহাজন লাভের গুড়ে  
এই চড়া দামে সোনা কিনবে?

কালোকে সাদা বানানোর লাজবাব রাস্তা।

আখের গোছানো আগেই সমাপ্ত,
চোখে ধুলো দেওয়া স্বগতোক্তি
যেন খুব দেশভক্তি।
সাধু চোরে মাসতুতো ভাই
একপাতে ভাগ করে খাই।

জনগণ জনার্দন
কাটবে অনটন?

.    ************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ফুটবল ও ফিরেদেখা
কবি প্রদীপ বিশ্বাস (বন্দি)

খেলার দোকানে চোখ যেতেই দেখি ঝোলানো ফুটবল,
ফুটবল দেখতেই কতো হারানো স্মৃতি মনে পড়ে যায়
.             কতো সাফল্য, কতো ভালোবাসা,
.             কিশোর তখন দেহমনে অদম্য শক্তি,
.                          পায়ে অসম্ভব কিক সুন্দর পাস
.                          ড্রিব্লিং আর দূরন্ত ঝোড়ো গতি।

সবাই ভালোবাসে পরিচিতি কয়েক গ্রাম ছাড়িয়ে;
ভাড়া খাটি অন্য দলের,পুরো পেশাদার খেলোয়াড়।
.             জগতটা তখন মনে হতো মুঠোর মধ্যে,
.             মনে হ'তো এভাবেই কেটে যাবে দিন;
.                          অনেক ম্যাচ খেলে অনেক সুনাম
.                          পেলাম অর্থ মান যশ খ্যাতি সব।

কর্ম জীবনে প্রবেশ করলাম, সংসার করলাম,
কাজে কর্মে দিন কিভাবে কেটে গেলো বুঝিনি।
.            '৫০ ঊর্ধ্ব একাদশে'র হয়ে মাঠে নামি,
.            একটা দৌড়ে পার করবো মাঠ- ভাবি,
.                          'অবিবাহিত একাদশে'র চনমনে গড়া দল,  
.                          শিকারী পাখি হয় তারা আর আমি শিকার।   

জীবন সায়াহ্নে উপবিষ্ট বয়স্ক নাগরিকের নানাসুখ
ভোগ করেছি অনেক ব্যর্থতা দাঁতে দাঁত চেপে ।  
.            মাঠের দিকে নজর কাড়েনা আর
.            মনটা শুধু পুরোনো স্মৃতি হাতড়ায়,  
.                          পাড়ায় পল্টুর দোকানে চোখ যায় যখন-  
.                          দেখি ঝোলানো আছে অনেক ফুটবল।

.                          ************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অভিলম্বিত
কবি প্রদীপ বিশ্বাস

আরো স্থির হও কান পাতো শোন বাইরে নয়         
অলিন্দের ভিতর থেকে বেজে উঠছে একুশ শতক বাদ্য।  
না খাওয়া মানুষের ডাস্টবিনে উচ্ছিষ্ট ভোজনে কি শান্তি
দেখেছো?

নাগরিক সুখ চাটা মজ্জায় ঢেউ মানি মিটার, সুখপাখি
কালো টাকার বাক্স স্বপ্নে উড়ে চলে মস্তিষ্ক
সংকেত।

কালো পাহাড় কাজে লাগেনা কারো অক্ষয় গুপ্ত।
মালিক খুশি, সাদা বাবুরা খুশি।
মশলা পান চর্বিত লাল মুখে দলিতের ধার করা ভাষা
ফায়দার।

মহারাজ সংশ্লেষিত বেশে পেশ।
জগদ্দল ন'ড়ে গেছে টনক নড়েনা, কালচার ঘাঁটা  
জ্ঞানবৃক্ষ না ফলতে।
বোবা কালা পঙ্গুদের বেমানুষ ক্ষিধেগুলো
অভিলম্বিত!

.         ************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কেবল শান্তি চাই
কবি প্রদীপ বিশ্বাস (বন্দি)
             
ছুটবো ঘোড়া টগবগিয়ে
             ইচ্ছে খুব হ'লো,
চ'ড়ে পক্ষিরাজে তেপান্তরের
             মাঠ পেরিয়ে গেল।

সাত-সমূদ্র তেরো-নদী   
            পেরিয়ে দেখি আমি,
বসে আছে রাক্ষস রাজা
            ভয় পেওনা তুমি।

গুন-গুনিয়ে গাইছে গান
            মনে খুবই সুখ,    
খুন খারাপি করেনা সে
            নেইতো কোনো দুখ।

দেখে আমি বিস্ময়ে হ'ই   
            বেজায় হতভম্ব!  
রূপকথা দেশ নয়কি এটা?
            কি ক'রে তা ভাববো!  

উড়িয়ে দিয়ে পায়রা সাদা
            বল্লাম "রাক্ষস-রাজা ভাই,   
যুদ্ধ আমি করবো না আজ,  
            কেবল শান্তি চাই।"

.         ************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ময়নামতীর বালুচর
কবি প্রদীপ বিশ্বাস (বন্দি)

ময়নামতীর ক্ষীণ ধারা
শুকিয়ে যেতে যেতে বলে,
"যখন স্রোতবতী ছিলাম
সে ছিল গল্প এক দুরন্ত যৌবনার।
আমার ভরাট বুকে
কত বড় বড় জাহাজ বয়ে নিতাম।
বয়সের ভারে  ইতিহাস আমি,
স্নায়ুতে অনুভব করি অসহ্য দুর্বলতা।
সার্থকতা নেই  উন্মত্ত উল্লাসে,
শ্বাস প্রশ্বাসে, হাতছানি নেই।
মজা নেই আজ শুধু মজে গেছি,
স্রোত বয় না আগের মত জলে।"

জলের কোন বন্ধু হয় না,
পদার্থবিদ বলে তাকে নিরাকার ।
সে যে স্বার্থপর প্রৃকতির অকৃত্রিম কৃপণতা ।
আসে আর যায় বন্ধুর মত,
অঢেল সুখের সময়ে মধুকর হয়ে আসে,
নিতান্ত দুঃখে তারা কেউ থাকেনা পাশে ।

"আমার কত বন্ধু ছিল,
কি নাম তাদের মনেও পড়েনা।
ভাসত আমার প্লাবন জলে।
ঘাটের পাড় আজ কারো নজর কাড়েনা ।
তখন জোয়ার জলে ভাসিয়ে দিতাম
ওদের মন বিলাসী ময়ূরপঙ্খী।"

"তখন ওদের সুখের নীড়ে
বসত ছিল আমার।
অজানায় দিতাম পাড়ি
কোন কিছু না ভেবেই।
দোল দোলান হিল্লোল
যৌবনঘন সম্ভাবনায়,
উষ্ণ বুকের তপ্ত পরশ
সংগীত হয়ে ঝরত।"   

শুষ্ক চোখের জলের বাঁধ
কবে শুকিয়ে গেছে।
আজ সে বহে শীর্ণা কায়ায়
শেষ জোয়ারের টানে।
সময়ের চাকা এগিয়ে চলে
জীবনের চাকা পিছে।

ময়নামতী জীবন সাঁঝে
না বলা নীরব ব্যথা ।
বুক চেপে রয় পায়না বন্ধু,
ডাক দিল শেষে করূণাসিন্ধু ।
ময়নামতীর বালুচরে আজ
রয়ে যায় শুধু অগ্নিদগ্ধ বালু ।

.     ************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নদীরে তুই
কবি প্রদীপ বিশ্বাস

কবির সাথে নদীর ভাব অনেক দিনের,
হয়তো বা অনেক যুগের।  
জন্মের পর যখন সে ধীরে ধীরে পরিণত
যৌবনে প্রবেশ করছে।  

সেতো শুধু ভাব নয় বন্ধুত্ব,  
অকারনে নিবিঢ় নিঃশব্দ আলাপন।      

কে ছিলো তার বাল্যবন্ধু
অবগাহন করেছে দিনরাত্রি  
শীতল করেছে উষ্ণ শরীরের উত্তাপকে
অন্তরের গভীরে স্থান দিয়ে,
সেই সব কত গল্পো হতো।  

কবির সঙ্গে আজ আর আগের মতো নদীর
দেখা হয় না, বয়স বেড়েছে।  
নদীর ধারে দূর্বল শরীর নিয়ে
যাওয়া শক্ত।
কবি পুরোনো বন্ধুর জন্য
দুফোঁটা চোখের জল ফেলে ।

.     ************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঘুড়ি খেলা
কবি প্রদীপ বিশ্বাস

উড়ন্ত এই জীবনে প্রাণ ভ'রে শুধু হাওয়া খাওয়া।
গাছপালা ঘর বাড়ী মানুষজন ছেড়ে উপরে যাওয়া ।
সাদা কালো মেঘেদের সাথে অনেক ভালোবাসা হয়।   
গর্বে বুকটা বারে বারে ফুলে ওঠে, গোত্তা মারে লাট খায়।

মালিক কতো কাটাকাটি খেলা করে যেন মমত্ব ছাড়া ই
ঘুড়ি ওড়ে উপরে আরো সুতো যত ছাড়তে থাকে লাটাই।
খুশি মনে থাকে ঘুড়ি ভাগ্যের চাকা পাল্টি খেয়ে দেখায়,  
দেখ কতো ওঠা নামা জীবনের জলছবি আলো ছায়ায়।

প্রতিদিন নিয়ম সুতোয় বেঁধে নিজের পথে জীবন চলে।
ঝোড়ো হাওয়ায় টলমল করে, সুতো বুঝি কাটে ঝঞ্ঝা এলে।
বিদ্যুৎ ঝলকানিতে ঘুড়ি বিবর্ণ হয় ক্ষণিক, আবার চলে খেলা।
আরেকটি ঘুড়ি বন্ধু পেলে কথা হয় সুখ দুখের সারা বেলা।

কাগজের পলকা দেহ রৌদ্র জল হাওয়ায় জীর্ণ হয়।  
কখনো প্রবল ঝড় ঝঞ্ঝায় অকালেও প্রাণ ঝ'রে যায়।  
যদিও টেকে খেলা শেষ হ'লে মালিক ছিড়ে ফেলে।
আকাশে নতুন মেঘ নতুন আশা নতুন ঘুড়িরা খেলে।

.               ************************           

.                                                                                       
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর