কবি প্রফুল্লময়ী দেবী কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।  www.milansagar.com
*
সাধ
প্রফুল্লময়ী দেবী

আমি চাই অখ্যাত জীবন
.        নিরজন পল্লী-পথ, পাশে
অতি ক্ষুদ্র বনপুষ্প হ’য়ে
.        রব দীন-তৃণাচ্ছন্ন বাসে।
আপনাতে সম্পূর্ণ আপনি
.        আপনাতে আপনি বিভোর,
ভুলে গিয়ে বিশাল ধরণী,
.        ভুলে গিয়ে কেহ আছে মোর,
ভুলে গিয়ে নিন্দা আর স্তুতি,
.        ভুলে তুচ্ছ মান অভিমান,
আপনারে চিনিব আপনি
.        আনন্দের লভিব সন্ধান---
ওই মুক্ত নীলাকাশ তলে
.        ওই স্নিগ্ধ নির্ম্মল বাতাসে,
স্বচ্ছতোয়া তটিনী যেখানে
.        ছুটিতেছে সাগর সম্ভাষে।


.                        মানব জনমে নাহি সাধ
.                                আমি হ’ব কানন-কুসুম,
.                        অতি ক্ষুদ্র অতি তুচ্ছতম,
.                                নয়নে জড়ান যেন ঘুম।
.                        নহে চাঁপা গোলাপ চামেলী,
.                                না ফুটিব মনোরম বেশে,
.                        উত্সবে তুলিয়া ল’য়ে যেন
.                                ফেলিতে না পারে নিশি শেষে।
.                        প্রশংসার শিলা বৃষ্টি ঝড়ে
.                                দুলিব না সন্দেহ-দোলায়,
.                        কারো দৃষ্টি না পশে যেখানে
.                                সেখানে ফুটিতে প্রাণ চায়!
.                        নীরবে ফুটিয়া নিরজনে
.                                নিজমনে পড়িব ঝরিয়া,
.                        বারেক প্রভাত সবিতার
.                                কর-রেখা হৃদয়ে ধরিয়া!


একটি প্রদীপ্ত মেঘহারা
.        অম্লান ঊষার অপক্ষায়,
ধ্যান-মগ্ন রহিব বসিয়া
.        কোরক-জীবন যবে যায় ;
সেদিন প্রথম সূর্য্যোদয়ে
.        রবিরশ্মি যেন অকস্মাৎ
শিহরিয়া অব্যক্ত পুলকে
.        করে মোর জীবন প্রভাত!
একটি সম্পূর্ণ দিন মান,
.        আমি র’ব ভাবে নিমগন,
সন্ধ্যায় ফুরালে মধু মোর
.        ঢেলে দিব তোমারে জীবন,
দিওনাকো রূপ মনোরম
.        দিওনা সে সৌরভ মধুর,
মানবের দৃষ্টির বাহিরে
.        আমারে রাখিও বহুদূর।

.               ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
প্রাণ চাহে অসীমের মাঝে আপনারে দিতে ডুবাইয়া
প্রফুল্লময়ী দেবী (খণ্ড কবিতা)

প্রাণ চাহে অসীমের মাঝে আপনারে দিতে ডুবাইয়া
কি ভাবে করিবে আবাহন, তাই সে ফেলেছে হারাইয়া।
অনন্তের একটি কণিকা বারেক যে পেয়েছে সন্ধান,
জগতের শেষহীন কথা তা’র শুদ্ধ মৌনের সমান।

.               ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
শ্রাবণে
প্রফুল্লময়ী দেবী

ঝঞ্ঝা নয়রে বাদল নয়রে,
.        ওই যে মহোত্সব!
নূপুর রুনু ডুবাবে মোর
.        দেয়ার গুরুরব।
আকাশভরা ওই যে কাহার
নীলাম্বরীর জরীর বাহার,
সাড়ীর সাথে মিশবে রে মোর
.        নিশির অন্ধকার ;
অলঙ্কারের শিঞ্জিনী কেউ
.        শুনবে না আজ আর!
শ্রাবণ নিশার আঁধার রে আজ
.        গভীর হয়ে আসে,
এই লগনে আজকে তোরা
.        একলা রবি বাসে ?
বাতাস ডাকে “আয় চলে আয়”,
.        মাতাল সে আজ কিসের নেশায়,
হিন্দোল দোলায় দোলাতে তায়
.        আকুল কেশ পাশে,
শ্রাবণ নিশার আঁধার যে ওই
.        জমাট হ’য়ে আসে!

.               ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
প্লাবন
প্রফুল্লময়ী দেবী

ও কা’র ব্যাকুল প্রাণের এমন পরিচয় ?
আজকে যে তোর গোপন ব্যথা
.                সকল বিশ্বময়!
আজ সে গভীর ব্যথার তরে,
কতই চোখে অশ্রু ঝরে,
বুকের মাঝে ঝঙ্কারে গো
.                “একা তোমার নয়!
আজকে তোমার বুকের ব্যথা
.                সকল ভূবনময়।”
আবার, সবার ঘরের সুখের ঢেউ ওই
.                লাগল যে তোর দোরে ;
.        কতই যে হাত আদর করে
.                এগিয়ে নেয় রে তোরে।

“সীমায় বেঁধে রাখিসনেরে
বিলিয়ে দেরে ছড়িয়ে দেরে”
কে বলে ঐ মধুর স্বরে
.        ব্যাকুল হৃদয় ভরে’
একি প্লাবন ভূবন পাবন
.        এলো গো তোর দোরে।”

.               ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর
*
বিষাণ  (খণ্ড কবিতা)
প্রফুল্লময়ী দেবী

একেলা বিভোলা গৃহ মাঝে,
তোর কি রে দিন গণা সাজে ?
.        ওঠ জাগ মরণের গানে।
ওই কে থাকিয়া দূর দেশে
অদৃশ্য অলক্ষ্যতম বেশে
.        বাজাতেছে পবিত্র বিষাণ।

*        *        *        *        *

তোর প্রাণে পশে নি সে সুর
হয়নিক হিয়া ভরপূর
.        উদাসীন হয়নি পরাণ ?
আয় মুক্ত! আয় বদ্ধ প্রাণ,
অবসাদ হোক অবসান,
.        রাঙ্গা রবি উদিত গগনে।

.               ***************  
.                                                                                    
উপরে    


মিলনসাগর