কবি প্রমথনাথ বিশীর কবিতা
যে কোন গানের উপর ক্লিক করলেই সেই গানটি আপনার সামনে চলে আসবে।
নিঃসঙ্গ সন্ধ্যার তারা
প্রাচীন আসামী হইতে
সে তোমার হাসি
বনস্থলী
হারানো পৃথিবী
*
নিঃসঙ্গ সন্ধ্যার তারা
প্রমথনাথ বিশী
নিঃসঙ্গ সন্ধ্যার তারা,
দ্বিতীয়ার চাঁদ,
নীলাভ পদ্মার ধারা, শূণ্যতা অগাধ |
স্তিমিত হাঁসের দল,
পশ্চিম বনান্ততল
ম্লান কাঁদো-কাঁদো ; শূন্যতা অগাধ ||
শুধু দুটি মুগ্ধ প্রাণী,
শূন্য শরবন,
পদ্মার নাহিকো বাণী, স্বপন নির্জন |
অসীম রাত্রির পানে
যায় তারা কোনখানে
ছায়ার মতন! স্বপন নির্জন |
. ******************
.
উপরে
মিলনসাগর
১।
২।
৩।
৪।
৫।
কবি
প্রমথনাথ বিশীর
পরিচিতির পাতায় . . .
কবি
প্রমথনাথ বিশীর
পরিচিতির পাতায় . . .
*
প্রাচীন আসামী হইতে
প্রমথনাথ বিশী
পশ্চিম দিগন্ত আমি, জ্বলন্ত রবির
বাসনার চিতাশয্যা, তুমি সখী দূর
পূর্ববনান্তের রেখা---অতল গভীর
রহস্যের অভিনেত্রী! মোরে দগ্ধ করি
জ্বালাই বহ্নির শিখা---তারি দৃপ্ত রাগে
হেরিতেছি ক্লান্তি তব মূর্চ্ছায় বিধুর।
মিলিয়াছি তব অঙ্গে দিবসশর্বরী,
দেখা না-দেখার প্রান্তে তব মূর্তি জাগে।
কোথা তুমি, কোথা আমি, শুন্যতা অগাধ,
বুকে বুকে পরশন ঘটালো না কভু!
কেবল চুলের গন্ধ, শয্যা ক্ষুধাতুর,
শুধু সৌন্দর্যের কশা---কষায় মধুর!
উঠিল গভীর রাত্রে দ্বাদশীর চাঁদ--
অখণ্ড দিগন্তে হেরি ঘেরা দোঁহে তবু।
. ******************
.
উপরে
মিলনসাগর
কবি প্রমথনাথ বিশীর পরিচিতির পাতায় . . .
*
সে তোমার হাসি
প্রমথনাথ বিশী
হঠাৎ বসন্তে কবে রাকাদীপ্ত চামেলির বনে
উচ্ছ্বাস উঠিয়াছিল দক্ষিণ পবনে
. ঝরেছিল শুভ্র ফুলরাশি
. সে তোমার হাসি ||
হঠাৎ কোটালে কব্ উন্মথিত মত্ত পারাবার
জ্যোত্সনার মর্মরে গাঁথা সৌকতে তাহার
. ছুঁড়েছিল স্বচ্ছ শুক্তিরাশি,
. সে তোমার হাসি ||
ইন্দ্রের বিলাসলগ্নে সুখ স্বর্গপুরে
পুরুরবা স্মৃতিদষ্ট ঊর্বশীর বিভ্রান্ত নূপুরে
. যে-চমক উঠিল উদ্ভাসি,
. সে তোমার হাসি ||
রিক্ত পদ্ম মানসের অশ্রুর স্ফটিকে
মধ্য রজনীর চন্দ্র তন্দ্রাহীন চাহি অনিমিখে
. যে শুভ্রতা তুলিছে বিকাশি,
. সে তোমার হাসি ||
রজনীগন্ধার দন্ডে যে পেলব চিক্কণ আবেশ
মূর্চ্ছিত জ্যোত্স্নার মত রচি পরিবেশ
. দিবাকান্তি দেয় পরকাশি
. সে তোমার হাসি ||
পরম প্রণয় ক্ষণে ছিন্নগ্রন্থি মুক্তাহার দ্যুতি
স্তিমিত বাসব ক্ষেত্রে বাসনার যুথী
. মুহুর্মুহু তোলে যে উচ্ছ্বাসি,
. সে তোমার হাসি ||
বাণীর মুকুটলগ্ন দিব্যবিভা শ্বেত শতদলে
কবির প্রতিভাস্পর্শে যে আলোক ঝলে
. প্রকাশের আর্তিতে উল্লাসি,
. সে তোমার হাসি ||
আমার বিস্মৃতি তলে চোতন্যের গোপন প্রবাহে
কোথা হতে পড়ে আলো, জ্বলে ওঠে তাহে
. গুচ্ছ গুচ্ছ জ্যোতিঃ কুন্দরাশি,
. সে তোমার হাসি ||
তোমার অস্তিত্ব সুধা বিগলিত তরল ধারায়
শিশিরাস্ত হিমানীর প্রবাহিনী প্রায়
. ধরাইছে ফুল্ল ফেণরাশি
. . সে তোমার হাসি ||
. ******************
.
উপরে
মিলনসাগর
কবি প্রমথনাথ বিশীর পরিচিতির পাতায় . . .
*
বনস্থলী
প্রমথনাথ বিশী
আমার এ বনস্থলী পূর্ণ কবিতায় |
. সরল শাল্মলী শাল
. বাল্মীকির অনুষ্টুপ প্রায়,
বিস্তারিত বটচ্ছায়া রচেছে অধ্যায়
. বনপর্ব মহাভারতের
ছায়ানট বৃক্ষরাজি লতার ললিতে
. মিশেছে অপূর্ব রাগে ;
. ফাল্গুনের আগে
বনের নিমোক খসে পাতায় পাতায়
. তরুর মাথায়
কুসুমের পূর্বরাগ রক্ত কিশলয়ে,
. বেদনার লয়ে
আসে তপ্ত মধ্যাহ্ন পবন,
চুরি করে নিয়ে যায় বনশ্রীর মন
. কোন দূরান্তের পানে
. তন্দ্রাহীন গানে
নন্দনের শেখা সুর সাধে বসে একা
. সঙ্গীহীন পিক ;
. দশদিক
. উঠে মর্মরিয়া
পুরুরবা হতাশ্বাস দেয় বিস্তারিয়া |
আজি শিত-মধ্যাহ্নের নিস্তব্ধ প্রহরে
. সুখস্বপ্ন ভরে
আমীলিত নেত্র ধরণীর ;
. শুধু ধীর
জপমালা আবর্তন ঘুঘুর বিলাপে ;
. দিভমণ্ডল কাঁপে
. প্রচণ্ড ব্যথায় ;
টুপটাপ শব্দ শুনি স্খল্ত পাতায়,
. বিশ্বের সংগীত যেন ফল্গুরূপ ধরি
. গেছে কোথা সরি,
. শুধু দু’এক অঞ্জলি
তরুর মর্মর আর পাখির কাকলি |
তারপর একদিন অকস্মাৎ প্রাবৃতের মায়া
দিগ্দিগন্তে মেলি দেয় ইন্দ্রজাল ছায়া,
. অরণ্যে অঙ্কুর জাগে, পর্বতে নির্ঝর,
. নদীতে তরঙ্গমালা, প্রান্তরের পর
. নবশষ্পলেখা জাগে নবীন কবির
. প্রথম প্রেমের গীতি,
. বর্ষান্তের স্মৃতি
. জাগে তৃণ পুষ্পদলে,
. তার তলে তলে
. গুপ্ত গতি ইন্দ্রগোপ কীট,
. সঘন প্রাবৃট |
আকাশের আলিঙ্গণে নিশ্চল পৃথিবী,
মেঘের আড়ালে তার দিগন্তে নীবি
. বহুক্ষণ অপসৃত
. বিচ্ছিন্ন লুণ্ঠিত
বিদ্যুতের সূত্রে গাঁথা অপরাজিতার
. বরমাল্য তার |
পড়ে না গায়ের চিহ্ন
ঘন শষ্প মোর বনভূমে
ভুঁইচাঁপা আঁখি খিন্ন
. যেন যজ্ঞভূমে
. বধূবেশী বৈদেহীর
. ঊর্বশীর
. লাবণ্যনিজ্ঞেপ মুহু
. মালতী কুসুমে ;
যক্ষের আর্তির দূত নীলকান্ত মেঘ
. নত হয়ে বনশ্রীরে সুধায় বারতা
. দূর অলকার
. ময়ূরের কণ্ঠে বন কয়ে ওঠে কথা ;
. মত্ত হাহাকার,
. স্তব্ধতারে দীর্ণ করা কর্কশ ক্রেঙ্কার |
. আমার এ বনস্থলী পূর্ণ কবিতায় |
তাই আজ পৌষের পড়ন্ত বেলায়
চিক্কণ বদরীগুচ্ছে চমকে আলোক,
. ডুবে যায় চোখ
. সুগভীর নীলে,
যতখানে তত ব্যথা আছিল নিখিলে
ঘুঘুর করুণ সুরে করিছে কাকলি ;
খর্জুর বৃক্ষের গাত্রে পড়িতেছে স্খলি
সুরাগন্ধী রসবিন্দু ধরণীর সীধু ;
পর্বতের পরপারে অস্ত গেল রবি
. নীলচ্ছবি
. গিরিমালা নীলতর করি |
অরণ্যে একান্তে বসে আছে বিভাবরী |
. আমি হেথা শুয়ে
. তপ্ত তৃণ ভূঁয়ে
পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের পপুটে করিতেছি পান
. বনশ্রীর দান
. ক্লান্ত শিশু প্রায়
আমার এ বনস্থলী পূর্ণ কবিতায় ||
. ******************
.
উপরে
মিলনসাগর
কবি প্রমথনাথ বিশীর পরিচিতির পাতায় . . .
*
হারানো পৃথিবী
প্রমথনাথ বিশী
পৃথিবীর দিকে চেয়ে দেখি আর ভাবি
. কোনখানে যেন বন্ধ হ’য়েছে চাবি |
রামধনু হ’তে একটিও রঙ মোছে নাই,
উষার কপালে লজ্জার আভা ঘোচে নাই,
আকাশ-প্লাবনী আজিকে তেমনি জ্যোছনাই,
. তবু যেন এক পরদা এসেছে নাবি |
. আমারই আমারই আমারই হৃদয়
. জীর্ণ হয়েছে শুধু,
. স্মৃতির শ্রবণ বালুকাবধির
. নিরবধি করে ধু ধু ||
রাতের আকাশে অপলক চেয়ে থাকি,
. শূন্য পেয়ালা, সুরা না বিতরে সাকী |
তবু তো তেমনি রয়েছে আজিও তারাদল
দিগঙ্গণার সিক্ত বাসের ধারাজল,
কুহু হ’তে রাকা পূর্ণ শরীর চলাচল,
. তিথিতে তিথিতে তেমনি তো যায় আঁকি |
. আমারই আমারই আমারই হৃদয়
. জীর্ণ হয়েছে শুধু,
. স্মৃতির নয়ন অন্ধ আবিল
. নিরবধি করে ধু ধু ||
মানুষের ঘরে চেয়ে দেখি আর জানি
. সুখগৌরবে পুলকিত রাজধানী |
ভাটাহীন রূপ চিরযৌবনে বহমান,
কাঁটাহীন প্রেম নহে এতটুকু অসমান,
বল্গাবিহীন ফাল্গুন রাতে ওঠে গান
. কাকনে কাকনে মধুময় কানাকানি |
. আমারই আমারই আমারই হৃদয়
. জীর্ণ হয়েছে শুধু,
. স্মৃতির সরণি শিলাবন্ধুর
. নিরবধি করে ধুধু ||
অন্ত মাঝে চেয়ে দেখি আর বুঝু,
. দিনাবসানের কমল গিয়াছে বুঁজি |
তাই তো আকাশে নভতলে আজ জ্বলে শশী
আর পৃথিবী ছায়াঢালা হেন মলীমসী,
তুষারের ভারে আশার সৌধ পলো খসি,
. দেউলিয়া হল পুঞ্জিত যত ছিল পুঁজি |
. আমারই আমারই আমারই হৃদয়
. জীর্ণ হয়েছে শুধু,
. স্মৃতির ভূবন ভাবনা বিকল
. নিরবধি করে ধু ধু ||
. ******************
.
উপরে
মিলনসাগর
কবি প্রমথনাথ বিশীর পরিচিতির পাতায় . . .