কবি প্রসন্নময়ী দেবীর কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
সেই চন্দ্রালোক কবি প্রসন্নময়ী দেবী সুকুমার সেন সম্পাদিত "বাংলা কবিতা সমুচ্চয় ১০০০-১৯৪১" প্রথম খণ্ড থেকে নেওয়া। সেই চন্দ্রালোকে, সেই নিশীথ সময় সেই নীলাম্বর জল, সেই নিশীথিনী কোলে, বসিয়া একদা, সুখে অচল হৃদয় | চন্দ্রকর বিভাসিত প্রাসাদ শিখর প্রফুল্ল কুসুম বন, চারিধার সুশোভন তরু-কোলে মনোহর লতিকা সুন্দর | শীতল মলয় বায় পুলকে মাতিয়া সে সুখ সঙ্গীতে যেন--- সুখে করি বরিষণ, গিয়াছিল ফুলদল চুম্বিয়া চুম্বিয়া | যেই দিকে নেত্র আমি করিনু প্রসার জীবন্ত সৌন্দর্যরাশি তরল মধুর হাসি, উছলিত চন্দ্রকরে অনন্ত সংসার | তরঙ্গে তরঙ্গে জ্যোতি হৃদয়ে আমার--- প্রবেশিল অন্ধকারে--- হৃদয়ের স্তরে স্তরে--- দেখিনু একই চন্দ্র-শোভার আধার | উপর গগনে পুনঃ তুলিয়া নয়ন--- দেখিলাম প্রীতি ভরে পূর্ণিমার সুধাকরে যে শোভায় বিমোহিত জগত-ভবন | জীবন শশাঙ্ক সনে মোহিত অন্তরে সেই শশী তুলনিয়া চন্দ্র মম নিরখিয়া দেখিনু তুলনা নাই ত্রিলোক ভিতরে | অনন্ত সৌন্দর্য্যপূর্ণ চন্দ্রমা আমার স্নিগ্ধ জ্যোতি বিভাসিত নিত্য নিত্য আলোকিত, সিত-কৃষ্ণ-পক্ষ কভু নাহিক তাহার | আকাশের চন্দ্র আর হৃদয় চন্দ্রমা, একসনে শতবার সুখে ভুলিয়া সংসার নিরখি বুঝিনু কার কতই গরিমা | নীলিমার শশধর পরের কিরণে সাজিয়া, সুদূর হতে দেয় কর অবনীতে, গৌরবের কিছু নিই আপন জীবনে | আমার জীবন শশী নিজের বিভায় নিরন্তর সমুদিত, প্রীতিকর বিমণ্ডিত, দিবা নিশি মুগ্ধকর অতুল শোভায় | সেই নিশীখিনী, সেই পূর্ণ শশধর সেই মুগ্ধময়ী ধরা বিমল সৌন্দর্য ভরা, সেই স্মৃতি বিজড়িত আজি এ অন্তর | সেই চন্দ্রলোকে বসি, সুখের স্বপন দেখিতে ছিলাম যবে, মধুর সঙ্গীত রবে, চমকি চাহিনু, গীত মোহিল জীবন | সুদূর স্বপন সম, সে গীত শ্রবণে জাগিল মানস মম, নিরাশায় আশা সম, একটি বিগত স্মৃতি ভাসিল পরাণে | বহুদিন একদিন প্রবাসে যখন অশ্রুজলে ভাসি ভাসি জীবনের দিবা নিশি যাইত বহিয়া দুঃখে বিষাদিত মন | ছিল না বান্ধব কেহ, একাকী বিজনে আপন যাতনা কত সহিতাম অবিরত, পুড়িত জীবন মম, দুঃখের দহনে | সে দুঃখ তিমির মাঝে চপলার প্রায় একটি সুখের গীত প্রবেশি আমার চিত করেছিল আলোকিত শান্তির প্রভায় | সেই দিন সে সঙ্গীত করিয়া শ্রবণ জুড়াল ব্যথিত প্রাণ, হৃদয়ে লইয়া গান দেখিলাম শতবার সুখের স্বপন | আর এক দিন বসি সেই চন্দ্রালোকে, শুনি সেই গীতধ্বনি সেই চারু নিশীথিনী--- হেরিয়া হাসিয়াছিনু প্রাণের পুলকে | সেই নৈশ নীলাম্বর কম্পিত করিয়া--- উন্মত্ত বিদ্যুৎ প্রায়, ছুটিল সঙ্গীত তায়, থাকিলাম শূণ্য প্রাণে সকল ভুলিয়া | সে সঙ্গীতে সেই দিন ভাবিনু আবার--- "কেন রে জীবন মম তরল সঙ্গীত সম হইল না সুখময়", অনন্ত অপার | আজি এই চন্দ্রালোকে নীরবে বসিয়া বিগত শতেক কথা--- দিতেছে হৃদয়ে ব্যথা, বহিতেছে অশ্রুনীর কপোল ভিজিয়া | সেই চন্দ্রলোক, আর সেই শশধর তেমন সুন্দর আর--- দেখিব না এ সংসার শুনিব না সে সঙ্গীত ভাসায়ে অন্তর | আজি এই চন্দ্র কেন মলিন এমন? নাহি সেই হাস্যরাশি, তেমন সুন্দর শশী দেখিব না এ জনমে ভরিয়া নয়ান | আর শুনিব না গীত তেমন মধুর, সে সঙ্গীত পারাবারে ভাসিব না আর ফিরে, দেখিব না পুনঃ ধরা সেরূপ সুন্দর | সেই চন্দালোক, সেই সঙ্গীত লহরী চিরদিন হৃদে লয়ে থাকিব মোহিত হয়ে, বাজিবে শ্রবণে তাহা দিবস শর্বরী | সুখে দুঃখে চিরদিন ভাবিব নিয়ত, "হায়রে জীবন মম কেন রে সঙ্গীত সম হইল না সুখময়," করিয়া মোহিত | আজি সেই চন্দ্রালোক করিয়া স্মরণ শূণ্য নেত্রে কতবার হেরিলাম চারিধার বুঝিলাম তমময় হৃদয় গগন | . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
সিন্ধু কবি প্রসন্নময়ী দেবী ভারতী পত্রিকা, ভাদ্র ১৩১৮ সংখ্যা (অগাস্ট ১৯১১) থেকে নেওয়া। অনন্ত বিশাল বপু করিয়া বিস্তার উত্তাল তরঙ্গ ভঙ্গে ভৈরব নিনাদ রঙ্গে আহ্বানিছ বিশ্বজনে জলধি দুর্ব্বার। উন্মত্ত আহবে মাতি গচ্ছিতেছ দিবারাতি সর্ব্বসংহারক মূর্ত্তি সতত তোমার, ভীমনাদে রুদ্র রবে ডাকিয়া কহিছ সবে মুক্তি পথে যাইবার এই “সর্গদ্বার।” নাহি ক্লান্তি নাহি ক্লেশ কৃষ্ণবর্ণ ভয়ঙ্কর আঁধার হৃদয়, তব নীল কলেবর ক্রোধে সদা জর জর অগণ্য বালুকা বাহি ঘোষিছে প্রলয়, সহস্র নাগিনী যেন উগারিয়া শ্বেত ফেন তীর ভূমে আছাড়িয়া পড়িছে সরোসে, ব্রহ্মাণ্ড করিতে গ্রাস জগত জুড়িয়া ত্রাস তুলিছে বাসুকীর গরল নিশ্বাসে! মথিয়া তোমার বারি সর্ব্বস্ব লয়েছে কাড়ি দেবগণ, সেই ক্ষোভে প্রতিহিংসাসার--- তোমার জীবন আজি, কৌস্ভ রতন রাজি নাহি, লক্ষ্মী তিরোধান ছাড়ি রত্নাকর, সুধাভাণ্ড গেছে লয়ে হলাহল ঢালি দিয়ে দুরন্ত হৃদয় আরো অশান্ত করিয়া, মাতৃহারা হয়ে তাই মুহুর্ত্তের শান্তি নাই জগবন্ধু গদাশ্রয় গিয়েছ ভুলিয়া। . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
আগমনী কবি প্রসন্নময়ী দেবী ভারতী পত্রিকা, কার্তিক ১৩১৮ সংখ্যা (অক্টোবর ১৯১১) থেকে নেওয়া। বরষার অবসান, স্নিগ্ধ প্রকৃতির প্রাণ শরতের মধুর পরশে, বাদল আসেনা নামি, বজ্রনাদ গেছে থামি |
. **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
বর্ষ-প্রবেশ প্রসন্নময়ী দেবী ভারতী পত্রিকা, বৈশাখ ১৩৩৩ সংখ্যা (এপ্রিল ১৯২৬) থেকে নেওয়া। |
. **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
সন্ধ্যাতারা কবি প্রসন্নময়ী দেবী কবিতাটি আমরা পেয়েছি যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, বঙ্গের মহিলা কবি, ১৯৩০ থেকে। (অংশবিশেষ) উঠেছিল সন্ধ্যার আকাশে, প্রভাত না হ’তে রাতি নির্ব্বাণ করিয়া ভাতি চলে গেল পুনঃ পরকালে তব পানে নেত্র তুলে’ অজানা নদীর কূলে ভেবেছিনু হয়ে যাব পার, ঘাটে নাই তরীখানি পথ কভু নাহি জানি কেমনে যাইব পর পার! * * * * সেই এক সন্ধ্যা তারা মম, সাঁঝের আকাশতলে নিত্য যাহা নিভে জ্বলে সে ত নহে মোর তারা মম। বিদায় সন্ধ্যাকালে হৃদয়ের অন্তরালে আছে যাহা গোপনে গোপন, শরীরী মূরতি ধীরে দাঁড়ায়ে সমুখে ফিরে সন্ধ্যাতারা দেখিব তখন। . **************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |