কবি প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান ও কবিতা
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
কথা -- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা -- ১৮ জানুয়ারী, ১৯৯৩

সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
চুপ করে থাক, কথা বোলোনাকো চণ্ডীদাস গোঁসাই |
---- একই বৃত্তে দুটি ফুল মোরা হিন্দু মুসলমান
বিলকুল ভুল, নজরুল তুমি বন্ধ কর জবান |
আমাদের হাতে নেশার পাত্র, ভনভন করে মাছি
ভাইয়ের রক্ত সারা গায়ে মেখে বড় আনন্দে আছি |

.                   *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
খাওয়া-পরা-থাকার গান
কথা -- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা--- সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪

.         খাওয়া-পরা-থাকার গান

ঠিক এখনই যখন আমি গান গাইছি
কতো মানুষ হন্যে হয়ে খাবার খোঁজে |
গান ত ভালোই, খাবার কিন্তু খুব জরুরী,
এ কথা খুব সহজ কথা, সবাই বোঝে |

খাওয়া খাবার অবাধ্য এই শব্দ দুটো
ঘুরে ফিরে আসবে ঠিকই চোদ্দশোবার |
শুনছি কিছু পাগল আজও স্বপ্ন দেখে
একদিন ঠিক মিলবে খাবার সবার সবার |

ঠিক এখনই যখন আমি গান গাইছি
ছেঁড়া ফালি কাপড়ে কেউ শরীর ঢাকে,
গান ত ভালোই, কাপড় কিন্তু খুব জরুরী,
এ কথা খুব সহজ কথা বুঝবে না কে ?

কাপড়ই তো শীতে বাঁচায়, লজ্জা রাখে----
কাপড় আবার প্রিয়ের চোখে নতুন হবার
শুনছি, কিছু পাগল আজও স্বপ্ন দেখে
একদিন ঠিক মিলবে কাপড়, সবার সবার |

ঠিক এখনই যখন আমি গান গাইছি
কতো মানুষ কাটাচ্ছে দিন পথের ধারে |
গান ত ভালোই ঘরও কিন্তু খুব জরুরী
এ কথা ত কচিকাঁচাও বুঝতে পারে |

একটু আরাম, আশ্রয় রোদ ঝড় বাদলে
ঘর আহা ঘর দিনের শেষে ফিরে আসার---
শুনছি কিছু পাগল আজও স্বপ্ন দেখে
সবাই পাবে একদিন ঘর, ভালোবাসার |

খাওয়া-পরা থাকার কথা সাদামাটা
গানের সুরে এ সব বলার কিই বা আছে
গান না গেয়ে, ইচ্ছে করে, ঘুরে বেড়াই
সবার জন্যে পাগল যারা আদের কাছে |

পাগলগুলোর স্বপ্নের ফুল ফুটবে কবে ?
খাবার, কাপড়, ঘর, এ-সবই সবার হবে |

.                   *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
যেখানেই জনগণ সংগ্রামরত
কথা -- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা----২২ /২৩ ডিসেম্বর, ১৯৮২
( ভারত-চীন মৈত্রী সমিতির কোটনিস স্মরণ সভার জন্য লেখা  )


যেখানেই জনগণ সংগ্রামরত
.           আজও সেখানেই চেয়ে দেখি কোটনিস

জনতার সেবার মন্ত্র নিয়ে
.           ভালোবাসা ছড়ায় আজ কোটনিস

মহান ভারতের সন্তান
.           মহাচীনের আপন জন কোটনিস
আ----
.           ভালোবাসার পারাবার
.           গঙ্গা হোয়াং-হো একাকার
চলো যাই সাগরতীরে মিশে যাই সাথীর ভীড়ে
গাই গান মৈত্রী-একতার, গঙ্গা হোয়াং-হো একাকার |
বেঁচে আছে কোটনিস আছে যতদিন
.           উন্নত তাই আর হিমালয়
দুই মহাজাতির মিলন মহান
.           এই বন্ধন হোক চির অক্ষয়
মহান ভারতের জনতার
.           মহাচীনের জনতার হোক জয় |
আ---
.           ভালোবাসার পারাবার
.           গঙ্গা হোয়াং-হো একাকার
চলো যাই সাগরতীরে মিশে যাই সাথীর ভীড়ে
গাই গান মৈত্রী-একতার, গঙ্গা হোয়াং-হো একাকার |

.                   *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
চুপ চুপ চুপ
কথা -- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা --- ১৯৮৪

চুপ চুপ চুপ
টাকার পাহাড় রাখুক ঢেকে
কঙ্কালেরই স্তুপ |
ভূপাল শুধু ভূপালে নেই, ভূপাল সারা দেশে
আকাশে বিষ বাতাসে বিষ জলেতে বিষ মেশে |
ভেবে দেখ, ইচ্ছে করে বিষ তো কেউ মেশায় না
বিষ ঠেকাতে খরচ অনেক, পড়তায় পোষায় না |
ভেবে দেখ, রাখতেই হয় ঠিকমতো মুনাফা
লোকের অভাব নেই তো দেশে, হোক না কিছু সাফা |
চুপ চুপ চুপ----
কাজ করলে হতেই পারে কিছুটা ভুল ভ্রান্তি
তেমন কিছু নয়তো এসব, বজায় রাখ শান্তি |
অন্য দেশের মানুষগুলো বেজায় রকম খাপ্পা
যা-খুশি তা যায় না করা, যায় না দেওয়া ধাপ্পা
এ দেশেতে দেখছি আছে অনেক লক্ষ্মী ছেলে
চুপটি করে নাকে মুখে জব্বর বিষ গেলে |
চুপ চুপ চুপ ---
ধর্মভীরু ধনপতি মঠমন্দির বানায়
জলেতে বিষ মেশানো হয় প্রভুরই কারখানায়
চাষীরা দেয় কপালে হাত ঊষর হ’ল মাটি
তিলে তিলে মরছে মানুষ, নেই ত লাঠালাঠি |
পালে পালে মরলে মানুষ হয় কিছু হৈ চৈ
তিলে তিলে মরলে মানুষ, বিপদ সামান্যই |
চুপ চুপ চুপ --

.                *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
আর কেঁদোনা, মা, আমায় যেতে দাও
গীতিরূপান্তর ও সুর--- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা -- ১৯৮৪, ১৯৮৫
[  ফ্রেজিকো ম্যাকের একটি দীর্ঘ কবিতার প্রথম স্তবকের বাংলা অনুবাদ অবলম্বনে গান  |
বাংলা অনুবাদটি সিসৃকা পত্রিকার ১৯৮৪-র কোনো সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল
| রূপান্তরে পরিবর্তন ও সংযোজন করা হয়েছে | যেমন শেষ পংক্তিটি কবির সংযোজন | ]


আর কেঁদোনা, মা, আমায় যেতে দাও |
আকাশে বিদ্যুত্সঙ্কেতে ভেসে ওঠে আমার গান |
বজ্র নির্ঘোষে আসে ডাক----
যেতে হবে সেই পথে যে পথে মুক্তির অঙ্গীকার
আর কেঁদোনা মা ----
আমার সঙ্গীরা চলে গেছে সে পথে অনেক আগেই
ফিরবে না, ফিরবে না আর কোনদিন
তোমার বাগানের গোলাপ ফুলেরা আজও বয়
সেই সব তরতাজা গোলাপ ফুলের স্মৃতি
কেঁদোনা মা আর কেঁদোনা আর
তোমার ছেলেরা ডাকে, তোমার ছেলেকে আজ
আর কেঁদোনা মা -----

.                *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
আয় কালবৈশাখী হাওয়া, উড়িয়ে নে
গীতিরূপান্তর ও সুর --প্রতুল মুখোপাধ্যায়
রচনা -- ১৫ জুলাই, ১৯৮৫
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া

আয় কালবৈশাখী হাওয়া, উড়িয়ে নে
শুকনো আবর্জনা ধূলো, মৃত্যু, অপমান
আন বুকে স্পর্ধা আন, কন্ঠে জীবনের গান |
বোবা অন্ধ আমার স্বদেশ |
আয় কালবৈশাখী হাওয়া, আন ঝড় আন
বুকের ভিতর, ভারতবর্ষ দেখি অন্যভাবে
.                                             শপথে আলোকে
ভারতবর্ষ দেখি অন্যভাবে
কে আর অনন্ত কান্না পুষে রাখে, পুড়ে যায় শোকে
চারদিকে নবজন্ম, দেশে দেশে শঙ্খ বাজে
.               দিকে দিকে শোনা যায় মানুষের গান |

.                *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
আমরা চূর্ণ করেছি পাহাড়
ভাষান্তর ও গীতিরূপান্তর --- প্রতুল  মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
[  জর্জ রেবেলার কবিতার ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনে ]
রচনা---মার্চ, ১৯৮৩


আমরা চূর্ণ করেছি পাহাড়,
টুকরো করেছি বোল্ ডার,
বিরাট বিশাল প্রোজেক্ট গড়ে ওঠে
কিন্তু খাটে কারা ?
আর কারাই বা লোটে ?

আমরা আগাছা করেছি সাফ
চাষ করেছি খেতে
সারা মাঠ জুড়ে দেখ শস্যের কি সম্ভার,
আমাদেরই ঘাম দিয়ে, জল দিয়ে তো নয় |
কিন্তু সে ফসল কার ?
খুঁদকুঁড়ো কার জোটে ?

আমরা সূতো বুনি, চালাই তাঁত
রাতদিন দিন রাত
বানিয়ে চলি কতো ঝলমলে রঙীন পোশাক
আমাদের নাড়ী দিয়ে, সূতো দিয়ে নয় |
কিন্তু কারা পায় ওম ?
কারা মরে শীতে ?

.                *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
আমরা মেশিন চালাই
গীতিরূপান্তর ও সুর--- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনা --- ২৩শে মে, ১৯৮৬


আমরা মেশিন চালাই
কলকারখানা চলে,
উত্পাদন বেড়ে চলে দ্বিগুণ আরো দ্বিগুণ
আমাদেরই শক্তিতে, বিদ্যুতে নয়
কিন্তু,
কারা থাকে বাংলোয়
কারা ঝুপড়িতে |

এখন বুঝেছি কি থেকে কী হয়
স্থির রয়েছে লক্ষ্যে |

বিপ্লব আনবই, আনবই বিপ্লব
সংগ্রামে সংগ্রামে ক্লান্তিবিহীন
তখন
তোমাদের হবে শেষ |
( আর ) আমাদের শুরু |

.             *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
আমি কি গান গাব যে ভাবে না পাই
কথা -- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
রচনাকাল--- জানুয়ারী --অগস্ট ১৯৯০


আমি কি গান গাব যে ভাবে না পাই
আমি কি গান গাই
যখনই গাই, আমি দেখতে পাই
কোথা থেকে গান আমার সামনে দাঁড়ায়
বন্ধুর মত তার দু হাত বাড়ায়---
বলে এসেছি ফের, তুমি ডেকেছ তাই
শুধু এখানে নয় চল সেখানে যাই |

এখানে নয় মানে !  যাব কোথায় :
তোমার গান রোজ যেখানে যায়
হয়নি তাদের পথ, হাতে মেলাই হাত
ছুঁই তাদের দিন, ছুঁই তাদের রাত |
আমি কি গান গাব যে ভেবে না পাই, আমি কি গান গাই |

যখনই গাই আমি দেখতে পাই
কোথা থেকে গান আমার সামনে দাঁড়ায়
বন্ধুর মত তার দুহাত বাড়ায়
বলে এসেছি ফের, তুমি ডেকেছ তাই
শুধু এখানে নয়, চল সেখানে যাই |

এখানে নয় মানে, যাব কোথায় ?
তোমার গান রোজ যেখানে যায়
তোমার গানে যারা প্রাণ ছোঁয়ায়
চল তাদের কাছে তারা তোমাকে চায় |
চলো সেখানে যাই, সেই শহর গ্রাম
সেখানে তারা খাটে, কঠোর ঘাম
হাঁটি তাদের পথ, হাতে মেলাই হাত
ছুঁই তাদের দিন, ছুঁই তাদের রাত

নেই ছন্দ মিল, আজ বন্ধ মিল---
কতদিন ধরে, ঘরে অন্ন নেই
তবু বাঁচার পথে সব্বাই সামিল
চলো তোমাকে নিয়ে যাই সেইখানেই

কি করে যাই, সে সময় কোথায় ?
সামনে পড়ে যত জরুরী কাজ |
আমার গান বলে তবে বিদায়
আমাকে ফিরে যেতে হবেই আজ |

আমি দাঁড়িয়ে থাকি, গান এগিয়ে যায়
দেখা কি হবে আর ?  ভাবছি তাই
আমার সুর দূরে মিলিয়ে যায়
আমাকে ঘিরে ধরে শূন্যতাই
আমি কি গান গাই |

.             *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর      
দেশে নববিধান---
কথা - প্রতুল মুখোপাধ্যায়
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত যুদ্ধ জয়ের গান থেকে নেওয়া
প্রেরণা - মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
রচনা --- ৮মার্চ ১৯৯৪

দেশে নববিধান----
দেশে নববিধান আসিতেছে জননী সাবধান
তিন সন্তানের জন্ম দিলেই চরম অপমান
আর উপায়ও নেই-----

আর উপায় ত নেই, মায়ের কাজে সবেতন ছুটি
বারবার দু বারের পর হবেনাত উটি
এবার বুঝবে ঠেলা----

এবার বঝবে ঠেলা সারাবেলা খেটে খেটে মরে
বাচ্চা বাড়ুক পেটে কিংবা কাঁদুক ঘরে
নইলে মাইনে কাটা

নইলে মাইনে কাটা শুকনো ডাটা চিবাও শুকনো মুখে
দেশের ভালো বুঝবে না তো, শেখো থেকে ভুখে
তারা যা খুশি তাই----

তারা যা খুশি তাই করতে পারে পুরুষ মহারাজ
তারা করবে শাসন, জন্মশাসন সেটা তোমার কাজ
খাও জড়িবুটি ইটিউটি যা হয় তা করো
সন্তান বন্ধ, ভ্রূণ বধ বা নিজে প্রাণে মরো
নইলে দেশের বিপদ
নইলে দেশের বিপদ বাঁচার কি পথ নিজেরা শেখালো
গরীবগুলো যত কমে দেশের তত ভালো
জয় মালঘুসবাবা বোকাহাবা বুঝেছি এই সত্য
গরীব দেশে চান তোমার পচাগলা তত্ত্ব
আহা গরীব মরুক

আহা গরীব মরুক ধনী বাঁচুক কথা চাছাছোলা
গান ফুরাল এবার চলো খাই কোকাকোলা, এই শেয়ালদায়

.             *******************
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর