প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা
*
ফ্যান
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র

নগরের পথে পথে দেখেছ অদ্ভুত এক জীব
ঠিক মানুষের মতো
কিংবা ঠিক নয়,
যেন তার ব্যঙ্গ-চিত্র বিদ্রূপ-বিকৃত !
তবু তারা নড়ে চড়ে কথা বলে, আর
জঞ্জালের মত জমে রাস্তায়-রাস্তায়।
উচ্ছিষ্টের আস্তাকূড়ে ব'সে ব'সে ধোঁকে
আর ফ্যান চায়।

রক্ত নয়, মাংস নয়,
নয় কোন পাথরের মতো ঠান্ডা সবুজ কলিজা।
মানুষের সত্ ভাই চায় সুধু ফ্যান;
তবু যেন সভ্যতার ভাঙেনাকো ধ্যান !
একদিন এরা বুঝি চষেছিল মাটি
তারপর ভুলে গেছে পরিপাটি
কত-ধানে হয় কত চাল;
ভুলে গেছে লাঙলের হাল
কাঁধে তুলে নেওয়া যায়।
কোনোদিন নিয়েছিল কেউ,
জানেনাকো আছে এক সমুদ্রের ঢেউ
পাহাড়-টলানো।

অন্ন ছেঁকে তুলে নিয়ে,
ক্ষুধাশীর্ণ মুখে যেই ঢেলে দিই ফ্যান
মনে হয় সাধি এক পৈশাচিক নিষ্ঠুর কল্যাণ ;
তার চেয়ে রাখি যদি ফেলে,
পচে পচে আপন বিকারে
এই অন্ন হবে না কি মৃত্যুলোভাতুরা
অগ্নি-জ্বালাময় তীব্র সুরা !
রাজপথে এই সব কচি কচি শিশুর কঙ্কাল--মাতৃস্তন্যহীন,
দধীচির হাড় ছিলো এর চেয়ে আরো কি কঠিন ?

.       ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
জং
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র

হাওয়া বয় সন সন
তারারা কাঁপে।
হৃদয়ে কি জং ধরে
পুরানো খাপে।
কার চুল এলোমেলো।
কি বা তাতে এলো গেলো !
কার চোখে কত জল
কে বা তা মাপে ?

দিনগুলি কুড়োতে
কত কি তো হারালো।
ব্যথা কই সে ফলা-র
বিঁধেছে যা ধারালো !

হাওয়া বয় সন সন
তারারা কাঁপে।
জেনে কি বা প্রয়োজন
অনেক দূরে বন
রাঙা হ'ল কুসুমে, না,
বহ্নিতাপে ?
হৃদয়ে মরচে-ধরা
পুরানো খাপে।

.       ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
পাখিদের মন
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র

নির্জন প্রান্তরে ঘুরে হঠাত্ কখন,
হয়তো পেতেও পারি পাখিদের মন।
আর শুধু মাটি নয় শ্স্য নয়,
নয় শুধু ভার,
আর-এক বিদ্রোহী ধিক্কার--
পৃথিবী-পরাস্ত-করা উজ্জল উত্ ক্ষেপ।
আজো এরা মাঠে-ঘাটে মাটি খুঁটে খায়,
মেনে নেয় সব কিছু দায় ;
তবু এক সুনীল শপথ
তাদের বুকের রক্ত তপ্ত করে রাখে।
জীবনের বাঁকে বাঁকে, যত গ্লানি যত কোলাহল
ব্যাধের গুলির মতো বুকে বিঁধে রয়,
সে-উত্তাপে গ'লে গিয়ে হ'য়ে যায় ক্ষয়।
শুধু দুটি তীব্র তীক্ষ্ণ দুঃসাহসী ডানা,
আকাশের মানে না সিমানা।
কোনোদিন এ-হৃদয় হয় যদি একান্ত নির্জন,
হয়তো পেতেও পারি পাখিদের মন
--আর এক সূর্য-সচেতন।

.       ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সাপ
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র

প্রথম সাপটা দেখবে নিথর পাথর সন্মোহিত,
কোন সে আদিম অন্ধ অঘোর অন্বেষণের দ্বিধা
আঁধার-ছোঁয়ানো ছায়া-বিদ্যুত হেনে খোলে কুণ্ডলী!

তারপর সাপ অনেক দেখবে
  কেঁপে-ওঠা শরবন।
কাঁটা-দেওয়া ঘাস সভয়ে শুনবে
  গোপন সঞ্চারণ,
---শোনা না-শোনার সীমানার শুধু স্তব্ ধতা  শিহরিত |

সব শেষে এক সাহসী সকাল
  গহন অতল থেকে,
হিমেল হিংসা ছেঁকে নিয়ে এসে
  রোদ্দুরে মেলাবে কি?
ছন্দে মেলাবে ঘৃণা-পিচ্ছল বিবরের
সরীসৃপের বিষফণা আর পাখিদের নীল মুক্তি!

.       ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কাগজ বিক্রী
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র

হাঁকে ফিরিওলা--- কাগজ বিক্রী,
   পুরানো কাগজ চাই!
ঘরের কোণেতে সঞ্চিত যত
   তাড়াগুলি হাতড়াই |
   পুরানো কাগজ চাই |
বহুদিন ধরে জঞ্জাল বাড়ে
   সের দরে বেচি তাই |
কেমন করিয়া একটি তাহার
   হঠাত্ নজরে পড়ে,
দেখি সমুদ্রে যাত্রী-জাহাজ
   কোথাও ডুবিল ঝড়ে |
   হঠাত্ নজরে পড়ে,
আবার কোথায় মানুষের মাথা,
   বিকাল খুলির দরে |

নিরুদ্দেশ কে সন্তান লাগি
   ঘোষিছে পুরস্কার,
মৃত্যুঞ্জয় অমৃত কারা
   রিছে আবিষ্কার |
   ঘোষিছে পুরস্কার,
পলাক খুনে লুকায়ে কোথায়
   চাই যে হদিস্ তার |

কোন সে বধুর বুকের আগুন
   ভিতর করিয়া খাক্,
অবশেষে লাগে বসনে তাহার,
   পুড়ে গেল সাতপাক |
   ভিতর করিয়া খাক্,
কোন্ সে গিরির গরল অনল
   ঘটাল দুর্বিপাক |

হারানো তারিখ ফিরে আসে ফের
  পুরানো কাগজ পড়ি ;
আমার নয়নে সহসা পোহায়
  সে দিনের বিভাবরী |
  পুরানো কাগজ পড়ি,
রাখিল ধরনী সেই দিনটির
  পায়ের চিহ্ন ধরি |

সে পদচিহ্ন কোথায় মিলাল
  তারপর নাহি খোঁজ!
মানুষের ঘরে সকলের বড়
  উত্সব নওরোজ |
  তারপরে নাহি খোঁজ ;
যাত্রী জাহাজে ডুবিল যে, বুঝি,
  তারো ঘরে আজি ভোজ |

রক্তে ছোপান অশ্রুতে ভেজা
  পুরাতন যত খাতা,
সব জঞ্জাল আজিকে, হলেও
  রঙীন সুতোয় গাঁথা |
  পুরাতন যত খাতা,
তাতে কোন্ দিন কি দাগ লাগিল
  কে বৃথা ঘামায় মাথা |

হাঁকে ফিরিওয়ালা, কাগজ বিক্রী,
  পুরানো কাগজ চাই |
ঘর ভরি যত মিছে জঞ্জাল
  জমাবার নাই ঠাঁই |
  পুরানো কাগজ চাই ;
আদর যহার ফুরালো, তাদেরে
  সের দরে বেচ ভাই |

.       ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সাধু
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র

সাদা মেঘগুলো ভেসে চলে যায়
.        কোনো তাড়া কোনো কাজ নেই।
জল নেই আর জ্বালাও নেইক
.        কোনো রং কোনো সাজ নেই।

পাহাড়ের গায়ে মঠের চূড়োটা ছাড়িয়ে,
মেঘগুলো যায় নীল দিগন্তে হারিয়ে।
মঠ থেকে বাজে ঘন্টা
মনটা কেমন করে,
মঠের মাঝের বুড়ো সাধুটিরে
থেকে থেকে মনে পড়ে।

মেঘের মতন সাদা চুল তার,
.        গোঁফ দাড়ি সাদা ধবধবে,
মুখে লেগে আঝে প্রাণের হাসির
.        ফেনাই বুঝি বা হবে।
পাথুরে সিঁড়ির ধারে বসে থাকে
.        মনে হয় কোনো কাজ নেই।
প্রীতির জারকে জরে’ জরে’ যেন
.        মনে আর কোনো ঝাঁজ নেই।
ঢিলে কোঁচকানো মুখখানি তার,
.        মনে শুধু কোনো ভাঁজ নেই।

কেউ যদি তারে শুধায় কখনো,
.        এ হাসি কোথায় পেলে ?
সাধু হেসে বলে,--- পেয়েছি হৃদয়
.        আঁখি জলে ধুয়ে ফেলে।
যো-মেঘ ঝড়ের তাড়া খেয়ে ফিরে
.        কালো হয়ে নেমে আসে,
নিজেরে উজাড় করে’ ঢেলে সে-ই
.        সাদা হাসি হয়ে ভাসে।

.       ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমি কবি যত কামারের
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র
কবির প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “প্রথমা”-র (১৯৩২) কবিতা।
সুকুমার সেন সম্পাদিত “বাংলা কবিতা সমুচ্চয়” ১ম খণ্ড থেকে নেওয়া |


আমি কবি যত কামারের আর কাঁসারির আর ছুতোরের,
.                                      মুটে মজুরের,
.                              --- আমি কবি যত ইতরের !

আমি কবি ভাই কর্মের আর ঘর্মের ;
.    বিলাস-বিবশ মর্মের যত স্বপ্নের তার ভাই,
.                সমর যে হায় নাই !

মাটি মাগে ভাই হালের-আঘাত,
.                সাগর মাগিছে হাল,
পাতালপুরীর বন্দিনী ধাতু
.                মানুষের লাগি কাঁদিয়া কাটায় কাল,
দুরন্ত নদী সেতুবন্ধনে বাঁধা যে পড়িতে চায়,
.                নেহারি আলসে নিখিল মাধুরী
.                                সময় নাই যে হায় !

মাটির বাসনা পূরাতে ঘুরাই
.           কুম্ভকারের চাকা,
আকাশের ডাকে গড়ি আর মেলি
.                দুঃসাহসের পাখা,
অভ্রংলিহ মিনার-দন্ত তুলি
ধরণীর গূঢ় আশার দেখাই উদ্ধৃত অঙ্গুলি |

জাফ্ রি-কাটানো জানালায় বুঝি
.                  পড়ে জ্যোত্স্নার ছায়া,
প্রিয়ার কোলেতে কাঁদে সারঙ্গ
.                   ঘনায় নিশীথ মায়া |
দীপহীন ঘরে আধো-নিমীলিত
.                   সে দুটি আঁখির কোলে,
বুঝি দুটি ফোঁটা অশ্রুজলের
.                    মধুর মিনতি দোলে |
সে মিনতি রাখি সময় যে হায় নাই,
বিশ্বকর্মা যেথায় মত্ত কর্মে হাজার করে
.            সেথা যে চারণ চাই !

আমি কবি ভাই কামারের আর কাঁসারির
.     আর ছুতোরের, মুটে মজুরের,
.                 ----আমি কবি যত ইতরের |

কামারের সাথে হাতুরি পিটাই
.                ছুতোরের ধরি তুরপুন,
কোন্ সে অজানা নদীপথে ভাই
.                 জোয়ারের মুখে টানি গুণ !
পাল তুলে দিয়ে কোন সে সাগরে,
.                জাল ফেলি কোন দরিয়ায় ;
কোন্ সে পাহাড়ে কাটি সুড়ঙ্গ,
.                কোথা অরণ্য উচ্ছেদ করি ভাই কুঠার-ঘায় |
সারা দুনিয়ার বোঝা বই আর খোয়া ভাঙি
.                আর খাল কাটি ভাই, পথ বানাই,
স্বপ্ন বাসরে বিরহিণী বাতি
.    মিছে সারারাতি পথ চায়,
.                হায় সময় নাই !

.              ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
হারিয়ে
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র
ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “শুধু আবৃত্তির জন্য” কবিতা সংকলন  থেকে নেওয়া |

শম্ভু মিত্রের কণ্ঠে এই কবিতাটির আবৃত্তি শুনতে এখানে ক্লিক করুন . . .      

কোনোদিন গেছ কি হারিয়ে,
হাট-বাট নগর ছাড়িয়ে
.            দিশাহারা মাঠে,
একটি শিমুলগাছ নিয়ে
.            আকাশের বেলা যেথা কাটে ?

সেখানে অনেক পথ খুঁজে
পৃথিবী শুয়েছে চোখ বুঁজে
.            এলিয়ে হৃদয় |
শিয়রে শিমুল শুধু একা
.            চুপ ক’রে রয় |

পথ খুঁজে যারা হয়রান
কোনোদিন সেই ময়দান
.            তারা পেয়ে যায় |
হঠাৎ অবাক হয়ে
.            আশেপাশে ওপরে তাকায় |

কোনো পথ যেখানেতে নেই
সেখানেই মেলে এক খেই
.             আরেক আশার |
সব পথ পারাবার পর
.             বুঝি খোঁজ মেলে আপনার |

একদিন যেও না হারিয়ে
চেনা মুখ শহর ছাড়িয়ে
.              অজানা প্রান্তরে
একটি শিমুল আর আকাশ যেখানে
.           মুখোমুখি চায় পরস্পরে |

.              ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ফেরারী ফৌজ
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র
ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “শুধু আবৃত্তির জন্য” কবিতা সংকলন  থেকে নেওয়া |


নীলনদীতট থেকে সিন্ধু-উপত্যকা,
সুমের, আক্কাড আর গাঢ়-পীত হোয়ংহোর তীরে,
বার বার নানা শতাব্দীর
আকাশ উঠেছে জ্বলে, ঝলসিতে যাদের উষ্ণীষে,
সেই সব সেনাদের
চিনি, আমি চিনি ;
---সূর্যসেনা তারা
রাত্রির সাম্রাজ্যে আজো
সন্তর্পণে ফিরিছে ফেরারী |
মাঝরাতে একদিন
বিছানায় জেগে উঠে বসে,
সচকিত হয়ে তারা
শুনেছে কোথায় শিঙা বাজে,
সাজো সাজো, ডাকে কোন্ অলক্ষ্য আদেশ |
জনে জনে যুগে যুগে
বার হয়ে এসেছে উঠানে ,
আগামী দিনের সূর্য দেখেছে আঁধারে
গুঁড়ো গুঁড়ো করে সারা আকাশে ছড়ানো |
সহসা জেনেছে তারা,
এই সব সূর্য-কণা তিল তিল করে,
বয়ে নিয়ে যেতে হবে কালের দিগন্তে,
রাত্রির শাসন-ভাঙা
ভয়ংকর চক্রান্তের গুপ্তচর-রূপে |
এক একটি সূর্য-কণা তুলে নিয়ে বুকে,
দুরাশার তুরঙ্গে সওয়ার
দুর্গম যুগান্ত-মরু পার হবে বলে,
তারা সব হয়েছে বাহির |
সুদূর সীমান্ত হায়
তারপর সরে গেছে প্রতি পায়ে পায়ে ;
গাঢ় কুজ্ঝটিকা এসে
মুছে দিয়ে গেছে সব পথ ;
ভয়ের তুফান-তোলা রাত্রির ভ্রূকুটি
হেনেছে হিংসার বজ্র |
দিগ্বিদিক-ভোলানো আঁধারে
কে কোথায় গিয়েছে হারিয়ে |
রাত্রির সাম্রাজ্য তাই এখনো অটুট !
ছড়ানো সূর্যের কণা
জড়ো করে যারা
জ্বালাবে নতুন দিন,
তারা আজো পলাতক,
দলছাড়া ঘুরে ফেরে দেশে আর কালে |
তবু সূর্য-কণা বুঝি হারাবার নয় |
থেকে থেকে জ্বলে ওঠে শাণিত বিদ্যুৎ
কত ম্লান শতাব্দীর প্রহর ধাঁধিয়ে
কোথা কোন্ লুকানো কৃপাণে
ফেরারী সেনার |
এখনো ফেরারী কেন ?
ফেরো সব পলাতক সেনা |
সাত সাগরের তীরে |
ফৌজদার হেঁকে যায় শোনো |
আনো সব সূর্য-কণা
রাত্রি-মোছা চক্রান্তের প্রকাশ্য প্রান্তরে |
---- এবার অজ্ঞাতবাস শেষ হলো ফেরারী ফৌজের |

.              ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
বেনামী বন্দর
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র
কল্লোল পত্রিকার ভাদ্র ১৩৩২ (সেপ্টেম্বর ১৯২৫) সংখ্যায় প্রকাশিত।
অরুণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত “কল্লোল কবিতা সমগ্র” থেকে নেওয়া |


.                মহাসাগরের নামহীন কূলে
.                হতভাগাদের বন্দরটিতে ভাই
.                জগতের যত ভাঙ্গা জাহাজের ভীড়,
.                মাল ব’য়ে ব’য়ে ঘাল্ হ’ল যারা
.                আর যাহাদের মাস্তুল চৌচির,
.                আর যাহাদের পাল পুড়ে গেল
.                বুকের আগুনে ভাই,
.                সব জাহাজের সেই আশ্রয়-নীড় |

কূলহীন যত কালাপাণি ম’থি
লোনা জলে ডুবে নেয়ে,
ডুবো পাহাড়ের গুঁতো গিলে আর
ঝড়ের ঝাঁকুনি খেয়ে,
যত হায়রাণ্ লবেজান্ তরী বরখাস্ত্ হ’ল ভাই
পাঁজড়ায় খেয়ে চিড়্,
মহাসাগরের অখ্যাত কূলে
হতভাগাদের বন্দরটিতে ভাই
সেই অথর্ব ভাঙ্গা জাহাজের ভীড় |

দুনিয়ার কড়া চৌকিদারী যে ভাই
হুঁশিয়ার সদাগরী,
হালে যার পানি মিলেনাক আর, তারে
যেতে হবে চুপে সরি |
কোমরের জোর কমে গেল যার ভাই,
ঘুণ ধরে গেল কাঠে আর যার কল্ জেটা গেল ফেটে
জনমের মত জখম হ’ল যে যুঝে,
সওদাগরের জেঠিতে জেঠিতে খাতাঞ্জিখানা ঢুঁড়ে
কোন দপ্তরে ভাই
খারিজ তাদের নাম পাবেনাক খুঁজে |

মহাসাগরের নামহীন কূলে,
হতভাগাদের বন্দরটিতে ভাই
সেই সব যত ভাঙ্গা জাহাজের ভিড় |
শির-দাঁড়া যার বেঁকে গেল আর দড়াদড়ি গেল ছিঁড়ে
কব্জা ও কল বেগ্ ড়াল অবশেষে,
জৌলস গেল ধুয়ে যার আর পতাকাও প’ড়ে নুয়ে
জোর গেল খুলে, ফুটো খোলে আর রইতে যে নারে ভেসে,
তাদের নোঙর নামাবার ঠাঁই
দুনিয়ার কিনারায়
যত হতভাগা অসমর্থের নির্বাসিতের নীড় |

.              ***************************        
.                                                                                
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর