কবি প্রকাশ কর্মকার – খ্যাতনামা শিল্পী ছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায়।‌ পিতা প্রহ্লাদ
কর্মকার ছিলেন নামী শিল্পী, যাঁর স্টুডিওতে চালু হয়েছিল প্রথম ন্যুড স্টাডির ক্লাস।‌ তাঁর বাড়ি ও স্টুডিও
ছিল এখনকার কাঁকুড়গাছি অঞ্চলে। দাঙ্গার সময়ে তা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

শিল্পী-কবি কলকাতার সরকারী আর্ট কলেজে ভর্তি হন ১৯৪৯ সালে। জিভের ক্যানসারে বাবা মারা যাওয়ার
পর তিনি বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। কিছুদিন পর সেনার চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসে
ছবি আঁকার জগতে।

তাঁর বাবার দুই ছাত্র কমলারঞ্জন ঠাকুর ও দিলীপ দাশগুপ্তর কাছে শিখেছেন জলরঙ। প্রখ্যাত শিল্পী নীরদ
মজুমদার প্যারিস থেকে দেশে ফিরলে, বিজন চৌধুরি এবং প্রকাশ কর্মকার তাঁর কাছে আঁকা শেখা শুরু
করেন। নীরদ মজুমদারের শিক্ষা এবং সান্নিদ্ধ তাঁর জীবনে জুগিয়েছিল নতুন আশা।‌ শুরু হল শিল্পের জগতে
তাঁর জয়যাত্রা।‌ ১৯৫৯ সালে কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরের ( সরকারী আর্ট কলেজ লাগোয়া ) রেলিঙে তাঁর
প্রথম একক প্রদর্শনী আলোড়ন ফেলে দেয়।‌ “ছবির সঙ্গে সহবাস করুন” স্লোগান তুলে গ্যালারি সিস্টেমের
বিরুদ্ধে সৃজন-জীবনের শুরুতেই তাঁর এই বিদ্রোহ বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তিনি গতানুগতিক পথে হাঁটবেন না।
এই ব্যাপারটা অনেকে আবার এভাবে দেখেছেন যে ছবি বিক্রীর পয়সায় সংসার চলতো না দেখে বাধ্য হয়ে
রাস্তায় ফেরি করে নিজের চিত্রকর্ম বিক্রিও শুরু করতে নেমেছিলেন প্রকাশ কর্মকার।

তিনি বাঙালী মধ্যবিত্তের ঠুনকো মানসিকতায় আঘাত হেনেছেন বারে বারে। নিজের জীবনের দারিদ্র,
সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে চোখের সামনে বাবার স্টুডিও ও সব ছবি পুড়ে যাওয়ার দুঃসহ স্মৃতি, সত্তর দশকের
উত্তাল কলকাতার নানা অনুষঙ্গ এসেছে তাঁর ছবিতে।‌ শেষ জীবনে অবশ্য নৈরাজ্যের সেই আঁচ কমে এলে
মন দিয়েছিলেন নিসর্গের ছবি আঁকায়।‌ যদিও তাঁর নিসর্গের মধ্যেও নৈরাজ্য ও ক্ষয়ের ক্ষত এসেছে ফিরে
বারবার।

শিল্পী-কবি, ললিতকলা আকাদেমির জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন দু’বার, ১৯৬৫ ও ১৯৬৮-তে।‌ ১৯৬৮-তে পান
ফরাসি সরকারের বৃত্তি, সে দেশের মিউজিয়ামগুলো ঘুরে দেখার জন্য।‌ তিনি সেখানে ছিলেন এক বছর।‌ এ
ছাড়া পেয়েছেন বিড়লা আকাদেমি, দিল্লীর আইফ্যাক্স, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরস্কার।‌ ২০০০ সালে
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে অবনীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত করে।‌ এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।‌
দেশ-বিদেশের অনেক সংগ্রহশালা বা গ্যালারীতে প্রকাশ কর্মকারের ছবি স্থান করে নিয়েছে।‌ অজস্র প্রদর্শনী
করেছেন।‌ সোসাইটি অফ কন্টেম্পোরারি আর্টিস্টস দলের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন প্রকাশ কর্মকার। পরে
ক্যালকাটা পেন্টার্স দল তৈরিতেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।‌

তিনি ছবি আঁকার পাশাপাশি লিখেছেন শিল্প, মনস্তত্ব, যৌনতা প্রভৃতি বিষয়ক প্রবন্ধও। এবং লিখেছেন
কবিতা।‌ তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “প্রতিমা” (১৯৮৮), “দিনযাপন শূন্যতায় দিনযাপন” (১৯৯৩),
“জন্য” (১৯৯৫), “ঘুমের মুকুটে ছিলে” (১৯৯৭), “ক্ষত” (২০০০) প্রভৃতি। তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন
পত্রিকাতেও। তাঁর আত্মজীবনী “আমি” নিঃসন্দেহে একটি দুঃসাহসী কাজ।

শিল্পী-কবির সম্বন্ধে আরও তথ্য জানতে এবং তাঁর আঁকা ছবি দেখতে তাঁর ওয়েবসাইটে যেতে
এখানে ক্লিক্
করুন

আমরা
মিলনসাগরে  শিল্পী-কবি প্রকাশ কর্মকারের কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে
আমাদের এই প্রচেষ্টাকে সফল মনে করবো। এই পাতা তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।


কবি প্রকাশ কর্মকারের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


উত্স - উত্পল ভট্টাচার্য সম্পাদিত কবিতীর্থ পত্রিকা, বৈশাখ ১৪২১ সংখ্যা।     
.         
http://www.prokashkarmakar.com    
.         
আজকাল পত্রিকা, কলকাতা ১২ ফাল্গুন ১৪২০ মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।     
.         
উইকিপেডিয়া    


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতা প্রকাশ - ৪.৭.২০১৪
...