রাধারানী দেবীর কবিতা
www.milansagar.com
.        সে আলোকরাগে সকলি লাগিল সোনা,
.        জ্যোতিতে ভরিল হিয়ার আঁধার কোনা |
যেন ঘন নিশা-শেষে---
উদিল অরুণ এসে |

অন্তরে মোর জনহীন বনতলে
আসিলে একদা কুসুম-চয়ন ছলে!
.        গাহিয়া উঠিল শাখে শাখে যত পাখি
.        “---ওগো চির-চেনা! এলে নাকি ? এলে নাকি ?”
নব বসন্ত শোভা
বিকশিল মনলোভা |

ওগো সুন্দর! তোমার অরূপ কলা
সুন্দর করে হয়নি আমার বলা |
.        নিশীথিনী-ভালে চন্দ্র-তিলক সম
.        তোমার উদয় জীবনের পটে মম!
অমল কিরণ ধারে
প্লাবিছে একেবারে!

তোমার স্নেহের শিশিরে হে প্রিয়তম!
ঝলমল করে জীবন-কমল মম!
.        তোমার প্রেমের অরুণ-রশ্মি পাতে
.        মেলিছে সে দল সুরভি উতল প্রাতে,
আপন হৃদয় খুলি
তোমারেই দিল তুলি |

.          *************************  
.                                                                                    
সূচিতে...    


মিলনসাগর
*
কিশোরী উমার স্বপ্নে প্রেমরাগে উঠিবে রাঙিয়া!

.               *************************  
.                                                                                     
সূচিতে...    


মিলনসাগর
*
আমি উঠি ভেসে সরসী বক্ষে নীলগগনের নিচে ;
সূর্য চন্দ্র যেথা ছুটে সদা নিশা ও দিবার পিছে |
.                চাহি সে পৃথিবী পানে
হৃদয় আমার ধেয়ে যেতে চায় আকাশের ওই খানে |

ওগো নভচারি! তুমি বুঝিবে না জানি
মীন-মেয়েটির মৌন এ’ প্রেম-বাণী!
.                বুঝিবে কি তুমি মোর নির্বাক ভাষা ?
.                বারি-বালিকার বিরাট বিপুল আশা ?
অতলের তলে লয়েছে জনম, পাতালবাসিনী যেবা,
তাহার অতল গভীর প্রেমের মর্ম জানিবে কেবা ?
.                তোমারে বাসিয়া ভালো
আপন প্রাণের আঁধার-গুহায় পেয়েছি নূতন আলো |

কণ্ঠে তোমার মুক্তির গীত বাজে!
মুক্তির হাওয়া তোমার প্রেমেরো মাঝে |
.                উদার ব্যাপ্তি জীবনে তোমার মিশা,---
.                ---আমি জলবালা, পাব কি তাহার দিশা ?
নাহি চিনি আমি অসীম ঊর্ধ্ধে উজ্জ্বল মেঘলোক,
তবু চাহে প্রাণ তোমারি সঙ্গে নিবিড় মিলন হোক |
.                ---জানি তা হবার নয় ;
---তোমারি ভাবনা ভালো-লাগা মোর এই হোক আক্ষয় |

যদিও ভিন্ন উভয়ের এ নিখিল,
তোমাতে-আমাতে আছে তবু কিছু মিল!
.                বায়ুর পাথারে নীর পারাবারে দোঁহে
.                সুখে যাপি’ কাল সন্তরণের মোহে |
পর্বত মরু বনরাজি ভরা ধরা রহে মাঝখানে,
তাই আমাদের প্রকৃতিও নাহি জানে |
.                না হোক বাহিরে মিলা,---
মনে মনে থাক তোমাতে-আমাতে মানস মিলন-লীলা ||

.                *************************  
.                                                                                       
সূচিতে...    

মিলনসাগর
*
তোমারে করিয়াছিল বিমোহিত কোলাহলে তার,
উচ্ছৃঙ্খল উল্লাসের সে-প্রমত্ত উন্মাদনা ভার
জীর্ণচীর সম তোমা ত্যজি’ আজ গেছে দূরে স’রে
.        জীবনেরে ব্যর্থতায় ভরে’!

তোমার বসন্ত নিঃস্ব হয়নাই আজো ?---হতে পারে |
.        ---এসেছ কি তাই মম দ্বারে ?
অনাদরে অপমানে গেছে চলে আমার ফাগুন,
.        বৈশাখের জ্বলন্ত আগুন
ছায়াহীন এ’ জীবন-প্রান্তরে বর্ষিছে খর-দাহ |
---হে বঞ্চিত! ভোগক্লান্ত! হেথা এসে এবে তুমি চাহ
অতীতের সেই স্নিগ্ধ সুশীতল প্রেমামৃত বারি ?
.        কে জানে সন্ধান আজ তারি ?

একদা মন্দিরে মম এসেছিল বসন্তের রাতি!
.        সুরভি আকুল শত বাতি
জ্বলেছিল জীবনের পুষ্পাকীর্ণ সুরম্যবাসরে |
.        ---সেদিনের আনন্দ আসরে
তোমারি লাগিয়া পাতা হয়েছিল রাজ-সিংহাসন |
করে বরণের মাল্য কন্ঠে মুগ্ধ প্রেম-সম্ভাষণ
আমি ছিনু অর্ঘ তব অষ্টাদশ বসন্তের ফুলে
.        নিবেদিত ও-চরণমূলে |

কতবার ষড়ঋতু বিবিধ কুসুমগন্ধে ছাওয়া
.        বৃথাই করেছে আসা-যাওয়া!
আমার অশ্রুর বাষ্পে ম্লান হয়ে গেছে চন্দ্রালোক,
.        আনন্দ ছেয়েছে তীব্রশোক |

আশার মঞ্জরী মোর বৃন্তচ্ছিন্ন হয়েছে প্রাতেই,
নিঃসঙ্গ করেছি যাত্রা তন্দ্রাহীন তিমির রাতেই,
বন্ধুর এ পথে মোরে তুমিই দিয়েছ বন্ধু ঠেলে ;
.        ---এত কাল পরে আজ এলে!!

মধুঋতু ব্যর্থ মম | অকালেই এসেছে নিদাঘ,---
.        অগ্নিতপ্ত তার তীব্ররাগ
দগ্ধ করিয়াছে দেহ | কালবৈশাখীর ঝঞ্ঝা ঘোর
.        বিধ্বস্ত করেছে মন মোর |
নব তপস্যায় আজি বসিয়াছি দীপ্ত সূর্য শিরে,
পঞ্চাগ্নির হোমকুণ্ড জ্বলিতেছে চারিপার্শ্ব ঘিরে,
হেথা নাই শীতলতা, প্রীতির আশ্রয় কিছু নাই,
.        ---পুড়ে সব হইয়াছে ছাই |

তোমার আমার যাত্রা একলক্ষ্যে আজি আর নহে!
.        ভিন্নমুখে চলেছি উভয়ে!
চলে বিপরীত দিকে দুইখানি জীবনের রথ,---
.        নির্বাচিয়া নিজ নিজ পথ |
*

এসো সুকল্যাণী রূপে সমুজ্জ্বল সিন্দুরের টীকা
.                আঁকি নম্র-ভালে,
অন্ধকার গৃহপ্রান্তে জ্বালাও মঙ্গলদীপ-শিখা
.                নিত্য সন্ধ্যাকালে |
ঘন স্নেহে আমন্থর স্নিগ্ধ তব হৃদয়-সমীর
জুড়াইয়া দিক্ আজি নিখিলের দাহতপ্ত-শির ;
.                নরের ক্রন্দন
নিমেষে হউক স্তব্ধ | তব চিত্ত অমরাবতীর
.                লভি’ নিমত্রণ |

জাগো জাগো হে সাবিত্রি, বাঁচাও স্বল্পায়ু স্বামী তব,
.                সমাগত যম!
নয়নে নামিছে তার মরণের আঁধার নীরব
.                স্তিমিত নির্মম!
প্রদীপ্ত-সতীত্বতেজে ওগো দৃপ্তা! মৃত্যুরে জিনিয়া
শমনের পাশ হতে আনো আনো প্রিয়রে ছিনিয়া,
হে নারি সবিতৃকন্যা! জোগো ওঠো আপনা চিনিয়া
.                বিশ্বে সব খানে |
সঞ্জীবিত করো দেবি অটুট অন্তর-শক্তি নিয়া
.                মৃত-সত্যবানে |

স্বেচ্ছায় ভিক্ষু কণ্ঠে রাজপুত্রী বরমাল্য দিবে
.                ত্যজি রত্ন-হেমে,---
হে দক্ষদুহিতা, আজি সন্যাসী শ্মশানচারী শিবে
.                লহ বরি’ প্রেমে |
সকল গঞ্জনা গ্লানি তুচ্ছ করি বাধাবিঘ্ন শত
নির্বাচিয়া লহ পতি, হে অপর্ণা! নিজ মনোমত ;
.                তেজস্বিনি অয়ি!
দশ-মহাবিদ্যা রূপে মহেশে চরণে করো নত,
.                দৃপ্ত-শক্তিময়ি!

সত্য শিব সুন্দরের অপমান ঘটে বিশ্বে আজ
.                ---এসো এসো সতি!
ত্রিনেত্রে প্রদীপ্ত-বহ্নি, হস্তে শূল, ভৈরবী সাজ---
.                এসো ভগবতি!
অশিবের অন্যায়ের অসত্যের প্রতিবাদ তরে
জীবন উত্সর্গি দাও শিবহীন-যজ্ঞ পণ্ড করে’
আত্মভোলা আশুতোষ যেন মহারুদ্র রূপ ধরে
.                মথি মিথ্যা-যাগ,---
অভিজাত-দম্ভ দমি’ আহরে স্বকরে
.                যজ্ঞ প্রাপ্যভাগ |

হস্তিনার সভাতলে পৃষ্ঠে লয়ে মুক্ত-মেঘবেণী---
.                সরোষ নিঃশ্বাসে
ভীষণ প্রতিজ্ঞা পুনঃ নির্ঘোষি উচ্চার’ যাজ্ঞসেনি,
.                জ্বলন্ত-বিশ্বাসে |
নারীত্বের অপমান ঘটাল যে-নীচ দুরাচার
তার তপ্ত রক্তরাগে বিরচিবে বেণী পুনর্বার,
.                পশুরে সংহারি
কুরুক্লিষ্ট আর্যাবর্তে আন গর্ব বীর-দয়িতার,
.                হে পাণ্ডব নারি!

নিখিল-নরের চিত্তে অপূর্ণতা যাহা কিছু আছে---
.                ক্ষোভ মনে মনে ;
হে নারি, তোমারি দ্বারে পূর্ণতার তৃপ্তি তারা যাচে
.                বিশ্ব-আবর্তনে |
শুধু কন্যা মাতা ভগ্নী শিষ্যা দাসী সখী তুমি নহ,
আরো কিছু---আরো কিছু---ধ্বনি ওঠে বিশ্বে তৃষাবহ,
আপন স্বরূপে জাগি নিখিলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রহ
.                সঞ্চারিয়া প্রাণ ;
আনন্দ জীবন রস দীপ্তি তৃপ্তি বিশ্বে বহি লহ
.                প্রকৃতির দান |

.              *************************  
.                                                                                      
সূচিতে...    


মিলনসাগর
*
উদয়ন
বনবিহগী (১৯৩৭) থেকে
রাধারাণী দেবী
তুমি বল নাই বন্ধু এ জীবনে
বক্ষের নিতলে তব কোন্ সি
কী সুরে বাজিছে তব অন্তরে
মর্মের মালঞ্চে কোন্ কামনা

নয়নে প্রার্থনা নাই অধরে ছি
উদাসীর বাঁশি হাতে চলেছিলে
আশার নগরপ্রান্তে বাঁধো নাই
তোমার বৈরাগীমন ত্যাগের

প্রশান্ত মর্মের তব নিস্তরঙ্গ ম
ভীরু বনকুসুমের সলাজ কো
কেমনে আনিল বহি’ এ’ পাষা
নীরন্ধ্র আঁধার কক্ষে এলো মুক্ত

কে জানিত লীলাচ্ছলে বসন্তে
জ্বালাইবে পুষ্পশিখা গিরিশৃঙ্গে
কে জানিত যোগমগ্ন ধূর্জটীরো
অনুচ্চারিত
বনবিহগী (১৯৩৭) থেকে
রাধারাণী দেবী
ওগো পাখি! ওগো আকাশবি
আমি মীন-বালা পাতাল পাথা
.                এই সরোবরে
.                তুমি আসো নি
পঙ্কজ-রস-আস্বাদনের তিয়াষা-
পুলকিত কল-কাকলি-কণ্ঠে গা
.                নিতল জলের
সেই সংগীত সুধাদারে মোর

তোমার কোমল করুণ কূজন
জললোকে যবে বেজে ওঠে র
.                শ্যাম-শৈবাল-
.                রজত-উজল
সুদুরের প্রেম
বনবিহগী (১৯৩৭) থেকে    
রাধারাণী দেবী
হে বিদ্রোহী! আ
.        অসময়ে
শান্তির পতাকা
.        আসিয়া
যৌবন তাণ্ডব ত
জীবনের শূন্যপুরী
করে লয়ে সন্ধিলি
.        ---একদি

স্বেচ্ছায় উপেক্ষা
.        প্রত্যাখ্যা
প্রিয়ার সহজ প্রে
.        যে-হাটে
ভষ্টলগ্ন
বনবিহগী (১৯৩৭) থেকে
রাধারাণী দেবী
.        ---মৃতপ্রাণ সঞ্জীবি’ উঠিবে |

.             *************************  
.                                                                                         
সূচিতে...    

মিলনসাগর
তবুও বিশুষ্ক আঁখি আজো মো
একদা চেয়েছি যারে তারেই ফি
দুর্লভ বল্লভ মম দ্বারে এল অকি
.        আমার প্রেমের মৃত্যুশে

হয়তো এ স্মৃতি মোর জীবনের
.        কোনও চৈত্র-পূর্ণিমার রা
ঝিল্লী মুখরিত কোনও কেয়াগন্ধী
.        হয়তো বা উদাস অকা
রচিবে বিচিত্রলিখা নবরসে নব
কোনও এক নিশান্তের সুপ্তিশে
তোমার নিরাশা ম্লান আঁখি দু’
উদ্বোধন
বনবিহগী (১৯৩৭) থেকে
রাধারাণী দেবী