রাধারানী দেবীর কবিতা
www.milansagar.com
চারু-চরণের চিহ্ন আঁকিয়া ধীর পদ-সঞ্চারে
শারদলক্ষ্মী এলো!---

শিথিল মুঠিতে কাশ-মঞ্জরী চিকন চামর দুলে |
কোমল কণ্ঠে স্থল-কমলের কমনীয় ফুলহার!
কবরী আবরি’ করবীগুচ্ছ কুসুমিত কুরুবক,
অতি সুন্দর অতসী বলয়ে বাহুবল্লরী বেড়ি’
শারদলক্ষ্মী এলো!---

চরণ-পদ্মে রক্তজবার নব অলক্ত রেখা,
স্বর্ণ নূপুর নিক্কন শুনি শিশুতরু মর্মরে!
সাগরে শৈলে প্রান্তরে বনে বিথারি’ বর্ণ বিভা,
দিগ্ দিগন্ত দীপ্ত করিয়া দিব্য প্রভায় আজি
শারদলক্ষ্মী এলো!---




---শারদ প্রতিমা---
(প্রতিমা)

ভিখারী চলেছে আগমনী গেয়ে পথে,---
ব্যকুল বিহ্বল হইল কঠিন হিয়া!---
নীলাকাশ তলে নীলকণ্ঠের সারি
উড়িয়া চলিল দূর হতে বহুদূর
.                ওগো বলো কার লাগি?---

না টুটিতে নীদ্, নহবতে সকরুণ
ভৈরবীসুর ভেসে আসে যেন কাণে!
হৃদয় ভুলানো মধু মূর্চ্ছনা তানে
ঙোরের স্বপ্ন ভেঙেও ভাঙেনা আজ!
.                বলো কেন ওগো, কেন?---

আকাশে বাতাসে বোধনের বাঁশী বাজে,
*
অজানিতনামা তরু অগণিত অগ্নিফুল জ্বেলে
আঙিনা করেছে রাঙা | তরুণ কদম্ব-বীথি পাশে
পুষ্পশয্যা রচে নিত্য শেফালিকা শরতের মাসে |
উদয় অস্তের লীলা পূরব পশ্চিমে মহোত্সব,
মেঘের বিচিত্র মায়া আলোকের অপূর্ব বৈভব
দু’টি মুগ্ধ আঁখি মেলি’ অফুরন্ত করিতেছি পান |
শ্বণ ভরিয়া শুনি অরণ্য-মর্মর মধু গান |
শ্যাম সমারোহে হেথা সৌন্দর্যপ্লাবিত চারিদিক ;
সুন্দরী সন্ধ্যার কেশে জ্বলে ওঠে নক্ষত্র মানিক!
করধৃত শুকতারা আসে উষা উজল বরনী!
ভোরের ভৈরবী সুরে নিত্য মম নব জাগরণী ||

.     *************************  
.                                                                                    
সূচিতে...    


মিলনসাগর
*
নীলাভ্র ভৃঙ্গারে যেন স্বর্ণ সুরা করে টলটল |

.     *************************  
.                                                                                    
সূচিতে...    


মিলনসাগর
*
কাশবন
বনবিহগী (১৯৩৭) থেকে
রাধারাণী দেবী












.     *************************  
.                                                                                    
সূচিতে...    


মিলনসাগর
*
.                নিত্য ক্লান্তি ভরে!
তাহারি প্রতীক্ষা লয়ে প্রতিক্ষণে চেয়ে থাকি
.                বিমুখ অন্তরে!
নিয়ত সম্মুখে হেরি অবিরাম দুর্ধর্ষ সংগ্রাম
.                জীবনে মরনে,
আশংকা উদ্বেগভরে ভগ্নতনু মাগিছে বিশ্রাম
.                স্রষ্টার চরণে |

দিগন্তে গোধূলি লগ্নে অস্তরাগে জাগে বর্ণচ্ছটা
.                শান্ত নদী তটে,
আচম্বিতে ঢাকে তাহা কাল বৈশাখীর ঘনঘটা,---
.                ধৌত নভ-পটে
পুষ্পশুভ্র বলাকার শ্রেণীবদ্ধ পক্ষ বিধূনন
.                অভ্র মেঘলোকে---
অনির্দেশ তীর্থ পানে যাত্রা মোর করায় স্মরণ
.                প্রদোষ আলোকে |

অনন্ত ঐশ্বর্য দীপ্ত বসন্তের মধু মহোত্সব
.                গীতি গন্ধময় ;
মেঘমাদলের রবে বাদলের বিচিত্র বৈভব
.                করে চিত্ত জয় |
আশ্বিনের আঙিনায় আলোকের সুবর্ণ নূপুর
.                রণরণি বাজে,
নির্ঝর-নটীর নৃত্যে তরঙ্গিয়া ওঠে সে কি সুর
.                গিরি মর্মমাঝে |

শ্যামা বসুধার বুকে বিচ্ছেদের মহালগ্ন মোর
.                ঘনাইছে যত,---
ততই আমারে এই অখিলের আকর্ষণ ঘোর
.                টানিছে নিয়ত |
তারি মাঝে শংকাকুল সকরুণ শান্ত আঁখি দুটি
.                হারাইয়া দিশা,
আর্ত অসহায় হেন সকাতরে মোরি মুখে লুটি
.                রহে দিবা নিশা |

ঝিল্লিমন্দ্র মুখরিত স্তব্ধরাতে চাঁপার সৌরভ
.                উন্মত্ত উল্লাসে
বাতায়নে ছুটে এসে এ মর্তের অমর্ত গৌরব
.                ভাসে কলোচ্ছ্বাসে |
শারদ রজনী শেষে ঝরা শেফালীর অশ্রুভরা
.                সকরুণ গান---
শ্রবণে আমার যেন আনে বহে আলোড়িয়া ধরা
.                বিদায় আহ্বান |

আমার চিত্তের নৃত্য অন্তরের আনন্দের গান
.                পূর্ণ প্রাণলীলা
মৃত্যুর কঠিন শিলা বারংবার করি খান্ খান্
.                বহিছে ঊর্মিলা!
দুর্জয় দুঃসহ ব্যাধি বাধা দেয় অবিরত তার
.                স্রোতের গতিরে ;
দলি সে উপলদল অবিচল প্রাণ-অভিসার
.                না-মানি ক্ষতিরে |

জীবন-যজ্ঞাগ্নি মোর ম্লান যেন নাহি হয় কভু,
.                এই শুধু চাই,
নিভুক বাহিরে দীপ, অন্তরের দিব্যলোকে তবু
.                কোনো দৈন্য নাই |
প্রাণের অমৃত দিয়া মৃত্যুরে করিব আমি জয়
.                মর-ধরণীতে,
প্রেমের দুর্লভ স্বর্গে রবো নিত্য অজয় অক্ষয়
.                ভাষাহীন গীতে |

.               *************************  
.                                                                                    
সূচিতে...    


মিলনসাগর
*
স্বচ্ছ সুনীল শান্ত আকাশে নি
স্নিগ্ধ হাসিটি বিকশি’ উঠেছে
রক্তকমল হংসমিথুন-চিত্রিত
নির্মল-নীর নদীর বসনে আবরি’
শারদলক্ষ্মী এলো!---

কক্ষে কাঁপিছে ধানের ঝাঁপি শ
নব-রবিকর-গলিত কনকে প্লা
অস্ত-ভানুর গোধূলি সিঁদুরে র
রজত-ধবল পেলব কোমল জ্যো
শারদলক্ষ্মী এলো!---

চঞ্চল লঘু নির্বারি মেঘে ধ্বনি
ভোরের শুভ্র অভ্র ভরিছে প্রভা
চ্যূত-শেফালির আলিপনা ঘে
শারদলক্ষ্মী
কবি রাধারাণী দেবী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার আষাঢ় ১৩৪১ (নভেম্বর ১৯৩৪) সংখ্যায়
প্রকাশিত। এই কবিতাটি, দুটি ভাগে “শারদ প্রকৃতি” ও “শারদ প্রতিমা” নামে দুটি কবিতা
হিসেবে “বনবিহগী” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৩৭ সালে। এই কবিতা দুটি আলাদাভাবে
পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কাব্যসংকলনে তোলা হয়েছে। তাই আমরা কবিতার সূচী থেকেই
আলাদা আলাদা ভাবেও পড়ার ব্যাবস্থা রাখলাম।

---শারদ প্রকৃতি---
(প্রকৃতি)
জনশূন্য মালঞ্চের ছায়াস্নিগ্ধ
অস্ত যায় স্বপ্নাকুল দিনগুলি
.                        জনতা
সংসারের কোলাহলে যেতে
বনচারী বিহঙ্গের শুনি মিষ্ট মু
মুগ্ধ প্রজাপতি ওড়ে শতবর্ণে
ভোরের বাতাস বহে সদ্যফো
সোনালী রৌদ্রের আলো ঝল
গলে আকাশের নীল প্রিয়াহা
মধ্যাহ্নের নীরবতা করে তো
ঘুঘুর কাতরধ্বনি, অব্যক্ত শো
ক্লান্ত ক্রন্দনের সুরে অশ্রান্ত
দুঃসহ ব্যথায় দহি’ সূর্য-কর-

উড়ে যায় কত পাখি এই পথে
নগর বাহিরে
বনবিহগী (১৯৩৭) থেকে
রাধারাণী দেবী
নীল আকাশ
বনবিহগী (১৯৩৭) থেকে
রাধারাণী দেবী
“মৃত্যোর্মাহমৃতং গময়---”
কবি রাধারাণী দেবী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার আষাঢ় ১৩৪১ (জুলাই ১৯৩৪) সংখ্যায়
প্রকাশিত।
*


.           *************************  
.                                                               
                       সূচিতে...    


মিলনসাগর
*