আঁধারে আলো
কবি অপরাজিতা দেবী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার, মাঘ ১৩৩৭ (ফেব্রুয়ারী ১৯৩১)
সংখ্যায় প্রকাশিত।
( বৈকালে --- জানালায় --- একা )
পথ চেয়ে বসে আছি সেই থেকে এই,---
ছ’টা বাজে, গ্যাস জ্বালে ; তবু দেখা নেই!
সবাই তো এ’পাড়ার ফিরে এলো ঘরে,
আজ কেন আসতে সে এত দেরী করে?
কাল থেকে বোলে বোলে মানলুম হার! ---
---কিছুতে কি ফুরসুৎ মিললো না তার?---
দেড় গজ ‘কারপেট্’ দু’ প্যাকেট ‘উল্’
এই তার আনতে কি রোজই হয় ভুল?
দু’বেলা তো মনে করে দিই বার বার,
তবু ভোলে? --- এর মানে বুঝিনি কি আর?
আগে তাকে কোনো কথা একবার বই
বলবার দরকার হোতো না তো কই!!
আজকাল যেন আর দেয় না সে কাণ!
মিছে কথা কয় খালি ;---ভুলে যাওয়া ভাণ!
গ্রাহ্য করে না দেখি ক’দিন ধরেই ;
আন্ ছে না কিনে এটা ইচ্ছে করেই।
না আনুক্! --- আমি তাকে ব’লছিনি আর!
মনে করে করবো বা খোসামোদ্ তার!
সে-মেয়ে যে নই সেটা বোঝাবোই তাকে,
ফাঁকি দেয়া নয় বড় সহজ আমাকে!
এ যে তার অবহেলা, বুঝি আমি বেশ!
আমাদের প্রেম
কবি অপরাজিতা দেবী
যামিনীমোহন কর সম্পাদিত "মাসিক বসুমতী" পত্রিকার আষাঢ় ১৩৫৫ (জুলাই ১৯৪৮)
সংখ্যায় প্রকাশিত।
আমার জীবনে প্রেম এসেছিল কবে গো
. জানিবারে চেয়ে চিঠি লিখেছ
বুলুবাবুর একটি বেলা
কবি রাধারাণী দেবী
প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত রংমশাল পত্রিকার ফাল্গুন ১৩৪৪ (মার্চ ১৯৩৮) সংখ্যায় প্রকাশিত।
মঞ্জুরাণী! একটুখানি, চার বছরের মেয়ে।
ফুটফুটে ঠিক তারার মত, বেড়ায় নেচে গেয়ে।
যেমন কালো চোখের তারা, তোমনি কালো চুল,
রংটী! যেন গায়ে মাখা, গোলাপ চাঁপা ফুল।
ঘুম-গুঞ্জন
কবি রাধারাণী দত্ত
সুধীরচন্দ্র দাশগুপ্ত সম্পাদিত "মৌচাক" পত্রিকার কার্তিক ১৩৩৩ (নভেম্বর ১৯২৬) সংখ্যায়
প্রকাশিত।
ঘুম-পরী গো! ঘুম-পরীরা! মোর কুটিরে এসো,
ঘুমের কাঠি ছুঁইয়ে আমার খোকায় ভালবেসো!
স্বপন-ভরা অলস-চোখে খোকার দিকে চেয়ো
ঘুমেল সুরে মিষ্টি-মধুর নিদালী গান গেয়ো!
তন্দ্রা তাহার মধুর করো মোহন-আবেশ ঢাকি,
মৌন-প্রশস্তি
কবি রাধারাণী দেবী
রবীন্দ্র-জয়ন্তী উত্সবের জন্য রচিত কবিতা। ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ
পত্রিকার পৌষ ১৩৩৮ (জানুয়ারী ১৯৩২) সংখ্যায় প্রকাশিত।
বন্ধু গো! এসেছি মোরা ‘জয়ন্তী-উত্সবে’ আজি তব
. এনেছি অঞ্জলি অর্ঘ্যে ভরি’
প্রকৃতির মর্ম্মযামি হে কবি! মোদের মৌন স্তব
. জানি তুমি লবে পাঠ করি।
এ আনন্দ-যজ্ঞতলে আমাদের ডাকে নাই কেহ,
বাতাসে পেয়েছি বার্ত্তা ; শুনি কাঁপে প্রাণ মন দেহ
পুলকের শিহরণে ; জাগে মনে তব মুগ্ধ-স্নেহ ;
. আমরা নাহি ত’ অচেতন---
তুমি ইহা জানো, তাই---আনিয়াছি প্রীতি-অবলেহ---
. মূকের নীরব নিবেদন!
তন্দ্রামগ্ন ছিনু কবি, অ্নধকার গিরি-গুহা-তলে
. কত যুগ-যুগান্তর ধরি’
তোমার কিরণ-স্পর্শে জাগিয়া উঠেছি কুতূহলে
. বিশ্বেরে বিস্ময়-স্তব্ধ করি!
সায়াহ্নের অভিসার
কবি রাধারাণী দেবী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার চৈত্র ১৩৩৮ (এপ্রিল ১৯৩২)
সংখ্যায় প্রকাশিত।
সায়াহ্নের অভিসারে এনু তব দ্বারে
অঞ্চল আড়ালে ধরি সন্ধ্যাদীপ খানি!
জীবনের মহোত্সবে ডেকেছিলে যারে,
অসময়ে এসেছে সে, পরাজয় মানি।
গিয়াছে প্রভাত, গেছে দীপ্ত-দ্বিপ্রহর,---
তখন আসিনি আমি তোমার মন্দিরে।
সহসা গোধূলি লগ্নে হে চিরসুন্দর!
উত্তরিল তরী মোর তব নদী তীরে।
সারানিশি এখনো তো রহিয়াছে বাকী,---
মধ্যাহ্ন গিয়াছে তাহে কিবা ক্ষতি প্রিয়!
পুষ্পগন্ধী শুক্লারাতে চন্দ্রালোক ছাঁকি’
সর্ব্বাঙ্গে জড়াবো তব নব-উত্তরীয়।
নিশা-শেষে হ’ব দোঁহে সর্ব্ব বাধাহীন,
অনন্ত ঘুমের ঘোরে র’ব স্বপ্নলীন।
. *************************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
তোমারে বাসিয়া ভালো
কবি রাধারাণী দেবী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার চৈত্র ১৩৩৮ (এপ্রিল
১৯৩২) সংখ্যায় প্রকাশিত।
তোমারে বাসিয়া ভালো, অপমান যত
লভিতেছি ওগো প্রিয়! সে-ই শ্রেষ্ঠদান
দিতেছেন বিধি মোরে। পরম-সম্মান
গণি’ তাই, যত পাই লাঞ্ছনা নিয়ত।
তোমারে বাসিয়া ভালো সুখী আমি কত
কেমনে জানাব বন্ধু? ---তাহার সন্ধান
জানে শুধু অন্তর্যামী। ক্ষুদ্র মোর প্রাণ
উথলি’ পড়িছে প্রেমে উচ্ছ্বসি’ সতত।
শুধায়োনা কোনো প্রশ্ন,---শুধু তব হিয়া
রাখি মোর হিয়াপাতে লহ তা’ পড়িয়া।
দুঃখ ব্যাথা ক্ষয় ক্ষতি ঘৃণা অপমান
সোণা হয়ে উঠিয়াছে আজি তব প্রেমে,---
সার্থক আনন্দ প্রাণে লভি’ অফুরাণ
স্বর্গ আসিয়াছে সখা মর্ত্ত্যে যেন নেমে।
. *************************
. সূচীতে . . .
মিলনসাগর
অনাগত
কবি রাধারাণী দেবী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার কার্তিক ১৩৪৭ (নভেম্বর ১৯৪০)
সংখ্যায় প্রকাশিত।
. ভাবতে ভালো লাগে
আসবে --- আসবেই সে অনাগত কাল
. যেদিন মানব সভ্যতা মুক্ত হবে এই
ক্রুর কপটতা, প্রবল লোভ আর নীচ স্বার্থবুদ্ধির
. নাগপাশ হতে।
. আসবেই সে যুগ---যে -যুগে স্বতঃই স্বীকৃত হবে
কুমারিকা অন্তরীপ
কবি রাধারাণী দেবী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার কার্তিক ১৩৫০ (নভেম্বর ১৯৪৩)
সংখ্যায় প্রকাশিত।
তিন সমুদ্রের মোহানার মুখে দাঁড়িয়ে
নাগরিক মনের রূপ গেল বদলে।
হদলে গেল ভাবনা-হাওয়ার গতি।
স্তব্ধ হয়ে গেল বিজ্ঞানযুগের সভ্যমনের
আপনচক্রে যথা নিয়মিত আবর্তন।
মহা অভিযান
কবি রাধারাণী দেবী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার চৈত্র ১৩৫৪ (এপ্রিল ১৯৪৮) সংখ্যায়
প্রকাশিত।
মানব-আকারে দৈববাণী তুমি!
হিংসা-উন্মত্ত বিংশ শতকের অহিংস মানব!
তুমি মহান আশ্চর্য।
আশ্চর্য তোমার জীবন-বাণী
আরও আশ্চর্য তোমার জীবনের পথ-চলা।
আবার শুরু হোলো তোমার নতুন যাত্রা,---