কবি কুমারী রাধারাণী লাহিড়ীর কবিতা |
ঈশ্বরের মহিমা কবি কুমারী রাধারাণী লাহিড়ী যে দিকেতে ফিরাই নয়ন সেই দিকে করি কিলোকন অপার বিভু মহিমা, মিলে না যাহার সীমা, সকলই কৌশলে রচন। প্রভাতের তরুণ তপন মরি কিবা নয়ন রঞ্জন! পাখীর ললিত গীত, সকলেই প্রফুল্লিত, মনুজের হরষিত মন। নানাবিধ কুসুম নিচয় সারি সারি ফুটে সমুদায়! সুমধুর মনোহর, শোভয়ে ধরণীপর, গন্ধবহ সুসৌরভ বয়। শস্য-পূর্ণ হরিত প্রান্তর বীচি যেন ধরণীর উপর! মনোহর সুরঞ্জিত থাকয়ে হয়ে শোভিত দর্শকের নেত্র তৃপ্তিকর। সুষমা পূরিত উপবন! তাহে করে বিহগ কূজন! লতা পাতা বিমণ্ডিত, তরুরাজি সুশোভিত, সকলেই হরে লয় মন। নিরমল সুনীল আকাশে আহা! যবে চন্দ্রমা প্রকাশে। দশদিক আলোময়, নিশীথে দিবসোদয়, হাসি মুখে কুমুদ বিকাশে। নিবিড় নীরদ দল মাজে ক্ষণ-প্রভা কি সুন্দর সাজে, চমকিয়া ত্রিভূবন, সচকিত করে মন, ক্ষণে ক্ষণে অম্বরে বিরাজে! কাদম্বিনী হেরিলে অম্বরে শিখীকুল পুলকের ভরে, স্বীয় পুচ্ছ বিস্তারিয়ে, শিখিনীরে সঙ্গে নিয়ে, কিবা নৃত্য আরম্ভন করে! প্রকাণ্ড ভুধর শ্রেণীচয় যেন কারো নাহি করে ভয়! উন্নত করিয়া শির, দৃঢ় কায় মহাবীর, কিছুতেই কাঁপে না হৃদয়। সেই সব ভূধরের গায় আহা কি সুন্দর শোভা পায়! সুশোভিত মনোহর বিবিধ তরু-নিকর হেরিলেই নয়ন জুড়ায়। নির্ঝরের সুশীতল জল কিবা স্বচ্ছ কিবা নিরমল! গিরিবর-শির হতে সুগম্ভীর নিনাদেতে পড়ে আসি অচলের তল। চারিদিকে সুবিশাল গিরি দাঁড়াইয়ে শোভে সারি সারি তার মাঝে সুললিত উপত্যকা সুশোভিত কি সুন্দর! আহা মরি মরি! এই সব অপূর্ব্ব রচন দিবানিশি করিছে ঘোষণ মহতী বিভু-মহিমা, অচিন্তন অনুপমা, গাও সবে আনন্দিত মন। . ************************* . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
ভক্তিভাজন শ্রীযুক্ত বাবু কেশবচন্দ্র সেন কবি কুমারী রাধারাণী লাহিড়ী ছাড়ি প্রিয় পরিবার, বিশাল জলধি পার, গিয়েছিলে, যেই সত্য করিতে প্রচার। আজ তাহা পূর্ণ করে, নিরাপদে এলে ঘরে শুনিয়া আনন্দ হৃদে হইল অপার। যে মহৎ লক্ষ্য ধরি, অনায়াসে পরিহরি গিয়েছিলে জন্মভূমি ; করিয়া সফল সে মহৎ লক্ষ্য, পুনঃ প্রিয়দেশে আগমন, করিলে শুনিয়া মনে আনন্দ কেবল অবিরাম উথলিছে, কিন্তু কিবা শক্তি আছে, অভাগিনী জ্ঞানহীনা বঙ্গ অবলার। প্রকাশিতে সেই ভাব, যে ভাবের আবির্ভাব, হইয়াছে এ সংবাদে হৃদয়ে তাহার॥ ইচ্ছা হইতেছে মনে, প্রীতি আর ভক্তি গুণে, গাঁথি বাক্য কুসুমের হার সুচিকণ। সেই মালা ভক্তি ভরে, সযতনে স্বীয় করে, হে মহাত্মী! তব করে করিতে অর্পণ॥ কিন্তু হায়! কবিতার, গাঁথি মনোহর হার, অর্পিতে সক্ষম নাহি হইনু তোমায়। তবু ও সামান্য মালা, গাঁথিয়াছে বঙ্গ-বালা, সযতনে ; দয়া করে হেরিবে কি তায় ? যত সব ভ্রাতাগণ, হয়ে পুলকিত মন, বহু দিন পরে আজ হেরিতে তোমায়। এক সাথে সবে মিলে, চলেছেন কুতূহলে, সুখের ভবনে পুনঃ আনিতে তোমায়॥ হেন ভাগ্য নাহি হায়, আনিতে যাব তোমায়, তাঁহাদের সঙ্গে মিলে পুলকে ভরিয়া। হব আনন্দিত অতি, লভিব পরম প্রীতি, ইংলণ্ডের সমাচার শ্রবণ করিয়া। সেথাকার সমাচারে, তুষিতেছ তা সবারে, যা দেখেছ যা শুনেছ বলিছ বর্ণিয়া। অবলার আশা চিতে, আছে সেই দিন হতে, যে দিন ইংলণ্ডে তরী চেলেছে ভাসিয়া। কোন কিছু পাবে বলে, সেথা হতে ফিরে এলে, তাই ভেবে আজ আরো আনন্দে মগন। হইতেছে মন তার ; কিন্তু কি বলিবে আর ? নাহি শক্তি মনোভাব করিতে বর্ণন। এস এস ভগ্নীগণ, মিলে আজ সর্ব্বজন, ভক্তিভরে প্রণিপাত করি তাঁর পায়। অপার করুণা যাঁর, রক্ষিয়া সাগর পার, এই মহাত্মায় পুনঃ আনিল হেথায়॥ . ************************* . সূচিতে . . . মিলনসাগর |