চাবুকের দাগ দেখে যেই তুমি ঠেকালে আঙুল, কঠিন পাহাড় দেশে বাজল মাদল, পূর্ণগ্রাস থেকে চাঁদ মুখতুলে তাকাল নরম, তার কোনো ক্ষোভ নেই। বুনো গাঁদা ফুল পার হয়ে বসেছ গভীর হয়ে মাটির উঠোনে পাতা . কাঠির মাদুরে। মোটা ভাত, লাল শাক, দিলাম আমার অন্ন দুঃকের হাঁড়ির, আহার পার্বণ হল কী ভাবে যে তুমিই তা জানো! কাকে বলি, কাছে-পিঠে কেউ নেই, রাত্তিরকে ডেকে বললাম, জানো নিশা, ও আমাকে দিয়েছে সিঁদুর।
এই কি তোমার তোমার খেলার সময় এই কি খেয়াল! কত পথ হেঁটে ছেঁড়াখোঁড়া আর কাতর কাঙাল বাড়িয়েছি হাত, এখনও ঘুমুবে পাথরের ঘরে! কেন হাসবে না! ভাসবে না কেন প্রগলভতায়! মিশর দেশের ভারি পিরামিডে তুমি কি ফারাও! যদি ডাকে কোনো সামান্য নারী ছোট বুনো ফুল জাগবে না তুমি ঠেকাবে না পাও ধুলোর উঠোনে! মাটির পাত্রে এনেছি হাঁড়িয়া ছোঁয়াবে না ঠোঁট!
তব্ ফিরে যাব টুকরো টুকরো জ্যোত্স্নার রাতে! ছোটো শাঁখে গাঁথা মালাও নেবে না! নেবে না লবণ! আমি শ্যাম দ্বীপ চির পুরাতন আর্ত প্রেমিকা, বোঝেনি পুরুষ কেন তাকে ডাকি নীল সন্ধ্যায়, ভেবেছে কামনা ভেবেছে ছলনা বোঝেনি প্রণয়, জানে না সে কেন পাখিরাও বাঁধে এক মুঠো নীড়।
পাহাড়ের উড়ো ঘুম নেমে আসে শুকনো পাতার রাশি সন . . .সন . . .সন . . . ঢালু বাঁকে সরাইখানায় এক বসে বসে দেখি বরফের গুঁড়ো মাখা নেমে আসে ভোরের বীজন, নেমে আসে আর্দ্র পালক কিছু, একটি বোতাম ডীপ গ্রীন, তার স্টিল কালারের ট্রাউজার থেকে নেমে আসে ফিকে আলো লিচুর শাঁসের হিম সাদা শীত রাত ধীরে ভেঙে।
একটু সকাল হলে ছুটে যাবে বাসগাড়ি, ছুটে যাবে হরেক মানুষ, কেবল যাব না আমি, বসে বসে তার কথা ভাবি, যে থাকে পাহাড় দেশে, যার আছে আঙুরের খেত, সে এক মায়াবী লোক আমাকে বোঝেনি কোনোদিন, শুধু এক নিঝুম পিছল রাতে নিয়েছে সকল! বাদামগাছের কাছে শেষ হাত নেড়ে বলেছিল, তোমাকেও নিয়ে যাব পাহাড়ের দেশে, যেখানে আমার বাড়ি, যেখানে আবাদ!
এখনও আসেনি ফিরে, ডাকে নি তো প্রগলভ যুবা, কি জানি তাদের আছে ক’টা মোষ, কতগুলো ভেড়া, ক’টা পীচ গাছ আর কত বেশি নাশপাতি ফলে, মরিচলতার ঢেউ কত শান্ত গ্রাম! আমাকে বলে নি কিছু. শুধু বলেছিল, তাদের পাখির নাম মেঘমালা,--- তার নাম এখনও জানি না।
যতবার আমি তোমাকে চিঠি লিখতে চাই, সাদা কাগজে ঝরে পড়তে থাকে রকমারি ফুল ও বাহারী পাতা, গড়িয়ে যায় মেঘ। খাম খুলতেই একরাশ অগোছালো অক্ষরের বীজপত্র ভেঙে যদি খলবলিয়ে ওঠে সাতশো মুনিয়া পাখি, হয়ত তোমার খুব রাগ হবে, জন্মের শোধ আড়ি করে দেবে ভেবে নিজের ভেতর গুটিয়ে রাখি পুরনো ঘোড়ারগাড়ির টুং টাং শিশিরের গুঁড়ো থেকে শুরু করে সব রকম বাড়াবাড়ি। অনিচ্ছায় খসখস ছড়িয়ে দিই বালিকাঁকর শিয়ালকাঁটার আঠা। আচ্ছা, তুমিই বলো এভাবে সত্যি কি আর উল্টো হাওয়ার কথা ডাকবাক্সে ফেলে আসা যায়! ফলে দিনের পর দিন মাটি খুঁড়ে গহন গহ্বরে আমার যত ক্ষুধার কবিতা পুঁতে ফেলি, একটা ফক্কা বোতল উল্টে মদ খাওয়ার মহড়া দিতে দিতে ফুরফুরিয়ে খরচ করতে থাকি দিন। অপমান ও দুঃখে থেঁতো হতে হতেও আমি টের পাই শুকনো হাড়ের নীচে একা চোরা নদী ক্ষীণ খরতোয়া,---পাহাড় দেশে ফুটে থাকা এক ম্যাগনোলিয়া ফুলের সঙ্গে ফের কোনওদিন দেখা হতে পারে।