কবি রমাসুন্দরী ঘোষ -  এই কবির নাম এক এক কবিতায় এক এক রকম পাওয়া গেছে . . . শ্রীমতী
রমাসুন্দরী, রমাসুন্দরী ঘোষ, র, সু, ঘো, ইত্যাদি। বাংলা
ই-ম্যাগাজিন "আমাদের ছুটি"-র সম্পাদক এবং
গবেষক ডঃ দময়ন্তী দাসগুপ্তর লেখা থেকে জানা যাচ্ছে যে, কবি কোননগরের অধিবাসী ছিলেন এবং ১৮৬৪
সালে কাশীতে গিয়ে শিবলিঙ্গ দর্শন করে "বৃহস্পতিবারে যবে, যাইনু কাশীতে" কবিতাটি লিখেছিলেন। তিনিই
জানিয়েছেন যে রমাসুন্দরী ব্রাহ্ম নেতা শিবচন্দ্র দেবের কনিষ্ঠ কন্যা। বিয়ে হয়েছিল তখনকার দিনের
খ্যাতনামা ডাক্তার দুকড়ি ঘোষের সঙ্গে। ডঃ দময়ন্তী দাসগুপ্তর গবেষণা গ্রন্থ “আমাদিগের ভ্রমণবৃত্তান্ত
ঊনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গমহিলাদের ভ্রমণকথা” থেকে
তাঁর উদ্ধৃতি আমরা নীচে তুলে দিয়েছি।

এ ছাড়া কবি সম্বন্ধে আমাদের কাছে যা তথ্য আছে তা অত্যন্তই অপ্রতুল। তবুও সেই তথ্যগুলি এইরকম...

কলিকাতা বামাবোধিনী সভা হতে প্রকাশিত, বামাবোধিনী পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায়, তাঁর অনেকগুলি রচনা
প্রকাশিত হয়েছিল। পরে, ১৮৭২ সালে ঐ সভা থেকে প্রকাশিত হয় বামারচনাবলী। এই সংকলনে ছিল
বামাবোধিনী পত্রিকার পূর্ব প্রকাশিত, বামাদের রচিত গদ্য ও পদ্য সংগ্রহ। এই সংকলনে যে সকল মহিলারা
লিখেছিলেন, তাঁরা যে সকলেই আসলে মহিলা এবং ছদ্মনামে কোনো পুরুষ নন, একথা সংকলনের ভূমিকায়
দেওয়া আছে। তাঁরা তা যাঁচাই করে তবেই লেখা ছাপিয়েছিলেন। সেকথা স্পষ্টভাবে তাঁরা জানিয়েছিলেন।

বামারচনাবলীতে অন্যান্য লেখিকা ও কবির, যেমন
স্বর্ণলতা বসু, লক্ষীমণি দেবী ,  ক্ষীরদা মিত্র, কুমারী
রাধারাণী লাহিড়ী, যোগমায়া দেবী, মধুমতি গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীমতী অ মো বসু, শ্রী ভাবিনী দেবী, বিন্ধ্যবাসিনী
দেবী, জগদ্দল বাসিনী, শ্রীমতী জয়কালী, কামিনী দেবী, রঘুমণি দেবী, শ্রীরামমতি, স্বর্ণপ্রভা বসু, শ্রীমতী
উপেন্দ্রমোহিনী সহ বহু অনামা নারী কবি প্রমুখাদের রচিত গদ্য-পদ্য মিলিয়ে যে রচনাগুলি পাওয়া গিয়েছে
তা মূলত তত্কালীন নারীসমাজের প্রতি কিছু উপদেশ ও আধ্যাত্মিক সহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে পদ্য ও গদ্যের
মাধ্যমে আলাপচারিতা।

রমাসুন্দরী ঘোষের রচনা আর কোনো পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল কিনা আমরা জানিনা। তাঁর কোনো
কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়ছিল এমন কথাও আমরা শুনিনি। কিন্তু যা পেলাম তাও আমরা মনে করছি আগামী
প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। এই অতি আধুনিক মনস্কা, তাঁর যুগের চেয়ে অনেক এগিয়ে
থাকা নারী, এমন সময় কমল ধরেছিলেন যখন এ দেশে নারীদের শিক্ষার অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয় নি। তিনি
তাঁর গদ্য ও পদ্যের মধ্য দিয়ে নারীজাতিকে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন শিক্ষা লাভ করতে, সুস্থভাবে জীবন
অতিবাহিত করতে।

রমাসুন্দরী দেবী সম্বন্ধে ডঃ দময়ন্তী দাসগুপ্তর উদ্ধৃতি -
অক্টোবর ২০১৬ সালে, ডঃ দময়ন্তী দাসগুপ্তর ৪খণ্ডে প্রকাশিত তাঁর গবেষণা গ্রন্থ “আমাদিগের ভ্রমণবৃত্তান্ত
ঊনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গমহিলাদের ভ্রমণকথা” ১ম পর্বে রমাসুন্দরী দেবী সম্বন্ধে অনেক বিস্তারিত তথ্য
দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন . . .

সাধারণ ব্রাহ্ম  সমাজের  প্রথম  সম্পাদক,  মেদিনীপুর ও কোন্নগরের ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা  এবং  
ডিরোজিওর অন্যতম অনুগামী ছাত্র শিবচন্দ্র দেবের চার কন্যা ও এক পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ রমাসুন্দরী। জন্ম
১৮৪৯ সালে। শিক্ষিত আধুনিক পিতার তত্ত্বাবধানে বাড়িতেই তিনি লেখাপড়া শিখেছিলেন। অল্পবয়সেই  
লেখাপড়ায় পারদর্শিনী রমাসুন্দরী বাংলা গদ্য ও পদ্য রচনা করে পরিচিতি লাভ করেন। “বামাবোধিনী'  
পত্রিকায় তিনি নিয়মিতই লিখতেন। ‘কাশী দর্শন’ বামাবোধিনীতে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় কবিতা। কবিতাটি
তার দাদা সত্যপ্রিয় দেবকে চিঠিতে লিখে পাঠিয়েছিলেন। এটিই সম্ভবত বাঙালি মহিলার লেখা প্রথম  
ভ্রমণকাব্য। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাতেও তীর দখল ছিল।

খ্যাতনামা ডাক্তার ও শল্যচিকিৎসক দুকড়ি ঘোষের সঙ্গে রমাসুন্দরীর বিবাহ হয়। ডাক্তার ঘোষও কয়েক
বছর সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়াও ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠিত
বিজ্ঞানসভার কমিটির তিনি একজন উৎসাহী সদস্য ছিলেন। রমাসুন্দরীর ভগ্নিপতী ছিলেন ‘বেঙ্গলী’ পত্রিকার
সম্পাদক গিরিশচন্দ্র ঘোষ। রমাসুন্দরী ‘বঙ্গ মহিলা সমাজ’ এবং স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রতিষ্ঠিত ‘সখি সমিতি’-র
সদস্য ছিলেন। ‘মহিলা শিল্প মেলা’তেও তিনি নিয়মিতই অংশগ্রহণ করতেন। রমাসুন্দরী ও ডাঃ দুকড়ি
ঘোষের এক পুত্র ও এক কন্যা ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পরদিনই ১৯১৩ সালের ৩ এপ্রিল চৌষট্টি বছর বয়সে
রমাসুন্দরীর মৃত্যু হয়
।”


আমরা কৃতজ্ঞ গবেষক দময়ন্তী দাসগুপ্তর কাছে যাঁর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি এই কবি সম্বন্ধে কিছু তথ্য
এবং "বৃহষ্পতি বারে যবে যাইনু কাশীতে" কবিতাটি। আমরা আরও কৃতজ্ঞ রত্নদীপা দে ঘোষ এবং ব্রতী
মুখোপাধ্যায়ের কাছে এই কবিতাটি ফেসবুকে শেয়ার করার জন্য

দময়ন্তী দাসগুপ্তর সম্পাদিত ই-ম্যাগাজিন "আমাদের ছুটি"  
http://www.amaderchhuti.com/
দময়ন্তী দাসগুপ্তর ব্লগ
http://jaaichhetaai.blogspot.com/2015/ ।    
দময়ন্তী দাশগুপ্তর ফেসবুক -
https://www.facebook.com/damayanti.dasgupta।     
রত্নদীপা দে ঘোষের ফেসবুক -
https://www.facebook.com/ratnodipa    
ব্রতী মুখোপাধ্যায় -
https://www.facebook.com/broteemukhopadhyay         

আমরা
মিলনসাগরে  কবি রমাসুন্দরী ঘোষের কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারলে
আমাদের এই প্রচেষ্টা সার্থক মনে করবো।

কবি রমাসুন্দরী ঘোষের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


উত্স -
  • বামারচনাবলী, প্রথম ভাগ, ১১ মাঘ ১৩৭৮ (১৮৭২)     
  • ডঃ দময়ন্তী দাসগুপ্ত, “আমাদিগের ভ্রমণবৃত্তান্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গমহিলাদের ভ্রমণকথা” ১ম পর্ব,
    ২০১৬


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতা প্রকাশ - ২৭.০৭.২০১৩
"বৃহষ্পতি বারে যবে যাইনু কাশীতে" কবিতাটি
ও ডঃ দময়ন্তী দাসগুপ্তর উদ্ধৃতির সংযোজন - ১৮.৩.২০২১।
এই পাতার পরিবর্ধিত সংস্করণ - ১৮.৩.২০২১।
...