কবি রূপচাঁদ পক্ষীর গান
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
জংলাগৌড় --- তালা


মানুষ চলে কলের বলে |
পঞ্চভূত, বড়োই মজবুত, ঘেরেছে
সহস্র দলে
|| (ওরে ভাই)
এই দেহ-মেসিন, ইহা ভাই বড়োই প্রবীণ,
ইংরাজ চীন ফ্রেঞ্চ মারকিন, সবাই হার মানিলে ;
মরি কি শিল্পবিদ্যা,
করেছেন মহাবিদ্যা, যোগারাধ্যে পায় না বুদ্ধে,
অসাধ্য হয় ভাবতে গেলে ||
এ কলের কী কৌশল, কল থেকে জন্মাচ্ছে কল,
রেলওয়ে ইষ্টিম ভেসল, লোক-সাহায্যে চলে ;
টেলিফোন, ফনোগ্রাফ, ইলেক্ট্রিক টেলিগ্রাপ,
মানুষ কল সব কলের বাপ,
চৈতন্য রয়েছে মূলে ||
কলটি সাড়ে তিনহাত, এতে হয় ত্রিজগৎ মাত,
মনপবন বচ্চে দিন রাত, জঠর অনলে ;
জীবাত্মা মহাপ্রাণী, এ কলের দুটো চিমনি,
ব্রহ্মা বিষ্ণু, শূলপাণি, নাড়ে নড়ে পল বিপলে ||
এই কল কী চমত্কার, নয় দিকে নটা দ্বার,
মণিকোটায় আছে একজন বসিয়ে বিরলে ;
ছয় জন কুজন ধরে, কলেরে বিকল করে,
শ্রীরূপ কয় সারতে পারে, গুরুমন্ত্র পেলে ||



.                                                ****************                                        
উপরে   


মিলনসাগর
*
জংলাগৌড় --- একতালা


মারে ফ্রড করে
কালিয়া ড্যাম তুই কোথায় গেলি
|
আই য়্যাম ফর ইউ ভেরি স্যরি,
গোলডন বডি হল কালি
||
হো মাই ডিয়র ডিয়রেস্ট, মধুপুর তুই গেলি কৃষ্ণ,
ও মাই ডিয়র হাউ টু রেস্ট,
হিয়ার ডিয়র বনমালী |
(শুনো রে শ্যাম তোরে বলি)
পুওর কিরিচার মিল্ক-গেরেল,
তাদের ব্রেস্টে মারিলি শেল,
নন্ সেন্স তোর নাইকো আক্কেল,
ব্রিচ অফ্ কন্ট্র্যাক্ট করলি |
(ফিমেল গণে ফেল করলি)
লম্পট শঠের ফরচুন খুললো,
মথুরাতে কিং হল, আংকেলের প্রাণ নাশিল,
কুবুজার কুঁজ, পেলে ডালি |
(নিলে দাসীরে  মহিষী বলি)
শ্রীনন্দের বয় ইয়ংল্যাণ্ড, কুরুকেড মাইণ্ড হার্ড,
রহে আর, সি, সি, বার্ড, এ
পেলাকার্ড্ কৃষ্ণকেলি ||
(হাফ্ ইংলিশ হাফ্ বাঙালি) ||



.                                                ****************                                        
উপরে   


মিলনসাগর
*
ঙ্গল --- কাওয়ালি


গ-সম্পাতি, কশ্যপ নাতি |
খগ লীলা, জাতিমাল, কুলজি, নবপুথি
||
সারস বাবুই জাতি ব্যবসায়ী মহাজন
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পক্ষী শূদ্র, শুক শারি হীরামন ;
কুলীন কায়স্থ পরহাম্মা, নীলকণ্ঠ আদি খঞ্জন,
আষ্ট ঘর সেন সিংহ কর, গৃহবাজ,
বাজবাউড়ি বাঁশপাতি | (দে দত্ত দাস,
হয়পাতিহাঁস, ভীমরাজ কপোত কপোতী)
গলা ফোলা, মুক্ষি গোলা, জবর জং,
পরপঙ সক্কর খুরে,
পক্ষীর ওছা কাদাখোঁচা, কালোপেঁচা বাহাডুরে,
পাখি আরগিন বঙ্গের কুলীন গুহ পদবী ধরে,
উত্তররাঢ়ী কায়স্থ, নুরি মস্ত বুলি বার করে,
বারেন্দ্র ফরিয়াদী, বাদী পেলে ঘাল করে,
কোকিল বৈদ্য বুদ্ধি হদ্দ, ঠকায় কালো কাকেরে,
নবশাক চক্রবাক নবরঙ্গের নয় জাতি ||
(ময়না মদনা চন্দনাকামার কুমা তিলি তাঁতি) ||
(নাপিত নবশাক ধূর্ত কাক জগতে আছে খ্যাতি)
শঙ্খচিল গোদাচিল, হাড়গিল বক বকী,
কাকাতুয়া টিয়া মনিয়া ছত্রিশ বর্ণের পাখি,
করি উচ্চ নিজ পুচ্ছ নাছে আহিরী শিখী,
বেনেবউ স্বর্ণবণিক, পাপিয়া গন্ধবণিক
যোগী চাতক চাতকী,
উগ্র ক্ষত্রী দোয়েল খোড়েল, শাখারি চকাচকী,
ছুতর কেওর কাটঠোকরা,
বৈরাগী শকুনি মড়ার করে সত্গতি ||
(পেরু মুরগিবর্গি, গুয়েনেকড়া বাগদি জাতি)
গৃধিনী পোদ হাঁড়িচাঁচা ধাই,
পানকৌটি জেলেমালা, ফেঙে আর তাল চড়াই,
চামচিকে লাখে লাখে
ঝাঁকে ঝাঁকে দেখতে পাই,
কলুর ঘানির মতো কল কল রব করিছে সবাই,
বুনো বাদুড় মেথর, এক তিল অবসর নাই,
টুনটুননি মহাজ্ঞানী, সকল পক্ষীদের গোঁসাই
মসলন্দ আদি, তুলার গাদি, ডুমুর বৃক্ষে বসতি ||
(মস্ত বাবু বাস্তুঘুঘু চণ্ডাল কাল আকৃতি)
বিশ্বজয়ী পক্ষী বাবুই বিশ্বকর্মা হইতে শ্রেষ্ঠ,
ফ্রেঞ্চ চীন লোকমান হাকিম হতে ইনি উত্কৃষ্ট,
চরাচর শিল্পকর, সকলে এর কনিষ্ঠ,
ইনি শিল্পবিদ্যাতে জয়ী জগতে,
সকলের হতে জ্যেষ্ঠ,
বিশেষে দেশ বিদেশে, বাবুই নাম নাম আছে রাষ্ট্র,
ইঞ্জিনিয়রের বাদশা,
খাসা বাসা দেবলোকে বলে স্পষ্ট ;
হয়রে বাবুই পৃথিবী জয়ী, পক্ষীর প্রজাপতি |
(নবাবি চাল, হামেহাল তালবৃক্ষে বসতি) ||



.                                                ****************                                        
উপরে   


মিলনসাগর
*
ঝিঁঝিটখাম্বাজ --- পোস্তা


লেট মি গো ওরে দ্বারি,
আই ভিজিট টু বংশীধারী
|
এসেছি ব্রজ হতে, আমি ব্রজের ব্রজনারী
||
বেগ ইউ ডোরকিপর লেট মি গেট,
আই ওয়ান্ট সি ব্লক হেড,
ফর হুম আওয়ার রাধা ডেড,
আমি তারে সার্চ করি |
শ্রীমতি রাধার কেনা সারভেন্ট,
এই দেখো আছে দাসখত এগ্রিমেন্ট,
এখনই করবো প্রেজেন্ট, ব্রজপুরে লব ধরি ||
(দাসখত দেখে ঘুচবে জারি)
মরাল ক্যারেকটার শুনো ওর,
বটরথিব ননি চোর,        ব্ল্যগার্ড রাখাল পুওর,
চোর মথুরার দণ্ডধারী ||
(রাখাল ভূপাল কপাল ভারী)
কহে আর, সি, ডি, বার্ড
কিংবেলাক নন্ সেন্স ভেরি কনিং,
ফুলুটেতে করে সিং,
মজায়েছে রাই কিশোরী ||
(কুল নাশা বাঁশি করে করি) ||



.                                                ****************                                        
উপরে   


মিলনসাগর
*
সিন্ধুকাফি --- য


ন্য ধন্য কলিকাতা শহর |
স্বর্গের জ্যেষ্ঠ সহোদর
||
পশ্চিমে জহ্নবীদেবী দক্ষিণে গঙ্গাসাগর
||
(পুবে বাদাচিংড়িহাটা পদ্মা নদী তদুত্তর)
হেস্টিংস ব্রিজ বাগবাজার এই আয়তন তার,
সরকিউলার রোড পোরামিটধার, চতুঃসীমাসার,
অতুল্য মর্ত ভূবনে, বৈকুণ্ঠ যায় হার মেনে,
হেরে টেলিগ্রাপ, বলে বাপ,
লাজে লুকায় পুরন্দর
||
(তারেতে তার, বর্ণ বিস্তার, ধন্য শিল্পী কারিকর)
তার হেরে তার লাগল দিশে,
তারে তারে খবর এসে,
ছয় মাসের পথ এক দিবসে, মেলে তত্ত্ব অনায়াসে ;
ধন্য ডাক্তার ওসগনেসি, সকলকে করেছেন খুশি,
ব্রিটন দেশি গুণরাশি, সুখে বসি হউন অমর
||
(রোগ শোক তাপ নাশি হউন সরল অন্তর)
স্বর্গধামে মন্দাকিনী, কলকাতাতে সুরধুনী,
নন্দনকানন ইডেনগার্ডেন সম নিছনি,
ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত, কলকাতাতে ফিটেন রথ,
পারিজাতকে করে মাত গোলাব সেঁউতি নাগেশ্বর
(ফুলের টবে ধাপে ধাপে
শোভা পায় সিঁড়ির উপর)
পরিষ্কার পথ নাইকো, ময়লা
সারি সারি, গ্যাসলাইট আলা,
চন্দ্রদেবের ষোলো কলা হতে উজ্জ্বলা,
শুক্ল পক্ষে উদেন শশী,
এর পক্ষপাত নাই কোনো নিশি
কৃষ্ণ পক্ষ শুক্ল পক্ষ        উভয় পক্ষ নয় অন্তর
||
(চাঁদেতে আর তাতে তুল্য
কল্লে ইংরাজ করিকর)
করিয়ে বুদ্ধির কৌশল, পলতা হতে আনলে জল,
জলে শত সিংহের বল, লক্ষহাত প্রবল ;
ধন্য ব্রিটেন রাজধানী,
প্রজার ঘরে বাহিরে সুরধুনী,
অপঘাতে মলে প্রাণী ;
তাহার ভূত-যোনির নাহিকো ডর ||
(যাবে মনসুখে, স্বর্গলোকে, হইয়ে অমর নর)
আ মরি কী পরিপাটি, ব্রিটেন রানির রাজবাটি,
আকৃতিটি বাটী পাঁচটি, ফলত একটি ;
প্যালেস অব গভর্নমেন্ট, শোভা জিনিয়ে বৈকুণ্ঠ,
গড়ের মাঠে মনুমেন্ট, পেঁড়োর মন্দিরের ফাদর ||
(আখাম্বা সাততলা লম্বা,
যেন জগদম্বার বাবার ঘর)
ইস্টিম ভেসেল রেলওয়ে,
এই সকলের তেজ হেরিয়ে,
বেদ ব্রহ্মা ভোমা হয়ে গেলেন চাপিয়ে ;
অগ্নি জল আর পবনে,
যায় এক মাসের পত একটি দিনে,
এক কোটি মন দ্রব্য টানে,
নাহি রাত্রি দিবা অবসর ||
(রেলের বাঁশি, শুনে আসি, যোটে যত নারী নর)
লেসলি সাহেবের বুদ্ধি নিজ,
হাবড়ার ঘাটে ফাস্ট ব্রিজ,
শিল্পবিদ্যা জগৎ আরাধ্যা, হায় কী আজব বীজ ;
ত্রেতাতে ভেসেছে পাথর,
ইনি লোহা ভাসান জলের উপর,
মাঝে খুলিলে জাহাজ চলে, অর্ধ ঘন্টার ভিতর ||
(রেল চলিবার হেতু, হুগলির সেতু,
জুবিলি ব্রিজ নামান্তর)
আমহউস অতিথিশালা, কত আছে যায় না বলা,
রাবণের চিতার মতো খোলা, জ্বলে দুবেলা ;
আহার প্রস্তুত পাকি কাঁচি,
যাহার যে রূপ হয় অভিরুচি,
পিষ্টক পায়স মাংস লুচি, ভারতাশ্রম ধর্মের ঘর ||
(ন্যাড়া নেড়ি, খালি বাড়ি কর্তাভজা স্বতন্তর)
নিকাশ হচ্চে ময়লা জল,
করেছে প্রস্তুত ড্রেনেজ কল,
ধূলো থামে দিলে জল স্বতন্ত্র এক কল ;
অগ্নিদেব হলে প্রবল, নির্বাণ করে দমকল,
গোরাদের চেহারা দেখে, ভয়ে পালায় বৈশ্বানর,
পাল্লে জল যোগাতে, সাধ্য মতে
সাধ্য কী যে পোড়ে ঘর ||
(মেসিনেতে দিলে দম, করে ঝম ঝম,
তেজে বেরোয় ওয়াটার)
সকল প্রস্তুত কলিকাতাতে,
এমন নাই এ ভূ-ভারতে,
এক লামাটিনের ফণ্ড হতে তরে জগতে,
অনাথমন্দির ঔষধালয়, জেলে জেলে অন্য বিলায়,
ওই ফণ্ডের ধন, কারাগার হয় মোচন,
ইনসলভেন্ট পায় নর ||
(অন্ধ খঞ্জে, টালিগঞ্জে,
টিকিট পায় বত্সর বত্সর)
সতীর কনিষ্ঠ অঙ্গুলি,
কলিকাতাতে আছেন কালী মা,
কালী কালীকাতাওয়ালী সর্বমঙ্গলী ;
শ্যামা মায়ে কী বৈভব, প্রত্যহ হয় উত্সব,
ঈশানেতে কাল ভৈরব শ্রীপ্রভূনকুলেশ্বর ||
(কালী ক্ষেত্রের মাহাত্য দেবগণের অগোচর)
বারোমাস নিশিদিবা, হতেছে অতিথি সেবা,
প্রতি ঘরে দেব-সেবা, দেবী আর দেবা ;
বাগবাজারের মদনমোহন, ভক্তগণের জীবন-ধন,
উত্তরে গুপ্ত বৃন্দাবন,
খড়দহের শ্যামসুন্দর | (নিত্যানন্দ সুত,
বীরভদ্র সেবিত তরাতে ভবেরই নর)
বাগবাজার কুলিবাজার, বাজারে বাজারে একাকার,
এত বাজার দোকানদার,
হাতে লয়ে পুলিশ ঝুলি,
কোনো রাজ্যে নাইকো আর,
পাহারাওয়ালা গলি গলি,
দেখিলে মাতাল মাতোয়ালী,
ঠেলে ঢুকায় গারদ ঘর ||
(উত্তম মধ্যম অধম দিয়েকরে বহু সমাদর)
পাটের কল আর ময়দার কল,
কলাকৃতি ঐরাবত, করে এক দিবসে সোজা পথ,
কলের খুড়ে দণ্ডবৎ জুড়ে গেল গ্রাম নগর ||
(আনাচে কানাচে কল পেতেছে
দাস দাসী মেলা দুস্কর)
সেরে দিলে কলে কলে,
এর পর কলেতে বানাবে ছেলে,
পুত্রহীন মহীমণ্ডলে থাকবে না মূলে,
মলে করবে বিষয় ভোগ,
পণ্ড পাবার এই সুযোগ,
পুত্রহীন মহারোগ হতে হবে অবসর ||
(একটা মলে কল চালালে,
দশটা পাবে ফি বত্সর)
কলিকাতার কী নিছনি, বর্ণিতে অসক্ত বাণী,
আর চলে না সংক্ষেপে ভণি,
কত রোড কত গলি, সাধ্য কী যে তাহা বলি,
ইচ্ছা করে ছবি তুলি, হয়ে ওঠা সে দুষ্কর ||
(অল্পে স্বল্পে ন্যূন কল্পে ভণে দীন খগবর) ||



.                                                ****************                                        
উপরে   





মিলনসাগর
*