মুখে আমার গণতন্ত্র মন্ত্রতন্ত্র কতই না, কাজের ক্ষেত্রে আমার কিন্তু সাবধানী চোখ সতর্ক। তেমন বেশি তম্বি করলে, লোহার শেকল পরাই পা’য়। পেয়াদা আছে, সান্ত্রী আছে জেলহাজতও কমতি নয়। এবং আছে স্তাবক কবি, কলমপেষা সাংবাদিক নিষেধাজ্ঞার পাঁচিল ঘিরে রাখলে তোমায় বাঁচায় কে? প্রশ্ন তবু তুলবে জানি, কিন্তু কোথায় শোনার লোক? লোহার খাঁচার নির্জনতায় কোথায় কাব্য? কই কবি? ভৈরবী রাগ তখন বরং শুনতে বোসো প্রাণ খুলে।
রাতচড়া পাখি এক বসে এসে দূরের দেয়ালে যেখানে নরম রোদ লেগে থাকে প্রতিদিন শীতের সকালে। রোদের যেখানে শেষ সেখান থেকেই শুরু নিষেধের দীর্ঘতর ছায়া ছায়ার ভিতরে জমে দীর্ঘশ্বাস, মুক্তির স্বপ্ন, নাকি কুহকিনী মায়া! স্বপ্নের নানা রঙ, নানা রূপ, ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ কখনো তা চোরাবালি কখনো তা ফুল, পাখি, চাঁদ। কখনো তা রক্তে মাংসে ঘামে ভেজা মাটির পৃথিবী, কখনো তা যন্ত্রনার কখনো তা স্পর্ধার একাকার ছবি। কখনো তা শষ্যক্ষেত কখনো তা ধু-ধু মাঠ, খাঁ খাঁ কখনো তা সন্ত্রাসের রক্তে ভেজা বারুদের পোড়া গন্ধ মাখা। কখনো তা মসৃন কখনো তা ঘাত প্রতিঘাত কখনো তা হেঁটে চলা একা একা অনিঃশেষ রাত। রাত মানে একাকিত্ব সারি সারি নিঃশব্দ তালা বন্ধ দ্বার রাতচড়া পাখিটির দু’ডানায় ভর করে চুপিচুপি নামে অন্ধকার। অন্ধকারের পেটে জেগে ওঠে দাঁত নখ, রক্তচোষা জোঁক, অবৈধ লেনদেন, মুখোশের নীচে থাকা হিংস্র লোলুপ দৃষ্টি, দূরের পাচিলে বসে সবই দেখে রাতচড়া চোখ। বাইরে মুক্ত পাখি আমাদের বেঁচে থাকা একাকিত্বে খাঁচার ভিতর কল্পনায় ভর করে অবিরাম উড়ে চলা দেশ দেশান্তর। কল্পনার দেশ নেই, গন্ডি নেই নেই কোনও নিষেধের সীমা আছে শুধু রঙ তুলি চুপকথা বুকের গভীরে আছে হৃদয় প্রতিমা। সে হৃদয়ে জমা আছে একমাঠ ভালবাসা সুজলা সুফলা। তারই হাত ধরে ধরে গ্রাম থেকে গ্রামান্তর চলা যে গ্রাম মুক্ত গ্রাম নেই কোনও নিষেধের খাঁচা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে শিরদাঁড়া টান করে বাঁচা। সে গ্রামে ভিক্ষান্ন নেই, দু’টাকার চাল দুঃশাশনে জেগে থাকে ঘরে ঘরে মৌসুমি-টুম্পা কয়াল। যে গ্রাম আপাতঃ শান্ত পিঠে নিয়ে কশাঘাত, চাবুকের দাগ বুকের ভিতর যার ইজ্জতবোধ আর ছাই চাপা আগুনের রাগ। সে আগুম তুলে নিয়ে দু’হাতে ভরাই অঞ্জলী ভোরের নরম রোদে ভরে ওঠে কল্পনার রঙ,খাতা,তুলি কল্পনারা ডানা মেলে উড়ে যায় গ্রাম থেকে গ্রামে হৃদয়ের নাম রাখি রাতচড়া পাখিটার নামে।