*
শচীন্দ্রনাথ সেনের কবিতা
*
আগমনী
ঢাকের বায়না কুড়ি টাকা
নিতে সে মা চায় না তারা |
তোর পূজাতে বাজনা এবার
হবে না তো ও মাতারা ||
কুমড়ো শশা আট দশ আনা
কিনে দিতে পারবো না আর |
পাকা কলা একটা করে
তাও সে মাগো দেওয়া ভার ||
কাপড় দেব পূজার সময়
তারও উপায় রাখিস নি মা |
ছেলে মেয়ে ন্যাংটো আছে
কোথায় পাব কাপড় জামা ||
রেশানের সে কাপড় এবার
পাবার যে মা সাধ্য নাই |
তোর পূজার মা কি যে করি
দিন রাত্রি ভাবছি তাই ||
আসতে যদি হয় মা এবার
দশ হাতে আয় অস্ত্র নিয়ে |
বাংলাটাকে শেষ করে যা
তোর হাতের ঐ দশটি ঘায়ে ||
জার্মানীরা হেরে গেছে
জাপানও তো অধীন হলো |
গেল না তো বাংলা হ'তে
বাঙ্গালীর সে দুঃখ গুলো ||
তার উপরে তোমার ছেলে
সুভাষ, ওতো নেইকো বেঁচে |
পূজোর ছেলে মেয়ে
কোন আনন্দে এবার নাচে ||
এত কাল মা আনন্দময়ী
এলি হেথা হাসি মুখে |
এবার একটু কেঁদে যা মা
আমাদের এই দুঃখ দেখে ||

***********
*
আজাদ হিন্দ ফৌজ
(২৩ জানুয়ারী ১৯৫২)

বাংলা মায়ের বীর সন্তান
সুভাষ এদেশ ছেড়ে
সিঙ্গাপুরেতে পৌঁছে গেলেন
বাঁধন ছিন্ন করে |
জাপান তখন বীর বিক্রমে
দেশের উপর দেশ
অধিকার করি চলিয়া এসেছে
বার্মাপ্রান্ত শেষ |
বন্দী ভারতী সৈন্য লইয়া
জাপানের কাছ হ'তে
নেতাজী গড়িল আজাদী ফৌজ
ভারত উদ্ধারিতে |
সেই ফৌজ লয়ে মালয় জাভা ও
বার্মা দখল করি
নেতাজী এলেন চাটগাঁ পেরিয়ে
কোহিমার পথ ধরি |
জাপান যোগাল ট্যাঙ্ক ও বিমান
কামান বারুদ গোলা
আজাদী ফৌজ লইয়া সুভাষ
আকাশে উড়ায় ধুলা |
এ হেন সময় বিধাতা বিরূপ
বর্ষা আসিল চেপে
ইংরাজ সেনা সুযোগ বুঝিয়া
জাপানে পড়িল ঝেপে |
*
রাজার বাণী

বাংলা জুড়িয়া দুর্ভিক্ষের আজি
করাল মূর্তি দিয়াছে দেখা
অনাহারে পড়ে কত লোক মরে
হিসাব তাহার যায় না লেখা |
শহরে শহরে সরকার আজ    
লঙ্গরখানা দিয়াছে খুলে
খাইবে সকলে সেথা বিনা মূলে
মরিতেছে যারা ক্ষুধায় জ্বলে |
কিন্তু তাহাতে ক্ষুধা তো মেটে না
হাহাকার আরও যেতেছে বেড়ে
ভীড় করে শুধু নরনারী সেথা
ঠেকাতে পুলিশ আসিছে তেড়ে |
একটি ছটাক খিচুড়ির তরে
লঙ্গরখানায় বাড়িছে ভীড়
গ্রাম হতে সব শহরে আসিছে
ছাড়িয়া তাদের শান্তি নীড় |
ধনীর শহর কলকাতা মাঝে
কাঙ্গালের মেলা গিয়েছে বসে
কত মাতা পিতা শিশু পুত্র লয়ে
এসেছে তথায় জীর্ণ বেশে |
ক্ষুধার জ্বালায় পথে পথে মরে
রোজ কত শত শিশু ও নারী
হাস্পাতালেতে অর্ধমৃত কত
নিতেছে পুলিশ ভরিয়া গাড়ী |
সেখানে তাদের শেষ নিঃশ্বাস
বাতাশের সনে যেতেছে মিশে
বুঝিবে না তারা এ দৃশ্য যারা
দেখে নাই কভু ভীষণ কি সে |
পেটে অন্ন নাই কাপড় জোটে না
বাঙ্গালীর আজ এই তো সাজ
মনে হয় হেন যাদু বলে যেন
উড়ে গেছে সব খাদ্য আজ |
*
যতই না কাজ থাক |
পিওনগুলি ঘাড়ে থলি
দেয়না দেখা আর
টেলিগ্রাম যয়না করা
বন্দ আছে তার |
কয়না কথা টেলিফোনে
শুধুই ঘন্টা বাজে
হ্যালো হ্যালো যতই বল
হয়না কিছুই কাজে |

*********
*
লীগের জেহাদ
( ১৯৪৬ সালের 'দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস' এর বিবরণ )

১৬ই আগস্ট লীগের জেহাদ কলিকাতার পরে
ভীষণভাবে দেখা দিল সেদিন শুক্রবারে |
প্রধান মন্ত্রী সুরাবর্দী লীগের নেতা সেজে
গড়ের মাঠে মিটিং করে এলেন লাঠি ভেজে |
আটটা বেলায় বৌবাজার ও ধর্মতলার মোড়ে
আক্রমণটা শুরু হলো দোকানগুলোর পরে |
দেখতে দেখতে লুট হল সব হিন্দুর দোকানগুলো
ফট্-ফটা-ফট্ ভাঙ্গলো মাথা রক্তে ভাসে ধুলো |
হিন্দুর বাড়ী পেলেই ঢোকে লীগ গুন্ডার দল
পরিবারের সবায় কেটে বাড়ায় হাতের বল |
জীবন রক্ষার তরে শেষে অনন্যোপায় হয়ে
হিন্দুরা সব মারল তাদের ইট আর পাথর দিয়ে |
সমস্ত দিন চলল লুট আর খুন জখমের ঢেউ
পুলিশ কিংবা মিলিটারি আসলো নাকে কেউ |
শনিবারও লীগ নেতাদের চলল অবাধ গতি
ঠেকাল না লাট সাহেব কি মন্ত্রি মহামতি |
বিমান চেপে শহর দেখে সারল তাদের কাজ
কান্ডজ্ঞানহীন এসব কাজের মাথায় পড়ুক বাজ |
শনিবারের সন্ধ্যা কালে মিলিটারির করে
ছেড়ে দিয়ে কলকাতাটা মন্ত্রীরা হাফ্ ছাড়ে |
কিন্তু তাতে মারামারি বন্ধ হলেও কিছু
লীগ গুন্ডা ছোড়া হাতে থাকল হিন্দুর পিছু |
ট্রাম বাস সব বন্ধ হল বন্ধ রেলের গাড়ী
সান্ধ্য আইন জারি হল বদ্ধ সবাই বাড়ী |
তবু কিন্তু লীগের ছোঁড়া চলল সমান তালে
শ্রমিক কুলি উড়িয়ারা মরল পালে পালে |
ব্যাপার দেখে হিন্দুরা সব আত্মরক্ষার তরে
ঝাপিয়ে প'লো অস্ত্র হাতে লীগ গুন্ডার পরে |
মুসলমানের দোকানগুলোও লুট হয়ে সব গেল
*
অদৃষ্ট
( আমি )
( আমি )
ছাড়িলাম মাছ পুকুরে আমার
ভাল খাইবার তরে,
রাতে এক দিন জাল দিয়ে সব
কারা নিয়ে গেল ধরে |
( আমি )
( শেষে )
কাটিবার কালে গিয়ে ধেখি তায়
ধান নাই এক মুঠো,  
সব জমিটুকু ভরিয়া রয়েছে
রাশি রাশি খড়কুটো |
( আমি )
( আমি )
শীতের সময় গায় দেবো বলে
কোট কিনেছিনু দুটো,
বের করে দেখি সারা জাগা তার
ইঁদুরে করেছে ফুটো |
( আমি )
বিয়ে করেছিনু সুখী হবো বলে
ঝাঁটা খেয়ে মরি এবে,
কেহ নাই বুঝি আমার মতন
এমন অভাগা ভবে |
( আমি )
( পরে )
কিছু দিন বাদে খাতা খুলে সব
দেখিনু হিসেব করে,
নগদ বিক্রি আধলাও নেই
বাকী খাতা গেছে ভরে |
( আমার )
  *********************
*
কবি শচীন্দ্রনাথ সেন, দেশ-বিদেশ-বিশ্বযুদ্ধের মত নানা ঘটনাবলি, যখন যেমন পেয়েছেন, পর্যবেক্ষণ করে
এই কবিতা রচনা করে গিয়েছেন |
সংবাদ পত্র
( ৭ই জুন ১৯৪৫ )
(১০)
গোয়েবলস্ ও দেখলো যখন
যুদ্ধ জয়ের নেইকো আশা
নিজের মাথায় গুলি মেরে
শেষ করেছে মুখের ভাষা |
(১১)
সিনোর মুসলীনি নাকি
পঞ্চাশ ঘন্টা দৌড়ে গিয়ে
বেঁচে গেছেন জন্মের মত
শত্রুর হাতে প্রাণটি দিয়ে |
(১২)
সান্ ফ্রান্সিস্ কো সভায় নাকি
বিজয় লক্ষ্মী সকল খুলে
চমকে দেছেন ফিরোজ খাঁ কে
দেশের কথা বেবাক বলে |
(১৩)
সকলগুলি জবর খবর
একটিও এর মিথ্যা নয়
সবাই তাই আজ আনন্দেতে
গাইছে শুন রাজার জয় |
(১৪)
বাঙ্গালীদের ভাগ্যে কিন্তু
জয়ের আমোদ মোটেই নাই
কারণ সবাই দিগম্বর আজ
আজ যে তাদের কাপড় চাই |
(১৫)
কাল হয়েছে ১৬ টাকা
জ্বলেনা আর রাতের আলো
সরিসার তেল ২ টাকা সের
তাও বাজারে অমিল হলো |
(১৬)
অন্ন, বস্ত্র, দুই বাঙ্গালীর
সুলভ যখন এমনি ধারা
রাজার জয়ে নেংটা হয়ে
আনন্দেতেই নাচবে তারা |
(১৭)
এর পরেতেই বেতারেতে
যে সব খবর পাওয়া গেল
এখানে তা বলছি খুলে
শুনতে খুবই লাগবে ভাল |
(১৮)
জার্মানেরই রাষ্ট্র নেতা
ভোয়েনিত্স্ যে নিজে গিয়ে
আত্ম সমর্পণের পত্র
ত্রি শক্তিকে দেছে নিয়ে |
*
কবি শচীন্দ্রনাথ সেন, দেশ-বিদেশ-বিশ্বযুদ্ধের মত নানা ঘটনাবলি, যখন যেমন পেয়েছেন, পর্যবেক্ষণ করে
এই কবিতা রচনা করে গিয়েছেন |
সংবাদ পত্র
( ৯ই জুলাই ১৯৪৫ )
(৯)
লর্ড ওয়েভেল বিলেত থেকে
সেদিন সবে এসে ফিরে
নিমন্ত্রণ তার জানিয়ে দেছেন
আজাদ এবং লীগ নেতাকে |
(১০)
শাসন পরিষদটা এবার
তুলে দেবেন দেশের হাতে
সিমলা গেছেন জিন্নাও তাই
কংগ্রেসী সব নেতার সাথে |
(১১)
সেথায় গিয়ে নেতৃবর্গ
ঘন ঘন মিটিং করে
সদস্যদের তালিকাটা
ঠিক করছেন কদিন ধরে |
(১২)
নামের লিস্ট টা পেলে পরে
লাট বাহাদুর তার যে কথা
১৪ জুলাই জানিয়ে দেবেন
সকল নেতার বৈঠকে তা |
(১৩)
জিন্নাজী ও কংগ্রেসীদের
মতটা যদি একই হয়
লর্ড ওয়েভেল দেবেন স্বরাজ
ভারতকে, আর নেইকো ভয় |
(১৪)
জিন্নার মুখের ভাবটি দেখে
সবাই কিন্তু বলছে ভাই
জিন্না কিছু নেবেন না আর
পাক্স্থানই তাহার চাই |
(১৫)
লীগ নেতার এই পাকিস্থানটা
চাওয়াই যদি সত্যি হয়
সিমলা বৈঠক যাবে ফেসে
স্বরাজ পাবার রয়না ভয় |
(১৬)
১৪ই জুলাই কি হয় দেখার
আশায় মোরা রইনু বসে
লাট সাহেবের বিচারে যায়
পাকিস্থান কি স্বরাজ ভেসে |
*
কবি শচীন্দ্রনাথ সেন, দেশ-বিদেশ-বিশ্বযুদ্ধের মত নানা ঘটনাবলি, যখন যেমন পেয়েছেন, পর্যবেক্ষণ করে
এই কবিতা রচনা করে গিয়েছেন |
সংবাদ পত্র
( সম্ভবতঃ এপ্রীল-মে ১৯৪৬ )
(১)
টোকিও বেতার হতে আবার
নূতন খবর পেলাম ভায়া
সিতাংবাকে ভীষণভাবে
বদলে গেছে যুদ্ধের হাওয়া |
(২)
কামান এবং সৈন্য সহ
জাপানীরা প্রবল ভাবে
দিচ্ছে বাধা এগিয়ে যেতে
মিত্র পক্ষের সৈন্য সবে |
(৩)
কয়েক হাজার জাপান সেনা
পেগুওমায় বন্দী আছে
উপায় তাহার খুঁজছে তারা
কোন ফিকিরে সবাই বাঁচে |
(৪)
রেলের যোগাযোগগুলি সব
বৃটেন যাহা নেছে কেড়ে
ট্যাঙ্ক কামানে জাপানীরা
ফেলছে সে সব ছিন্ন করে |
(৫)
মিত্র পক্ষ তোড়জোড় খুব
করছে নদীর অপর পারে
দু পক্ষই ঠিক ভাবছে বসে
কে জেতে আর কে বা হারে |
(৬)
ওদিক আবার বার্লিনেতে
হচ্ছে সভা পটাসডমে
ত্রি শক্তিতে মিটিং করেন
ভূলটি নাহয় কোন ক্রমে |
(৭)
জাপান নাকি করবে সন্ধি
বৃটেন আমেরিকার সাথে
অধিকৃত দ্বীপগুলি সব
ছেড়ে দিয়ে তাদের হাতে |
(৮)
জাহাজ এবং বিমান বহর
সবই নাকি দেবে ছেড়ে
মিত্র পক্ষ তাহা হলে
যুদ্ধ দেবেন বন্ধ করে |
(৯)
হঠাত্ সেদিন দেখি আবার
কাগজের এক খবর পড়ে
নূতন বধুর সঙ্গে বসে
হিটলার নাকি গেছেন উড়ে |
(১০)
বিমানযোগে দক্ষিন মেরুর
কোন এক নতুন তুষার দেশে
বরফ হয়ে জমে তারা
সত্যি কিগো যাবেন শেষে |
(১১)
এই তো গেল বিদেশ বার্তা
এবার আসি দেশে ফিরে
লীগ নেতারা আর কংগ্রেসীরা
কি বা বলেন লাটের ঘরে |
(১২)
আজকে পুনঃ বলব শুন
জুলাই মাসের সকল কথা
দেশ নেতারা ফিরেছেন সব
সিমলা হতে পেয়ে ব্যাথা |
(১৩)
জনাব জিন্না ছাড়েন নিকো
কোন রূপে আপন দাবী
ওয়েভেলের কল্পনাটা
তাইতে ভেঙ্গে গেল সবই |
(১৪)
এত দিনের এত আশা
সবই সেদিন গেল ভেসে
সিমলা শৈল যেদিন সেথা
মুষিক প্রসব করল শেষে |
(১৫)
ফিরে গেলেন মহাত্মাজী
ফিরে গেছেন আজাদ মিঞা
মালাবারে ফিরে গেলেন
শূণ্য হাতে জিন্না ভায়া |
(১৬)
ডোমিনিয়ান স্বরাজ দিতে
ভারতেরে তাইনা পেরে
ফিরে গেলেন বড়লাটও
মনের দুঃখে নিজের ঘরে |
(১৭)
ওদিক আবার লণ্ডনেতে
বিরাট খবর গেল পাওয়া
আমেরী আর চার্চিল দুইয়ে
ছেড়ে দেছেন খাওয়া দাওয়া |
(১৮)
হেরে গিয়ে নির্বাচনে
সেদিন শ্রমিক দলের হাতে
চাকরী নিয়ে চলে গেছেন
নিজ নিজ দলের সাথে |
(১৯)
ক্লিমেন্ট এটলি শ্রমিক নেতা
এখন প্রধান মন্ত্রী হয়ে
চার্চিলের সেই বাড়ীখানায়
খাটি ভাবেই গেছেন রয়ে |
(২০)
প্যাথিক লরেন্স ভারত সচিব
আমেরীর পদ নেছেন কেড়ে
তাই আমেরী বি@@@
চাকরী নেছেন সকল ছেড়ে |
(২১)
এই বদলে ভারতবাসী
পাবে কি না নূতন কিছু
জানিনে ঠিক আশায় ভারত
@@@@@@@@@ |
(২২)
আর একটিও জবর খবর
জাপান হতে গেল পাওয়া
রুশ ও নাকি এত দিনে
জাপানীকে করলে ধাওয়া |
(২৩)
এটমিক বম্ বাহির করে
ইঙ্গ মার্কিন দুজন মিলে
জাপানটাকে সেদিন নাকি
দুধার থেকে উড়িয়ে দিলে |
(২৪)
হিরোশিমা নাগাসাকি
বোমার ঘায়ে গেছে উড়ে
শহর দুটোর সবাই নাকি
একেবারে গেছে পুড়ে |
(২৫)
পটাসডমের বৈঠকে তাই
জাপানীরা দারুন ভয়ে
সন্ধিপত্র পৌঁছে দেছে
তাদের প্রধান দূতকে দিয়ে |
(২৬)
চার প্রধানে সন্ধি সর্ত
আগেই তাদের জানিয়ে দেছে
মরণাস্ত্রের প্রভাব দেখে
জাপানও তাই মেনে নেছে |
(২৭)
সর্বাধিনায়কের পদে
ম্যাক আর্থার গেছেন বসে
জাপান রাজা তার অধীনে
স্বাধীন হয়ে রইল শেষে |
(২৮)
এতদিনের বিরাট যুদ্ধ
এবার নাকি গেল থেমে
জয়ের আনন্দেতেই এবার
বাংলা নেয়ে উঠল ঘেমে |
(২৯)
ন মাস হল কারো কাছে
দেশের খবর হয়নি বলা
লেখার সময় পাইনি মোটেই
যদিও খবর ছিল মেলা |
(৩০)
সংক্ষেপেতে বলছি এখন
বড় বড় খবরগুলো
দেশের ভাগ্যে জুটে গেছে
এবার অনেক কলা মুলো |
(৩১)
বিমান চড়ে জাপান যেতে
সুভাষ নাকি গেছেন মারা
নিজের তৈরী আজাদী ফৌজ
তাইতে হল ছন্ন ছাড়া |
(৩২)
নেতাজী আর কয়েকটা দিন
তখন যদি যেতেন বেঁচে
অধীনতার ললাট লিখন
ভারত তবে ফেলত মুছে |
(৩৩)
তা যখন আর হলো নাকো
মন্ত্রী মিশন এল হেথা
তাদের দয়ায় ভারতবাসী
পেয়েই যাবে স্বাধীনতা |
(৩৪)
লীগ নেতা আর কংগ্রেসীরে
ডেকে নিয়ে সিমলা শিরে
স্বাধিনতার দলিল লিখে
নিয়ে এলেন নিচেয় ফিরে |
(৩৫)
দিল্লী এসে অবশেষে
দিয়ে গেলেন স্বাধীনতা
দুখের বিষয় বুঝল না কেউ
কংগ্রেসীরা লীগের নেতা |
(৩৬)
খোস মেজাজে কেউই তারে
চায়না নিতে এ কি জ্বালা
সকল দেখে মন্ত্রি মিশন
করছে এখন পালা পালা |
(৩৭)
স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্ অসুস্থ খুব
শুনছি নাকি দিল্লী এসে
ভালয়ে ভালয়ে পারলে যে হয়
ফিরতে এখন তাদের দেশে |
(৩৮)
লীগ পেল না পাকিস্থান তাই
জিন্না গেছেন ভীষণ ক্ষেপে
কংগ্রেসীরা ভরছে পলো
পাকিস্থানই ঘাড়ে চেপে |
(৩৯)
পড়েশুনে মহাত্মাজী
মূল দলিলের সকল ভাষা
বলছেন সবায় লওগো ইহা
এইতো স্বরাজ দিচ্ছে খাসা |
(৪০)
বাংলা দেশের বড়ই দুঃখ
নেতাজী নেই এমন দিনে
তাকে পেলেই বাংলা এখন
পারত যেতে পথটি চিনে |
(৪১)
হে ভগবান ফিরিয়ে দে আজ
নেতাজীকে মোদের মাঝে
পতাকা তার হাতে নিয়ে
দাড়ান এসে বীরের সাজে |
(৪২)
আশার কথা একটু ইহা
রাষ্ট্রপতির পদে এবার
জহরলালজী মনোনিত
ভার পেয়েছেন স্বদেশ সেবার |

**************
         বৃটেনের জয়

যুদ্ধের মোড় ঘুড়িল এবার --- আমাদের রাজা জিতিয়া গেল
রোম কেড়ে নিয়ে বৃটেন যেদিন --- ভালমত তার প্রমাণ দিল |
হাজার হাজার যুদ্ধ জাহাজ --- ফ্রান্স উপকুল ফেলিল ঘিরে
মার্কিন হতে বিমান বহরে --- বিপুল সৈন্য নামিল তীরে |
হিটলার নিজে সেনাপতি হয়ে সৈন্য চালনা করিছে গিয়ে
হাজার হাজার ট্যাঙ্ক ও কামানে --- ফ্রান্স দেশটিরে ফেলিছে ছেয়ে |
জার্মান তার নব আবিস্কার --- পাইলটহীন বিমান ছুড়ে
ধ্বংস করিয়া লণ্ডন দেশ --- নিরাপদে পুন এসেছে ফিরে |
এইরূপ অনেক গালভরা কথা --- বেতারে কাগজে রোজই শুনি
জিতিবে বৃটেন আশা পেয়ে মনে --- সে শুভ কালের দিনটি গুনি |
পশ্চিম দেশ রাহুমুক্ত করে --- বৃটেন মার্কিন আসিবে পূবে
ভয়েতে জাপান দেশে ফিরে যেতে --- মরিবে সাগরে জাহাজ ডুবে |
এরূপ কতই গুজব এদেশে --- রটিছে নিত্য শুনিতে পাই
এদিকে বাঙালী মরিতে বসেছে --- অন্ন জুটিলেও নুন তো নাই |
শহরবাসীরা রাজার দয়ায় --- কিছু কিছু তবু রেশন পায়
আমরা এদিকে উপোসে কাটাই --- সেদিকে কেহ বা নজর দেয় |
তেল চিনি আটা উধাও হয়েছে --- মেলে না কোথাও দেখা তার
নিশিথের বাতি জ্বলে নাকো রাতে --- বস্ত্র অভাবে লাজ রক্ষা ভার |
রিলিফ কমিটি বিগত বছরে --- চাল আটা ধুতি দিলেও কিছু
হাজার হাজার নিরন্ন বাঙালী --- তবু ছুটে গেছে মরণ পিছু |
রেশনের কার্ড শহরেতে আছে --- পল্লীবাসীদের তরে তা নয়
মাস অন্তে ছটাক নুন পাই হেথা --- পাছে কাটে নাম সেই তো ভয় |
অর্দ্ধ বোতল কেরোসিন পেয়ে --- কাটাই আমরা সারাটি মাস
চিনির অভাবে চাখোর যাহারা --- লাগে তাহাদের ভীষণ ত্রাস |
পোড়া গুড় পাই সমবায় স্টোরে --- তারও নাকি সের দশ আনা করে
না নিলে সে গুড় নুন তো পাব না --- সেই ভয়ে আনি পাত্রে ভরে |
ডাল-আটা-গুড় সমবায় স্টোরে --- বাজার হইতে অধিক দামে
খারাপ হলেও বাধ্য হয়ে কিনি --- নতুবা সুনাম থাকে না গ্রামে |
তবুও মোদের হিতৈষী ভাণ্ডার --- এ গ্রামবাসীরে রেখেছে সুখে
অন্য গ্রামবাসী কত কষ্ট পায় --- সে কথা ভাবিতে কাঁদিগো দুঃখে |
পেটে অন্ন নাই কাপড় জোটে না --- কেরোসিন চিনি দেখে না চোখে
এখন আবার নুনের অভাবে --- ভাত খায় দুটো কি দিয়ে মেখে?
এই তো মোদের জীবনের হাল --- বেঁচে থাকি আর কিসের মোহে
বাংলার নর-নারীদের আজ --- চক্ষের জল বক্ষে বহে |
ইংরেজ জিতিবে যুদ্ধে এবার --- এখবর খুব ভালই বটে
বাংলা শ্মশান হবে তার আগে --- দেখো তাই ইহা মানস পটে |
যুদ্ধ জিতে রাজা কাদের লইয়া --- চালাবেন তার রাজ্যটিরে
মুসলিম লীগ যদি টিকে থাকে --- তারাই বসিবে রাজারে ঘিরে |
বাঙালীরা আজ মরিতে বসেছে --- তাতে কার কিবা আসিয়া যাবে
রাজা মন্ত্রী দল মধ্য শিক্ষা বিলে --- তবুও এখন মাতিয়া রবে |
অসুস্থ মহাত্মা মুক্তি পেলেও --- কংগ্রেসী দলের মুক্তি নাই
দেশ যদি যায় ক্ষতি কিবা তায় --- বৃটেনের জয় গাওরে ভাই |

.                     ************************** ২রা জুন ১৯৪৪                    
সূচি
*
একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্ লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন লেখা, কবিতা
বা তার অংশবিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা https://www.milansagar.com/index.html এ দয়া
করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্ লগ্  বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ !