১
দেশ হিতৈষী ছুনন্ দাদার,
অনেক কথাই শুনি,
নানা রকম কাজ করে হন,
জ্ঞানী এবং গুণী |
২
দেশের তরে ত্যাগ আছে তাঁর,
খুবই ভাল বক্তা,
করেও ছিলেন অনেক কিছু,
বলব না আর থাক তা |
৩
কাজের চেয়োও কথাতে তাঁর,
আছে বেশী শক্তি,
কথার মধ্যে আছেও তাহার
বড় বড় যুক্তি |
৪
তর্কে তাঁরে হার মানাবে
নেইকো কারো সাধ্য,
বক্তৃতাতেই অনেকে তাঁর
হয়ে পড়েন বাধ্য |
৫
চাকরি ছেড়ে দিলেন তিনি
দেশের কাজ করতে,
হেড মাস্টার হলেন গিয়ে
গার্লস স্কুল তরতে |
৬
হিতৈষী ব্যাঙ্ক নিলেন হাতে
করতে তারে রক্ষা,
কিন্তু বুঝি যায় না রাখা
হয়েছে তার যক্ষা |
৭
ভেবেছিলেন Call দিলে ঠিক
আসবে বামন ডাক্তার
Change ওষুধেই সারবে এ রোগ
(কিন্তু) মিলল নাক ফাঁক তার |
৮
তাঁহার মত বামন কিন্তু
ছাড়ল না তাঁর কর্ম
স্বার্থ ছেড়ে বুঝল না কেউ
দেশ সেবাটার মর্ম |
৯
কাজে কাজেই ছুনন্ দাদার
গেল কর্ম শক্তি,
ব্যাঙ্কটা বুঝি বাঁচে না আর,
হয় না কো রোগ মুক্তি |
১০
বালিকাদের বিদ্যালয়টাও
যায় বুঝি হাত ফসকে,
নিয়ে যাবে রামা, শ্যামা,
যদু কিংবা রসকে |
১১
কাজে কাজেই ছুনন্ দাদা
হয়ে পড়ছেন ক্লান্ত
কৃষিকাজে মন দিয়ে খুব
আছেন ঘরে শান্ত |
১২
মাঝে মাঝে চোটে-মোটে,
বসেন গিয়ে ব্যাঙ্কে
পিওন, পেয়াদা, কর্মচারী
চেয়ে রয় আচঙ্কে |
১৩
এখন তাঁর আশা এলে
বামন দাস ডাক্তার,
আগের মত চলবে যে ব্যাঙ্ক
সারবে আবার রোগ তার |
১৪
কিন্তু মোরা দিব্য চোক্ষে
দেখতে পাচ্ছি বেশ
ছুনন্ দাদা থাকতে হবে
ব্যাঙ্কের আয়ু শেষ |
১৫
বামন তাহার চাকরি নিয়ে
খোস মেজাজেই আছে
নাম হারাতে বামন আবার
ঘেঁষবে না তার কাছে |
১৬
ব্যাঙ্ক বাঁচাতে ছুনন্ দাদা
অনন্যোপায় হয়ে
ফাঁক ঢেকেছেন নূতন নূতন
কর্মচারী দিয়ে |
১৭
নেই আটা চাল কন্ট্রোলের মাল
স্টোরও গেছে প্রায় উঠে
কার্য্যাভাবে গল্প করে
কর্মিরা সব জুটে |
১৮
মাইনে কিন্তু মাস কাবারে
পাওয়ার বাধা নেই
ছুনন্ দাদা চটেই চলেন
হারিয়ে ফেলে খেই |
১৯
নরেনেরও আগের মতন
উত্সাহ নেই কাজে
ব্যাঙ্কের চেয়ে ঘরের কাজই
তাইতে বেশী খোঁজে |
২০
ব্যাঙ্ক বাঁচাতে যদিও হল
Tank টা সত্কার
পুকুরেতে মাছের পোনা
পাড়েও কৃষি আর |
২১
পুকুর পাড়ে থাকে ঘরে
কৃষক হরিবোলা |
মরিচ, বেগুন, কুমড়া, ডাটা,
নিত্য হয় যে তোলা | সূচি
২২
ছুনন্ দাদা মাঝে মাঝে
আসেন তদারকে
উপদেশের ছলে তাকে
যানবা কিছু বকে |
২৩
গত বছর লোকসান ব্যাঙ্কে
দিয়ে গাদা গাদা
সেয়ানা খুব হয়ে গেছেন
এবার ছুনন্ দাদা |
২৪
মালপত্র Store এ এবার
রাখেন নি কো তাতে
চাল যা ছিল ফুরিয়ে গেল
Requisition দিতে |
২৫
Requisition করেন নি কো
যে সব মেম্বারেরা
১৮ টাকার চাউলও এবার
ব্যাঙ্কে পাননা তারা | সূচি
২৬
বেশী দামে বাহির হতে
কিনছে তারা চাল
ছুনন্ দাদা ব্যাঙ্কে তবু
ধরে আছেন হাল |
২৭
তার সময়েই দুর্ভিক্ষটা
এলো সুযোগ বুঝে |
কিসে বাঁচবে ব্যাঙ্কটা তাহার
পথ পান না খুঁজে |
২৮
ব্যাঙ্কে ছিল দিয়াশলাই
কেনা অনেক গুলি
সস্তা হবে শুনে সে সব
দিলেন বেঁচে ফেলি |
২৯
এখন কিন্তু ম্যাচ বাজারে
যায়না পাওয়া আর
গেলেও পাওয়া ৫ পয়সা
দাম দিতে হয় তার | সূচি
৩০
Store গিয়েছে ফাঁকা হয়ে
ব্যাঙ্ক ও বুঝি যায়
তবু ঠিক হাল ছুনন্ দাদা
ধরে আছেন নায় |
৩১
সুবাতাসটা পেলেই নায়ে
দেবেন বাদাম টানি,
গাঙ পেরিয়ে ডাঙায় নাওটি
পৌঁছে দেবেন আনি |
৩২
বামন আবার এলেই দেশে
শক্তি পাবেন ফিরে,
নূতন নূতন প্ল্যানগুলি তাঁর
নাচবে মাথা ঘিরে |
৩৩
হয়ত তাহার দুটো একটা
সফল হতেও পারে |
তাই যেন হয় প্রার্থনা এই
করি বিধির দ্বারে |
**** ১০ শ্রাবন ১৩৫০
. সূচি
ছুনন্ দা
রচনা ১০ শ্রাবন ১৩৫০, 1943
****************
১৩৫০ সাল
(১০ই শ্রাবন ১৩৫১)
৪৫শে এ দেশেতে বন্যা যেবার হ'ল,
কি ভয়ই না দেশবাসীরা সেবার পেয়েছিল |
তাহার চেয়েও ৫০ এর এই মন্বন্তরের কথা,
দেশের বুকে দিয়ে গেছে দ্বিগুনতর ব্যাথা |
৫০ সাল তো চলেই গেছে ৫১ ও যায়,
দুর্ঙিক্ষ রাক্ষুসী তবু ছাড়ছে না তো হায় |
জাপান যবে কেড়ে নেছে বার্মা সিঙ্গাপুর,
সেদিন থেকেই উলটে গেছে বাংলাদেশের সুর |
ধান চাল সব কোথায় গেল পাইনে দেখা তার,
কেরোসিন আর লবন চিনি খুঁজে পাওয়াই ভার |
বন্যায় যা হয় নি শেষে যুদ্ধে তাহা হ'ল,
দেবতার চেয়ে মানুষ বড় প্রমান দিয়ে গেল |
৪৫শে চালের বাজার ৫\ মন ছিল,
৫০ সালে বেড়ে তাহা ৪০শে দাঁড়াল |
দুর্ভিক্ষের সে করাল দেখে নিকো যারা,
"ভীষণ" কি তা কেমন করে বুঝবে বল তারা |
অসংখ্য সব নরনারী কলিকাতার পথে, সূচি
লঙ্গরখানায় খাবার লোভো এল পল্লী হতে |
কিন্তু সেথায় খাদ্য না পেয়ে মরিল শিশু নারী,
হিসাব তাহার রাখিল না কেহ ফেলে দিল ভরে গাড়ী |
হালপাতালেও দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মরিল অনেক লোক,
তাদের তরে কাঁদিল না কেহ করিল না কেউ শোক |
বন্যা হলেও খাদ্য অভাবে মরেনি সেবার কেহ,
এবার সে ক্ষোভ মিটেছে দেখিয়া রাজপথে মৃতদেহ |
৫০ সালে চালের বাজার হলেও ভীষণ চড়া,
তেল, আটা, চিনি, নুন, কেরোসিনের বাজার ছিল না কড়া |
কিন্তু এবার কন্ট্রোল হলেও চার গুণ দামে কিনি,
চাল @@ হলেও বাজারে মেলে না নুন আর চিনি |
গত বছরেও দুর্ভিক্ষের সনে যুঝিয়া অনেক লোক,
বেঁচেছিল তবু কোনো রকমেতে ভুলিয়া বিগত শোক |
মধ্যবিত্ত আর কেরাণি যাহারা এবারে মরিবে তারা,
আয় হতে ব্যায় চার গুণ বেশী ভাবিয়া হতেছি সারা |
যুদ্ধের চেয়ে বেশী ভয় আজ নুন কেরোসিন দিলো,
আঁধারে বসিয়া আলুনী সে ভাত কেমনে খাইবো বলো |
রেশন টিকিটে খাদ্য মিলিবে শুনিয়া পেল আশা,
কিন্তু সেথা গিয়ে চক্ষুস্থির হলো মিলালো মুখের ভাষা |
অর্ধ বোতল কেরোসিন আর ছটাক নূনের তরে, সূচি
দাঁড়ায় থাকিতে হইবে সেথায় ঘন্টা তিনেক ধরে |
ইহা ছাড়া আর মাসের মধ্যে মিলিবে না কোন ছাই,
দুঃখ ঘুচিবে রেশন টিকিটে ভাবনা তো আর নাই |
বেশী যা লাগিবে Black Market এ গেলেই যাইবে মিলে,
তিন আনার নুন পেয়ে যাবে তুমি ১\ টাকা সের দিলে |
চিনি, আটা, তেল Black Market এ অভাব হবে না কভু,
মাসের খোরাক রেশন টিকিটে পাবেনা তখনো তবু |
বাংলা দেশের খাদ্যের ভার সুরাবর্দ্দীর হাতে,
সুতরাং আর বাংলা এবার মরিবে না কভু ভাতে |
গত বছরের দুর্ভিক্ষের ছবি ভাসিছে মানস পটে,
ভয় হইতেছে এবছরও পুনঃ সেরূপ বুঝিবা ঘটে |
৫০ সালের দুর্ভিক্ষের ছবি দুই চারখানি হেথা,
আঁকিয়া দিলাম জানিবে ইহাতে বাংলা মায়ের ব্যাথা |
সভ্যতা গর্বিত ধনীর শহর কলিকাতা রাজ পথে,
ডাস্টবীন হতে আবর্জনা খায় মানুষ গরুর সাথে |
ধনীর দুয়ারে এক মুঠো ভাত চেয়ে চেয়ে নাহি পেয়ে,
মহানগরীর রাজপথে পড়ে মরেছে মাতা ও মেয়ে |
নিরন্ন-মৃতের দেহ ছিঁড়ে খায় শেয়াল, কুকুরে দিনে,
বহু ছবি তার দেখিয়াছি মোরা দৈনিক কাগজ কিনে |
এ ত গেল শুধু শহরের রূপ পল্লীর দিকে যাও, সূচি
ইহার চেয়েও ভীষণ দৃশ্য দেখিবে যে দিকে চাও |
মানিকগঞ্জের বাজারের পথে মোক্ষদা নামেতে মেয়ে,
না খেয়ে মরেছে, দিবালোকে তারে শেয়ালে ফেলেছে খেয়ে |
মেদিনীপুরের কোন এক গ্রামে ক্ষিদের জ্বালায় জ্বলে,
পিতা মাতা দুইই মরেছে গাছেতে গলায় দড়ি দে' ঝুলে |
ছেলে মেয়ে দুটি খুঁজিতে তাদের খিড়কি পুকুর গিয়ে,
ডুবে মরে তারা বাঁচিয়া গিয়াছে ক্ষিদের জ্বালাটি নিয়ে |
এইরূপ আরো ভীষণ ঘটনা কত না যেতেছে ঘটে,
কয়টা বা আর পেয়ে থাকি মোরা কয়টা বা কাগজে উঠে |
৫০শের এই দুর্ভিক্ষের ছবি চির দিন মনে রবে,
খাজা মন্ত্রীদের কলঙ্কের কথা জগতে অমর হবে |
যুদ্ধ চলেছে পৃথিবী জুড়িয়া, রেশন যোগাতে তার,
ভারতের লাট আর মন্ত্রীর দল নেছেন সকল ভার |
বাংলা হইতে খাদ্যদ্রব্য সব যেতেছে চলিয়া তাই,
সৈন্যরা খাবে সে সব খাদ্য মোরা তা কেমনে পাই |
যুদ্ধে জিতিবেন আমাদের রাজা, জয় গাও তার সবে,
বাংলা যদি তাহে খেতে নাহি পায় এমন কি ক্ষতি হবে |
সুতরাং আজ দুই হাত তুলিয়া গাও হে রাজার জয়,
রাজা জিতে গেলে পেট ভরে খাবে, আর তো নাহিকো ভয় |
. ************************* ১০ই শ্রাবন ১৩৫১ সূচি
[ একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্ লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন লেখা,
কবিতা বা তার অংশবিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা https://www.milansagar.com/index.html
এ দয়া করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্ লগ্ বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ ! ]
ফুলসভা
( ১৩৫৩, চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রি, ৩||. )
এক দিন শরতের শুক্লা যামিনীতে,
ঘুমায়ে রয়েছি সুখে আপনার ছাতে ;
ঝাঁ ঝাঁ করে জ্যোত্স্না রাতি নীরব নিঝুম,
হঠাত্ কি জানি কেন ভেঙে গেল ঘুম ;
জেগে দেখি বসে আছি মর্মর আসনে,
ফুলসভা বসে গেছে শরত্ কাননে |
প্রকাণ্ড দীঘিতে করে জল টলমল
মাঝখানে ফুটে তার এক শতদল |
চারি পারে ঘিরে তার শত শত ফুল,
গন্ধ বিলাইয়া করে সবারে আকুল |
দূরে চারিদিকে দেখি ফুলের জনতা,
গুন গুন শব্ দে তারা কহে কত কথা |
গোলাপ, চামেলী, বেলি, জুঁই, কুন্দ আর ;
গন্ধরাজ পাশে শোভা রজনীগন্ধার |
শেফালী, বকুল আছে ঘাটের দু ধারে ;
ঝর ঝর ঝরিতেছে ঘাটলার পরে |
অতসী, অপরাজিতা, রক্তজবা আর,
মল্লিকা, মালতী দোহে ব'সে পাশে তার ;
শিমুল, পলাশ ব'সে প্রাচীরের কোলে,
কি কথা বলিছে যেন দোহে ঢুলে ঢুলে |
ফুলগুলি আজ যেন হয়েছে মুখর ;
সেই শব্ দে ঘুম বুঝি ভেঙে গেছে মোর |
আরও কত ফুল আছে নাম নাহি জানি,
সবাই কি কথা যেন করে কানাকানি |
হঠাত্ শুনিনু জলে পদ্ম তুলে মাথা,
গোলাপে ডাকিয়া কিছু বলিতেছে কথা |
ফুল মধ্যে সব চেয়ে বড় যে হবে,
আজি এ সভায় সে ই উচ্চাসন পাবে |
তুমি নাকি সেই স্থান লভিবার আশে
বক্তৃতা করিছ তব বন্ধুগন পাশে |
কিন্তু হে গোলাপ আমি জিজ্ঞাসি তোমারে
কোথায় জনম তব কাহার আগারে ?
এ দেশের স্থলে জলে জনম যাহার,
বড় হইবার তার আছে অধিকার ;
ভিন্নধর্মী বিদেশী সে হলে গুণবান,
স্বদেশে তাহার বল কোথায় সম্মান ?
মানি আমি রূপগুণে তুমি মন্দ নয়,
তা ব'লে তোমার স্থান নাইক হেথায় |
ভারতে তোমার বাস নহে বেশী দিন,
উচ্চ হইবার আশা তাই তব ক্ষীণ ;
তারপরে যেটা তব অন্য অন্তরায়,
সুন্দর হলেও কেহ নিকটে না যায়,
যদি কেহ সন্তর্পনে ফুলে দেয় হাত ;
অমনি তাহারে তুমি কর যে আঘাত ;
বিদেশীর টেবিলেতে ফুলদানী শোভা,
ক'র বটে মাঝে মাঝে চিত্ত মনঃলোভা |
কিন্তু সব গুণ গেছে এক দোষে ঢাকি,
সুতরাং চুপ কর, ঠারিওনা আঁখি |
গোলাপ রাগিয়া উঠি হয়ে আরো লাল,
কমলেরে ডেকে বলে ফুলাইয়া গাল |
তব জন্ম কথা তুমি নিজে গেছো ভুলে,
তাই গালি দিতে আস জাতি জন্ম তুলে |
পঙ্কজ নামটি তব কোথা হতে পেলে,
এ কথাটি এ সভায় জানে যে সকলে |
ক্রুর সর্প সহ তুমি বাস কর জলে,
তাই তো হিংসায় এত উঠিতেছ জ্বলে |
আমার আছে যে কাঁটা তোমার কি নাই ?
চালন ও সূচের কথা পোলো মনে তাই ;
পঙ্কেতে জনমি আস জন্মে খোটা দিতে ;
ধিক্ ধিক্ লাজ তব হয় নাকি চিতে |
আমার আছে হে স্থান সব সভা মাঝে,
জিজ্ঞাসি তোমারে পদ্ম লাগো কোন কাজে ;
সত্যযুগে নারীদের হাতে পেতে শোভা,
এ যুগে তোমন আর নহে মনোলোভা |
জলেই করিছ বাস জলেতেই থাক,
উচ্চাসনে বসিবার আশা কেন রাখো |
মোর কথা সত্য কি না বলুক সবাই,
বলি আমি বৃথা তর্কে আর কাজ নাই |
রজনীগন্ধার পাশে ছিল গন্ধরাজ,
বার বার দেখে নিল নিজ শুভ্র সাজ ;
তার পর সম্বোধিয়া গোলাপ কমলে,
বলে, তোমাদের কথা শুনেছে সকলে |
থাকা ভাল উচ্চ আশা সকলেরই মনে,
তা ব'লে বামন চাঁদ ধরিবে কেমনে |
পরনিন্দা আমি কভু করিতে না চাই,
ভয়, পাছে শুভ্র অঙ্গে কলঙ্ক লাগাই |
নিজেরাই প্রকাশিছ নিজেদের দোষ ;
আমি ব'লে কেন তাহা বাড়াইব রোষ |
দুজনেরই অঙ্গে কাঁটা ক্ষতের মতন,
ঢাকিতে কি পার তাহা করিলে গোপন |
তোমরা বসিবে উচ্চে শুনে হাসি পায়,
ও আশাটা তবু কিন্তু মানায় আমায় |
সবাই শুনিয়া উঠি দিল করতালি,
পলাশ প্রাচীর পাশে শুনে হাসে খালি |
বলে আমি ফুলদের সবাইকে চিনি,
মরে আছি তাই আজ কথা নাহি জানি |
শিমুল তাহার কাছে ছিল দাঁড়াইয়া,
বলিল গম্ভীরভাবে মাথা দোলাইয়া |
উচ্চে কে বসিবে তার হতেছে বিচার,
দৃষ্টি বুঝি মোর দিকে পড়ে না কাহার ;
ফুলের মধ্যেতে আমি সকলের বড়ো,
রংএর বাহারে আমি কম নেই কারো |
কুকুরের জিহ্বাসম রক্তদল মোর,
নিজ রূপ দেখে হই নিজেই বিভোর |
গন্ধ নাই কিন্তু আমি গুণের আধার,
মোর ফলে হয় যত তুলার সঞ্চার ;
সেই তুলা দিয়ে হয় গদি ও বালিশ,
আমি শ্রেষ্ঠ নই, কারে জানাই নালিশ |
বেশী কিছু বলে আজ কাজ নাই আর,
আমি শ্রেষ্ঠ কিনা নর করুক বিচার |
শেফালী শুনিতেছিল ঘাটলায় বসি,
কিন্তু তার ফুল নাই সব গেছে খসি |
তবু সে বলিল কথা লাজ নম্র শিরে,
আজ অভিনন্দন আমি করি সভাটিরে |
সভাটি হইত যদি শারদ প্রভাতে,
শ্রেষ্ঠ কে, সকলে তাহা পারিত বলিতে |
আজ আমি সর্বহারা কিছু মোর নাই,
নিরবেই সকলের কথা সই তাই |
এত বলি শেফালিকা হইল নীরব,
পাশেই বকুল ছিল শোনাগেল রব |
সকলের কথা শুনে পায় বড় হাসি,
কারে আজ দুঃখ দেই কারে করি খুশি |
বংশের গৌরব আর ফুলের সুবাস,
একাধারে আছে সব আমাতে প্রকাশ |
যুগ যুগ ধরে আমি দেখিতেছি সব,
কত ফুল এল গেল কে হ'লো নীরব |
ঝর ঝর ঝরে ফুল বিলাই সকলে,
সবাই আমার তলে বসে কুতুহলে |
শীতল ছায়ায় আর সুবাসে সবারে,
শ্রান্তি দূর করে দেই আমি নির্বিচারে |
উচ্চ স্থান কার প্রাপ্য বিচারের ভার ;
পথিকের হাতে দেই বাসনা আমার |
তারাই বিচারে যারে উচ্চাসন দিবে,
আজিকার এই সভা তাই মেনে নিবে |
দীঘির ওপারে ছিল চম্পকের দল,
সব কথা শুনে তারা হাসে খল খল |
বলিল এদিকে কারো নজর না পড়ে,
গুণে যেই বড় হয় শ্রেষ্ঠ বলি তারে |
আমার কথা নয় সবে বাদ দিলে,
ভুঁই চাঁপা ফুলে বল কেমনে ভুলিলে |
ভুঁই চাঁপা ভুঁই ফুঁড়ে বের হবে যবে,
শ্রেষ্ঠ বলি সভায় সে প্রমানিত হবে |
বেশী কিছু আমাদের বলিবার নাই,
কেবা শ্রেষ্ঠ বিচারে তা জানা যাবে ভাই |
তবে ভঙ্গ হ'ক সভা আজিকার মত,
হাততালি দিয়ে উঠে ফুলসভা যত |
শঙ্খপুষ্পি, স্থলপদ্ম শিউলির পাশে,
হঠাত্ দাঁড়াল কিছু বলিবার আশে |
আমার প্রস্তাব এক শুন বন্ধুগণ
পুনরায় সভা তরে লহ নিমন্ত্রণ |
কোজাগর রাতে সভা বসিবে আবার,
তখন যা কথা সব বলিব আমার |
এখন যদিও আমি শঙ্খপুষ্পি ভাই,
তখন বাগান আলো করিব একাই |
সকলেই এ প্রস্তাব মানিয়া লইল,
শত শত হাতে সব করতালি দিল |
সেই শব্ দে ঘুমটুকু ভেঙে গেল মোর,
চেয়ে দেখি কোন কালে হয়ে গেছে ভোর |
. ************* ১৩৫৩, চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রি, ৩||. সূচি
মিলনসাগর
জনাব জিন্না
লীগের নেতা জনাব জিন্না
প্রাসাদে তার বসে,
লীগ জাহাজের হালের চাকা
ধরে আছেন কশে |
সুকানী তার সুরাবর্দ্দি
পালের দড়ি ধরে
জাহাজখানা চালাচ্ছিলেন
পাকিস্তানের তীরে |
বঙ্গ সাগর মাঝে হঠাৎ
উঠল ভীষণ ঝড়
ঢেউগুলি তার আছড়ে প'লো
লীগ জাহাজের পর |
জাহাজ বঝি বাঁচেনা আর
যায়না তারে রাখা
পাকিস্তানে যাবার আগে
ভাঙলো হালের চাকা |
হাল অভাবে জাহাজখানা
মাঝ দরিয়ায় ঘোরে
তবু আছেন সহিদ সাহেব
পালের দড়ি ধরে |
পাঞ্জাব এবং বাংলা দেশের
বিরাট বিপুল ঢেউ
জাহাজখানায় দিচ্ছে দোলা
রাখতে নারে কেউ |
বৃটিশ জাহাজ এসে তারে
আনবে পাকিস্তানে
লীগ জাহাজ সেই ভরসায়
জিন্না তোলের টেনে |
মাউন্টব্যাটেন বিলাত থেকে
২রা জুন এসে
জাহাজখানার মাল নামাবেন
পাকিস্তানের দেশে |
বড়লাট ঠিক সময়মত
এলেন দিল্লী চলে
লীগের জাহাজ তখনও ঠিক
পৌঁছুলো না কুলে |
যা হোক শেষে কোনমতে
রাঁচলো জাহাজখানা
সার্থক হল সুরাবর্দ্দির
পালের দড়ি টানা |
পাকিস্তানের জাহাজের মাল
পৌঁছে দেবার ভার
ভাবনা এখন মাউন্টব্যাটেন
দেবেন হাতে কার |
অবশেষে পাঞ্জাব এবং
বাংলা বিভাগ ক'রে
পাকিস্তানটা জনাব জিন্না
নিলেন হাতে ক'রে |
বাংলা দেশের যেসব জিলা
পড়ল পাকিস্তানে
বিষম ব্যথা বাজলো তাতে
খুলনাবাসীর প্রাণে |
হিন্দু প্রধান জেলা বলে
খুলনা সবাই জানে
রাডক্লিফের রোয়েদাদে
তার উল্টে গেল মানে |
হিন্দুস্তানে পড়ল যারা
স্বাধীন তারাই হ'লো
পাকিস্তানের অধীনতায়
হিন্দু ডুবে ম'লো |
১ বছরের বিবাদ ভুলে
হিন্দু মুসলমান
১৫ই অগাস্ট কলিকাতায়
পেল নবীন প্রাণ |
মহাত্মাজী দেখলেন ইহা
কলিকাতায় বসে
সহিদ সুরাবর্দ্দিও তার
ছিলেন পাশে পাশে |
এমন মহা মিলন কেহ
দেখেন নি তো আর
পশ্চিম বঙ্গের লাট রাজাজী
হলের চমত্কার |
সুরাবর্দ্দির রাজ ক্ষমতায়
হয়নি কভু যাহা
মহাত্মাজীর প্রভাবে আজ
সম্ভব হ'লো তাহা |
সুরাবর্দ্দি গিয়াছিলেন
ঢাকায় মন্ত্রি হ'তে
খাজা সাহেব তাড়ালেন তায়
একটি পদাঘাতে |
মহাত্মাজীর প্রভাব দেখে
সহিদ অবশেষে
প্রাসাদ ছেড়ে শিষ্য রূপে
ফেরেন তাহার পাশে |
শুনছি নাকি আলো চাল আর
কাঁচা কলা ভাতে
নিত্য প্রসাদ গ্রহণ করেন
মহাত্মাজীর সাথে |
এবার নাকি নোয়াখালী
লীলাক্ষেত্র তার
প্রায়শ্চিত্ত করতে যাবেন
সঙ্গে মহাত্মার |
জানি না তার পাপের বোঝা
নাববে কি না তাতে
মুক্তি পেলেও পেতে পারেন
মহাত্মাজীর হাতে |
রাম নামেতে রত্নাকরের
কেটেছিল পাপ
সাধুসঙ্গে সহিদেরও
কাটবে অভিশাপ |
তাই যেন হয় সহিদ সাহেব
মুক্তি যেন পান
মহাপাপী উদ্ধারিবেন
প্রভু ভগবান |
. ************* সূচি
মিলনসাগর
বোনটি
আমার ছোট বোনটি আছে
নামটি তাহার লালীমা
কালি পেলেই হাতের কাছে
সেজে বসে কালীমা |
সারা দিনই ব্যস্ত কাজে
কতই যেন কাজলী
কচি দাঁতে সদাই রাজে
হাসীটুকু বিজলী |
কচি পায়ে বেড়ায় হেটে
পড়ে সদাই টলিয়া
কাদ মাটি পেলে কাছে
গায়ে মাখে গুলিয়া |
সকল ঘরে বেড়ায় ঘুরে
বেজায় খুশি বই পেলে
আমার দোয়াত কলমখানা
যেথায় রাখি দেয় ফেলে |
বাংলা কিংবা ইংরাজী হোক
বই নে ব'সে পা মেলে
একটি পরে ছিড়ে খুড়ে
উঠে পড়ে তা ফেলে |
জলের ঘটি থালা বাটি
লাগে তাহার সব কাজে
কত কি যে বলে সে যে
যায় না বোঝা সবটা যে |
দুধের বাটি দেখলে মাটি
কান্নাকাটির ধুম লাগে
গায়ের জোরে সবাই হারে
হয়না কিছু মার রাগে |
একটি পরেই ঘুমিয়ে পড়ে
তখন যেন হয় মাটি
ঘর ঠাণ্ডা দোর ঠাণ্ডা
নিঝুম হ'ল বাটী |
. ************* সূচি
মিলনসাগর
তান্ তুন্ ডাক্তার
আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার দূর হ'তে চেনা যায় নাক টেপা নাক তার রোগীর বাড়ীতে গেলে সবকিছু যায় ভুলে রোগীরা আঁৎকে উঠে শুনে হাঁক ডাক তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | পড়ে খাঁটি খদ্দর তাতেই সে ভদ্দর সদাই কাজে ব্যস্ত তাই নেই কোনো ফাঁক তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | সম্পাদক ব্যাঙ্কের লীজ ও নেয় ট্যাঙ্কের রাগ হলে থুতু ছিটে রোধ হয় বাক্ তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | চিকিত্সক খুবই ভাল রোগী সব বেঁচে গেল কিন্তু এক দোষে গেছে সবটুকু জাঁক্ তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | মুখের খিচুনী তার সহে হেন সাধ্য কার ভাল হইলেও তাই কমে গেছে ডাক্ তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | হলে কেস্ ডেলিভারী পড়ে সেথা কল্ তারি টাইফয়েড সারে সবই বলে' খুব জাঁক তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | চা আর নস্য পেলে রোগী দেখা যায় ভুলে বামনের গোলাপেও কম নাই তাক্ তার রোজই সকালে গিয়ে ফুল কটি আসে নিয়ে আর কেহ আনিবে সে থাকে নাকো ফাঁক তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | চা আর নস্য তরে মেজ খুড়িমার ঘরে সকাল বেলায় তাই শুনা যায় হাঁক্ তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | পল্লী স্বাস্থ সমবায়ে আছে সে ডাক্তার হয়ে রোগী পায় রোজ সেথা সিন্ কোনা মিক্স তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | আসিয়া সুরেন ভায়া ছাড়িয়া প্রাণের মায়া শিশিতে ঢালিয়া জল রোজ কাটে দাগ তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | কত গুণ আছে তার লিখে কি জানাবো আর পিকেটিং করে শেষে জেলে পোলো ডাক তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | সম্পাদক বিনে হায় ব্যাঙ্ক সবে যায় যায় তান্ তুন্ ঢুকে সেথা ঢেকেছিল ফাঁক তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | কি ভেবে সে সব ছেড়ে হরি নাম সার করে সর্দ্দার হইল গিয়ে কীর্ত্তন আখড়ার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | হায় কি সন্ন্যাসী বেশে নিমায়ের মত শেষে বিবাগী হইয়া যাবে আমাদের ডাক্তার বড় ভাল ছিলো হয়ে তান্ তুন্ ডাক্তার | পুন এ কি শুনিলাম ছেড়ে ব্যঙ্ক হরিনাম করিল যাত্রাদল মিটাইতে শখ তার শেষে কি ক্ষেপিয়া গেল তান্ তুন্ ডাক্তার | দেশ হতে দেশান্তরে ফেরে বায়নার তরে ডাক্তারি করিবার আছে কি গো ফাক্ তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | গ্রামের বখাটে ছেলে সব সে নিয়েছে দলে অভাব মিটেছে কিছু তাহাদের বাপ মার গরীবের তরে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | এবার বুঝিনু ঠিক গতি তার কোন দিক্ মরিবার তরে হায় উঠিয়াছে পাখ্ তার মজিল এবার বুঝি তান্ তুন্ ডাক্তার | শুনি দু হাজার টাকা লোকসান দিয়ে পাকা ঘাড় হতে নেমে গেছে যাত্রার ভুত তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার | পুন নিজ ব্যবসায় যদি এবে মন দেয় তবেই বাঁচিব মোরা থেকে সাথে লাক্ তার আমাদের গ্রামে আছে তান্ তুন্ ডাক্তার |
. ************* সূচি
মিলনসাগর
|