কবি সাগর চক্রবর্তী-র কবিতা যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
আমাদের কবিতা কাব্যগ্রন্থ থেকে. . . কবিতা বিষয়ক সাগর চক্রবর্তী কবিতাকে, ধ’রে নিচ্ছি, সমস্ত শিল্পের প্রতিনিধি কবিতাকে, ধ’রে নিচ্ছি, শুদ্ধতম মানব সন্তান কবিতাকে, ধ’রে নিচ্ছি, মহাশূন্যের মধ্যে নিজস্ব কেন্দ্রের স্থিরতায়, খানিকটা টাল খেয়ে ঝোঁকা গতিময় চৌম্বক অবস্থান শ্রেণিসংগ্রামের কথা শুনতে শুনতে বুড়ো হলো খোকা আসমুদ্র হিমাচল এখনো দেয়নি ধুয়ে ভালোবাসা নামে এই কবিতার নদী | সুতরাং কবিতা বাজারে যাবে, ব্যবসায়ের কথা বলবে, আর নিপুণ হিসেব করবে পড়তা লাভ মুনাফা লোকসান পার্লামেন্টে যাবে, সরব নীরব থাকবে | নীলামের দর হাঁকবে, গ’ড়ে নেবে বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠান | সন্তান যেহেতু হলো সম্যক বিস্তার, বলে অভিধান সন্তান যেহেতু হলো নন্দন নন্দনী ছড়িয়ে পড়বে তারা, গৃহকোণে থাকবে না বন্দী বা বন্দিনী বিবাহিতা পরিণীতা হবে আনবে ত্রাণ নন্দন আনন্দ দেয়, নন্দিনীও দেয়, করে নরক-উদ্ধার | স্বর্গ আর বিপরীতে নরক | নরক বানায় কারা ? কী ভাবে বানায় ? এতোদিন পৃথিবীতে বাস ক’রে ঘুণ মানুষ সে সব তত্ত্ব জেনে বুঝে শিখে গ্যাছে মানা না মানায় সুন্দর উপার্জন মানে স্বর্গ এক কথায় তাই তো দাঁড়ায় | সহজ সরল রাস্তা জটিলকুটিল হয়ে ঘোরায় যে দমছুট চড়ক তা-ই তো স্পষ্ট দেখছি জাহান্নামে যাবার সড়ক | সন্তান নরকযাত্রী হবে সন্তান ব্যবসা করবে সুন্দর উপার্জন চেয়ে উথ্বানে উঠে যাবে ধাপগুলো বেয়ে প্রতিযোগিতার মঞ্চে, রণক্ষেত্রে লড়তে হবে রোজ | কবি কি এসব রাখে খোঁজ ? বিভেদের লড়াই তো বিচ্ছিন্নতা আনে লড়াই যে আনে ক্লান্তি, শোক সে শোক গভীর হলে, গভীর গভীরতর হলে দানাবাঁধে মিলনের গানে দ্বীপগুলো নোনাজলে সাঁতরে এসে মিলতে থাকে----- এক মহাদেশ | সুন্দর উপার্জনই নরকের শেষ ২৬.০১.৯৮ . **************** . সূচিতে মিলনসাগর |
আমাদের কবিতা কাব্যগ্রন্থ থেকে. . . কবি ও কবিতা বিষয়ক সাগর চক্রবর্তী ( এক ) অহঙ্কার থেকেই তিনি কবিতা লেখেন | অনেক অনেক কবিতা তিনি লিখেও ফেলেছেন | তাঁর সেইসব কবিতারা দারুণ অহঙ্কারী দেমাগী পোষাক আশাক চালচলন ভঙ্গি উচ্চারণ এমনকি রুচি চেতনাও এতো অহঙ্কার নিয়ে তাঁর কবিতা সবার ঘরে যেতে পারে না, যায়ও না | মানুষ তো সমাজকে শ্রেণীকে গোটাগুটি অস্বীকার ক’রতে পারেনা | দেওয়া নেওয়া যাওয়া আসা লোকলৌকিকতা রা’খতেই হয় | তিনি তাঁর কবিতাকে নিয়ে অহঙ্কারী সমৃদ্ধ মানুষের কাছেই যান | তাঁদের নেমন্তন্ন করেন | যোগাযোগ রাখেন | তাঁরাও তাঁকে তাঁর কবিতাকে সুসজ্জিত কক্ষে এনে বসায় অথবা মঞ্চে | যাদের অহঙ্কার করার মতো অলঙ্কার সাজপোষাক ঘরদোর চাকরীবাকরি শিক্ষা দীক্ষা কাজকর্ম ব্যবসাপত্র নেই তারা দ্যাখে | অবাক হয় | ------ বাব্ বা রে বাব্ বা ! কী কান্ড | কেউ কেউ ভাবেও বটে --- ঐ’রকম হওয়াটাই আসল হওয়া | কিন্তু সে ভাবনা ফুল হবে তারপরতো ফল ধ’রবে---- এতো সময় ধৈর্য ধ’রে কে ? তা ছাড়া জমিও তো তৈরী নেই | আবহাওয়ার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম | ( দুই ) কারো কারো কবিতা দামি শাড়ি গয়না পরে, ওষ্ঠঅধরে রঙের উজ্জ্বল হাসি ফুটিয়ে বাইরে আসে, রাস্তায়, হয়তো বা বেড়াতে যায়----- আমার দারুণ লাগে ! কারো কারো কবিতা বিয়ের রাতের কনে বউটির মতো সেজে গুঁজে ঘরে ব’সে থাকে পোজ দিয়ে | সে কারো কাছে যায় না, অতিথিরা আমন্ত্রিতরাই আসে | সাধ্য মতো উপহার দিয়ে প্রশংসা করে | আমি দেখেছি, এই ব্যাপারটার মধ্যে আন্তরিক প্রীতির স্নিগ্ধতার চেয়ে ভিন্নতর কিছু থাকে | কারো কারো কবিতা বিরহিনী সীতার মতো অ- শোক কাননে বন্দী, গালে হাত দিয়ে ব’সে থাকে, দীর্ঘশ্বাস আর চোখের জল | কারো কারো কবিতা এমন পোষাক প’রে সাজে যাতে তপব্রতধারী মুনিরও ধ্যানভঙ্গ হয় | কারো কারো কবিতা ফুল লতা চাঁদের আলো পাখি প্রজাপতি ঝরণার সংসার সেখানে কখনো খরা ঝড় বন্যা দুর্ভিক্ষ শ্রেণিসংগ্রাম ঢুকতেই পারে না | কারো কারো কবিতা বটানিক্যাল গার্ডেনের সেই বটগাছ, মূলকান্ড কোথায় খুঁজেই পাইনা, কিম্বা গতিশীল সাইকেলের চাকা আমি গতি ভালোবাসি তবু সাইকেল চাপতে শিখিনি | চেষ্টা করলে পতনের যন্ত্রণা ও ব্যথাই পাই | কারো কারো কবিতায় যশোদা মায়ের সেই নন্দদুলাল যেন হামা টানে, কী দারুণ হাসে, কখনো বা চোখে জল | বৈষ্ণব না হয়েও আমি দু’হাত বাড়াই, ওকে একটু ছুঁতে চাই, বুকে তুলে নিতে চাই, জানি সকলেই চায় | কারো কারো কবিতা ছেড়ে যাওয়া জাহাজের বাঁশি কারো কারো কবিতা হাতজোড় ক’রে থাকা সেবাদাস সেবাদাসী কারো কারো কবিতা যোজন যোজন অন্ধকার শীতলতা, শুধু পাতা ঝ’রে যাওয়া, যেন এক এলোকেশী রাত নিজেকে দ্যাখায় শুধু এই রকম কবিতায় গ্রস্থ হবার ভয়ে আমি দূরে থাকি | কোনো কোনো কবিতায় নদী মাঠ মাটি ফসলের খুদকুঁড়োর গন্ধমাখা হাটুরে মানুষ, শুধু গ্রাম সামন্ত সম্ভার | কোনো কোনো কবিতাতো ভারতীয় অর্থনীতি আর রাজনীতির মতোই নষ্টভ্রষ্ট জন্মপঙ্গু নাবালক দুষ্টবৃত্তি ভরা | কোনো কোনো কবিতায় ছেড়ে চলে যাওয়া সন্তানের পথ চেয়ে দু’চোখে প্রদীপ জ্বেলে বসে থাকা ঐশ্বর্যময়ী গরবিনী মা | কবিতার রাজ্যপাট ও রাজনীতিতে ঘুরে এসে আমি সেই রাজ্যেশ্বরী জননীকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করি হাত পাতি : অন্ন দাও ! ০৫.০১.১৯৯৮ . **************** . সূচিতে মিলনসাগর |