কবি সাগর চক্রবর্তী -র আসল নাম রঞ্জিত কুমার চক্রবর্তী | তিনি জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত
বাংলার ঢাকা জেলার, বিক্রমপুরের রাড়িখাল গ্রামে | পিতা স্বর্গীয় দক্ষিণা চরণ চক্রবর্তী এবং মাতা স্বর্গীয়া
ইন্দুমতী দেবী |
কবির পরিবার দেশভাগের পর এদেশে এসে কলকাতার উপকন্ঠে ঢাকুরিয়া-শহীদনগরে বসবাস শুরু করেন |
তিনি আদর্শ নবকৃষ্ণ পাল শিক্ষায়তন (বালক বিভাগে ) ভর্ত্তী হন এবং ১৯৫৭ সালে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায়
পাশ করেন | এরপর তিনি চারুচন্দ্র কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে বি.এ পাশ করেন ১৯৬৩ সালে |
১৯৭৪ সালে তিনি ফকির চাঁদ কলেজ থেকে বি.এড পাশ করেন এবং ঐ বছরেই প্রাইভেটে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন |
কবি স্নাতক হবার পরেই সাময়িকভাবে দুইটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন | এরপর ১৯৬৭ সালে ঢাকুরিয়ায়
রামকৃষ্ণ হাই স্কুলে যোগদান করেন এবং ২০০৬ সালে ঐ স্কুল থেকেই শিক্ষকতার কাজ থেকে অবসর গ্রহন
করেন |
কবি শৈশব থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন | মা, বাবা, প্রকৃতি , পরিবেশ ,মানুষ তাঁর কবিতা লেখার
প্রেরণা | মা, নদী, মাটি, আকাশ, গাছপালা, শিশু এবং মানুষ এই সব বিষয় নিয়েই কবিতা লিখেছেন কবি
এবং ভবিষ্যতেও এই বিষয় নিয়েই কবিতা লিখতে তিনি আগ্রহী | বিভিন্ন সময়ে কবি প্রতিবাদ করেছেন
অন্যায়ের বিরুদ্ধে, তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে | সাম্প্রতিক কালের সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনও তাঁর কবিতা
থেকে বাদ পড়ে নি | কবি ১৯৫৯ সাল থেকে "ক্ষুদ্র পত্র" পত্রিকায় কবিতা লিখতে শুরু করেন | তিনি কবি
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত স্নেহধন্য ছিলেন |
কবি স্কুল জীবন থেকেই বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত | কলেজ জীবনে তিনি R.S.P. ছাত্র সংগঠন
P. S . U . -এর সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন | পরবর্তীকালে R. S. P-র সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন |
তিনি R. S. P -র ‘ক্রান্তি শিল্পী সংঘের’ সাথে যুক্ত ছিলেন সক্রিয় ভাবে | এখানে কবি গান লিখতেন, সুর
করতেন, গান গাইতেন, নাটক লিখতেন এবং অভিনয় করতেন | বর্তমানে বাম রাজনীতির সাথে কবির
সম্পর্ক অনেক দূরের |
কবি সময়ের প্রয়োজনে নাট্য আন্দোলন এবং শিক্ষা আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন |
জলপাইগুড়ি জেলায়, ঝাড়মাস গ্রামের জঘন্য হত্যালীলা, নকসালবাড়ী, খড়িবাড়ী, ইত্যাদি অঞ্চলের আন্দোলন
এবং তারপর মরিচঝাঁপির গণহত্যার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শাসক জোট - বামফ্রন্টের উপর স্বপ্নভঙ্গ
হতে থাকে |
কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নির্বাসন-- দূরের জানালা’ ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় | ১৯৬৬ সালে ‘নির্জনতার সঙ্গে
সংলাপ’, ১৯৭০ সালে 'আগুন ছুঁয়েছি তাই' ও 'ধ্বংসোরত্তীর্ণ পৃথিবীর কবিতা', ১৯৭১ সালে 'থানার চাতালে
শুয়ে', ১৯৭৩ সালে 'থানার চাতালে শুয়ে ও পরবর্তী অন্যান্য কবিতা', ১৯৭৭ সালে 'চারিদিকে ভাঙ্গা শহীদ
বেদী', ১৯৮২ সালে 'পরিচিত বর্ণমালা', ১৯৮২ সালে ‘বাতাস রৌদ্রের দিকে যাও’, ১৯৮৪ সালে 'সাগর
চক্রবর্তীর বাছাই কবিতা', ১৯৯০ সালে ‘পরিত্যক্ত কবিতামালা’, ১৯৯৩ সালে ‘রক্ত জবার পাশে শাদা
পিটুনিয়া’ ( বাংলা,ইংরাজী ও হিন্দী ভাষায় ), ১৯৯৬ সালে 'প্রাকৃত পিঙ্গল' (উপাখ্যান কাব্য ) এবং ২০০৭
সালে ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা’ প্রকাশিত হয় | ১৯৮৪ সালে দীর্ঘ কবিতা 'রিফিউজি ও অন্যান্য কবিতা',
১৯৮৭ সালে ‘একটি মহাকাব্যের খসড়া’, ১৯৯২ সালে ‘খন্ডিত মানুষ’ প্রকাশিত হয় | ১৯৮২ সালে তিনি
‘পারুলের জন্য’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন | এছাড়া কবি ১৯৮১ সালে ‘গণতন্ত্রের লাঠি’ নামে একটি
গণসঙ্গীতের বই লেখেন | কবি ১৯৮৬ সালে ‘মিলিত সংসার’ এবং ১৯৯৯ সালে ‘ভাসানে নয় স্নান যাত্রায়’
নামে দুটি কাব্যনাটক রচনা করেন | এছাড়াও কবি অনেক গ্রন্থ অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন |
কবি সাগর চক্রবর্তী ‘ক্রান্তি শিল্পী সংঘের’ অনেক গান নাটক রচনা করেছেন | ১৯৭৪ সালে ‘বেহুলা নাচানো
স্বর্গ’ নামে একটি নাটক রচনা করেন, এবং নাটকটি অনেক মঞ্চে অভিনিত হয় | ১৯৯০ সালে কবি সুব্রত
রুদ্র সম্পাদিত "গণসংগীত সংগ্রহ" বইটিতে কবির ১২টি গান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে | বইটির প্রকাশক - নাথ
পাবলিশিং, ৭৩ মহাত্মা গান্ধী রোড, কলকাতা ৭০০০০৯ |
আগামীতে কবি সাগর চক্রবর্তীর ‘ঘুরে দাঁড়াবার প্রস্তাব’ নামে ৫খন্ডে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হবার কথা
আমাদের জানিয়েছেন | আমরা গর্বিত কবির কবিতা আমাদের ওয়েবসাইটে তুলতে পেরে এবং তাঁর
কবিতা আমদের সাইটে তোলার অনুমতি দেবার জন্য আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ |
কবির সঙ্গে যোগাযোগ -
দূরভাষ - +৯১৩৩২৪১৫১৮৪১ ,
ঠিকানা - দক্ষিণা-ইন্দুভবন, ১/২২ শহীদ নগর, কলকাতা ৭০০০৩১
কবি সাগর চক্রবর্তীর মূল কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন
*********************************
উত্স:
এই পরিচিতিটি কবি সাগর চক্রবর্তীর সাথে ২রা মার্চ ২০১১,
তাঁর বাসভবনে, একটি সাক্ষাত্কারের পর লেখা হয়েছে |
মিলনসাগরের পক্ষে সাক্ষাত্কারটি নিয়েছিলেন মানস গুপ্ত |