হব সন্ন্যাসী, হব সন্ন্যাসী --- ইন্দ্রিয়জয়ী ব্রহ্মচারী, সর্বত্যাগী বৈরাগী, ক্রেধের কারণ যত হোক, আমি কই রাগী! প্রভাতে ভাবিয়ে বসি পড়িব পড়িব খসি . এই সংসারবৃক্ষ হইতে শুষ্কপত্র-মত ; মানিব না বাধা মায়ার কান্না, লব সন্ন্যাস-ব্রত | . আমি আপিল করিব না ; . বাহানা-মাফিক গৃহিণীর গহনা সাধের নিদ্রা রাত্রে বাঁচাতে তাহাও গড়িব না | সকালে উঠিয়া ঝাঁকা হাতে লয়ে ছুটিব না বাজারে, আমি ট্যাক্স দিব না কর্পোরেশনে, বিজাতীয় রাজারে | প্রতি রবিবারে ধোপার পিছনে হইবে না ছুটিতে, হবে নাকো যেতে শশুরগৃহেতে প্রতেক ছুটিতে | পরের শ্রাদ্ধে, দেশের কারণে আর নাহি দিব চাঁদা ; দুঃখ হবে না কোলে নিতে ছেলে কালো-রোগা-নাকখাঁদা | সর্দি মুছায়ে বিলাস-বস্ত্র নোংরা হবে না আর, মাসের শেষেতে যার তার কাছে লইতে হবে না ধার | দাড়ি-গোঁফে দিব অবাধে বাড়িতে, ডাকিব না প্রাতে নাপিত বাড়িতে, দুধে জল হেতু গোয়ালার সাথে হবে না ঝগড়া-ঝাঁটি ; "পড়্ পড়্" বলে ছেলের মাথায় মারিতে হবে না চাঁটি | কিবা ভয় আর বাড়ন্ত যদি গিন্নীর ভাণ্ডার ; তীর্থে তার্থে হব না ত্যক্ত হস্তেতে পাণ্ডার | অশৌচ নাহিকো, অসুখের কালে ডাক্তারে ফিস্ গোনা, ছেলের পিলেটা সারাবার তরে খুঁজিতে হবে না চোনা | দুর্জয় শীতে ঘামিতে হবে না চোর ডাকাতের ভয়ে, অপমান আর কিছু নাহি হবে মামলায় পরাজয়ে ; মোয়ে-বিয়ে নিয়ে ছেলের বাপের পায়ে পায়ে তেল দিয়ে ফিরিব না আর --- না হবে ভাবিতে পূজার তত্ত্ব নিয়ে ; বাসন মাজার ফ্যাসাদ নাহিকো চাকর পালিয়ে গেলে, পাড়াপড়শীর নালিশ নাহিকো পাজী যদি হয় ছেলে | সাহেবের লাথি বাপান্তি গাল হবে না শুনিতে আর, ছেলে মেয়ে আর স্ত্রীর ফরমাসে ছেড়ে যাব সংসার | অসহ্য সব --- নিশ্চয়ই আমি হয়ে যাব সন্ন্যাসী, ভাবিতেছি বসে ; পত্নী নিকটে আসিয়া যে কন হাসি --- "তুমি হেথা বসে, এদিকে যে চা-টা জুড়িয়ে ঠাণ্ডা হ'ল! বুদ্ধি হ'ল না বয়স যদিও এক কুড়ি আর ষোলো |" চা'র ক্ষুধা আর গৃগিণীর তাড়া জুড়াইয়া দিল মোরে ; আজি শুনি কথা, ভাবা যাবে ফের আগামী কল্য ভোরে || . ---অঙ্গুষ্ঠ
চক্রশোভিত উড়ে নিশান রচনা --- সজনীকান্ত দাস সুর ও শিল্পী --- সুকৃতি সেন ,১৯৪৮
চক্রশোভিত উড়ে নিশান নব ভারতের বাজে বিষাণ কে আছ কোথায় ছুটে এসো সবে . জ্ঞানি ও কর্মী ধনী কিষাণ | পনেরো আগস্ট পুণ্য দিন প্রাচীন ভারতে জাগে নবীন হেরো তিনরঙা পতাকার তলে . মিলিত হিন্দু মুসলমান || নতুন যাত্রা শুরু এবার মিলেছে সুযোগ জনসেবার মৃত্যুসাধনা সফল হয়েছে . গাই সবে মিলি জীবনগান ||
মঠমন্দির মসজিদ চূড়া রচনা --- সজনীকান্ত দাস সুর ও শিল্পী --- সুকৃতি সেন ১৯৪৯
মঠমন্দির মসজিদ চূড়া . ঢেকেছে এ সারা ভারতটাই | মানুষ, দেশের দুঃখী মানুষ . বলত মোদের কোথায় ঠাঁই ? আমাদের মাঝে রক্তের নদী বহে প্রখর সাম্প্রদায়িক ধর্ম ভীষণ ভয়ঙ্কর এপারে ওপারে করে আছে ভীড় মানুষ কোথায় বাঁধে বল নীড় উর্ধে শূন্যে মাটি আর জলে . আশ্রয় তার কোথাও নাই | মানুষ এখানে অশুচি হয়েছে . পবিত্র হেথা মাটি পাথর জন্মের গুণে কেউ উঁচু শির . সেই দোষে কেউ ভয়কাতর আচার ধর্ম রুদ্ধ করেছে চলার পথ মানুষে মানুষে প্রেম ভালোবাসা . তার চেয়ে বড় শাস্ত্রের ভাষা অন্ধ গোঁড়ামি-মাহাত্ম্য, বুকে . কঠিন আঘাত হানিছে তাই |