কবি সজনীকান্ত দাস-এর কবিতা
|
জনম মরণ পা ফেলা
রচনা --- সজনীকান্ত দাস
সুর ---- কালীপদ সেন
শিল্পী --- ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য
ছবি --- মেজদিদি , ১৯৫০
জনম মরণ পা ফেলা
আর পা তোলা তোর
. ওরে পথিক |
স্মরণ যদি রাখিস তবে
পদে পদে ভুলবি না দিক ||
নয়কো শুরু আঁতুর ঘরে
. শেষ নয় রে চিতার পরে
আগেও আছে পরেও আছে
সেই কথাটি বুঝে নে ঠিক ||
দুচারদিনের এই খেলাঘর
. ভাঙে যদি ভয় কি রে তোর
. বালুর চরে তাসের ঘরে
. সারাজীবন করবি কি ভোর |
ডুবে আবার উঠবি ভেসে
এ লীলা তাঁর সর্বনেশে
. তাতেই যদি মান ডোবে রে
. তবেই পাবি পথের নিরিখ
. ওরে পথিক ||
. **********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
প্রণাম তোমায় ঘনশ্যাম
রচনা --- সজনীকান্ত দাস
সুর ---- কালীপদ সেন
শিল্পী --- কানন দেবী,
ছবি --- মেজদিদি, ১৯৫০
গানটির কথা আমরা পেয়েছি স্বপন সোম সম্পাদিত গানের ভিতর দিয়ে গ্রন্থ থেকে।
. প্রণাম তোমায় ঘনশ্যাম !
তোমার চরণ শরণ করি অভয় এবার হবো হরি,
দুঃখ-সাগর যাব তরি যদি করি তোমার নাম
আমরা পড়ি ঘুমাই প্রভু তোমার নিত্য জাগরণ,
ক্ষণে ক্ষণে ঘটাও যে ভ্রম, চক্ষে তারই আবরণ !
সেই আবরণ ঘুচাও হরি, দাঁড়াও যুগল মূর্তি ধরি,
দেখি তোমার নয়ন ভরি’, পূর্ণ করি মনস্কাম ||
. **********************
আমরা কৃতজ্ঞ জনাব মুত্তালিব বিশ্বাস সাহেবের কাছে যিনি এই গানটিতে কিছু সংশোধনী
পাঠিয়েছেন। তাঁর ইমেল - muttalibbiswas@yahoo.com। যেহেতু উপরে দেওয়া কথা
একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য উত্স থেকে নেওয়া হয়েছিল, আমরা জনাব মুত্তালিবের
সংশোধিত গানটি নীচে সম্পূর্ণ দিয়ে দিলাম . . .
. প্রণাম তোমায় ঘনশ্যাম !
তোমার চরণ শরণ করি অভয় এবার হবো হরি,
দুঃখ-সাগর যাব তরি তরী করি তোমার নাম
আমরা পড়ি ঘুমাই প্রভু তোমার নিত্য জাগরণ,
ক্ষণে ক্ষণে ঘটাই যে ভুল, চক্ষে মোহের আবরণ!
সেই আবরণ ঘুচাও হরি, দাঁড়াও যুগল মূর্তি ধরি,
দেখি তোমার নয়ন ভরি’, পূর্ণ করি মনস্কাম ||
. **********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
শ্মশানে কি নূতন ক’রে লাগল সবুজ রঙ
রচনা --- সজনীকান্ত দাস
সুর ---- সুকৃতি সেন
শিল্পী --- সুকৃতি সেন ও গৌরী সেন, ১৯৪৭
. শ্মশানে কি নূতন ক’রে লাগল সবুজ রঙ
. সঞ্জীবনী মন্ত্র সে কি ‘বন্দেমাতরম্’ ||
উড়েছিল খাক্ হয়ে যা, ফুলের শোভা ধরল কি তা,
. মৃত্যুপুরে নতুন প্রাণের দেখছি নতুন রঙ ||
. ‘করব কিংবা মরব’ মন্ত্রে জাগল সারা দেশ,
. মরা মায়ের সঙ্গে আজি মনোহরণ বেশ,
. যারা অধীনতার ফাঁসে, রুধেছিল জীবন-শ্বাসে,
. বিদায়-ঘন্টা ওই তাহাদের বাজল যে ঢং ঢং|
. শ্মশানে আজ নতুন ক’রে লাগল সবুজ রঙ ||
. **********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
নয়ুই আগস্ট তোমায় নমস্কার রচনা --- সজনীকান্ত দাস সুর ও শিল্পী --- সুকৃতি সেন ১৯৪৭
নয়ুই আগস্ট তোমায় নমস্কার | কাটল যেদিন ভারতজোড়া মনের অন্ধকার || দগ্ধ বিয়াল্লিশের ভালে নূতন আলো কে জ্বালালে , শঙ্কাহরণ সোনার বরণ আলোক চমত্কার || চমকে উঠে মৃত্যুভীত জন, পথে চলার কি আয়েজন, জীবন আছে মায়ের পূজার সেই তো উপাচার || এক নিমেষে বুঝল সেদিন সবে স্বাধীনতা ফিরে পেতেই হবে উঠল সর্বনাশের হাওয়া কাটল মনের ভার ||
. ********************** . সূচিতে . . .
মিলনসাগর
|
পরদিন খুব ভোরে
পেটেন্ট-লেদার অতি শৌখিন অ্যালবার্ট এক জোড়া
অবাক হইয়া দেখিলেন, ঠিক লেকের জলের ধারে
কাদা-মাখামাখি পড়িয়া রয়েছে খালি জুতা দুই জোড়া,
বাটা হতে কেড্ স, ডেস্কোর স্যাণ্ডাল।
এদিক ওদিক দেখিলেন ভয়ে ভয়ে,
দুই জোড়া জুতা কাঁদিছে কাদায়, আর কোথা কেহ নাই।
ঠনঠনিয়ার শুঁড়-তোলা জুতা, শুঁড় আরো গেছে বেঁকে,
লেকে ধারেতে কাঁদে ঠনঠনে চটি।
. **********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কেড্ স ও স্যাণ্ডাল
কবি সজনীকান্ত দাস
কবির “কেড্ স ও স্যাণ্ডাল” কাব্যগ্রন্থের কবিতা, ভাদ্র ১৩৪৭ (সেপ্টেম্বর ১৯৪০)।
কেড্ স এক জোড়া, এক জোড়া স্যাণ্ডাল---
কেড্ স সে ‘বাটা’র, স্যাণ্ডাল-জোড়া ‘ডেস্কো’ হইতে কেনা,
সাদা চামড়ার উপরে সাঁচ্চা জরি।
বালিগঞ্জের পার্কের ধারে নূতন দোতলা বাড়ী ;
আরো যায় কিছু দিন,
স্যাণ্ডাল আর কেড্ স জোড়া যায় প্রায় সন্ধ্যার মুখে
কখনো পার্কে কখনো ঢাকুরে লেকে,
কখনো বায়োসেকোপে।
লালা পাড় ঢাকা খালি-পার সাথে মার্কেটে কভু যায়,
শুঁড়-তোলা চটিজুতা---
ইজি-চেয়ারের তলায় অতীব আরামে পড়িয়া থাকে।
বলিব গ্রহের ফের---
একদা দুপুরে দেখা গেল সেই পুরানো পড়ার ঘরে
কেড্ স-স্যাণ্ডাল টেবিলের তলায় নাই---
উপরে শোবার ঘরে
খাটের নীচেতে দুই জোড়া প’ড়ে আছে চুপচাপ,
ভয়ে যেন উসুখুসু।
এমন সময়ে হঠাৎ কি জানি কেন---
দেখা গেল আসে শুঁড়-তোলা চটি চৌকাঠ পার হয়ে।
কি যে ঘ’টে গেল এক নিমিষের মাঝে,
হেজে যাওয়া ফাটা পা-জোড়াছুটিয়া এল,
ছুটে এল লাল পাড়---
কেড্ স দ্রুতগতি বাহিরে যাইতে চায়---
শুঁড় তোলা চটি কেড্ সের ’পরে পড়ে এক পাটি এসে,
সিঁড়ি দিয়ে কেড্ স নামে তরতর করি,
খিড়কি-দুয়ার খুলে
বাহির হতেই সোজা অ্যাভিনিউ রোড।
উপরে শোবার ঘরে
নড়ে না চড়ে না স্যাণ্ডাল বহুক্ষণ।
স্যাণ্ডাল-জোড়া অতি সন্তর্পণে
আসিল বাহিরে, নেই সেই লঘু গতি,
কত ভারে যেন ভারী হয়ে গেছে ডেস্কোর স্যাণ্ডাল!