সলিল চৌধুরীর গান এবং কবিতা যে কোন গান বা কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
বাঁ হাতে দেবেন
সেভেন হেভেন
মুঠোয় পাবেন
প্রফিট এণ্ড গেইন
একেবারেই সারটেন
স্থির জানবেন
কেন্দ্রের কেউকেটা
হবনই হবেন।
. *******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
আমাদের প্রাণ দিয়ে নবযুগ আনবোই
. ফসলের দস্যুকে শেষ আঘাত হানবোই
ঘরে ঘরে রবে ধান---শোষণের অবসান
. ভরে যাবে শূন্য খামার॥
সাম্যের পীঠভূমি দেশ আমার, দেশ আমার
. বুদ্ধ-মহসিনের দেশ আমার, দেশ আমার।
হায়রে দেশবাসীরে
. কেন খুনে রঞ্জিত দেশ আমার!
আমরা যে মুক্তির নবজীবনের দূত
. মরা গাঙে আনি জোয়ার।
আমাদের প্রাণ দিয়ে নব যুগ আনবই
ভাঙা বুকে মিলনের মন্ত্রকে দানবই
বিভেদের বিষাদের---হবে শেষ, জাগে ফের
. নন্দিত নন্দিত দেশ॥
. *******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
( মোরা ) বীজ বুনি সোনার স্বপন বপন করি গো শ্রাবণে
( ও ) এই মাটির অন্তরে ফসলের গান শোন কি ? শুনি গো---
তোমার আমার আশা নিয়ে মাঠে মাঠে ধান বোনো কি ? বুনি গো---
( ভাই ) মোদের মাটির সীতায় যেন হরণ করে না রাবণে।
. *******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
নন্দিত নন্দিত দেশ আমার
এপ্রিল ১৯৪৮
গীতিকার, সুরকার সলিল চৌধুরীর প্রথম প্রকাশিত রেকর্ড
শিল্পী – ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সলিল চৌধুরী ও গীতা মুখোপাধ্যায়
আষাঢ়ের বরষা এল, পরশে তারি রুক্ষ মাটি সরস
. হল রে---
আয় লাঙ্গল ধরি, মোরা লাঙ্গল চালাই, ফসল বুনি মোরা
ফসল ফলাই আয়, আয়রে আয় . . .
এই মাটির গানে দূরে যাবে যত ক্ষুধার বালাই
ঘরে ঘরে রবে সোনার ধানে ভরে।
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দিব মেপে
কথা ও সুরঃ সলিল চৌধুরী
শিল্পীঃ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
আমরা কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের জনাব নুরুস সাফার কাছে যিনি আমাদের এই গানটি
পাঠিয়েছেন। তাঁর ইমেল - nurus.safa@gmail.com
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দিব মেপে
আয় রিমঝিম বরষার গগণে রে----
কাঠফাটা রোদের আগুনে
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে আয় রে---।
হায় বিধি বড়ই দারুণ
পোড়া মাটি কেঁদে মরে ফসল ফলেনা
হায় বিধি বড়ই দারুণ
ক্ষুধার আগুণ জ্বলে আহার মেলেনা।
কি দেব তোমারে, নাই যে ধান খামারে
মোর কপালগুণে রে---
কাঠফাটা রোদের আগুনে
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে আয় রে---।
এই জীবন মাটির মতন
ফুলে-ফলে ভরিতে চায় সোনার কামনা
এই জীবন মাটির মতন
স্নেহ বিনা শুকায়ে যায় সাধের সাধনা।
আয়রে মেঘ মায়া দে
শ্যামল করিয়া দে তোর মন্ত্রগুণে রে----
কাঠফাটা রোদের আগুনে
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে আয় রে---।
. *******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
একগুচ্ছ চাবি
কবি সলিল চৌধুরী
এই কবিতাটি দমদম, কলকাতা থেকে কৃষ্ণেন্দু ঘোষের অনুরোধে তোলা হয়েছে ৯.৭.২০১৫ তারিখে।
উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি শুধু
. একগুচ্ছ চাবি
ছোটো বড় মোটা বেঁটে
নানা রকমের নানা ধরণের চাবি
মা বললেন, যত্ন করে তুলে রেখে দাও।
তারপর যখন বয়স বাড়ল
জীবন এবং জীবিকার সন্ধানে পথে নামতে হল
পকেটে সম্বল শুধু সেই একগুচ্ছ চাবি
ছোট বড় মোটা বেঁটে নানা রকমের
. নানা ধরণের চাবি।
কিন্তু যেখানেই যাই সামনে দেখি প্রকাণ্ড এক দরজা
আর তাতে ঝুলছে প্রকাণ্ড এক তালা ;
পকেট থেকে চাবির গুচ্ছ বের করি
এ চাবি সে চাবি ঘোরাই ফেরাই
. লাগে না খোলে না---
শ্রান্ত হয়ে ঘরে ফিরি
মা দেখেন আর হাসেন
বলেন, ওরে তোর বাবার হাতেও ওই চাবি দিয়ে
. দরজাগুলো খোলো নি।
শুনেছি নাকি তাঁর বাবার হাতে খুলতো ;
আসল কথা কী জানিস
ওই সব চাবিগুলো হল সত্যের সততার যুক্তির নিষ্ঠার
আজকাল ওই সব চাবি দিয়ে কোনো দরজা খোলে না
তবু তুই ফেলে দিস না
যত্ন করে তুলে রেখে দিস।
তুইও যখন চলে যাবি
তোর সন্তানের হাতে দিয়ে যাস
ওই সব চাবির গুচ্ছ
হয়তো তাদের হাতে আবার একদিন
ওইসব চাবি দিয়ে
ওইসব দরজাগুলো খুলে যাবে॥
. *******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
আমি
কবি সলিল চৌধুরী
“সলিল চৌধুরীর কবিতা” (১৯৮৩) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া।
রচনা কাল ৪.৬.১৯৭৫। এই কবিতাটি জনাব তুষার আহমেদ এর অনুরোধে তোলা হয়েছে।
তাঁর ফেসবুকের পাতা https://www.facebook.com/tushar.ahmed.583234
আমাকে দেখতে ঠিক আমার মতো নয়
ওদের আমি বলেছিলুম
ওরা কেউ বিশ্বাস করে নি, তুমিও করো নি।
তাই একদিন সকালে
আমি একটা বিরাট গাছ হয়ে
নদীর ধারে দাঁড়িয়ে রইলুম।
একঝাঁক পাখিকে ডেকে পাঠালুম,
ওরা আমার ডালে বসে
‘সিম্ফনি’ বাজাবে বলে।
তুমি যখন চান করতে আসবে
তোমাকে শোনাব বলে।
তুমি এলে
আমার ছায়ায় খানিক
অন্যমনস্ক বসে রইলে
ওরা সবাই গাইল
আমি কত সির সির করে
পাতা নাড়লুম, ফুল ঝরালুম
তুমি জল ভরে চলে গেলে
আমাকেই চিনতে পারলে না
হায়রে দুঃখ!
ওই যে আয়নার সামনে
চুল আঁচড়াচ্ছে নিজেকে দেখছে
দাঁড়িয়েনাকের উপর একটা খিমচানো কালো দাগকে
ঘসে ঘসে তোলার চেষ্টা করছে
গোঁফের কয়েকটা সাদা চুলকে
কাঁচি দিয়ে কেটে কেটে
বয়সকে ব্যাক গিয়ারে নেবার চেষ্টা করছে
ও লোকটা যে আমি নই
একথা কাউকো বোঝাতো পারলুম না
তাই একদিন আমি
একটা কালো চাদর হয়ে
বিছানায় তোমার পায়ের কাছে পড়ে রইলুম
তোমার ঘুমন্ত পায়ে চুমু খেলুম
ভোরের সিরসিরে হাওয়ায়
যখন আমাকে বুকে টেনে নিলে
তোমাকে জড়িয়ে জড়িয়ে
কত আদর করলুম
. খস খস করে কথা বললুম,
তুমি টেরই পেলে না---
তুমি চোখ বুজিয়ে তখন
সেই লোকটা কথাই ভাবতে থাকলে
যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
গোঁফ ছাঁটে চুল আঁচড়ায়
কপালে বয়সের লাথির দাগকে
পাউডার ঘসে মুছে ফেলে
স্থান কালের গণ্ডীতে বাঁধা থেকেও
সময়কে যে হারাবার বৃথা চেষ্টা করে
যে লোকটাকে সবাই আমি
. বলে ভুল করে
একটা নাম ধরে ডাকে
সেটা নাকি আমারই নাম
. হায়রে কষ্ট!!
ইতালির জঙ্গল থেকে
একটা গাছ কেটে তক্তা বানিয়ে
একটা কাঠুরে
‘ট্যাডিভারিয়াম’ বলে একটা লোককে
বিক্রি করেছিল---
একটা বেহালা বানিয়ে
পাগাজিনি বলে একটা
পাগলকে দিয়েছিল
লোকটা ছড়ির টান দিয়ে
যখন সেটা বাজাতো
যে আদি রসের পুষ্টিতে ওই গাছটা বেঁচেছিল
সেদ রস রক্ত হয়ে
ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ত
কেউ দেখতে পেত না
শুধু একটা লোক
. একটা বোতল ভরে
সেই রক্তটাকে মদ বলে বিক্রি করতো---
যেই সেটা খোত
সে আস্তে আস্তে একটা গাছ
গাছ থেকে তক্তা
তক্তা থেকে বেহালা হয়ে গিয়ে
টান টান শিরার তারে
বাঁধা হয়ে যেত
তোমাকে বলেছিলুম
তুমি বিশ্বাস করো নি
তাই একদিন আমি চুপচাপ
সেই মদ খেয়ে
বেহালা বনে গিয়ে
একটা বাক্সে লুকিয়ে রইলাম
তুমি যখন কনসার্ট শুনতে গেলে
আমি তখন ইহুদি মেনুহিনের হাতে
নানান সুরে নানা ভাবে
হাসলুম গাইলুম কাঁদলুম
তুমি আমাকে বুঝতেই পারলে না
. হায়রে ভ্রম!
যে মানুষটার মধ্যে আমি থাকি
তার খিদে পায় ঘুম পায়
ব্যাথা লাগে কষ্ট হয়
বয়স বাড়ে বৃদ্ধ হয়
তোমার নারীদেহের মধ্যে
যে তুমি থাকো
তার চেয়ে বেশি করে
তোমার দেহকে তার প্রয়োজন হয়
সে মানুষটার উপর আমার বড়ো মায়া
তাকে আমি সাবান মাখিয়ে চান করাই
খাবার দিয়ে খিদে মোটাই
ভালো জামাকাপড় পরাই
সাজাই গোছাই
তার আনন্দে আমি হাসি
তার ব্যর্থতায় ব্যথা পাই
কিন্তু তোমার মতো তাকেও
আমি কিছুতেই বোঝাতে পারলুম না
যে --- সে আমি নই
তার মতো করে
আমার জন্ম হয় না মৃত্যু হয় না
বয়স বাড়ে না বৃদ্ধ হই না
তার মতো করে
আমার শরীর আবরণ দিয়ে
লজ্জা ঢাকতে হয় না
তার মতো করে
আমার সময় ঘড়ির কাঁটায় ধড়া পড়ে না
বছর মাস দিন দিয়ে
গোনা যায় না
আমার কখনো শেষ হয় না
তার কারণ
আমার কখনো শুরুই হয় নি
শুরু আর শেষের যে অঙ্ক
তার হিসাব আছে
সেটা আমার
ধারাপাতে নেই
কারণ আমার ধারাপতই নেই।
তবু তার সমাপ্তির আশঙ্কায়