শুধু জনহীন চৌরঙ্গীতে পাথরের মূর্তি, খনির আগুনে সূর্যাস্ত আসে |
পরদিন লাল জীবনের জাল সঙ্কীর্ণ আকাশে ; শহরের প্রখর সকালে দূরে শবযাত্রার প্রতিধ্বনি হৃৎপিন্ডে মুহূর্তের মৌনতা আনে ; জীবিকার স্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন, আশেপাশে ব্যর্থতায় চিরকাল মৃত্যু আসে আর যায় |
আজ বহুদিন তুষার স্তব্ধতার পর পর্বত চাহিল হতে বৈশাখের নিরুদ্দেশ মেঘ | তাই বসন্তের কার্জন পার্কে বর্ষার সিক্ত পশুর মতো স্তব্ধ ব’সে বক্রদেহ নায়কের দল বিগলিত বিষণ্ণতায় ক্ষুরধার স্বপ্ন দেখে ; ময়দানে নষ্টনীড় মানুষের দল | ফরাসী ছবির আমন্ত্রণে, ফিটনের ইঙ্গিতে আহ্বানে খনির আগুনে রক্তমেঘে সূর্যাস্ত এল |
মাস্তুলের দীর্ঘ রেখা দিগন্তে জাহাজের অদ্ভুত শব্দ, দূর সমুদ্র থেকে ভেসে ভেসে আসে বিষণ্ণ নাবিকের গান | সমস্ত দিন কাটে দুঃস্বপ্নের মতো ; রাত্রে নিবিড় প্রেম : কুসুমের কারাগার | কত দিন, কত মন্থর, দীর্ঘ দিন, কত গোধূলি-মদির অন্ধকার, কত মধুরাতি রভসে গোঙায়নু, আজ মৃত্যুলোকে দাও প্রাণ দূর সমুদ্র থেকে ভেসে আসে বিষণ্ণ নাবিকের গান |
এক মাত্র তোমাকে সত্য বলে মানি | দারুণ গ্রীষ্মে অভীপ্সা-ব্যাকুল মন তোমার আদেশে শহরের দিগ্বিজয়ে ঘোরে তোমার আদেশে সন্ন্যাসীর সাধনা-সঙিন দিনগুলি যুবতী-সঙ্কুল আসরে সান্ধ্য-সঙ্গীতে সংহত | প্রভু, পৃথিবীতে তোমার লীলা অবিরাম, এ্যাসেম্ ব্লি-হলে বিরহছলে মিলনে আনো, প্রবীণ কবির মুখে আবার আনো স্বদেশী গান |
রাত্রির দূষিত রক্তে বিকলাঙ্গ দিনের প্রসবে আমাদের তন্দ্রা ভাঙে ; তারপর আকাশ ভারি হয়ে ওঠে, বিরস কাজের সুরে কতদিনের ক্লান্তিতে কলের বাঁশি বাজে ; পিছনে সমস্তক্ষণ ক্ষিপ্রগতি বাসের শব্দ |
পৃথিবীর কবিতার শেষ নেই : দিনের ভাটার শেষে গলিত অন্ধকারে মরা মাঠ ধূ ধূ করে, চরাচরে মরা দিনের ছায়া পড়ে | উদ্দাম নদীতে শেষ খেয়া নেই, শিকারী কীট সোনার ধানে | তাই বঙ্কিম ব্রহ্ম যীশু পরমহংস সময় যখন আসে তখন সকলি মানি, দুর্গম দিন, নামহীন অশান্তিতে বিচলিত বুদ্ধি, তবু সরল চরম কথাটি এই বলে মানি ভারি ট্যাঁক ছাড়া কিছুই টেকে না, সবার উপরে আমিই সত্য তার উপরে নেই |